alt

রাজনীতি

সরকার ব্যবস্থা না নিলে ‘নিজেই শপথ নেবেন’ ইশরাক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

মঙ্গলবার নগর ভবনের দোতলায় বানানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইশরাক হোসেন-সংবাদ

অন্তর্বর্তী সরকার শপথ না পড়ালে নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ‘বহিরাগত’ কোনো প্রশাসক ও উপদেষ্টাকে নগর ভবনে ঢুকতে দেয়া হবে না- এমন কথাও বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় নগর ভবনের দোতলায় বানানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন ।

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার কতিপয় উপদেষ্টা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আমাদের এই নির্বাচনের রায়ের পরে তালবাহানা করেছে। আমাকে শপথ না পড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা তারা অসম্মান করেছে। তারা আইন আদালত মানে না, তারা নির্বাচন কমিশন মানে না। তারা সংবিধান মানে না, তাহলে তারা মানেটা কী? এই বাংলাদেশের মানুষ, আমরা যদি আগামীকাল থেকে তাদের না মানা শুরু করি, তাহলে এর দায়দায়িত্ব কে নেবে?’

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ইশরাক বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আমলে নিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র খুবই সামান্য পদ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেও শপথ পরানো নিয়ে যারা তালবাহানা করছে, কীভাবে তাদের অধীনে আগামী দিনে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সেটা নিয়ে জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

আন্দোলন ঠেকাতে সরকার পদত্যাগের নাটক করেছে বলেও মন্তব্য করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই আদালতের রায় এবং গেজেট প্রকাশের পর আমরা যখন বার বার সরকারের কাছে আবেদন লিখিতভাবে জানালাম, তারা কিন্তু তোয়াক্কা করলো না। এরপর ঢাকা দক্ষিণের ভোটাররা রাজপথে নেমে আসে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এখান থেকে বের হয়ে যমুনা ঘেরাও দিয়ে দুই দিন অবস্থান করেছিলাম। তখন আমরা কী দেখতে পেলাম, জাতির সামনে একটা নতুন নাটক করা হলো। যেখানে পদত্যাগের নাটকের মাধ্যমে জাতিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হলো। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো আবেগের বিষয় নেই। এখানে ১৮ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় জীবিকা নির্বাহের বিষয়। আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না। যখন ইচ্ছা নিলাম, যখন আমি বেজার হলাম পদত্যাগ করে চলে গেলাম- এ ধরনের কর্মকা- জনগণের কল্যাণময় কিছু হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে তিনজন উপদেষ্টার নাম বলে আসা হয়েছে অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ চাই, যারা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাই নাই।’

সরকার অবিলম্বে শপথ না পড়ালে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে নিজের শপথ নিজেই পড়ে চেয়ারে বসার ঘোষণা দেন ইশরাক।

তিনি বলেন, ‘এই নগর ভবন দুই সপ্তাহ যাবৎ আমরাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, আমরাই দখল করে রেখেছি। এই শপথ যদি তারা না পড়ায়, আমি গিয়ে আমার চেয়ারে বসতে পারি, দুই মিনিটও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বার বার বলেছে, কেন আমি শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ পড়ে নিজেই কেন দায়িত্ব নিচ্ছি না। তখন আমি বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল করি, আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আমাদের নেতারা বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে।’

ইশরাক বলেন, ‘বারবার নির্বাচন কমিশন, বার বার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। কারণ আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী। আমরা চাই না, একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক। কিন্তু এই সরকারকে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি অবিলম্বে শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা না নেন, তাহলে ঢাকা শহর দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে আমি নিজেই শপথ পড়ে আমার চেয়ারে বসব।’

সচিবালয়ে আগুন লাগার পর থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বসছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারাও নিয়মিত অফিস করছিলেন নগর ভবনে।

সরকারের কোনো উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা ও প্রশাসক- কাউকে নগরভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা ইশরাক।

ইশরাক বলেন, ‘এটা আমাদের সিদ্ধান্ত, এটা বাস্তবায়নের জন্য নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ঢাকার ভোটারদের বলছি- আমাদের নির্দেশনা ছাড়া বহিরাগত কাউকে এখানে বসতে দিব না। যা কিছু করতে হবে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। প্রয়োজনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা প্রশাসক বসাবো। যতদিন পর্যন্ত আগামী নির্বাচন হচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত সব কার্যক্রমের অধিকার আমাদের কাছেই আছে।’

শপথ পড়ানোর দাবিতে প্রায় ২১ দিন ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ, জনগণের ভোগান্তি ও জনগণের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে আমরা বর্তমান নগর ভবনের অবরোধ এবং ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কিছুটা শিথিল, কিছুটা বিরতি দিয়েছি। ছুটির পরে শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণেকে সামনে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।

ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওই দিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।

ছবি

নরসিংদী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ, শেরপুর ও মানিকগঞ্জে বিএনপির নতুন কমিটি গঠন

ছবি

ঝটিকা মিছিলে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজন গ্রেপ্তার

ছবি

তিন দাবিতে ২৮ জুন সোহরাওয়ার্দীতে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

ছবি

গণআন্দোলনের সুফল অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকান্ডে এখনো প্রতিফলিত হয়নি: আমিনুল হক

ছবি

ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাজেট দেয়া উচিত ছিল: খসরু

ছবি

নিবন্ধন ও প্রতীক ফেরত পাচ্ছে জামায়াত: ইসি

ছবি

বাজেট অংশগ্রহণহীন, বাস্তবতা বিবর্জিত ও কাগুজে: আমীর খসরু

ছবি

গুলশানের ফ্ল্যাট-ঘুষ অভিযোগে টিউলিপসহ রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপ

ভারত শেখ হাসিনাকে জায়গা দিয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে: শামসুজ্জামান

তত্ত্বাবধায়কের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপির না, জামায়াত-এনসিপির হ্যাঁ

ছবি

নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার ভোট ও প্রবাসীদের ভোটাধিকারে জোর জামায়াতের

ছবি

বেকার সমস্যা, কালোটাকা, প্রবাসী কল্যাণে হতাশা জানাল এনসিপি

ছবি

নারী আসনে দলীয় মনোনয়নের পক্ষে বিএনপি, সরাসরি নির্বাচনের সময় এখনও আসেনি

ছবি

দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান, করপোরেশন কার্যক্রম বন্ধ

রাজনৈতিক উত্তেজনায় অস্পষ্টতা ও বিদেশি হুমকির বিষয়ে মান্নার সতর্কতা

ছবি

ঐকমত্য না হলেও আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে লিখিতভাবে

ছবি

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যা বলেছে বিএনপি

ছবি

‘গুমের’ অভিযোগে হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সালাহউদ্দিনের অভিযোগ

ছবি

জুলাই সনদের আগে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা নয়: নাহিদ ইসলাম

ছবি

তিনটি দল বাদে সবাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় : নুরুল হক নুর

ছবি

ইশরাক সমর্থকদের অবস্থান কর্মসূচিতে অচল নগরভবন

ইসিতে আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি জমা দিলো জামায়াত

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবতাবিবর্জিত: আমীর খসরু

সব দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়: সালাহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

নির্বাচন কমিশনে আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি জমা দিলো জামায়াতে ইসলামী

ছবি

এক যুগ পর নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী, আপিল বিভাগে রায়

ছবি

"মবের কোনো সুযোগ নেই"—রংপুরে সহিংসতা ইস্যুতে কঠোর বার্তা সেনাবাহিনীর

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনা

ছবি

শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে সবার জন্য সুবিধাজনক: খন্দকার মোশাররফ

ছবি

ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ফের নগর ভবন অবরোধ করে আন্দোলন

ছবি

জামায়াতের প্রতীক প্রশ্নে সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচন কমিশন

ছবি

লালমনিরহাটে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

ছবি

ক্ষমতার লোভে ‘বেহুঁশ’ বিএনপি, হুঁশে ফিরতে বলল এনসিপি নেতা

ছবি

জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ, অভিযোগ জাতীয় পার্টির

ছবি

জামায়াত-শিবির ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে: ছাত্র ইউনিয়ন

tab

রাজনীতি

সরকার ব্যবস্থা না নিলে ‘নিজেই শপথ নেবেন’ ইশরাক

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার নগর ভবনের দোতলায় বানানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইশরাক হোসেন-সংবাদ

বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার শপথ না পড়ালে নিজেই শপথ নিয়ে মেয়রের চেয়ারে বসার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ‘বহিরাগত’ কোনো প্রশাসক ও উপদেষ্টাকে নগর ভবনে ঢুকতে দেয়া হবে না- এমন কথাও বলেছেন তিনি। মঙ্গলবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় নগর ভবনের দোতলায় বানানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন ।

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার কতিপয় উপদেষ্টা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আমাদের এই নির্বাচনের রায়ের পরে তালবাহানা করেছে। আমাকে শপথ না পড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা তারা অসম্মান করেছে। তারা আইন আদালত মানে না, তারা নির্বাচন কমিশন মানে না। তারা সংবিধান মানে না, তাহলে তারা মানেটা কী? এই বাংলাদেশের মানুষ, আমরা যদি আগামীকাল থেকে তাদের না মানা শুরু করি, তাহলে এর দায়দায়িত্ব কে নেবে?’

অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে ইশরাক বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আমলে নিলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র খুবই সামান্য পদ। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেও শপথ পরানো নিয়ে যারা তালবাহানা করছে, কীভাবে তাদের অধীনে আগামী দিনে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে, সেটা নিয়ে জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’

আন্দোলন ঠেকাতে সরকার পদত্যাগের নাটক করেছে বলেও মন্তব্য করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই আদালতের রায় এবং গেজেট প্রকাশের পর আমরা যখন বার বার সরকারের কাছে আবেদন লিখিতভাবে জানালাম, তারা কিন্তু তোয়াক্কা করলো না। এরপর ঢাকা দক্ষিণের ভোটাররা রাজপথে নেমে আসে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এখান থেকে বের হয়ে যমুনা ঘেরাও দিয়ে দুই দিন অবস্থান করেছিলাম। তখন আমরা কী দেখতে পেলাম, জাতির সামনে একটা নতুন নাটক করা হলো। যেখানে পদত্যাগের নাটকের মাধ্যমে জাতিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হলো। রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো আবেগের বিষয় নেই। এখানে ১৮ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় জীবিকা নির্বাহের বিষয়। আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না। যখন ইচ্ছা নিলাম, যখন আমি বেজার হলাম পদত্যাগ করে চলে গেলাম- এ ধরনের কর্মকা- জনগণের কল্যাণময় কিছু হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে তিনজন উপদেষ্টার নাম বলে আসা হয়েছে অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ চাই, যারা দেশ ও জাতির জন্য হুমকি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা দেখতে পাই নাই।’

সরকার অবিলম্বে শপথ না পড়ালে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে নিজের শপথ নিজেই পড়ে চেয়ারে বসার ঘোষণা দেন ইশরাক।

তিনি বলেন, ‘এই নগর ভবন দুই সপ্তাহ যাবৎ আমরাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, আমরাই দখল করে রেখেছি। এই শপথ যদি তারা না পড়ায়, আমি গিয়ে আমার চেয়ারে বসতে পারি, দুই মিনিটও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বার বার বলেছে, কেন আমি শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ পড়ে নিজেই কেন দায়িত্ব নিচ্ছি না। তখন আমি বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল করি, আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আমাদের নেতারা বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে।’

ইশরাক বলেন, ‘বারবার নির্বাচন কমিশন, বার বার মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। কারণ আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাসী। আমরা চাই না, একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি হোক। কিন্তু এই সরকারকে বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, আপনারা যদি অবিলম্বে শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা না নেন, তাহলে ঢাকা শহর দক্ষিণের ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে আমি নিজেই শপথ পড়ে আমার চেয়ারে বসব।’

সচিবালয়ে আগুন লাগার পর থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বসছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারাও নিয়মিত অফিস করছিলেন নগর ভবনে।

সরকারের কোনো উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তা ও প্রশাসক- কাউকে নগরভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা ইশরাক।

ইশরাক বলেন, ‘এটা আমাদের সিদ্ধান্ত, এটা বাস্তবায়নের জন্য নগর ভবনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী ও নির্বাচিত কাউন্সিলর ও ঢাকার ভোটারদের বলছি- আমাদের নির্দেশনা ছাড়া বহিরাগত কাউকে এখানে বসতে দিব না। যা কিছু করতে হবে আমাদের অনুমতি নিয়ে করতে হবে। প্রয়োজনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা প্রশাসক বসাবো। যতদিন পর্যন্ত আগামী নির্বাচন হচ্ছে না, ততদিন পর্যন্ত সব কার্যক্রমের অধিকার আমাদের কাছেই আছে।’

শপথ পড়ানোর দাবিতে প্রায় ২১ দিন ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ, জনগণের ভোগান্তি ও জনগণের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে আমরা বর্তমান নগর ভবনের অবরোধ এবং ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কিছুটা শিথিল, কিছুটা বিরতি দিয়েছি। ছুটির পরে শপথ অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা না এলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণেকে সামনে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।’

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।

ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর গত ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।

ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওই দিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।

back to top