পর্তুগালের লিসবনে এস্তাদিও লা লুজে ২১ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে শুভ্র তুষার বৃষ্টি হয়েছে। হীম শীতল রাতের সেই তুষার বৃষ্টিতে ধুঁয়ে মুছে গেছে বার্সেলোনাকে হারানোর বেনফিকার স্বপ্ন।
এ যেন ছিলো এক মহানাটক। বলা চলে থ্রিলারের রসদ যোগানো রুপকথার কোনও বিজন পল্লীতে স্বপ্নের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা। কোনও আরব্য গল্পের দৈত্য গিলে খেয়েছিল বার্সেলোনাকে। দৈত্যের পেট ফুটো করে দীর্ঘ অম্যাবস্যার রাত পেরিয়ে জোৎস্না বিভোর কোন রাতে তারা বেরিয়ে এসেছে সমুদ্র উপত্যকায়।
লিসবনে মঙ্গলবার রাতে যা ঘটেছে, তেমন কিছু অনেকেই এর আগে মনে হয় না দেখেছেন। ৯ গোলের ম্যাচ, একেবারেই যেন থ্রিলার! দু’বার ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও বার্সার অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প!
প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেওয়া — বার্সা যা ঘটিয়েছে তা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসেই প্রথম।
প্রথম হাফে ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় অতিথি বার্সেলোনা। বেনফিকার গ্রিক স্ট্রাইকার ভাঙ্গেলিস পাভলিদিসের হ্যাটট্রিকে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বিরতি থেকে ফিরে আসে বেনফিকা। বার্সেলোনা শিবিরে তখন চরম অস্বস্তি।
তবে খেলায় দুই দলেরই স্ট্রাইকার, ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষকের ভুল ছিলো হাস্যকর। খেলার দুই মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডারে ভুলে গোল হজম করে বার্সেলোনা। ভাঙ্গেলিস পাভলিদিভিসের গোলে এগিয়ে যায় বেনফিকা।
তবে ১৩ মিনিটে লেভানদভস্কি পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতায় ফেরান বার্সাকে। তবে তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। খেলার ২২ এবং ৩০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিখুঁত গোল করে হ্যাটট্রিক করেন পাভলিদিভিস। এই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম।
বিরতি থেকে ফিরে সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ফর্মে থাকা রাফিনিয়া লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করলে ৩-২ ব্যবধান কমায় বার্সেলোনা।
কিন্তু ম্যাচের ৬৮ মিনিটের সময় বার্সার রোনালদ আরাউহোর আত্মঘাতী গোলে ৪-২ পিছিয়ে যায় বার্সেলোনা। তখন মনে হচ্ছিলো পরাজয়ের কিনারেই বার্সা।
ম্যাচের ৭৮ মিনিটে লামিমে ইয়ামালকে বেনফিকার বক্সে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। লেভানডফস্কি সে সুযোগ হাতছাড়া করেনি।
তবে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থেকে বেনফিকা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলো মরনপন। কিন্তু ম্যাচের ৮৬ মিনিটে পেদ্রির অসাধারণ ক্রস থেকে কয়েকফুট শূন্যে লাফিয়ে হেডে গোল করেন এরিক গার্সিয়া। তাতে ৪-৪ সমতায় ফিরে বাধভাঙ্গা আনন্দে বার্সেলোনা। বিপরীতে বেনফিকার স্বাগতিক দর্শকেরা স্তব্ধ হয়ে যায়, কি ঘটে গেছে!
তখনো ম্যাচের সেরা মুহুর্তটি আসেনি।নির্ধারিত সময় শেষ, অতিরিক্ত ৮ মিনিট সময় যোগ হয়। সেই অতিরিক্ত সময়েরই একদম শেষ দিকে পাল্টা আক্রমণে বদলি ফেরান তোরেসের লম্বা পাস থেকে বল পান রাফিনিয়া। তারপর অতি দ্রুত ডান পাশ দিয়ে বেনফিকার আলভারো কারেরাস এবং গোলরক্ষককে চিপ করে যেভাবে বেনফিকার জালে বল জড়ান রাফিনিয়া তা অনেক দিন মনে রাখবে ফুটবলপ্রেমীরা।
তাতে বার্সেলোনা রুপকথার মতো ৫-৪ এগিয়ে যায়। শেষ বাঁশি বাজার আগ মূহুর্তে বেনফিকার বদলি নামা লিয়ান্দোকে বার্সেলোনার বক্সে দুই খেলোয়াড় ফেলে দিলে জোরালো পেনাল্টির আবেদন করে বেনফিকা। তবে তাতে সাড়া মেলেনি রেফারির। সিদ্ধান্তটি বির্তকিত। আর তা নিয়ে বির্তকিক অঙ্গভঙ্গি করলে বেনফিকার ডাগআউটে গিয়ে আর্থার কারবালকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। আর বার্সেলোনার ফেরমিন লোপেজ দেখেন হলুদ কার্ড। আর এরই সাথে ম্যাচের নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হলে আনন্দে আত্মহারা হয় বার্সেলোনা।
কোরলাইনও অনন্য—চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে ৫-৪ গোলের ম্যাচ এই প্রথম। যেখানে ৩-১ গোলে পিছিয়ে বিরতিতে গিয়ে ৭৭ মিনিট পর্যন্তও ৪-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত জিতেছে বার্সাই! উঠেছে শেষ ষোলোতেও।
খেলা শেষে বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক বলেন, ‘আমার ২৯ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে এমন ম্যাচ উত্তেজনা আর আসেনি। নিঃসন্দেহে সেরা একটি ম্যাচ, যা দুদলের দর্শকরাই মনে রাখবে বছরের পর বছর।’
ফ্লিকের তার দল নিয়ে গর্ব করেই বলেন, ‘সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো আমাদের মানসিকতা। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছি, যেটা সুন্দর। আর এটাই ফুটবল, এ কারণেই আমরা খেলাটিকে ভালোবাসি। আমার মনে হয় না কখনো এমন ঘুরে দাঁড়ানো দেখেছি। এটা অবিশ্বাস্য।’
এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে শীর্ষ আটে থেকে সরাসরি শেষ ষোলোয় উঠে গেল বার্সেলোনা। সাত ম্যাচে ছয় জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ৩৬ দলের মধ্যে দুইয়ে আছে তারা। আর ৭ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে যাদের সঙ্গী অপরাজিত লিভারপুল।
বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫
পর্তুগালের লিসবনে এস্তাদিও লা লুজে ২১ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাতে শুভ্র তুষার বৃষ্টি হয়েছে। হীম শীতল রাতের সেই তুষার বৃষ্টিতে ধুঁয়ে মুছে গেছে বার্সেলোনাকে হারানোর বেনফিকার স্বপ্ন।
এ যেন ছিলো এক মহানাটক। বলা চলে থ্রিলারের রসদ যোগানো রুপকথার কোনও বিজন পল্লীতে স্বপ্নের মুখোমুখি হয়েছিল বার্সেলোনা। কোনও আরব্য গল্পের দৈত্য গিলে খেয়েছিল বার্সেলোনাকে। দৈত্যের পেট ফুটো করে দীর্ঘ অম্যাবস্যার রাত পেরিয়ে জোৎস্না বিভোর কোন রাতে তারা বেরিয়ে এসেছে সমুদ্র উপত্যকায়।
লিসবনে মঙ্গলবার রাতে যা ঘটেছে, তেমন কিছু অনেকেই এর আগে মনে হয় না দেখেছেন। ৯ গোলের ম্যাচ, একেবারেই যেন থ্রিলার! দু’বার ২ গোলে পিছিয়ে পড়েও বার্সার অবিশ্বাস্য ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প!
প্রতিপক্ষের মাঠে ম্যাচের ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ২ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নেওয়া — বার্সা যা ঘটিয়েছে তা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসেই প্রথম।
প্রথম হাফে ৩-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় অতিথি বার্সেলোনা। বেনফিকার গ্রিক স্ট্রাইকার ভাঙ্গেলিস পাভলিদিসের হ্যাটট্রিকে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বিরতি থেকে ফিরে আসে বেনফিকা। বার্সেলোনা শিবিরে তখন চরম অস্বস্তি।
তবে খেলায় দুই দলেরই স্ট্রাইকার, ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষকের ভুল ছিলো হাস্যকর। খেলার দুই মিনিটের মাথায় ডিফেন্ডারে ভুলে গোল হজম করে বার্সেলোনা। ভাঙ্গেলিস পাভলিদিভিসের গোলে এগিয়ে যায় বেনফিকা।
তবে ১৩ মিনিটে লেভানদভস্কি পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতায় ফেরান বার্সাকে। তবে তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি। খেলার ২২ এবং ৩০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিখুঁত গোল করে হ্যাটট্রিক করেন পাভলিদিভিস। এই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম।
বিরতি থেকে ফিরে সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে ফর্মে থাকা রাফিনিয়া লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করলে ৩-২ ব্যবধান কমায় বার্সেলোনা।
কিন্তু ম্যাচের ৬৮ মিনিটের সময় বার্সার রোনালদ আরাউহোর আত্মঘাতী গোলে ৪-২ পিছিয়ে যায় বার্সেলোনা। তখন মনে হচ্ছিলো পরাজয়ের কিনারেই বার্সা।
ম্যাচের ৭৮ মিনিটে লামিমে ইয়ামালকে বেনফিকার বক্সে ফেলে দিলে পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। লেভানডফস্কি সে সুযোগ হাতছাড়া করেনি।
তবে ৪-৩ গোলে এগিয়ে থেকে বেনফিকা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিলো মরনপন। কিন্তু ম্যাচের ৮৬ মিনিটে পেদ্রির অসাধারণ ক্রস থেকে কয়েকফুট শূন্যে লাফিয়ে হেডে গোল করেন এরিক গার্সিয়া। তাতে ৪-৪ সমতায় ফিরে বাধভাঙ্গা আনন্দে বার্সেলোনা। বিপরীতে বেনফিকার স্বাগতিক দর্শকেরা স্তব্ধ হয়ে যায়, কি ঘটে গেছে!
তখনো ম্যাচের সেরা মুহুর্তটি আসেনি।নির্ধারিত সময় শেষ, অতিরিক্ত ৮ মিনিট সময় যোগ হয়। সেই অতিরিক্ত সময়েরই একদম শেষ দিকে পাল্টা আক্রমণে বদলি ফেরান তোরেসের লম্বা পাস থেকে বল পান রাফিনিয়া। তারপর অতি দ্রুত ডান পাশ দিয়ে বেনফিকার আলভারো কারেরাস এবং গোলরক্ষককে চিপ করে যেভাবে বেনফিকার জালে বল জড়ান রাফিনিয়া তা অনেক দিন মনে রাখবে ফুটবলপ্রেমীরা।
তাতে বার্সেলোনা রুপকথার মতো ৫-৪ এগিয়ে যায়। শেষ বাঁশি বাজার আগ মূহুর্তে বেনফিকার বদলি নামা লিয়ান্দোকে বার্সেলোনার বক্সে দুই খেলোয়াড় ফেলে দিলে জোরালো পেনাল্টির আবেদন করে বেনফিকা। তবে তাতে সাড়া মেলেনি রেফারির। সিদ্ধান্তটি বির্তকিত। আর তা নিয়ে বির্তকিক অঙ্গভঙ্গি করলে বেনফিকার ডাগআউটে গিয়ে আর্থার কারবালকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। আর বার্সেলোনার ফেরমিন লোপেজ দেখেন হলুদ কার্ড। আর এরই সাথে ম্যাচের নির্ধারিত এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হলে আনন্দে আত্মহারা হয় বার্সেলোনা।
কোরলাইনও অনন্য—চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে ৫-৪ গোলের ম্যাচ এই প্রথম। যেখানে ৩-১ গোলে পিছিয়ে বিরতিতে গিয়ে ৭৭ মিনিট পর্যন্তও ৪-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত জিতেছে বার্সাই! উঠেছে শেষ ষোলোতেও।
খেলা শেষে বার্সা কোচ হ্যান্সি ফ্লিক বলেন, ‘আমার ২৯ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে এমন ম্যাচ উত্তেজনা আর আসেনি। নিঃসন্দেহে সেরা একটি ম্যাচ, যা দুদলের দর্শকরাই মনে রাখবে বছরের পর বছর।’
ফ্লিকের তার দল নিয়ে গর্ব করেই বলেন, ‘সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো আমাদের মানসিকতা। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছি, যেটা সুন্দর। আর এটাই ফুটবল, এ কারণেই আমরা খেলাটিকে ভালোবাসি। আমার মনে হয় না কখনো এমন ঘুরে দাঁড়ানো দেখেছি। এটা অবিশ্বাস্য।’
এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে শীর্ষ আটে থেকে সরাসরি শেষ ষোলোয় উঠে গেল বার্সেলোনা। সাত ম্যাচে ছয় জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে ৩৬ দলের মধ্যে দুইয়ে আছে তারা। আর ৭ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে যাদের সঙ্গী অপরাজিত লিভারপুল।