জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোন কোন প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে আর কোন কোন বিষয়ে একমত হতে পারেনি, তার পরিসংখ্যান হাজির করেছে দলটি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে যেমন আগ্রহ ও প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও আছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ছয়টি সংস্কার কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। প্রতিদিনের আলোচনায় আমাদের প্রতিনিধিরা কার্যকর অংশগ্রহণ করছেন।”
ফখরুল দাবি করেন, “বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রতিনিধিরা অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছেন। তবে নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়া ও তা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরির কারণে কমিশনের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিরা ধৈর্য ধরে আলোচনা শুনছেন এবং তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশনকে সহযোগিতা করছেন।”
কোন কোন বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি, সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ ও সরকারকে দুর্বল করার প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, দায়বদ্ধ সরকারকে দুর্বল করা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এতে সমর্থন না জানানো কোনো বাধা নয়, বরং প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা।”
পুলিশ সংস্কার কমিশন:
এই কমিশনের প্রস্তাব এখনো আলোচনায় আসেনি। তবে দলের নেতারা জানিয়েছেন, র্যাব বিলুপ্তিসহ প্রায় সব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন:
৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত হয়েছে। শুধু ২৯ নম্বর সুপারিশে তারা ভিন্নমত জানিয়েছে। বিষয়টি হলো—দুদকের তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি অব্যাহত রাখার পক্ষে বিএনপি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন:
২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টিতে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত এবং ৫টিতে ভিন্নমত জানিয়েছে। একমত হতে না পারা ১১টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে প্রদেশ সৃষ্টি ও পদোন্নতির বিষয়।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন:
৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে বিএনপি একমত, ৯টিতে আংশিক একমত এবং ১৮টিতে ভিন্নমতসহ পরামর্শ দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ক সব প্রস্তাবে বিএনপি একমত।
নির্বাচনী ব্যবস্থা বিষয়ক সংস্কার কমিশন:
২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে বিএনপি একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, ৬৪টিতে ভিন্নমতসহ একমত এবং ২৪টিতে একমত হয়নি। বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আনা সব প্রস্তাবে একমত হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন:
১৩১টি সুপারিশে বিএনপি দফাভিত্তিক মতামত দিয়েছে। বেশিরভাগ প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করার বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংসদে বিরোধী দলের জন্য স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ন্যায়পাল আইন যুগোপযোগী করা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে।
বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের ব্যাপারে বিএনপি একমত হয়ে তা বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, “এমন বহু প্রস্তাবে শুধুই ঐকমত্যের স্বার্থে আমরা একমত হয়েছি, যেগুলোর বাস্তবায়ন অত্যন্ত দুরূহ এবং সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তিসঙ্গত মতামত দিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। কমিশনের প্রস্তাবগুলোর প্রভাব ইতিবাচক হলে জনগণ তা গ্রহণ করবে। তবে জনগণকে সম্পৃক্ত না করে তাদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন করার অধিকার কোনো ব্যক্তি, দল বা কমিশনের আছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে।”
বিএনপির দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে আমরাই সবচেয়ে সক্রিয়। নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে যায়। আমরা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব পালন করি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তারা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপারিশ জমা দেয়। পরে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করে। প্রথম দফার আলোচনা হয় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফা ৩ জুন শুরু হয়ে এখনো চলছে। জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।
রোববার, ০৬ জুলাই ২০২৫
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় কোন কোন প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে আর কোন কোন বিষয়ে একমত হতে পারেনি, তার পরিসংখ্যান হাজির করেছে দলটি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে যেমন আগ্রহ ও প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও আছে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা ছয়টি সংস্কার কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। প্রতিদিনের আলোচনায় আমাদের প্রতিনিধিরা কার্যকর অংশগ্রহণ করছেন।”
ফখরুল দাবি করেন, “বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য আমাদের প্রতিনিধিরা অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছেন। তবে নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়া ও তা নিয়ে অচলাবস্থা তৈরির কারণে কমিশনের কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিনিধিরা ধৈর্য ধরে আলোচনা শুনছেন এবং তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তি দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কমিশনকে সহযোগিতা করছেন।”
কোন কোন বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি, সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ ও সরকারকে দুর্বল করার প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, দায়বদ্ধ সরকারকে দুর্বল করা সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এতে সমর্থন না জানানো কোনো বাধা নয়, বরং প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা।”
পুলিশ সংস্কার কমিশন:
এই কমিশনের প্রস্তাব এখনো আলোচনায় আসেনি। তবে দলের নেতারা জানিয়েছেন, র্যাব বিলুপ্তিসহ প্রায় সব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন:
৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত হয়েছে। শুধু ২৯ নম্বর সুপারিশে তারা ভিন্নমত জানিয়েছে। বিষয়টি হলো—দুদকের তথ্য চাওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি অব্যাহত রাখার পক্ষে বিএনপি।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন:
২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টিতে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত এবং ৫টিতে ভিন্নমত জানিয়েছে। একমত হতে না পারা ১১টি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে প্রদেশ সৃষ্টি ও পদোন্নতির বিষয়।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন:
৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে বিএনপি একমত, ৯টিতে আংশিক একমত এবং ১৮টিতে ভিন্নমতসহ পরামর্শ দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিষয়ক সব প্রস্তাবে বিএনপি একমত।
নির্বাচনী ব্যবস্থা বিষয়ক সংস্কার কমিশন:
২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে বিএনপি একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, ৬৪টিতে ভিন্নমতসহ একমত এবং ২৪টিতে একমত হয়নি। বিএনপি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে আনা সব প্রস্তাবে একমত হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশন:
১৩১টি সুপারিশে বিএনপি দফাভিত্তিক মতামত দিয়েছে। বেশিরভাগ প্রস্তাবে তারা একমত হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্দিষ্ট করার বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংসদে বিরোধী দলের জন্য স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ন্যায়পাল আইন যুগোপযোগী করা, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্গঠনসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি একমত হয়েছে।
বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের ব্যাপারে বিএনপি একমত হয়ে তা বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, “এমন বহু প্রস্তাবে শুধুই ঐকমত্যের স্বার্থে আমরা একমত হয়েছি, যেগুলোর বাস্তবায়ন অত্যন্ত দুরূহ এবং সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তিসঙ্গত মতামত দিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে। কমিশনের প্রস্তাবগুলোর প্রভাব ইতিবাচক হলে জনগণ তা গ্রহণ করবে। তবে জনগণকে সম্পৃক্ত না করে তাদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন করার অধিকার কোনো ব্যক্তি, দল বা কমিশনের আছে কিনা তা বিবেচনায় নিতে হবে।”
বিএনপির দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রোধে আমরাই সবচেয়ে সক্রিয়। নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে যায়। আমরা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব পালন করি।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
অভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তারা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুপারিশ জমা দেয়। পরে সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জনপ্রশাসন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলোতে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করে। প্রথম দফার আলোচনা হয় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত। দ্বিতীয় দফা ৩ জুন শুরু হয়ে এখনো চলছে। জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।