বুলাওয়েতে তখন দুপুর, ত্রিনিদাদে সকাল। ব্রায়ান লারা হয়তো ঘুম থেকে উঠে গেছেন, উইয়ান মুল্ডারকে অভিনন্দন জানানোর প্রস্তুতিও মনে মনে নিয়ে রেখেছিলেন। ম্যাথু হেইডেন তাঁর ৩৭৫ রানের কীর্তি নিজের করে নেওয়ার পর লারাকে যেমন অভিনন্দন জানাতে হয়েছিল, তেমন আরেকটি মুহূর্ত যেন সামনে চলে আসছিল।
নিজের রেকর্ড অন্য কেউ ভেঙে দিলে অভিনন্দন জানানো লৌকিকতা হলেও কাজটা কষ্টের। সেটি বুকে চেপে রেখেই ২০০৩ সালে হেইডেনকে (৩৮০) অভিনন্দন জানিয়েছিলেন লারা। পরে ২০০৪ সালের এপ্রিলে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে ৪০০ রানের এভারেস্ট গড়েছিলেন তিনি। অনেকেরই ধারণা ছিল, সেই রেকর্ড আর কেউ ভাঙতে পারবে না।
কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তায় ভরা। বুলাওয়েতে দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে মুল্ডার যখন ট্রিপল সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন, তখন লারা হয়তো প্রমাদ গুনছিলেন। জিম্বাবুয়ের বোলিং একেবারে নির্বিষ, উইকেটও পাটা। মুল্ডার প্রতি ওভারেই ড্রাইভ, কাট, পুল–হুকের সুযোগ পাচ্ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, পাড়ার বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাট করছেন। ওই মুহূর্তে টিভিতে চোখ থাকলে লারাও ভাবতে বাধ্য হতেন—রেকর্ড এবার হয়তো থাকছে না।
লাঞ্চের আগে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে বিরতিতে যান মুল্ডার। পৃথিবী তখন অপেক্ষা করছিল তাঁর ব্যাট থেকে লারার ৪০০ পেরোনোর দৃশ্য দেখার জন্য। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে আর ব্যাটিংয়ে নামল না দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ উইকেটে ৬২৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করলেন অধিনায়ক মুল্ডার। লারা নিশ্চয়ই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
তবু প্রশ্ন থাকছেই। দক্ষিণ আফ্রিকা কেন দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নামল না? তখনও হাতে তিন দিন বাকি, জিম্বাবুয়েকে দুই ইনিংসে অলআউট করার মতো বোলিং শক্তিও আছে। এই অবস্থায় আরও কিছুক্ষণ ব্যাটিং করলেই মুল্ডার লারার রেকর্ড ভেঙে দিতে পারতেন। তা–ও মাত্র ৫–১০ ওভার সময় লাগত। তাহলে কেন থামলেন?
লারার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কি আর ব্যাটিংয়ে নামেননি? হয়তো মনে করেছেন, টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড লারার মতো কিংবদন্তির নামেই মানায়। যেমন ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে ডন ব্র্যাডম্যানকে সম্মান দেখিয়ে ৩৩৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন মার্ক টেলর।
কিন্তু মুল্ডার চাইলে হেইডেনের ৩৮০ রান পেরিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও খেলতে পারতেন। সেটিও করেননি। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে বোধহয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে।
তবে মুল্ডার থামলেও নতুন ইতিহাস গড়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড এখন তাঁর। হাশিম আমলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। বীরেন্দর শেবাগের ২৭৮ বলের পর দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির কীর্তিও এখন মুল্ডারের। এর সঙ্গে পেছনে ফেলেছেন হানিফ মুহাম্মদের ১৯৫৮ সালের ৩৩৭ রানের ইনিংসকেও। ৬৭ বছর পর প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড এখন মুল্ডারের।
কিন্তু সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে—মুল্ডার কেন থামলেন? দলের জয়ের কথা ভেবে, নাকি লারার প্রতি সম্মান জানিয়ে? কে জানে!
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
বুলাওয়েতে তখন দুপুর, ত্রিনিদাদে সকাল। ব্রায়ান লারা হয়তো ঘুম থেকে উঠে গেছেন, উইয়ান মুল্ডারকে অভিনন্দন জানানোর প্রস্তুতিও মনে মনে নিয়ে রেখেছিলেন। ম্যাথু হেইডেন তাঁর ৩৭৫ রানের কীর্তি নিজের করে নেওয়ার পর লারাকে যেমন অভিনন্দন জানাতে হয়েছিল, তেমন আরেকটি মুহূর্ত যেন সামনে চলে আসছিল।
নিজের রেকর্ড অন্য কেউ ভেঙে দিলে অভিনন্দন জানানো লৌকিকতা হলেও কাজটা কষ্টের। সেটি বুকে চেপে রেখেই ২০০৩ সালে হেইডেনকে (৩৮০) অভিনন্দন জানিয়েছিলেন লারা। পরে ২০০৪ সালের এপ্রিলে অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড পুনরুদ্ধার করে ৪০০ রানের এভারেস্ট গড়েছিলেন তিনি। অনেকেরই ধারণা ছিল, সেই রেকর্ড আর কেউ ভাঙতে পারবে না।
কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তায় ভরা। বুলাওয়েতে দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে মুল্ডার যখন ট্রিপল সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন, তখন লারা হয়তো প্রমাদ গুনছিলেন। জিম্বাবুয়ের বোলিং একেবারে নির্বিষ, উইকেটও পাটা। মুল্ডার প্রতি ওভারেই ড্রাইভ, কাট, পুল–হুকের সুযোগ পাচ্ছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, পাড়ার বোলিংয়ের বিপক্ষে ব্যাট করছেন। ওই মুহূর্তে টিভিতে চোখ থাকলে লারাও ভাবতে বাধ্য হতেন—রেকর্ড এবার হয়তো থাকছে না।
লাঞ্চের আগে ৩৬৭ রানে অপরাজিত থেকে বিরতিতে যান মুল্ডার। পৃথিবী তখন অপেক্ষা করছিল তাঁর ব্যাট থেকে লারার ৪০০ পেরোনোর দৃশ্য দেখার জন্য। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে আর ব্যাটিংয়ে নামল না দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ উইকেটে ৬২৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করলেন অধিনায়ক মুল্ডার। লারা নিশ্চয়ই স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।
তবু প্রশ্ন থাকছেই। দক্ষিণ আফ্রিকা কেন দ্বিতীয় সেশনে ব্যাটিংয়ে নামল না? তখনও হাতে তিন দিন বাকি, জিম্বাবুয়েকে দুই ইনিংসে অলআউট করার মতো বোলিং শক্তিও আছে। এই অবস্থায় আরও কিছুক্ষণ ব্যাটিং করলেই মুল্ডার লারার রেকর্ড ভেঙে দিতে পারতেন। তা–ও মাত্র ৫–১০ ওভার সময় লাগত। তাহলে কেন থামলেন?
লারার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কি আর ব্যাটিংয়ে নামেননি? হয়তো মনে করেছেন, টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড লারার মতো কিংবদন্তির নামেই মানায়। যেমন ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে ডন ব্র্যাডম্যানকে সম্মান দেখিয়ে ৩৩৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিলেন মার্ক টেলর।
কিন্তু মুল্ডার চাইলে হেইডেনের ৩৮০ রান পেরিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও খেলতে পারতেন। সেটিও করেননি। কেন? এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে বোধহয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে।
তবে মুল্ডার থামলেও নতুন ইতিহাস গড়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড এখন তাঁর। হাশিম আমলার পর দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। বীরেন্দর শেবাগের ২৭৮ বলের পর দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির কীর্তিও এখন মুল্ডারের। এর সঙ্গে পেছনে ফেলেছেন হানিফ মুহাম্মদের ১৯৫৮ সালের ৩৩৭ রানের ইনিংসকেও। ৬৭ বছর পর প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড এখন মুল্ডারের।
কিন্তু সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে—মুল্ডার কেন থামলেন? দলের জয়ের কথা ভেবে, নাকি লারার প্রতি সম্মান জানিয়ে? কে জানে!