সোমবার সকালে কোপা ফাইনালে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। উরুগুয়েকে বিদায় করে ২৩ বছর পর আবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়া। আর আগের দিনই কানাডাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে আর্জেন্টিনা।
কোপা আমেরিকার আসরে এ নিয়ে ১৬তম বারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। এর আগের ১৫ লড়াইয়ে অবশ্য জয়ের পাল্লা ভারী বর্তমান চ্যাম্পিয়নদেরই। সাতটি ম্যাচে জয় পেয়েছে তারা। অন্যদিকে কলম্বিয়ায় জয় তিন ম্যাচে। বাকি পাঁচটি ম্যাচ হয়েছে ড্র।
তবে ড্র হওয়া পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচের ফলাফল এসেছে। অর্থাৎ নকআউট পর্বে মুখোমুখি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। যেখানে তিনবারই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ১৯৯৩ সালে সেমি-ফাইনালে ও ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে এবং ২০২১ সালে সেমি-ফাইনালে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের গত আসরের সেমি-ফাইনালে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বীরত্বে সেদিন জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা লাউতারো মার্তিনেজ এবং লুইস দিয়াজের গোলে ১-১ গোলে সমতায় শেষ হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ডেভিনসন সানচেজ, ইয়েরি মিনা এবং এদউইন কার্দোনার শট ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো।
আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়া ইতিহাস জুড়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪০টি ম্যাচে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে আর্জেন্টিনার জয়ের সংখ্যা ২০টি, আর নয় ম্যাচে জিতেছে কলম্বিয়া। ১১টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। দুই দলের মধ্যে শেষ দেখা হয়েছিল ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে। আলবিসেলেস্তেরা সেই ম্যাচে লাউতারোর গোলে জয় পায় ১-০ ব্যবধানে। সেই হারের পর থেকে টানা ২৮ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে কলম্বিয়া।
একদিকে লিওনেল মেসি, আরেকদিকে হামেস রদ্রিগেজ; একদিকে লিওনেল স্কালোনি, আরেকদিকে নেস্তর লরেঞ্জো। ভক্ত-সমর্থকরা তাই দারুণ একটি লড়াই দেখার প্রত্যাশা করতেই পারেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, কলম্বিয়া শেষবার হেরেছিল আর্জেন্টিনার কাছেই। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
এক শতাব্দীরও বেশি আগে ১৯১৬ সালে যাত্রা শুরু করে কোপা আমেরিকা। তখন এই প্রতিযোগিতা পরিচিত ছিল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ নামে। খেলা হতো রাউন্ড রবিন বা লীগ পদ্ধতিতে, পয়েন্টের ভিত্তিতে জিততে হতো শিরোপা। তাই ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল। ১৯৭৫ সালে নাম পাল্টে কোপা আমেরিকা করে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (কনমেবল)। পাশাপাশি ফরম্যাটেও আসে পরিবর্তন। গ্রুপ পর্ব শেষে চালু হয় নকআউট পর্বের ব্যবস্থা। যদিও মাঝে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের আসরে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছিল পুরনো সেই লীগ পদ্ধতিতে।
সে যাই হোক, ফাইনালের মাধ্যমে বিজয়ী খুঁজে নেয়া হয়েছে— এমন ক্ষেত্রে ১৫ বারের শিরোপাজয়ী আর্জেন্টিনার সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। কোপায় এর আগে ছয়বার ফাইনাল খেলেছে দলটি। দুবার চ্যাম্পিয়ন হলেও বাকি চারবার তারা পেয়েছে রানার্সআপ হওয়ার যন্ত্রণা।
কোপার ১৯৯৩ সালের আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে অংশ নিয়েই শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনা। শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে তারা ২-১ গোলে জেতে মেক্সিকোর বিপক্ষে। এরপর টানা ২৮ বছর শিরোপাখরায় ভুগতে হয় তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। সেই অপেক্ষার ইতি ঘটে আরেকটি কোপা আমেরিকা দিয়েই। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ আসরের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই ১-০ গোলে হারিয়ে উল্লাসে মাতে আর্জেন্টিনা।
মাঝে চারবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরা হয়নি আর্জেন্টিনার। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে পরপর দুই আসরে ব্রাজিলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা। প্রথমটিতে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর (কোনো অতিরিক্ত সময় ছিল না) টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হার মানে দলটি। পরেরটিতে তারা রীতিমতো বিধ্বস্ত হয় ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের আসরেও ভীষণ আক্ষেপে পুড়তে হয় আর্জেন্টিনাকে। দুবারই চিলির বিপক্ষে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে হারে তারা। একবার ৪-১ ব্যবধানে, আরেকবার ৪-২ ব্যবধানে।
২০১৬ সালের ফাইনালে মহাতারকা মেসি গোল করতে ব্যর্থ হন টাইব্রেকারে। তীব্র হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন তিনি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে আসেন। সেই থেকে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছেন তিনি। ২০২১ সালে কোপার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার পর ২০২২ সালে কাতারের মাটিতে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জেতে পরম আকাঙ্খিত বিশ্বকাপ। মাঝে ঘরে তোলে ফিনালিসিমাও।
মেসির নেতৃত্বে আরেকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব কাছে আর্জেন্টিনা। এবারের আসরের ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারাতে পারলে এককভাবে (উরুগুয়েও ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন) কোপার সফলতম দলে পরিণত হবে তারা, জিতবে রেকর্ড ১৬তম শিরোপা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয় কিনা তা জানতে থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়।
শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
সোমবার সকালে কোপা ফাইনালে মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। উরুগুয়েকে বিদায় করে ২৩ বছর পর আবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়া। আর আগের দিনই কানাডাকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট কাটে আর্জেন্টিনা।
কোপা আমেরিকার আসরে এ নিয়ে ১৬তম বারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। এর আগের ১৫ লড়াইয়ে অবশ্য জয়ের পাল্লা ভারী বর্তমান চ্যাম্পিয়নদেরই। সাতটি ম্যাচে জয় পেয়েছে তারা। অন্যদিকে কলম্বিয়ায় জয় তিন ম্যাচে। বাকি পাঁচটি ম্যাচ হয়েছে ড্র।
তবে ড্র হওয়া পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিন ম্যাচের ফলাফল এসেছে। অর্থাৎ নকআউট পর্বে মুখোমুখি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। যেখানে তিনবারই জয় পেয়েছে আর্জেন্টিনা। ১৯৯৩ সালে সেমি-ফাইনালে ও ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে এবং ২০২১ সালে সেমি-ফাইনালে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
লাতিন আমেরিকার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের গত আসরের সেমি-ফাইনালে এমিলিয়ানো মার্তিনেজের বীরত্বে সেদিন জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ের খেলা লাউতারো মার্তিনেজ এবং লুইস দিয়াজের গোলে ১-১ গোলে সমতায় শেষ হওয়ার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ডেভিনসন সানচেজ, ইয়েরি মিনা এবং এদউইন কার্দোনার শট ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো।
আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়া ইতিহাস জুড়ে এখন পর্যন্ত মোট ৪০টি ম্যাচে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে আর্জেন্টিনার জয়ের সংখ্যা ২০টি, আর নয় ম্যাচে জিতেছে কলম্বিয়া। ১১টি ম্যাচ হয়েছে ড্র। দুই দলের মধ্যে শেষ দেখা হয়েছিল ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে। আলবিসেলেস্তেরা সেই ম্যাচে লাউতারোর গোলে জয় পায় ১-০ ব্যবধানে। সেই হারের পর থেকে টানা ২৮ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে কলম্বিয়া।
একদিকে লিওনেল মেসি, আরেকদিকে হামেস রদ্রিগেজ; একদিকে লিওনেল স্কালোনি, আরেকদিকে নেস্তর লরেঞ্জো। ভক্ত-সমর্থকরা তাই দারুণ একটি লড়াই দেখার প্রত্যাশা করতেই পারেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, কলম্বিয়া শেষবার হেরেছিল আর্জেন্টিনার কাছেই। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ১-০ গোলে জিতেছিল আলবিসেলেস্তেরা।
এক শতাব্দীরও বেশি আগে ১৯১৬ সালে যাত্রা শুরু করে কোপা আমেরিকা। তখন এই প্রতিযোগিতা পরিচিত ছিল দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ নামে। খেলা হতো রাউন্ড রবিন বা লীগ পদ্ধতিতে, পয়েন্টের ভিত্তিতে জিততে হতো শিরোপা। তাই ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিক ফাইনাল। ১৯৭৫ সালে নাম পাল্টে কোপা আমেরিকা করে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (কনমেবল)। পাশাপাশি ফরম্যাটেও আসে পরিবর্তন। গ্রুপ পর্ব শেষে চালু হয় নকআউট পর্বের ব্যবস্থা। যদিও মাঝে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে ১৯৮৯ ও ১৯৯১ সালের আসরে চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছিল পুরনো সেই লীগ পদ্ধতিতে।
সে যাই হোক, ফাইনালের মাধ্যমে বিজয়ী খুঁজে নেয়া হয়েছে— এমন ক্ষেত্রে ১৫ বারের শিরোপাজয়ী আর্জেন্টিনার সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী। কোপায় এর আগে ছয়বার ফাইনাল খেলেছে দলটি। দুবার চ্যাম্পিয়ন হলেও বাকি চারবার তারা পেয়েছে রানার্সআপ হওয়ার যন্ত্রণা।
কোপার ১৯৯৩ সালের আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে অংশ নিয়েই শেষ হাসি হাসে আর্জেন্টিনা। শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে তারা ২-১ গোলে জেতে মেক্সিকোর বিপক্ষে। এরপর টানা ২৮ বছর শিরোপাখরায় ভুগতে হয় তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। সেই অপেক্ষার ইতি ঘটে আরেকটি কোপা আমেরিকা দিয়েই। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ আসরের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদের মাটিতেই ১-০ গোলে হারিয়ে উল্লাসে মাতে আর্জেন্টিনা।
মাঝে চারবার কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠলেও শিরোপা উঁচিয়ে ধরা হয়নি আর্জেন্টিনার। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে পরপর দুই আসরে ব্রাজিলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি তারা। প্রথমটিতে নির্ধারিত সময়ের খেলা ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর (কোনো অতিরিক্ত সময় ছিল না) টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হার মানে দলটি। পরেরটিতে তারা রীতিমতো বিধ্বস্ত হয় ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের আসরেও ভীষণ আক্ষেপে পুড়তে হয় আর্জেন্টিনাকে। দুবারই চিলির বিপক্ষে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে হারে তারা। একবার ৪-১ ব্যবধানে, আরেকবার ৪-২ ব্যবধানে।
২০১৬ সালের ফাইনালে মহাতারকা মেসি গোল করতে ব্যর্থ হন টাইব্রেকারে। তীব্র হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণাও দেন তিনি। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত পাল্টে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরে আসেন। সেই থেকে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছেন তিনি। ২০২১ সালে কোপার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার পর ২০২২ সালে কাতারের মাটিতে ফ্রান্সকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা জেতে পরম আকাঙ্খিত বিশ্বকাপ। মাঝে ঘরে তোলে ফিনালিসিমাও।
মেসির নেতৃত্বে আরেকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব কাছে আর্জেন্টিনা। এবারের আসরের ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারাতে পারলে এককভাবে (উরুগুয়েও ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন) কোপার সফলতম দলে পরিণত হবে তারা, জিতবে রেকর্ড ১৬তম শিরোপা। সেই লক্ষ্য পূরণ হয় কিনা তা জানতে থাকতে হচ্ছে অপেক্ষায়।