২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে সাকিব আল হাসান -ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সমালোচনায় পড়তে হয় তাকে। গত বছর ৫ আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর আর দেশে ফিরতে না পারা দেশের সফলতম ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলা, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মতো পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে বদলে যাওয়া সময়ে। তবে এত সবের পরও নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিলেন সাকিব।
বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এক ইংরেজি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। এবং মাগুরার মানুষ সুযোগ পেলে আবারও তাকে নির্বাচিত করবে।
গত বছর জুলাই মাসে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ খেলতে দেশ ছাড়ার পর আর সাকিবের ফেরা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন। তবে এরপরও দেশের বাইরে হওয়া সিরিজে বাংলাদেশ দলে খেলছিলেন তিনি। সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। তার ঘরের মাঠে টেস্ট ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা, শেয়ার বাজারের অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা হয়েছে এই সময়ে। এতকিছুর মধ্যে নিশ্চুপ ছিলেন সাকিব। অবশেষে তিনি সব কিছু নিয়েই কথা বলেছেন।
রাজনীতিতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আসল কথা হলো, রাজনীতিতে যোগ দেয়া যদি আমার ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যেই রাজনীতিতে যোগ দিক না কেন, সেও ভুল করবে। সেটা ডাক্তার হোক, ব্যারিস্টার হোক, ব্যবসায়ী হোক যেই রাজনীতিতে যোগ দিক না কেন, সেটা ভুল হবে। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দেয়া যেকোনো নাগরিকের অধিকার, এবং যে কেউ তা করতে পারে। মানুষ আপনাকে ভোট দিক বা না দিক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি মনে করি আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন সঠিক ছিলাম, এবং এখনও বিশ্বাস করি আমি সঠিক ছিলাম, কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা।’
‘আমার মনে হয়েছিল আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারবো, এবং আমার এটাও মনে হয়েছিল যে মাগুরার মানুষ আমাকে চায়। আমি বিশ্বাস করি আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল, এবং আমার মনে হয় না কারো সংশয় আছে যে আমি আবার দাঁড়ালে আমি ছাড়া অন্য কেউ জিতবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই, আমি আমার কাজে কোনো ভুল দেখি না। যখন আমি নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন আমি মাগুরার মানুষের সেবা করার সুযোগ চেয়েছিলাম, এবং মানুষ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, আমি তাদের যেভাবে সেবা করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি, এবং এটা আমি মেনে নিই।’
সাকিব মনে করেন যারা মনে করে তার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না, তারা তার এলাকার মানুষ নয়, ‘দেখুন, মানুষ যতই বিতর্ক করুক যে আমার রাজনীতিতে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, তবে যারা এটা বলছে তাদের বেশিরভাগই আমার এলাকার ভোটার নয়। মাগুরার ভোটাররা অবশ্য ভিন্নভাবে চিন্তা করে, এবং সেটাই আসল কথা। আমি এখনও বিশ্বাস করি যে আমি যদি আজ নির্বাচনে দাঁড়াই, মাগুরার মানুষ আমাকে ভোট দেবে, কারণ তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারবো।’
‘এটা আমার বিশ্বাস, এবং সেই কারণেই আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। আমি যে কথাটি বারবার বলি তা হলো, আপনি যদি সিস্টেমের ভেতরে না আসেন, তাহলে কীভাবে পরিবর্তন আনবেন? আমার উদ্দেশ্য সৎ ছিল।’
সাকিবের সক্রিয় রাজনীতির প্রথম পর্ব দীর্ঘ হয়নি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই তার দলীয় সরকারের পতন ঘটে। এই ৬ মাসের মধ্যেও তিনি বেশিরভাগ সময় খেলার মাঠেই ছিলেন ব্যস্ত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শেই তিনি তা করেছিলেন বলে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার রাজনীতি করার দরকার নেই; শুধু ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দাও,’ এবং আমি সেই পরামর্শ অনুসরণ করেছি। আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি সব সময় মনে করতাম, যতদিন আমি ক্রিকেট খেলছি, ততদিন সেটাই আমার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আমি খুব সহজেই ক্রিকেট ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হতে পারতাম, কিন্তু সেটা কখনোই ঘটেনি। আমার পরিকল্পনা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা, এবং তারপর, যখন আমি রাজনীতি ভালোভাবে বুঝতে পারবো এবং জনগণের জন্য কাজ করতে পারবো, তখন ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করা।’
সব খেলা মিলিয়েই বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ক্রীড়াবিদের মতে কারও ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়, পালাবদল অনিবার্য এবং প্রকৃতির নিয়মে সেটা হবেই, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আসছে, তারা চিরকাল থাকবে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম, সেটা ১০ বছর হোক বা ২০ বছর, তারাও চিরকাল একই জায়গায় থাকবে না। যদি অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসে, তারাও চিরকাল থাকবে না, এবং এভাবে চলতেই থাকবে। চক্র চলতে থাকে, এবং কখন শেষ হবে তা আপনি অনুমান করতে পারবেন না।’
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়া সাকিবের বাকি দুই সংস্করণে অবসর ঝুলে আছে। তার আবার বাংলাদেশ দলে ফেরা বেশ কঠিন হলেও তিনি আশা ছাড়েননি।
২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে সাকিব আল হাসান -ফাইল ছবি
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা অবস্থায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাকিব আল হাসান। এই সিদ্ধান্তের কারণে অনেক সমালোচনায় পড়তে হয় তাকে। গত বছর ৫ আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলের পর আর দেশে ফিরতে না পারা দেশের সফলতম ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলা, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মতো পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে বদলে যাওয়া সময়ে। তবে এত সবের পরও নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান নিলেন সাকিব।
বাংলাদেশের সফলতম ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এক ইংরেজি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। এবং মাগুরার মানুষ সুযোগ পেলে আবারও তাকে নির্বাচিত করবে।
গত বছর জুলাই মাসে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ খেলতে দেশ ছাড়ার পর আর সাকিবের ফেরা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সংসদ সদস্য পদ হারিয়েছেন। তবে এরপরও দেশের বাইরে হওয়া সিরিজে বাংলাদেশ দলে খেলছিলেন তিনি। সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। তার ঘরের মাঠে টেস্ট ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা, শেয়ার বাজারের অনিয়মের অভিযোগে জরিমানা হয়েছে এই সময়ে। এতকিছুর মধ্যে নিশ্চুপ ছিলেন সাকিব। অবশেষে তিনি সব কিছু নিয়েই কথা বলেছেন।
রাজনীতিতে যোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আসল কথা হলো, রাজনীতিতে যোগ দেয়া যদি আমার ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে যেই রাজনীতিতে যোগ দিক না কেন, সেও ভুল করবে। সেটা ডাক্তার হোক, ব্যারিস্টার হোক, ব্যবসায়ী হোক যেই রাজনীতিতে যোগ দিক না কেন, সেটা ভুল হবে। কিন্তু রাজনীতিতে যোগ দেয়া যেকোনো নাগরিকের অধিকার, এবং যে কেউ তা করতে পারে। মানুষ আপনাকে ভোট দিক বা না দিক, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি মনে করি আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন সঠিক ছিলাম, এবং এখনও বিশ্বাস করি আমি সঠিক ছিলাম, কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা।’
‘আমার মনে হয়েছিল আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারবো, এবং আমার এটাও মনে হয়েছিল যে মাগুরার মানুষ আমাকে চায়। আমি বিশ্বাস করি আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল, এবং আমার মনে হয় না কারো সংশয় আছে যে আমি আবার দাঁড়ালে আমি ছাড়া অন্য কেউ জিতবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই, আমি আমার কাজে কোনো ভুল দেখি না। যখন আমি নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন আমি মাগুরার মানুষের সেবা করার সুযোগ চেয়েছিলাম, এবং মানুষ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, আমি তাদের যেভাবে সেবা করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি, এবং এটা আমি মেনে নিই।’
সাকিব মনে করেন যারা মনে করে তার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না, তারা তার এলাকার মানুষ নয়, ‘দেখুন, মানুষ যতই বিতর্ক করুক যে আমার রাজনীতিতে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, তবে যারা এটা বলছে তাদের বেশিরভাগই আমার এলাকার ভোটার নয়। মাগুরার ভোটাররা অবশ্য ভিন্নভাবে চিন্তা করে, এবং সেটাই আসল কথা। আমি এখনও বিশ্বাস করি যে আমি যদি আজ নির্বাচনে দাঁড়াই, মাগুরার মানুষ আমাকে ভোট দেবে, কারণ তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারবো।’
‘এটা আমার বিশ্বাস, এবং সেই কারণেই আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলাম। আমি যে কথাটি বারবার বলি তা হলো, আপনি যদি সিস্টেমের ভেতরে না আসেন, তাহলে কীভাবে পরিবর্তন আনবেন? আমার উদ্দেশ্য সৎ ছিল।’
সাকিবের সক্রিয় রাজনীতির প্রথম পর্ব দীর্ঘ হয়নি। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই তার দলীয় সরকারের পতন ঘটে। এই ৬ মাসের মধ্যেও তিনি বেশিরভাগ সময় খেলার মাঠেই ছিলেন ব্যস্ত। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শেই তিনি তা করেছিলেন বলে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘তোমার রাজনীতি করার দরকার নেই; শুধু ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দাও,’ এবং আমি সেই পরামর্শ অনুসরণ করেছি। আমার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমি সব সময় মনে করতাম, যতদিন আমি ক্রিকেট খেলছি, ততদিন সেটাই আমার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। আমি খুব সহজেই ক্রিকেট ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হতে পারতাম, কিন্তু সেটা কখনোই ঘটেনি। আমার পরিকল্পনা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা, এবং তারপর, যখন আমি রাজনীতি ভালোভাবে বুঝতে পারবো এবং জনগণের জন্য কাজ করতে পারবো, তখন ধীরে ধীরে রাজনীতিতে প্রবেশ করা।’
সব খেলা মিলিয়েই বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ক্রীড়াবিদের মতে কারও ক্ষমতাই চিরস্থায়ী নয়, পালাবদল অনিবার্য এবং প্রকৃতির নিয়মে সেটা হবেই, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আসছে, তারা চিরকাল থাকবে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম, সেটা ১০ বছর হোক বা ২০ বছর, তারাও চিরকাল একই জায়গায় থাকবে না। যদি অন্য কোনো দল ক্ষমতায় আসে, তারাও চিরকাল থাকবে না, এবং এভাবে চলতেই থাকবে। চক্র চলতে থাকে, এবং কখন শেষ হবে তা আপনি অনুমান করতে পারবেন না।’
টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেয়া সাকিবের বাকি দুই সংস্করণে অবসর ঝুলে আছে। তার আবার বাংলাদেশ দলে ফেরা বেশ কঠিন হলেও তিনি আশা ছাড়েননি।