alt

রাজনীতি

গাজীপুরে মেয়র পদে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ

প্রতিনিধি, গাজীপুর : শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহুল আলোচিত সমগ্র দেশবাসীর ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টিকারী নজরকাড়া নির্বাচন। নানাবিধ সংশয়-শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এবং জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সবার মধ্যে স্বস্তিরভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘নজির’ ও ‘মাইলফলক’ সৃষ্টিকারী এবং অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ১৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে অনেকটা বিস্ময়করভাবে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গাজীপুর সিটির তিনিই প্রথম মহিলা মেয়র। তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে মেয়র পদে তার মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তিনি যে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তেমনি সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মতো অভিজ্ঞ, দক্ষ, দলের পরিক্ষিত প্রবীণ নেতা হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়াটাও কম চমকের ব্যাপার নয়। বিজয়ী জায়েদা খাতুনকে বলা হচ্ছে ‘অন্তপুরের গৃহিণী থেকে মেয়র’। রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে একেবারেই আড়ালে থাকা জায়েদা খাতুনের বিজয়কে খাটো না করে ধরলেও তা এ অচিন্তনীয় বিজয়ই এখন শুধু গাজীপুর সিটি নয় পুরো দেশে ‘ টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে।

আজমত উল্লা খানের পরজয়ের নেপথ্যে

গাজীপুরের রাজনীতি অঙ্গণে আজমত উল্লা খানকে ‘তথ্যভান্ডারসমৃদ্ধ সুবক্তা’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন অনেকেই। কলেজ জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। বিভিন্ন দলীয় পদের পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, মহানগর হওয়ার পর দু’বার মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সাবেক টঙ্গী পৌরসভার তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর তিনি ২০১৩ সালের সিটির প্রথম নির্বাচন এবং এ বারের নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত কম ভোটের ব্যবধানে হলেও কেন হারলেন এ প্রশ্ন শুধু দলের ভেতর নয় সর্বত্র আলোচনা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

প্রথমত : এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি বা অন্য কোন শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় তিনি অনেকটা নির্ভার ও বিজয়ের ব্যাপারে তার প্রবল আত্মবিশ^াস ও অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া তা নির্বাচনী প্রচারণায় তার কৌশলগত ভুল ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। দলীয় নেতাকর্মী এমনকি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও পথসভা ইত্যাদি করলেও সাধারণ ভোটারদের কাছে যেতে এবং তাদের সমর্থন আদায় করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কেউ কেউ মনে করেন অপ্রকাশ্য হলেও দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিং তার জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন আঞ্চলিকতাও এ ক্ষেত্রে দায়ী। অর্থাৎ গাজীপুর সিটিকে ‘জয়দেবপুর অর্থাৎ উত্তরাঞ্চল’ এবং ‘ টঙ্গী অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চল’ এ দু’টি আঞ্চলিকভাগে ভাগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের হিসাব-নিকাশকে সরাসরি সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে অধিকাংশ ও গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি টঙ্গী থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আর জয়দেবপুর বরাবরই উপেক্ষিত। তাই এ হিসাব-নিকাশের পাল্লায় বেশ কিছু ভোটার টঙ্গীর আজমত উল্লা খানকে বাদ দিয়ে জয়দেবপুরের জায়েদা খাতুন আর্থাৎ জাহাঙ্গীর আলমের মাকেই পছন্দের প্রার্থী হিসেবে ভোট দিয়েছেন। আবার অনেকের মতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রক্ষা করার ঘাটতিও যথেষ্ট রয়েছে। আবার কেউ কেউ আরও এগিয়ে গিয়ে বলেন তিনি তেমন ‘ কর্মীবান্ধব’ নন। তার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে, যা তিনি ভাঙতে সচেতন নন বা তেমন চেষ্টাও করেননি। এছাড়া তিনি দলীয় ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু নীরব ভোটারদের আমলে নেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন না। এ বারের নির্বাচনে অবশ্য আরেকটি ব্যাপার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। গাজীপুর মহানগরীতে মহিলা গার্মেন্ট শ্রমিকদের অনেকেই ভোটার। স্থানীয় ও অস্থানীয় এসব মহিলা ভোটারদের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি আগ্রহ ও আস্থার কারণেই এদের মধ্যে অনেকেই মেয়র নারী প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেছে নিয়ে তার প্রতীকের ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন।

গৃহিণী থেকে মেয়র : জায়েদা খাতুনের বিস্ময়কর জয়

এখন গাজীপুর মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত হলেও জায়েদা খাতুনের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিয়ে, বিয়ে- পরবর্তী সংসার জীবন দুই ছেলে এক মেয়ের লালন-পালন ও পড়াশোনা এবং স্বামী হারানো সবকিছুই তখনকার অজপাড়া গাঁ কানাইয়া গ্রামে। বাড়ির অন্তঃপুরেই তার ৬৩ বছরের জীবন তিনি কাটিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রশন্ন বা যা ই হোক ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদে তিনি শুধু ঘরের বাইরে নয়, রাজনীতি এমনকি নির্বাচনে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মর্যাদাপূর্ণ মেয়রের চেয়ারে বসার অভাবনীয় সম্মান অর্জন করেছেন। একেবারেই নিভৃতচারী গৃহিণীর অল্পদিনের ব্যবধানে তার এ অর্জনের নেপথ্যের কারণ খুঁজছেন অনেকেই।

প্রথমত, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও মেয়র সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর ভাগ্যবিপর্যস্ত ছেলের মহাদুর্যোগের দিনে অভয়বাণী নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের পাশে দাঁড়ান মা জায়েদা খাতুন। সাধারণ ক্ষমায় দলে ফিরলে জাহাঙ্গীর আলম এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দিনে মা জায়েদা খাতুনও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তার প্রার্থী হওয়া চমক সৃষ্টি করলেও সময়ের ব্যাপ্তিতে তিনি তার পরিচয় ছাপিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠেন। নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ এবং গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তিনি দ্রুত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। প্রচারণাকালে তার ছেলের ব্যাপারে মিথ্যাচার, অবিচার এবং দোষারোপের ঘটনা আবেগময় ভাষায় বক্তব্য রাখার কারণে তিনি ভোটার ও সমর্থকদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সমর্থন লাভ করেন। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদে এবং ছেলের ব্যাপক উন্নয়নমূলক অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার রক্ষা করার জন্য মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বলে তিনি জানান। নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন সময়ে বাধা দেয়া এবং হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তার প্রতি সাধারণ ভোটারদের সহানুভূতি ও সমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অন্য একটি বিষয় হলো নারী ভোটারদের তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদর্শন। গাজীপুরের প্রচুর গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কর্মরত স্থানীয় ও অস্থানীয় নারী শ্রমিক নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের উন্নতিকল্পে নারী মেয়র অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবেন এ বিশ^াসে তাদের ভোট লাভে তিনি সমর্থ হন।

ফলাফল মেনে নিয়েছেন আজমত উল্লা খান সহযোগিতার আশ্বাস

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেছেন, ইভিএমে কিছু ত্রুটি থাকলেও ফলাফল মেনে নিয়েছি। যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তাকে আমি স্বাগত জানাই। তিনি (জায়েদা খাতুন) যদি চান তাহলে আমি সহযোগিতা করবো। দেখা যাক ওনি কি ধরনের সহযোগিতা চায়।

শুক্রবার (২৬ মে) সকালে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমি রায় মেনে নিয়েছি। অন্য কেউ পরাজিত হলে কি মেনে নিতো কি না-সেই প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি একটা নৈতিকতা মেন্টেইন করি। সুতরাং নির্বাচন আমার বিপক্ষে গেলেই আমি বলবো তা সঠিক হয়নি এ কালচার থেকে জাতিকে বের হয়ে আসতে হবে।

পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে জানিয়ে আজমত বলেন, আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম, দলের সবাই বসে পর্যালোচনা করে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে।

গাজীপুরবাসী ও প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় উপহার দিলেন জায়েদা খাতুন

জয়লাভের পর গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে তার ছয়দানার নিজ বাসভবনে জায়েদা খাতুন সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময়ে তার পাশে ছিলেন ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জায়েদা খাতুন বলেন আমার এ বিজয় গাজীপুরবাসী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিলাম।

জায়েদা খাতুন বলেন, আমার ছেলের বিষয়ে সত্য প্রমাণের জন্যই আমার নির্বাচনে আসা। কিছু কিছু লোক আছে, যারা যা করেছে তা তাদের দিলেই (মনে) আছে। আমি গাজীপুরবাসীর জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। আমি আজমত উল্লাহ খানকে জিজ্ঞেস করে ও তার মতামত নিয়েই কাজ করবো। একজনের জায়গা দিয়ে রাস্তা যাবে, একজনের জায়গা দিয়ে ড্রেন যাবে কিন্তু দিতে চাইবে না। তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করবো। এলাকার মানুষকে নিয়েই কাজ করবো। আমার ছেলে ও আমার ব্যাপারে কোন মিথ্যা কেউ পায় নাই। মিথ্যা অভিযোগ তোলার দুঃখেই, মিথ্যার প্রতিবাদে আমার ভোটে আসা। গাজীপুরের মানুষকে এত ভালোবাসছি এবার দেখি তারা আমারে কেমন ভালোবাসে। এই ভালোবাসার প্রমাণ নিতেই ভোটে আসা। আমি গাজীপুরবাসীর অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।

তিনি বলেন গাজীপুরবাসী সবাইকে শুভেচ্ছা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি ওনাকে ধন্যবাদ জানাই। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে। আমি আমার ভোটের হিসাব পেয়েছি। এই জন্য আমি আবারো প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই ।

বিজয়টা আপনি কাকে উপহার দিবেন সংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিজয় আমি গাজীপুরবাসীকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও উপহার দিবো।

এ সময়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এইখানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার তিনটি ট্রাম হয়ে গেছে। আমার মা আমার শিক্ষকের মতো। আমার সব কাজ তিনি দেখাশুনা করেন। এখন আমি মেয়র নই কিন্তু আমার মা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সেই হিসেবে মা’র এবং এই শহরের যতো কাজ আছে আমি মায়ের সঙ্গে থেকে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় কাজগুলো কারবো। আজমত উল্লা খান আমার বড় ভাই। তার পরামর্শ এবং এখানে যেসব রাজনৈতিক নেতারা আছেন সবার সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ করে আধুনিক শহর গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই। আমি এবং মা তার কাছে যাবো। আমাদের শহর সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করার জন্য আমরা মা ও ছেলে প্রস্তুত আছি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে গভীর রাতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেছেন। মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ভোটের ফলাফলে তৃতীয় হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন : ফলাফল ঘোষণায় অপ্রত্যাশিত বিলম্ব

গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অভাবনীয় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩-৪টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও একজন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা এবং হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ছাড়া প্রথম থেকেই নির্বাচনী পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ ও নির্বাচনের সহায়ক। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণের জন্য ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। গাজীপুর মহানগরীর মর্যাদা পেলেও এখন অনেক এলাকায় রয়েছে গ্রামীণ পরিবেশ। অনেক এলাকায় যাতায়াতের সুবিধারও অভাব রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ ও বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে এবং ইভিএম এর মাধ্যমে সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হলেও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় যথেষ্ট বিলম্ব দেখা দেয়। ইভিএম-এ ভোট গণনা দ্রুত ও সহজতর হলেও ইভিএমজনিত ত্রুটি ও জটিলতায় বিলম্বের অন্যতম কারণ বলে জানা যায়।

মূলত, প্রায় ১২ লাখ ভোটারদের সংখ্যাধিক্য এবং ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফল সমন্বয় করে ফলাফল প্রকাশ করাটা সত্যিকার অর্থে সময় সাপেক্ষ এটা একটা যুক্তি হতে পারে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। ইভিএম জটিলতায়ও ধীর গতির কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব এবং কোন কোন কেন্দ্রে বেশ কিছু সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০০টি ভোট কেন্দ্রে সংরক্ষিত এলাকায় জমায়েত ভোটারদের ভোট গ্রহণ শেষ করতে বিকেল ৪টার পরও ২-৩ ঘণ্টা লেগে যায়। স্বাভাবিকভাবে এসব কেন্দ্রের ফলাফল শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিতেও বিলম্ব ঘটে। ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা দেয়া এবং সেগুলো ল্যাপটপে অর্ন্তভুক্তি ও সমন্বয় সাধন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ফলাফল সিটে স্বাক্ষর নেয়া ইত্যাদিও বিলম্বের কারণ বলে জানা যায়। প্রার্থী এবং তাদের বিপুল সংখ্যক সমর্থকদের উপস্থিতির কারণে ফলাফল ঘোষণায় মাঝে মাঝে বিঘœ ঘটে। আরেকটি বিষয় হলো প্রতিটি কেন্দ্রের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল একসঙ্গে ঘোষণা এবং সেগুলো ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করতেও অনেক সময় লেগে যায়। ফলে রাত ১০টার পরে কাউন্সিলরদের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রেখে শুধুমাত্র মেয়র প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রাপ্ত ফলাফল ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে পাঠিয়ে সবকটি কেন্দ্রের সমন্বিত ফলাফল ঘোষণা করতে রাত ৩টার অধিক গড়ায়।

ছবি

বিএনপি দিনের আলোতে রাতের অন্ধকার দেখে : কাদের

ছবি

‘স্বার্থহীন’ রাজনীতির উদাহরণ পঙ্কজ ভট্টাচার্য

ছবি

মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা: কাদের

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

দুই ধাপের ভোটেই এমপির স্বজনরা

প্রথম ধাপে চার উপজেলায় ভোটের প্রয়োজন নেই

ছবি

মাদারীপুরে দুইটি উপজেলায় ২১ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

ছবি

দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত করছে : কাদের

ছবি

উপজেলা নির্বাচন: পরশুরামে এবারও ভোটের প্রয়োজন হবে না

চেয়ারম্যান পদে জামায়াত নেতার মনোনযন প্রত্যাহার, দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নেই

ছবি

হাতিয়াতে ভোট ছাড়াই জয়ী হচ্ছেন চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস-চেয়ারম্যান

ছবি

তাপপ্রবাহের কারণে বিএনপির ২৬ এপ্রিলের সমাবেশ স্থগিত

লালমনিরহাটে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই সাবেক মন্ত্রীর ভাই-ছেলের লড়াই

ছবি

শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন যারা

ছবি

সেনবাগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন পদে ১৭ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

কসবায় নির্বাচন থেকে সরছেন না মন্ত্রীর আত্মীয় ছাইদুর

ছবি

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করে প্রাইভেট হাসপাতালের রোগ নির্ণয় পরীক্ষার ফি নির্ধারণ: স্বাস্থ্য মন্ত্রী

ছবি

রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় বিএনপি : ওবায়দুল কাদের

ছবি

১০ দিনে ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করবে ছাত্রলীগ

ছবি

সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

আমরা সবাই মিলে প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের রাজনীতি করতে চাই-- অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি

ছবি

স্থানীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই: ইসি আলমগীর

ছবি

সরকার চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে, যেকোনো সময় ডুবে যাবে: রিজভী

ছবি

ইরাকে ইরানপন্থি বাহিনীর ঘাঁটিতে বিমান হামলায় হতাহত ৭

ছবি

আবদুল আউয়াল মিন্টু হাসপাতালে ভর্তি

ছবি

আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে : কাদের

ছবি

আমি লজ্জিত-দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী, দোষীদের কপালে দুঃখ আছে : পলক

ছবি

যারা নুন-ভাতের কথাও ভাবতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংসের চিন্তা করে : শেখ হাসিনা

মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আ’লীগের

ছবি

মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিলেন : শেখ হাসিনা

ছবি

বিএনপিসহ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে : ওবায়দুল কাদের

ছবি

মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ছবি

মনোনয়নে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা, তবে দল দু’টির বর্জনের ঘোষণা

ছবি

আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা বিএনপির

ছবি

হিটলারের চেয়েও ভয়ঙ্কর নেতানিয়াহু : ওবায়দুল কাদের

tab

রাজনীতি

গাজীপুরে মেয়র পদে জয়-পরাজয় নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ

প্রতিনিধি, গাজীপুর

শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩

গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহুল আলোচিত সমগ্র দেশবাসীর ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টিকারী নজরকাড়া নির্বাচন। নানাবিধ সংশয়-শঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এবং জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সবার মধ্যে স্বস্তিরভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘নজির’ ও ‘মাইলফলক’ সৃষ্টিকারী এবং অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন ১৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করে অনেকটা বিস্ময়করভাবে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গাজীপুর সিটির তিনিই প্রথম মহিলা মেয়র। তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সঙ্গে নিয়ে মেয়র পদে তার মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় তিনি যে চমক সৃষ্টি করেছিলেন তেমনি সরকারি দল আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের মতো অভিজ্ঞ, দক্ষ, দলের পরিক্ষিত প্রবীণ নেতা হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়াটাও কম চমকের ব্যাপার নয়। বিজয়ী জায়েদা খাতুনকে বলা হচ্ছে ‘অন্তপুরের গৃহিণী থেকে মেয়র’। রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে একেবারেই আড়ালে থাকা জায়েদা খাতুনের বিজয়কে খাটো না করে ধরলেও তা এ অচিন্তনীয় বিজয়ই এখন শুধু গাজীপুর সিটি নয় পুরো দেশে ‘ টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে।

আজমত উল্লা খানের পরজয়ের নেপথ্যে

গাজীপুরের রাজনীতি অঙ্গণে আজমত উল্লা খানকে ‘তথ্যভান্ডারসমৃদ্ধ সুবক্তা’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন অনেকেই। কলেজ জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। বিভিন্ন দলীয় পদের পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, মহানগর হওয়ার পর দু’বার মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সাবেক টঙ্গী পৌরসভার তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর তিনি ২০১৩ সালের সিটির প্রথম নির্বাচন এবং এ বারের নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত কম ভোটের ব্যবধানে হলেও কেন হারলেন এ প্রশ্ন শুধু দলের ভেতর নয় সর্বত্র আলোচনা বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

প্রথমত : এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপি বা অন্য কোন শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় তিনি অনেকটা নির্ভার ও বিজয়ের ব্যাপারে তার প্রবল আত্মবিশ^াস ও অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া তা নির্বাচনী প্রচারণায় তার কৌশলগত ভুল ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। দলীয় নেতাকর্মী এমনকি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও পথসভা ইত্যাদি করলেও সাধারণ ভোটারদের কাছে যেতে এবং তাদের সমর্থন আদায় করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কেউ কেউ মনে করেন অপ্রকাশ্য হলেও দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিং তার জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন আঞ্চলিকতাও এ ক্ষেত্রে দায়ী। অর্থাৎ গাজীপুর সিটিকে ‘জয়দেবপুর অর্থাৎ উত্তরাঞ্চল’ এবং ‘ টঙ্গী অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চল’ এ দু’টি আঞ্চলিকভাগে ভাগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের হিসাব-নিকাশকে সরাসরি সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে অধিকাংশ ও গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি টঙ্গী থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আর জয়দেবপুর বরাবরই উপেক্ষিত। তাই এ হিসাব-নিকাশের পাল্লায় বেশ কিছু ভোটার টঙ্গীর আজমত উল্লা খানকে বাদ দিয়ে জয়দেবপুরের জায়েদা খাতুন আর্থাৎ জাহাঙ্গীর আলমের মাকেই পছন্দের প্রার্থী হিসেবে ভোট দিয়েছেন। আবার অনেকের মতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রক্ষা করার ঘাটতিও যথেষ্ট রয়েছে। আবার কেউ কেউ আরও এগিয়ে গিয়ে বলেন তিনি তেমন ‘ কর্মীবান্ধব’ নন। তার সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দূরত্ব রয়েছে, যা তিনি ভাঙতে সচেতন নন বা তেমন চেষ্টাও করেননি। এছাড়া তিনি দলীয় ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু নীরব ভোটারদের আমলে নেয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন না। এ বারের নির্বাচনে অবশ্য আরেকটি ব্যাপার নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। গাজীপুর মহানগরীতে মহিলা গার্মেন্ট শ্রমিকদের অনেকেই ভোটার। স্থানীয় ও অস্থানীয় এসব মহিলা ভোটারদের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি আগ্রহ ও আস্থার কারণেই এদের মধ্যে অনেকেই মেয়র নারী প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেছে নিয়ে তার প্রতীকের ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন।

গৃহিণী থেকে মেয়র : জায়েদা খাতুনের বিস্ময়কর জয়

এখন গাজীপুর মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত হলেও জায়েদা খাতুনের জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিয়ে, বিয়ে- পরবর্তী সংসার জীবন দুই ছেলে এক মেয়ের লালন-পালন ও পড়াশোনা এবং স্বামী হারানো সবকিছুই তখনকার অজপাড়া গাঁ কানাইয়া গ্রামে। বাড়ির অন্তঃপুরেই তার ৬৩ বছরের জীবন তিনি কাটিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রশন্ন বা যা ই হোক ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদে তিনি শুধু ঘরের বাইরে নয়, রাজনীতি এমনকি নির্বাচনে দাঁড়ানোর দুঃসাহস দেখিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মর্যাদাপূর্ণ মেয়রের চেয়ারে বসার অভাবনীয় সম্মান অর্জন করেছেন। একেবারেই নিভৃতচারী গৃহিণীর অল্পদিনের ব্যবধানে তার এ অর্জনের নেপথ্যের কারণ খুঁজছেন অনেকেই।

প্রথমত, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার ও মেয়র সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর ভাগ্যবিপর্যস্ত ছেলের মহাদুর্যোগের দিনে অভয়বাণী নিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের পাশে দাঁড়ান মা জায়েদা খাতুন। সাধারণ ক্ষমায় দলে ফিরলে জাহাঙ্গীর আলম এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হবেন এটা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দিনে মা জায়েদা খাতুনও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তার প্রার্থী হওয়া চমক সৃষ্টি করলেও সময়ের ব্যাপ্তিতে তিনি তার পরিচয় ছাপিয়ে ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠেন। নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিন থেকেই ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তিনি। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ এবং গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে তিনি দ্রুত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকেন। প্রচারণাকালে তার ছেলের ব্যাপারে মিথ্যাচার, অবিচার এবং দোষারোপের ঘটনা আবেগময় ভাষায় বক্তব্য রাখার কারণে তিনি ভোটার ও সমর্থকদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সমর্থন লাভ করেন। ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি অবিচারের প্রতিবাদে এবং ছেলের ব্যাপক উন্নয়নমূলক অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার অঙ্গীকার রক্ষা করার জন্য মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বলে তিনি জানান। নির্বাচনী প্রচারণাকালে বিভিন্ন সময়ে বাধা দেয়া এবং হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তার প্রতি সাধারণ ভোটারদের সহানুভূতি ও সমর্থন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অন্য একটি বিষয় হলো নারী ভোটারদের তার প্রতি ব্যাপক সমর্থন ও সহানুভূতি প্রদর্শন। গাজীপুরের প্রচুর গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কর্মরত স্থানীয় ও অস্থানীয় নারী শ্রমিক নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের উন্নতিকল্পে নারী মেয়র অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারবেন এ বিশ^াসে তাদের ভোট লাভে তিনি সমর্থ হন।

ফলাফল মেনে নিয়েছেন আজমত উল্লা খান সহযোগিতার আশ্বাস

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান বলেছেন, ইভিএমে কিছু ত্রুটি থাকলেও ফলাফল মেনে নিয়েছি। যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তাকে আমি স্বাগত জানাই। তিনি (জায়েদা খাতুন) যদি চান তাহলে আমি সহযোগিতা করবো। দেখা যাক ওনি কি ধরনের সহযোগিতা চায়।

শুক্রবার (২৬ মে) সকালে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। আমি রায় মেনে নিয়েছি। অন্য কেউ পরাজিত হলে কি মেনে নিতো কি না-সেই প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি একটা নৈতিকতা মেন্টেইন করি। সুতরাং নির্বাচন আমার বিপক্ষে গেলেই আমি বলবো তা সঠিক হয়নি এ কালচার থেকে জাতিকে বের হয়ে আসতে হবে।

পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে জানিয়ে আজমত বলেন, আমি যেহেতু দলীয় প্রার্থী ছিলাম, দলের সবাই বসে পর্যালোচনা করে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করা হবে।

গাজীপুরবাসী ও প্রধানমন্ত্রীকে বিজয় উপহার দিলেন জায়েদা খাতুন

জয়লাভের পর গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৪টার দিকে তার ছয়দানার নিজ বাসভবনে জায়েদা খাতুন সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময়ে তার পাশে ছিলেন ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জায়েদা খাতুন বলেন আমার এ বিজয় গাজীপুরবাসী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিলাম।

জায়েদা খাতুন বলেন, আমার ছেলের বিষয়ে সত্য প্রমাণের জন্যই আমার নির্বাচনে আসা। কিছু কিছু লোক আছে, যারা যা করেছে তা তাদের দিলেই (মনে) আছে। আমি গাজীপুরবাসীর জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করবো। আমি আজমত উল্লাহ খানকে জিজ্ঞেস করে ও তার মতামত নিয়েই কাজ করবো। একজনের জায়গা দিয়ে রাস্তা যাবে, একজনের জায়গা দিয়ে ড্রেন যাবে কিন্তু দিতে চাইবে না। তাই সবাইকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করবো। এলাকার মানুষকে নিয়েই কাজ করবো। আমার ছেলে ও আমার ব্যাপারে কোন মিথ্যা কেউ পায় নাই। মিথ্যা অভিযোগ তোলার দুঃখেই, মিথ্যার প্রতিবাদে আমার ভোটে আসা। গাজীপুরের মানুষকে এত ভালোবাসছি এবার দেখি তারা আমারে কেমন ভালোবাসে। এই ভালোবাসার প্রমাণ নিতেই ভোটে আসা। আমি গাজীপুরবাসীর অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।

তিনি বলেন গাজীপুরবাসী সবাইকে শুভেচ্ছা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি ওনাকে ধন্যবাদ জানাই। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে। আমি আমার ভোটের হিসাব পেয়েছি। এই জন্য আমি আবারো প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই ।

বিজয়টা আপনি কাকে উপহার দিবেন সংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিজয় আমি গাজীপুরবাসীকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও উপহার দিবো।

এ সময়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এইখানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার তিনটি ট্রাম হয়ে গেছে। আমার মা আমার শিক্ষকের মতো। আমার সব কাজ তিনি দেখাশুনা করেন। এখন আমি মেয়র নই কিন্তু আমার মা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। সেই হিসেবে মা’র এবং এই শহরের যতো কাজ আছে আমি মায়ের সঙ্গে থেকে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় কাজগুলো কারবো। আজমত উল্লা খান আমার বড় ভাই। তার পরামর্শ এবং এখানে যেসব রাজনৈতিক নেতারা আছেন সবার সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ করে আধুনিক শহর গড়ে তোলার চেষ্টা করবো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাই। আমি এবং মা তার কাছে যাবো। আমাদের শহর সুন্দরভাবে সাজানোর জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করার জন্য আমরা মা ও ছেলে প্রস্তুত আছি।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে গভীর রাতে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেছেন। মোট ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ভোটের ফলাফলে তৃতীয় হওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন : ফলাফল ঘোষণায় অপ্রত্যাশিত বিলম্ব

গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অভাবনীয় অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩-৪টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও একজন মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা এবং হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ছাড়া প্রথম থেকেই নির্বাচনী পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ ও নির্বাচনের সহায়ক। আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৫৭টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণের জন্য ৪৮০টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। গাজীপুর মহানগরীর মর্যাদা পেলেও এখন অনেক এলাকায় রয়েছে গ্রামীণ পরিবেশ। অনেক এলাকায় যাতায়াতের সুবিধারও অভাব রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ ও বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হলে এবং ইভিএম এর মাধ্যমে সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হলেও নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় যথেষ্ট বিলম্ব দেখা দেয়। ইভিএম-এ ভোট গণনা দ্রুত ও সহজতর হলেও ইভিএমজনিত ত্রুটি ও জটিলতায় বিলম্বের অন্যতম কারণ বলে জানা যায়।

মূলত, প্রায় ১২ লাখ ভোটারদের সংখ্যাধিক্য এবং ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফল সমন্বয় করে ফলাফল প্রকাশ করাটা সত্যিকার অর্থে সময় সাপেক্ষ এটা একটা যুক্তি হতে পারে বলে অসমর্থিত সূত্রে জানা যায়। ইভিএম জটিলতায়ও ধীর গতির কারণে ভোটগ্রহণে বিলম্ব এবং কোন কোন কেন্দ্রে বেশ কিছু সময় ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকায় প্রায় ২০০টি ভোট কেন্দ্রে সংরক্ষিত এলাকায় জমায়েত ভোটারদের ভোট গ্রহণ শেষ করতে বিকেল ৪টার পরও ২-৩ ঘণ্টা লেগে যায়। স্বাভাবিকভাবে এসব কেন্দ্রের ফলাফল শহরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে স্থাপিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিতেও বিলম্ব ঘটে। ৪৮০টি কেন্দ্রের ফলাফল রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা দেয়া এবং সেগুলো ল্যাপটপে অর্ন্তভুক্তি ও সমন্বয় সাধন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নির্ধারিত ফলাফল সিটে স্বাক্ষর নেয়া ইত্যাদিও বিলম্বের কারণ বলে জানা যায়। প্রার্থী এবং তাদের বিপুল সংখ্যক সমর্থকদের উপস্থিতির কারণে ফলাফল ঘোষণায় মাঝে মাঝে বিঘœ ঘটে। আরেকটি বিষয় হলো প্রতিটি কেন্দ্রের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফলাফল একসঙ্গে ঘোষণা এবং সেগুলো ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করতেও অনেক সময় লেগে যায়। ফলে রাত ১০টার পরে কাউন্সিলরদের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রেখে শুধুমাত্র মেয়র প্রার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রাপ্ত ফলাফল ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে পাঠিয়ে সবকটি কেন্দ্রের সমন্বিত ফলাফল ঘোষণা করতে রাত ৩টার অধিক গড়ায়।

back to top