ওরা তারকা হোটেলে থেকে ক্যাম্প করে। খাবার অনেক মানসম্মত। বিদেশি কোচিং স্টাফ অনেক। আমরা চাই এমন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা
ঋতুপর্ণা চাকমা
প্রথম বারের মতো এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে দারুণ পারফরম্যান্স ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা । প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে দেশকে নিয়ে যাওয়ার পেছনে তার অবদান কম নয়। স্বাগতিক মায়ানমারের বিপক্ষে জোড়া গোল এখনও মনে হয় অনেকের চোখে লেগে আছে। ক্রমেই অন্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন ঋতুপর্ণা । অনলাইন পোর্টালে দেয়া এক সক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন,
সামনে তো অস্ট্রেলিয়াতে এশিয়ান কাপ। কী ভাবছেন..
ঋতুপর্ণা: আসলে ভাবার কিছু নেই। এশিয়ান কাপের মঞ্চ অনেক বড়। সেখানে খেলার আগে সেভাবে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে হবে। তানাহলে পিছিয়ে পড়বো আমরা।
কেমন প্রস্তুতি চান আপনারা...
ঋতুপর্ণা: আমরা সবদিক দিয়ে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সুবিধাদি চাই। বেশি বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ চাই, বিশ্বে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে। দেশের বাইরে দীর্ঘমেয়াদে ক্যাম্প হলে ভালো হয়। এছাড়া আরও মানসম্মত খাবার আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধাদি তো রয়েছেই।
আবাসনের কথা বলছেন..
ঋতুপর্ণা: আমরা যেখানে থাকি সেই বাফুফে ভবনে কিন্তু অন্য বয়সভিত্তিক মেয়েরা থাকে। দেখা যায় এক রুমে তখন ৬-৮ জন ঘুমায়। সবার তো এক সঙ্গে অনুশীলন থাকে না। যার ভোরে উঠতে হবে তখন অন্যদের ঘুমে সমস্যা হয়। এছাড়া প্রাইভেসির একটা বিষয় তো রয়েছেই। আর একটা বিষয়। আমরা তো ছেলেদের মতো সুবিধাদি পাই না। ওরা তারকা হোটেলে থেকে ক্যাম্প করে। খাবারও অনেক মানসম্মত। বিদেশি কোচিং স্টাফও অনেক। আমরা চাই এমন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা।
দেশে তো নিয়মিত লীগ হয় না। ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামোতে পরিবর্তন চান কিনা..
ঋতুপর্ণা: অবশ্যই চাই। শক্তিশালী লীগ হলে তখন আমাদের উন্নতি হবে। আর্থিক দিক দিয়ে সবাই এগিয়ে যাবে।
আর্থিক দিকের কথা যখন বলছেন আপনারা তো মাসিক ৫০ হাজার টাকা বেতন ছাড়া অন্য কিছু সেভাবে পান না। তাও সবাই না। সাফ জিতে এসে ঘোষিত দেড় কোটি টাকা বোনাস এখনও পাননি। মধ্যরাতে সংবর্ধনা পেয়েছেন। শুধু হাতে ফুলই উঠেছে!
ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ তা ঠিক। আমাদের খেলার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এটাই আমাদের পেশা। এখন আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হলে নিজেদের কাছেই ভালো লাগবে। তখন খেলাতে মনোযোগও বেশি দেয়া যায়। মধ্যরাতে সংবর্ধনা ভালো লেগেছে। তবে বোনাসের টাকা কবে পাবো জানি না। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে এটা মনে করি আমরা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে দেশকে সামনের দিকে আরও অনেক কিছু দেয়ার আছে।
এসব সুবিধা নিশ্চিত হলেই কী চীন-জাপান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্ব সেরা দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই সম্ভব? ওরা তো শারীরিক-উচ্চতাসহ সব দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে..
ঋতুপর্ণা: দেখুন আপনাকে বিশ্ব স্তরে খেলতে হলে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু ফল চাইলে হবে না। এর জন্য সেভাবে এফোর্ট দিতে হবে। আর শারীরিকসহ সবদিক দিয়ে ওরা অনেক এগিয়ে মানছি। তবে একটা কথা হলো হয়তো সবাই শারীরিক বা উচ্চতার দিক দিয়ে আমরা ওদের মানের হতে পারবো না। তবে টেকনিক-ট্যাকটিকসে কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ আছে। ধরেন ম্যরাডোনা-মেসি তো শারীরিক বা উচ্চতার দিক দিয়ে ততটা এগিয়ে নেই। ফুটবলে ফিটনেস-স্ট্রেন্থ-টেকনিক-ট্যাকটিকসের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এসবে ভর করে ম্যারাডোনা, মেসিরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ম্যারাডোনা-মেসি পারলে আমরা কেন সাফল্য পাবো না। আমাদেরও তাই জোর দিতে হবে।
আপনার বাঁ পায়ের প্রশংসা সবাই করছে। বাঁ পায়ের জাদুতে সবাই মোহিত। সেটপিস কিংবা বক্সের বাইরে থেকে গোল করতে আপনি সিদ্ধহস্ত। এর জন্য আলাদা অনুশীলন করা হয় নাকি..
ঋতুপর্ণা: আলাদা অনুশীলন তো হয়ই। তবে আমার কাছে মনে হয় আমার বাঁ পায়ের কারুকাজটা ঈশ্বর প্রদত্ত। অনেক সময় অনুশীলন করেও হয় না। তবে আমার শুরু থেকে বা পায়ের নৈপুণ্য দেখাতে সমস্যা হচ্ছে না।
আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়ার এশিয়ান কাপে সাবিনা আপু কিংবা মাশুরার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় প্রয়োজন। তারা দলে থাকতে তখন আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী থাকবো। দল আরও শক্তিশালী হবো।
কিন্তু তারা তো পিটার বাটলারের অধীনে খেলবেন না। তাদের ছাড়াই তো দল এশিয়ান কাপে গেছে। কাউকে না কাউকে তো দূরত্ব ঘোচাতে হবে। সবাইকে একটা সহজ সমাধানে আসতে হবে। সাবিনা আপু-মাশুরাদের তো অবদান কম নয়। আমরা চাই সামনের দিকে দল আরও শক্তিশালী হোক। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগুক।
২০২২ সালে সাফ জেতার পর তো রাঙামাটিতে সরকার থেকে জমি দেয়ার কথা ছিল। আদৌ সেই জমি আমি পাবো কিনা জানি না। ডিসি ও ইউএনও মহোদয় আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন। তবে আমি আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছি!
ফুটবলের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন
ঋতুপর্ণা। ক্লাসই তো করতে পারছি না। ফুটবলের কারণে সেমিস্টার মিসও হয়েছে। কবে দিতে পারবো তা জানি না। সামনে ব্যস্ত সূচি, দেখি কী করি।
ঋতুপর্ণা বলেন, আমি ফুটবল খেলি মনের আনন্দে। দেশের জন্য। এটা আমার পেশা। সামনের দিকে আরও পরিশ্রম করবো। এখন ভাগ্য আমাকে যেখানে নিয়ে যায়..।
ওরা তারকা হোটেলে থেকে ক্যাম্প করে। খাবার অনেক মানসম্মত। বিদেশি কোচিং স্টাফ অনেক। আমরা চাই এমন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা
ঋতুপর্ণা চাকমা
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
প্রথম বারের মতো এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে দারুণ পারফরম্যান্স ২১ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা । প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে দেশকে নিয়ে যাওয়ার পেছনে তার অবদান কম নয়। স্বাগতিক মায়ানমারের বিপক্ষে জোড়া গোল এখনও মনে হয় অনেকের চোখে লেগে আছে। ক্রমেই অন্য উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন ঋতুপর্ণা । অনলাইন পোর্টালে দেয়া এক সক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন,
সামনে তো অস্ট্রেলিয়াতে এশিয়ান কাপ। কী ভাবছেন..
ঋতুপর্ণা: আসলে ভাবার কিছু নেই। এশিয়ান কাপের মঞ্চ অনেক বড়। সেখানে খেলার আগে সেভাবে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে হবে। তানাহলে পিছিয়ে পড়বো আমরা।
কেমন প্রস্তুতি চান আপনারা...
ঋতুপর্ণা: আমরা সবদিক দিয়ে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সুবিধাদি চাই। বেশি বেশি প্রস্তুতি ম্যাচ চাই, বিশ্বে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে। দেশের বাইরে দীর্ঘমেয়াদে ক্যাম্প হলে ভালো হয়। এছাড়া আরও মানসম্মত খাবার আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধাদি তো রয়েছেই।
আবাসনের কথা বলছেন..
ঋতুপর্ণা: আমরা যেখানে থাকি সেই বাফুফে ভবনে কিন্তু অন্য বয়সভিত্তিক মেয়েরা থাকে। দেখা যায় এক রুমে তখন ৬-৮ জন ঘুমায়। সবার তো এক সঙ্গে অনুশীলন থাকে না। যার ভোরে উঠতে হবে তখন অন্যদের ঘুমে সমস্যা হয়। এছাড়া প্রাইভেসির একটা বিষয় তো রয়েছেই। আর একটা বিষয়। আমরা তো ছেলেদের মতো সুবিধাদি পাই না। ওরা তারকা হোটেলে থেকে ক্যাম্প করে। খাবারও অনেক মানসম্মত। বিদেশি কোচিং স্টাফও অনেক। আমরা চাই এমন সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা।
দেশে তো নিয়মিত লীগ হয় না। ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামোতে পরিবর্তন চান কিনা..
ঋতুপর্ণা: অবশ্যই চাই। শক্তিশালী লীগ হলে তখন আমাদের উন্নতি হবে। আর্থিক দিক দিয়ে সবাই এগিয়ে যাবে।
আর্থিক দিকের কথা যখন বলছেন আপনারা তো মাসিক ৫০ হাজার টাকা বেতন ছাড়া অন্য কিছু সেভাবে পান না। তাও সবাই না। সাফ জিতে এসে ঘোষিত দেড় কোটি টাকা বোনাস এখনও পাননি। মধ্যরাতে সংবর্ধনা পেয়েছেন। শুধু হাতে ফুলই উঠেছে!
ঋতুপর্ণা: হ্যাঁ তা ঠিক। আমাদের খেলার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। এটাই আমাদের পেশা। এখন আর্থিক দিক দিয়ে লাভবান হলে নিজেদের কাছেই ভালো লাগবে। তখন খেলাতে মনোযোগও বেশি দেয়া যায়। মধ্যরাতে সংবর্ধনা ভালো লেগেছে। তবে বোনাসের টাকা কবে পাবো জানি না। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে এটা মনে করি আমরা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে দেশকে সামনের দিকে আরও অনেক কিছু দেয়ার আছে।
এসব সুবিধা নিশ্চিত হলেই কী চীন-জাপান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্ব সেরা দলগুলোর বিপক্ষে লড়াই সম্ভব? ওরা তো শারীরিক-উচ্চতাসহ সব দিক দিয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে..
ঋতুপর্ণা: দেখুন আপনাকে বিশ্ব স্তরে খেলতে হলে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। শুধু ফল চাইলে হবে না। এর জন্য সেভাবে এফোর্ট দিতে হবে। আর শারীরিকসহ সবদিক দিয়ে ওরা অনেক এগিয়ে মানছি। তবে একটা কথা হলো হয়তো সবাই শারীরিক বা উচ্চতার দিক দিয়ে আমরা ওদের মানের হতে পারবো না। তবে টেকনিক-ট্যাকটিকসে কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ আছে। ধরেন ম্যরাডোনা-মেসি তো শারীরিক বা উচ্চতার দিক দিয়ে ততটা এগিয়ে নেই। ফুটবলে ফিটনেস-স্ট্রেন্থ-টেকনিক-ট্যাকটিকসের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। এসবে ভর করে ম্যারাডোনা, মেসিরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ম্যারাডোনা-মেসি পারলে আমরা কেন সাফল্য পাবো না। আমাদেরও তাই জোর দিতে হবে।
আপনার বাঁ পায়ের প্রশংসা সবাই করছে। বাঁ পায়ের জাদুতে সবাই মোহিত। সেটপিস কিংবা বক্সের বাইরে থেকে গোল করতে আপনি সিদ্ধহস্ত। এর জন্য আলাদা অনুশীলন করা হয় নাকি..
ঋতুপর্ণা: আলাদা অনুশীলন তো হয়ই। তবে আমার কাছে মনে হয় আমার বাঁ পায়ের কারুকাজটা ঈশ্বর প্রদত্ত। অনেক সময় অনুশীলন করেও হয় না। তবে আমার শুরু থেকে বা পায়ের নৈপুণ্য দেখাতে সমস্যা হচ্ছে না।
আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়ার এশিয়ান কাপে সাবিনা আপু কিংবা মাশুরার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় প্রয়োজন। তারা দলে থাকতে তখন আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী থাকবো। দল আরও শক্তিশালী হবো।
কিন্তু তারা তো পিটার বাটলারের অধীনে খেলবেন না। তাদের ছাড়াই তো দল এশিয়ান কাপে গেছে। কাউকে না কাউকে তো দূরত্ব ঘোচাতে হবে। সবাইকে একটা সহজ সমাধানে আসতে হবে। সাবিনা আপু-মাশুরাদের তো অবদান কম নয়। আমরা চাই সামনের দিকে দল আরও শক্তিশালী হোক। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগুক।
২০২২ সালে সাফ জেতার পর তো রাঙামাটিতে সরকার থেকে জমি দেয়ার কথা ছিল। আদৌ সেই জমি আমি পাবো কিনা জানি না। ডিসি ও ইউএনও মহোদয় আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন। তবে আমি আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছি!
ফুটবলের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন
ঋতুপর্ণা। ক্লাসই তো করতে পারছি না। ফুটবলের কারণে সেমিস্টার মিসও হয়েছে। কবে দিতে পারবো তা জানি না। সামনে ব্যস্ত সূচি, দেখি কী করি।
ঋতুপর্ণা বলেন, আমি ফুটবল খেলি মনের আনন্দে। দেশের জন্য। এটা আমার পেশা। সামনের দিকে আরও পরিশ্রম করবো। এখন ভাগ্য আমাকে যেখানে নিয়ে যায়..।