জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার সুপারিশমালার কিছু বিষয়ের ওপর প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির দাবি, এসব সুপারিশে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার অপচেষ্টা রয়েছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, সোমবার কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেওয়ার সময় দলের বিস্তারিত বক্তব্য জানানো হবে।
‘সুপারিশমালা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ কি না, জনমনে প্রশ্ন’
মির্জা ফখরুল বলেন, “কমিশনের স্প্রেডশিট ও সদস্যদের বক্তব্য, এমনকি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মতামতের সঙ্গে সুপারিশমালার মিল রয়েছে—যা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, এগুলো কি একটি পূর্বপরিকল্পনার অংশ?”
তিনি অভিযোগ করেন, সুপারিশগুলোতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিতদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে বসানোর একটি অনভিপ্রেত প্রচেষ্টা রয়েছে।
“রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্ব হ্রাস করে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় বসানোর সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে,”—বলেন তিনি।
‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল’-এ আপত্তি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলের (এনসিসি) কাঠামো অনুযায়ী প্রায় সব পর্যায়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসানোর প্রস্তাব রয়েছে।”
“এতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্ব হারাবে এবং প্রশাসন কার্যত অনির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে,”—যোগ করেন তিনি।
‘স্প্রেডশিট বিভ্রান্তিকর, লিডিং প্রশ্ন’
বিএনপি বলছে, কমিশনের প্রেরিত স্প্রেডশিটে যেভাবে ‘হ্যাঁ/না’ উত্তরের জন্য টিক দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, তা মূল সুপারিশের গুরুত্বকে সীমিত করে ফেলে।
“সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্প্রেডশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা দৃষ্টিকটূ,” বলেন ফখরুল।
তাঁর দাবি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে যেখানে ১২৩টি সুপারিশ রয়েছে, সেখানে স্প্রেডশিটে মাত্র ৭০টি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে ১৫০টির বেশি সুপারিশ থাকলেও স্প্রেডশিটে এসেছে মাত্র ২৭টি।
গণপরিষদ নয়, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন হতে পারে অধ্যাদেশে
গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাবকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে বিএনপি। দলটি মনে করে, প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পরিবর্তন অধ্যাদেশের মাধ্যমেই করা সম্ভব এবং প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের মতামত নেওয়া যেতে পারে।
‘চাটার অব রিফর্ম’ প্রস্তাব বিএনপির
সংস্কার আগে না নির্বাচন—এই বিতর্কের অবসান চেয়ে বিএনপি বলেছে, উভয় প্রক্রিয়া একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
“রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘চাটার অব রিফর্ম’ (সংস্কার সনদ) প্রণয়ন করা যেতে পারে, যা পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে,” বলেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন এবং জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া একটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।”
‘কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন’
বিএনপি দাবি করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা রাজনীতি ও দল গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশাসনিক সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে গণ-আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে। ইতোমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়ে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানায়। এখনও পর্যন্ত অর্ধেক দল মতামত জমা দেয়নি।
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কার সুপারিশমালার কিছু বিষয়ের ওপর প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির দাবি, এসব সুপারিশে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার অপচেষ্টা রয়েছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
শনিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জানান, সোমবার কমিশনের কাছে লিখিত মতামত জমা দেওয়ার সময় দলের বিস্তারিত বক্তব্য জানানো হবে।
‘সুপারিশমালা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ কি না, জনমনে প্রশ্ন’
মির্জা ফখরুল বলেন, “কমিশনের স্প্রেডশিট ও সদস্যদের বক্তব্য, এমনকি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মতামতের সঙ্গে সুপারিশমালার মিল রয়েছে—যা জনমনে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে, এগুলো কি একটি পূর্বপরিকল্পনার অংশ?”
তিনি অভিযোগ করেন, সুপারিশগুলোতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিতদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে বসানোর একটি অনভিপ্রেত প্রচেষ্টা রয়েছে।
“রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্ব হ্রাস করে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায় বসানোর সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে,”—বলেন তিনি।
‘ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল’-এ আপত্তি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলের (এনসিসি) কাঠামো অনুযায়ী প্রায় সব পর্যায়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় বসানোর প্রস্তাব রয়েছে।”
“এতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গুরুত্ব হারাবে এবং প্রশাসন কার্যত অনির্বাচিতদের হাতে চলে যাবে,”—যোগ করেন তিনি।
‘স্প্রেডশিট বিভ্রান্তিকর, লিডিং প্রশ্ন’
বিএনপি বলছে, কমিশনের প্রেরিত স্প্রেডশিটে যেভাবে ‘হ্যাঁ/না’ উত্তরের জন্য টিক দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, তা মূল সুপারিশের গুরুত্বকে সীমিত করে ফেলে।
“সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্প্রেডশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা দৃষ্টিকটূ,” বলেন ফখরুল।
তাঁর দাবি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে যেখানে ১২৩টি সুপারিশ রয়েছে, সেখানে স্প্রেডশিটে মাত্র ৭০টি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবে ১৫০টির বেশি সুপারিশ থাকলেও স্প্রেডশিটে এসেছে মাত্র ২৭টি।
গণপরিষদ নয়, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন হতে পারে অধ্যাদেশে
গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাবকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করে বিএনপি। দলটি মনে করে, প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পরিবর্তন অধ্যাদেশের মাধ্যমেই করা সম্ভব এবং প্রয়োজনে উচ্চ আদালতের মতামত নেওয়া যেতে পারে।
‘চাটার অব রিফর্ম’ প্রস্তাব বিএনপির
সংস্কার আগে না নির্বাচন—এই বিতর্কের অবসান চেয়ে বিএনপি বলেছে, উভয় প্রক্রিয়া একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
“রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘চাটার অব রিফর্ম’ (সংস্কার সনদ) প্রণয়ন করা যেতে পারে, যা পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে,” বলেন ফখরুল।
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন এবং জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া একটি সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।”
‘কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন’
বিএনপি দাবি করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা রাজনীতি ও দল গঠনের প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রশাসনিক সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টে গণ-আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করে। ইতোমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এই সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চেয়ে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানায়। এখনও পর্যন্ত অর্ধেক দল মতামত জমা দেয়নি।