সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন এখনও দেড় বছর দূরে, তবে সম্প্রতি সেই নির্বাচন নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গন হঠাৎই সরগরম। তাতে মুখ্যবিষয় নির্বাচনটি সর্বদলীয় হবে কিনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি।
এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ কি কোন ছাড় দেবে- এ বিষয়ে সংবাদ কথা বলেছে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক জেষ্ঠ্য নেতার সঙ্গে।
আওয়ামী লীগের ধারণা দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। আর ভবিষ্যতে ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা’ নেবে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে যেসব সুযোগ-সুবিধা বা ছাড় দেয়ার কথা বলছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। দলটি বলছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে সে নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।
আবার নির্বাচনে আসার শর্ত হিসেবে বিএনপি ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ যে দাবি তুলেছে তা সাফ নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য সংবাদকে বলেন, ‘আমি এটুকু বুঝি যে, নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি আছে। এখন নিজেদের প্রস্তুতির সময়। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে শেষ পর্যন্ত কী করতে হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। নীতিনির্ধারণী মহল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, তাদের মূল্যায়ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ‘ভরাডুবিতে’ ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশপাশি নগর ও তৃণমূল পর্যায়’ থেকে দলের ‘নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’। যেহেতু দেশের আইন অনুযায়ী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, তাই ‘বিএনপিকে নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা’ আওয়ামী লীগের নেই।
সূত্রটি বলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ ছাড়া নির্বাচনে না আসার কথা বললেও, বিএনপির একটি অংশ ‘যেকোন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে’ রয়েছে।
বিএনপির ওই অংশকে নির্বাচনে আনার সব প্রচেষ্টা ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে থাকবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
‘নির্দলীয়’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দিতে চেয়েছিল। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি।
বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে প্রশ্ন ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আবারও জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলে, আন্তর্জাতিক পরিম-লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠবে।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘আসলে চাপ আছে কি, নাই, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো বিএনপি যখন দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল তখন আমাদের সরকার শুরু থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নানা প্রশ্নের মুখে ছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তাই এই চেষ্টা।’
বিএনপিকে কোন ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের স্বপ্ন বিএনপির পূরণ হবে না, এটা তো আমাদের সাধারণ সম্পাদক অলরেডি বলেছেন।’
‘একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তারা (বিএনপি) এই দাবি তুলেছিল। আমারা সংবিধানের বাইরে যাইনি। বিএনপি কিন্তু নির্বাচনে এসেছিল।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
তবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খোলা মনে বলেছেন- সব দল নির্বাচনে আসুক। সব দলকে নিয়েই আমরা ভোট করতে চাই। বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে ভোট করতে চাই। নির্বাচন ফেয়ার হবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
তিনি এও জানান ‘বিএনপির সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন বাধা থাকবে না।’
তবে বিএনপি বলছে, ‘আওয়ামী লীগ অতীতেও কথা রাখেনি। ভবিষ্যতেও রাখবে না।’ তাই আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিত নির্বাচনে আসা। তবে সংবিধান পরিপন্থি কোন দাবি মেনে নেয়া হবে না। বিএনপির হুমকিকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। নির্বাচন যথা সময়েই হবে।’
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর টানা তিন মেয়াদে তেরো বছরের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী বছর (২০২৩) ডিসেম্বরে বা পরবর্তী বছর (২০২৪) জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার, ১৬ মে ২০২২
সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় নির্বাচন এখনও দেড় বছর দূরে, তবে সম্প্রতি সেই নির্বাচন নিয়েই রাজনৈতিক অঙ্গন হঠাৎই সরগরম। তাতে মুখ্যবিষয় নির্বাচনটি সর্বদলীয় হবে কিনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি।
এখন বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ কি কোন ছাড় দেবে- এ বিষয়ে সংবাদ কথা বলেছে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক জেষ্ঠ্য নেতার সঙ্গে।
আওয়ামী লীগের ধারণা দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। আর ভবিষ্যতে ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা’ নেবে ক্ষমতাসীনরা।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে যেসব সুযোগ-সুবিধা বা ছাড় দেয়ার কথা বলছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। দলটি বলছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে সে নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না।
আবার নির্বাচনে আসার শর্ত হিসেবে বিএনপি ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ যে দাবি তুলেছে তা সাফ নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য সংবাদকে বলেন, ‘আমি এটুকু বুঝি যে, নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি আছে। এখন নিজেদের প্রস্তুতির সময়। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে শেষ পর্যন্ত কী করতে হবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। নীতিনির্ধারণী মহল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র বলছে, তাদের মূল্যায়ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ‘ভরাডুবিতে’ ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশপাশি নগর ও তৃণমূল পর্যায়’ থেকে দলের ‘নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’। যেহেতু দেশের আইন অনুযায়ী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, তাই ‘বিএনপিকে নিয়ে খুব একটা দুশ্চিন্তা’ আওয়ামী লীগের নেই।
সূত্রটি বলছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক’ ছাড়া নির্বাচনে না আসার কথা বললেও, বিএনপির একটি অংশ ‘যেকোন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে’ রয়েছে।
বিএনপির ওই অংশকে নির্বাচনে আনার সব প্রচেষ্টা ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে থাকবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
‘নির্দলীয়’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দিতে চেয়েছিল। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি।
বিএনপিবিহীন ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে প্রশ্ন ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি আবারও জাতীয় নির্বাচন বর্জন করলে, আন্তর্জাতিক পরিম-লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠবে।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা সংবাদকে বলেন, ‘আসলে চাপ আছে কি, নাই, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো বিএনপি যখন দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল তখন আমাদের সরকার শুরু থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নানা প্রশ্নের মুখে ছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তাই এই চেষ্টা।’
বিএনপিকে কোন ছাড় দেয়ার পরিকল্পনা আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের স্বপ্ন বিএনপির পূরণ হবে না, এটা তো আমাদের সাধারণ সম্পাদক অলরেডি বলেছেন।’
‘একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তারা (বিএনপি) এই দাবি তুলেছিল। আমারা সংবিধানের বাইরে যাইনি। বিএনপি কিন্তু নির্বাচনে এসেছিল।’
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যাপক ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। এই প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন দিলে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।
তবে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী খোলা মনে বলেছেন- সব দল নির্বাচনে আসুক। সব দলকে নিয়েই আমরা ভোট করতে চাই। বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে ভোট করতে চাই। নির্বাচন ফেয়ার হবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
তিনি এও জানান ‘বিএনপির সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন বাধা থাকবে না।’
তবে বিএনপি বলছে, ‘আওয়ামী লীগ অতীতেও কথা রাখেনি। ভবিষ্যতেও রাখবে না।’ তাই আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিত নির্বাচনে আসা। তবে সংবিধান পরিপন্থি কোন দাবি মেনে নেয়া হবে না। বিএনপির হুমকিকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। নির্বাচন যথা সময়েই হবে।’
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর টানা তিন মেয়াদে তেরো বছরের বেশি ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আগামী বছর (২০২৩) ডিসেম্বরে বা পরবর্তী বছর (২০২৪) জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।