তাসকিনের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বল। ম্যাকয়কে বোল্ড করলেন তাসকিন। আর তাতে ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা উল্লাসে মেতে উঠলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে খেলার সুবাদে প্রিয় শিষ্য জাকের আলীকে জড়িয়ে ধরলেন সহকারী কোচ সালাউদ্দিন। তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই প্রথম ওয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ এর আগে ওয়াইটওয়াশ করতে পেরেছে গত বছর দেশের মাঠে ইংল্যান্ডকে ও ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে তাদের মাঠে। এবারের উইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজে ওয়াইটওয়াশ হয়েছিলো বাংলাদেশ। আর টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করেছিলো।
এবার বাংলাদেশের ব্যাটাররা বেশ ভাল রানের পুঁজি দিয়েছিলেন বোলারদের। সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশ তুলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রান। এই মাঠের সর্বোচ্চ স্কোর এটি।ক্যারিবিয়ানে বাংলাদেশেরও সর্বোচ্চ রান।
দলকে ভালো শুরু এনে দেন একাদশে ফেরা পারভেজ হোসেন ইমন। তবে সবচেয়ে বড় আবদান জাকের আলীর। পাঁচ নম্বরে নেমে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৪১ বলে হাঁকিয়েছেন ৭২ রান। তাতে ৬ ছক্কা আর ৩ চার। ছিলেন অপরাজিত।
শুরুটা করেছিলেন পারভেজ ইমন। সৌম্য সরকারের চোটে সুযোগ পাওয়া ইমন শুরু করেন প্রথম ওভারে দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারিতে। পরে দেখান তার হাতের জোরও। এই ওপেনার করেন ২১ বলে ৩৯ রান। তাতে ২টি ছয় আর ৪টি চারের মার ছিলো।
প্রথম চার ওভারে দারুণ সব শট খেলে পারভেজ ও লিটন দাসের জুটি তুলে ৪০ রান। তিনটি স্বভাবসুলভ নান্দনিক বাউন্ডারিতে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন লিটন। তবে আবারও হতাশ করেন। সেই চিরাচরিত দোষ উইকেট বিলিয়ে দেন ১৩ বলে ১৪ রান করে।
চার নম্বরে নেমে ২৩ বলে ২৯ রান করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর পুরোটাই জাকের আলি। অবশ্য তাকে সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। ব্যাটিংয়ে এই বোলারের অবদান ১২ বলে ১৭ রান।
ক্যারিবিয়ান ধারাভাষ্যকার স্যামুয়েল বদ্রি জাকের আলীকে ক্যারিবিয়ানদের মতো পাওয়ার হিটার বললেন। শেষ ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ ৭৫ রান।জাকের আলীর অবদান ২৩ বলে ৫৮ রান করেন। শেষ ওভারে আসে ২৫ রান। বহুদিন পর ডেথ ওভারে বড় রান পেলো বাংলাদেশ।
১৯০ রান তাড়া করে জিততে হলে ব্যাটারদের রান তুলতে হয় দ্রুত। কিন্তু বাংলাদেশ উল্টো ক্যারিবীয় ব্যাটারদের দ্রুত ফিরিয়েছে। রিশাদ হোসেন ২১ রানে ৩ উইকেট, মেহেদীর ১৩ রানে ২ উইকেট, তাসকিন আহমেদের ৩০ রানে ২ উইকেট।
শুরুটা করেছিলেন তাসকিন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে তার প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন ব্রান্ডন কিংকে।তিনি অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি। এই সিরিজে তৃতীয় বার এলবিডব্লুর হলেন তিনবারই তাসকিনের বলে। শূন্য রানেই উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এই সিরিজে অসাধারণ বল করা মেহেদী ফেরান গ্রিভসকে। মেহেদীর করা দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পাঁচ বলে ৬ রান তুলেছিলেন। ২ ওভারে ৭ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিকোলাস পুরান আর জনসন চার্লস চেয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়তে। তারা ২৪ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়ে দিয়েছিলেন সেই আভাসও। কিন্তু মেহেদীর বলে উড়িয়ে, টেনে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে হতবিহ্বল হয়ে যান পুরান। কিছুসময় উইকেটে দাড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে হাঁটা ধরেন। ৫.৩ ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।
সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে পুনরায় হাসান মাহমুদ। ব্যাটিংয়ে রোস্টন চেজ। তৃতীয় বলে হাসান মাহমুদের বলে রোস্টন চেজ ডিফেন্স করতে গিয়ে মিডঅনে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিলেন। মেহেদী একটু পিছনে ভর করে অসাধারণ ক্যাচটি নিলে ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকেই ছিটকে পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বছরজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা রিশাদ হোসেন বছরও শেষ করেছেন দুর্দান্ত। ২১ রানে এই লেগ স্পিনারের প্রাপ্তি ৩ উইকেট। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদি হাসান, হাসান মাহমুদরা যথারীতি দূর্দান্ত আবারও।
ম্যাচ সেরা অবশ্যই জাকের আলী। পুরো সিরিজে অসাধারণ বল করা মেহেদী হাসান হয়েছেন সিরিজ সেরা।
আইসিসি টি-টুয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। বাংলাদেশ এই সংস্করণে একেবারেই তলানিতে, র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান ৯ নম্বর। কিন্তু সেই সব সমীকরণই বদলে গেল মাঠের ক্রিকেটে। এবার ব্যাটিং আর বোলিংয়ের যুগলবন্দীতে সাফল্যে বছর শেষ করলো বাংলাদেশ।
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশঃ ২০ ওভারে ১৮৯/৭ (জাকের ৭২* পারভেজ ৩৯ মিরাজ ২৯ তানজিম ১৮: শেফার্ড ৩০/২ চেজ ১৫/১ মোতি ৩০/১
ওয়েস্ট ইন্ডিজঃ ১৬.৪ ওভার ১০৯ (শেফার্ড ৩৩ চার্লস ২৩ পুরান ১৫ মোতি ১২: রিশাদ ২১/২ মেহেদী ১৩/২ তাসকিন ৩০/২ তানজিম ৩১/১,হাসান মাহমুদ ৯/১)
ফলাফল বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
সিরিজ ৩ ম্যাচের সিরিজ
৩-০ তে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যাচ সেরা : জাকের আলী
সিরিজ সেরা : মেহেদী হাসান বাংলাদেশ।
শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪
তাসকিনের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বল। ম্যাকয়কে বোল্ড করলেন তাসকিন। আর তাতে ১৬.৪ ওভারে ১০৯ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা উল্লাসে মেতে উঠলেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে খেলার সুবাদে প্রিয় শিষ্য জাকের আলীকে জড়িয়ে ধরলেন সহকারী কোচ সালাউদ্দিন। তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই প্রথম ওয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ এর আগে ওয়াইটওয়াশ করতে পেরেছে গত বছর দেশের মাঠে ইংল্যান্ডকে ও ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে তাদের মাঠে। এবারের উইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে সিরিজে ওয়াইটওয়াশ হয়েছিলো বাংলাদেশ। আর টেস্ট সিরিজ ১-১ ড্র করেছিলো।
এবার বাংলাদেশের ব্যাটাররা বেশ ভাল রানের পুঁজি দিয়েছিলেন বোলারদের। সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশ তুলে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৯ রান। এই মাঠের সর্বোচ্চ স্কোর এটি।ক্যারিবিয়ানে বাংলাদেশেরও সর্বোচ্চ রান।
দলকে ভালো শুরু এনে দেন একাদশে ফেরা পারভেজ হোসেন ইমন। তবে সবচেয়ে বড় আবদান জাকের আলীর। পাঁচ নম্বরে নেমে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৪১ বলে হাঁকিয়েছেন ৭২ রান। তাতে ৬ ছক্কা আর ৩ চার। ছিলেন অপরাজিত।
শুরুটা করেছিলেন পারভেজ ইমন। সৌম্য সরকারের চোটে সুযোগ পাওয়া ইমন শুরু করেন প্রথম ওভারে দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারিতে। পরে দেখান তার হাতের জোরও। এই ওপেনার করেন ২১ বলে ৩৯ রান। তাতে ২টি ছয় আর ৪টি চারের মার ছিলো।
প্রথম চার ওভারে দারুণ সব শট খেলে পারভেজ ও লিটন দাসের জুটি তুলে ৪০ রান। তিনটি স্বভাবসুলভ নান্দনিক বাউন্ডারিতে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন লিটন। তবে আবারও হতাশ করেন। সেই চিরাচরিত দোষ উইকেট বিলিয়ে দেন ১৩ বলে ১৪ রান করে।
চার নম্বরে নেমে ২৩ বলে ২৯ রান করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর পুরোটাই জাকের আলি। অবশ্য তাকে সঙ্গ দিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব। ব্যাটিংয়ে এই বোলারের অবদান ১২ বলে ১৭ রান।
ক্যারিবিয়ান ধারাভাষ্যকার স্যামুয়েল বদ্রি জাকের আলীকে ক্যারিবিয়ানদের মতো পাওয়ার হিটার বললেন। শেষ ৫ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ ৭৫ রান।জাকের আলীর অবদান ২৩ বলে ৫৮ রান করেন। শেষ ওভারে আসে ২৫ রান। বহুদিন পর ডেথ ওভারে বড় রান পেলো বাংলাদেশ।
১৯০ রান তাড়া করে জিততে হলে ব্যাটারদের রান তুলতে হয় দ্রুত। কিন্তু বাংলাদেশ উল্টো ক্যারিবীয় ব্যাটারদের দ্রুত ফিরিয়েছে। রিশাদ হোসেন ২১ রানে ৩ উইকেট, মেহেদীর ১৩ রানে ২ উইকেট, তাসকিন আহমেদের ৩০ রানে ২ উইকেট।
শুরুটা করেছিলেন তাসকিন, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে তার প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন ব্রান্ডন কিংকে।তিনি অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেননি। এই সিরিজে তৃতীয় বার এলবিডব্লুর হলেন তিনবারই তাসকিনের বলে। শূন্য রানেই উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এই সিরিজে অসাধারণ বল করা মেহেদী ফেরান গ্রিভসকে। মেহেদীর করা দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে লং অন দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার আফিফ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। পাঁচ বলে ৬ রান তুলেছিলেন। ২ ওভারে ৭ রান তুলতে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নিকোলাস পুরান আর জনসন চার্লস চেয়েছিলেন প্রতিরোধ গড়তে। তারা ২৪ বলে ৩৮ রানের জুটি গড়ে দিয়েছিলেন সেই আভাসও। কিন্তু মেহেদীর বলে উড়িয়ে, টেনে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে হতবিহ্বল হয়ে যান পুরান। কিছুসময় উইকেটে দাড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে হাঁটা ধরেন। ৫.৩ ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি।
সপ্তম ওভারে বোলিংয়ে পুনরায় হাসান মাহমুদ। ব্যাটিংয়ে রোস্টন চেজ। তৃতীয় বলে হাসান মাহমুদের বলে রোস্টন চেজ ডিফেন্স করতে গিয়ে মিডঅনে মেহেদীর হাতে ক্যাচ দিলেন। মেহেদী একটু পিছনে ভর করে অসাধারণ ক্যাচটি নিলে ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকেই ছিটকে পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বছরজুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা রিশাদ হোসেন বছরও শেষ করেছেন দুর্দান্ত। ২১ রানে এই লেগ স্পিনারের প্রাপ্তি ৩ উইকেট। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তাসকিন আহমেদ, শেখ মেহেদি হাসান, হাসান মাহমুদরা যথারীতি দূর্দান্ত আবারও।
ম্যাচ সেরা অবশ্যই জাকের আলী। পুরো সিরিজে অসাধারণ বল করা মেহেদী হাসান হয়েছেন সিরিজ সেরা।
আইসিসি টি-টুয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তারা। বাংলাদেশ এই সংস্করণে একেবারেই তলানিতে, র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান ৯ নম্বর। কিন্তু সেই সব সমীকরণই বদলে গেল মাঠের ক্রিকেটে। এবার ব্যাটিং আর বোলিংয়ের যুগলবন্দীতে সাফল্যে বছর শেষ করলো বাংলাদেশ।
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশঃ ২০ ওভারে ১৮৯/৭ (জাকের ৭২* পারভেজ ৩৯ মিরাজ ২৯ তানজিম ১৮: শেফার্ড ৩০/২ চেজ ১৫/১ মোতি ৩০/১
ওয়েস্ট ইন্ডিজঃ ১৬.৪ ওভার ১০৯ (শেফার্ড ৩৩ চার্লস ২৩ পুরান ১৫ মোতি ১২: রিশাদ ২১/২ মেহেদী ১৩/২ তাসকিন ৩০/২ তানজিম ৩১/১,হাসান মাহমুদ ৯/১)
ফলাফল বাংলাদেশ ৮০ রানে জয়ী।
সিরিজ ৩ ম্যাচের সিরিজ
৩-০ তে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যাচ সেরা : জাকের আলী
সিরিজ সেরা : মেহেদী হাসান বাংলাদেশ।