২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে অভিযুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, এবং মামুনকে ১৬ জুন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শেখ হাসিনা ও কামালকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রসিকিউশনকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
এই আদেশ দিয়েছে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে ১৩৪ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এই মামলার শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।
*পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ*
১. ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ও প্ররোচনা: শেখ হাসিনার গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্যের পর তার এবং কামাল ও মামুনের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী কর্মীদের দ্বারা নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালানো হয়। এতে হত্যা, নির্যাতন, অমানবিক আচরণ এবং এ সংক্রান্ত ষড়যন্ত্র ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ: শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যা বাস্তবায়নে সহায়তা করেন কামাল ও মামুন।
৩. আবু সাঈদ হত্যা: ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র আবু সাঈদকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়, যা আসামিদের সম্মতি ও নির্দেশে সংঘটিত হয়।
৪. চাঁনখারপুল হত্যাকাণ্ড: ৫ আগস্ট ঢাকায় চাঁনখারপুল এলাকায় ছয় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৫. আশুলিয়া গণহত্যা ও পুড়িয়ে হত্যা: একই দিন আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে, এরপর পাঁচ জনের মৃতদেহ ও একজন জীবিত আহত ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এই সব ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র, সহায়তা, নির্দেশ, এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
*এটা ‘প্রতিশোধ নয়’, ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা: চিফ প্রসিকিউটর*
ট্রাইব্যুনালে "চিফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনা গং" মামলায় তাজুল ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের বর্ষা বিপ্লব ছিল একটি বদ্ধমূল ন্যায়বিচার চাওয়ার আন্দোলন। সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বর্বরতা চালানো হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মদদে। আমরা এই বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই—গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ একটি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই সহ্যযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিচার শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং রোম স্ট্যাটিউট অনুসারেও প্রযোজ্য।”
চিফ প্রসিকিউটর জানান, মামলায় উপস্থাপিত প্রমাণের মধ্যে রয়েছে:
*ক্ষমতার পরিবর্তন, ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন*
২০১০ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। সেই একই আদালতের পুনর্গঠন করে এখন তার বিচার শুরু হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় বিচারের জন্য ইতিমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জামায়াতে ইসলামি, নবগঠিত তরুণ দল এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিল।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, “এই বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই শেষ হবে বলে আশা করি।”
রোববার, ০১ জুন ২০২৫
২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে অভিযুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, এবং মামুনকে ১৬ জুন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
শেখ হাসিনা ও কামালকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রসিকিউশনকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
এই আদেশ দিয়েছে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে ১৩৪ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এই মামলার শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা।
*পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ*
১. ১৪ জুলাই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য ও প্ররোচনা: শেখ হাসিনার গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্যের পর তার এবং কামাল ও মামুনের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী কর্মীদের দ্বারা নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালানো হয়। এতে হত্যা, নির্যাতন, অমানবিক আচরণ এবং এ সংক্রান্ত ষড়যন্ত্র ও সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
২. প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ: শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দমন করতে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন, যা বাস্তবায়নে সহায়তা করেন কামাল ও মামুন।
৩. আবু সাঈদ হত্যা: ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ছাত্র আবু সাঈদকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়, যা আসামিদের সম্মতি ও নির্দেশে সংঘটিত হয়।
৪. চাঁনখারপুল হত্যাকাণ্ড: ৫ আগস্ট ঢাকায় চাঁনখারপুল এলাকায় ছয় নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
৫. আশুলিয়া গণহত্যা ও পুড়িয়ে হত্যা: একই দিন আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে, এরপর পাঁচ জনের মৃতদেহ ও একজন জীবিত আহত ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এই সব ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র, সহায়তা, নির্দেশ, এবং অপরাধ প্রতিরোধে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
*এটা ‘প্রতিশোধ নয়’, ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা: চিফ প্রসিকিউটর*
ট্রাইব্যুনালে "চিফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনা গং" মামলায় তাজুল ইসলাম বলেন, “২০২৪ সালের বর্ষা বিপ্লব ছিল একটি বদ্ধমূল ন্যায়বিচার চাওয়ার আন্দোলন। সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বর্বরতা চালানো হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মদদে। আমরা এই বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই—গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ একটি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই সহ্যযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “এই বিচার শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং রোম স্ট্যাটিউট অনুসারেও প্রযোজ্য।”
চিফ প্রসিকিউটর জানান, মামলায় উপস্থাপিত প্রমাণের মধ্যে রয়েছে:
*ক্ষমতার পরিবর্তন, ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠন*
২০১০ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। সেই একই আদালতের পুনর্গঠন করে এখন তার বিচার শুরু হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নেয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় বিচারের জন্য ইতিমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। জামায়াতে ইসলামি, নবগঠিত তরুণ দল এনসিপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিল।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, “এই বিচার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই শেষ হবে বলে আশা করি।”