alt

খেলা

সাতক্ষীরা

মৌলবাদীদের হুমকি উপেক্ষা করে কোচ সাবিনা-মাসুরাদের কোচিং করাতেন

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা : মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আনন্দের বন্যা বইছে সাবিনা-মাসুরার জেলা সাতক্ষীরায়। অন্য সময়ে ফুটবল খেলা তেমন না দেখলেও সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে টিভিতে খেলা দেখতে মিস করেননি শহরের সবুজবাগ, বিনেরপোতাসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটবল অনুরাগীরা। এদিকে, ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, গোল্ডেনবুটজয়ী সাবিনা ও অন্যতম খেলোয়াড় মাসুরাকে স্বাগত জানাতে জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করতে যাচ্ছে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। মেয়েটার ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। ৮ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করছেন তিনি। তিনি শুধু সাবিনা নয়, ফুটবল বাংলাদেশের সব মেয়েদের শুভ কামনা জানিয়েছেন।

সাবিনার বাবা সৈয়দ আলী গাজী মারা গেছেন ২০২০ সালে। পিতাহীন সাবিনার বড় বোন সালমা খাতুন। পরিবারের তিনিই এখন কত্রী।

খেলা শেষ হওয়ার পরে সালমা খাতুন বলেন, সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন জয়ের খবরটা কখন আসবে। অবশেষে সন্ধ্যার পরপরই টিভির পর্দায় যখন ভেসে আসল, বাংলাদেশ ৩-১ গোলে জয়ী, তখন মনে হয়েছিল, স্বপ্ন সার্থক হয়েছে আমার বোনটার। আর রাতে যখন শুনলাম, সাবিনা সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট পেয়েছে, তখন চোখ দিয়ে অনবরত আনন্দাশ্রু বের হচ্ছিল। বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। কারণ বাংলাদেশের মধ্যে যেখানেই সাবিনা খেলা করতে যেত, বাবা ছুটে যেত। সালমা খাতুন সাবিনার আজকের এই অবস্থানের পেছনে যার সবচেয়ে বড় অবদান, সেই আকবার স্যারকেও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় মৌলবাদিদের হুমকি উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার স্থানীয় কোচ আকবার আলী মেয়েদের বিভিন্ন ইভেন্টে কোচিং করাতেন। বছর খানেক আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, আমাদের ছোটবেলাটা কেটেছে অভাব আর দারিদ্রতার সঙ্গে। সেই সময়টা ছিল খুবই সংগ্রামের। সাবিনা এখন বড় তারকা। অন্য বোনেরাও স্বাবলম্বী। সব মিলিয়ে মাকে নিয়ে ভালোই আছি।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অন্য খেলোয়াড় মাসুরাদের বাড়িতেও চলছে জয়ের উৎসব। বাংলাদেশ দলের জয়ে বাবা রজব আলী শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও স্থানীয় মেলায় রাতভর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।

রজব আলী বলেন, আমি কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরায় এসেছি ছোটবেলায়। সংসার চালাতে কখনও চা বেচতাম, কখনও বা সবজি বিক্রি করতাম। শহরের পিটিআই মাঠে স্থানীয় কোচ আকবার ভাই মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ দিতেন। আমার বড় মেয়ে মাসুরা ওরফে মুক্তা পিটিআই এলাকার একটি স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ত। স্কুল শেষে সে বাসায় না ফিরে মাঠে থাকত। সে সময় সাবিনারা পিটিআই মাঠে খেলত। প্রথম প্রথম সাবিনাদের বল সীমানার বাইরে গেলে সে কুড়িয়ে আনত। এভাবে তার মধ্যে ফুটবলপ্রীতি তৈরি হয়। আমি এসবের কিছুই জানতাম না। যখন জানলাম, তখন বাধা দিয়েছিলাম। তবে আকবার ভাইয়ের অনুরোধে আমি আর না করতে পারিনি। শেষমেষ ফুটবলেই মেয়েটা সুনাম কুড়ালো।

মাসুরার মা ফাতেমা খাতুন জানান, আমরা খুবই গরীব মানুষ। এমনও দিন গেছে, অনাহারে থাকতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকে মাসুরার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। কোচ আকবার আলীই আমার মেয়েকে এ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য হলো, এত বড় জয় আকবার আলী দেখে যেতে পারলেন না।

ফাতেমা খাতুন আরও জানান, মেঝ মেয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ে মাসুরাকে বিয়ের কথা বললেই সে বকা দেয়। ফুটবলই ওর ধ্যান-জ্ঞান। ফুটবলের প্রতি ওর আগ্রহ দেখে ওর বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি তাকে খেলতে উৎসাহিত করি।

সাতক্ষীরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন প্রিন্স জানান, নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। বিশেষ করে সাবিনা ও মাসুরার জন্য সাতক্ষীরাবাসী গর্বিত। তারা দু’জন সাতক্ষীরায় ফিরলে স্টেডিয়ামে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের জমাকালো সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

টিভিতে আজকের খেলা

ছবি

সাগরিকার হ্যাটট্রিকে শ্রীলঙ্কার জালে বাংলাদেশের ৯ গোল

ছবি

লর্ডসে সেঞ্চুরির যত কীর্তি রুটের

ছবি

ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল সেমিতে পুঠিয়া

কিংস অ্যারেনার মাঠ নিয়ে উষ্মা জানালেন দুই কোচই

ছবি

উইকেট বেশ ভালো ছিল, কিন্তু আমরা পেরে উঠিনি: লিটন

আবাহনীর ফুটবল কোচ থাকছেন মারুফুলই

ছবি

ছেলেদের মতো সুবিধাদি পাই না আমরা: ঋতুপর্ণা

ছবি

হেরে যাবো এমন ভয় নিয়ে ক্রিকেট খেলা যায় না: মুশতাক

ছবি

স্বপ্না-মুনকি-সাগরিকার ঝলক, ৯-১ গোলে শ্রীলঙ্কাকে উড়াল মেয়েরা

ছবি

জাপানের বিপক্ষে হেরে তৃতীয় স্থানের লড়াইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৮ হকি দল

ছবি

রেয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে ফাইনালে পিএসজি

ছবি

এশিয়ান কাপে জায়গা করে নেয়ায় বাংলাদেশকে অন্য চোখে দেখছে সবাই

ছবি

রেয়ালে মদ্রিচ-যুগ শেষ

ছবি

তরুণদের জাত চেনানোর দারুণ সুযোগ: বাটলার

ছবি

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে পেছালো বাংলাদেশ

ছবি

ঢাকার এসিসি বৈঠকে থাকতেও আপত্তি ভারতের!

বিপিএলে নতুন আরেকটি ভেন্যু যুক্ত হচ্ছে

ছবি

প্রথম টি-২০তে টস হেরে ব্যাটিংয়ে

রাজশাহী ডিসি গোল্ডকাপ টাইব্রেকারে বাগমারা জয়ী

ছবি

ত্রিদেশীয় সিরিজের বাংলাদেশ দল

শুক্রবার পর্তুগালে লড়াইয়ে নামবেন প্রবাসী বক্সার জিনাত

ছবি

ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে চেলসির মুখোমুখি হবে পিএসজি, রেয়ালের আরেকটি শূন্য মৌসুম

টিভিতে আজকের খেলা

ছবি

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টি-২০ সিরিজ শুরু বৃহস্পতিবার

ছবি

দেশেও শিরোপায় চোখ আফঈদাদের

‘তারুণ্যের উৎসব’ চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পেড্রোর জোড়া গোলে ফাইনালে চেলসি

আবার টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটার ব্রুক

ছবি

দলটি তরুণ, সুযোগ দিলে ফল পাওয়া যাবে: মিরাজ

রাজশাহী ডিসি গোল্ডকাপ শুরু

ছবি

চেলসিকে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললেন পেদ্রো, হারালেন নিজেরই শৈশবের দলকে

টিভিতে আজকের খেলা

ছবি

এজবাস্টনের পিচ আমরা ঠিকমতো বুঝতে পারিনি: ইংল্যান্ড কোচ

ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া কমিটিতে রকিবুল-আশরাফুল-সাব্বির

ছবি

বাবর, রিজওয়ান, আফ্রিদিকে বাইরে রেখেই বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান

tab

খেলা

সাতক্ষীরা

মৌলবাদীদের হুমকি উপেক্ষা করে কোচ সাবিনা-মাসুরাদের কোচিং করাতেন

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২

আনন্দের বন্যা বইছে সাবিনা-মাসুরার জেলা সাতক্ষীরায়। অন্য সময়ে ফুটবল খেলা তেমন না দেখলেও সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে টিভিতে খেলা দেখতে মিস করেননি শহরের সবুজবাগ, বিনেরপোতাসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটবল অনুরাগীরা। এদিকে, ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, গোল্ডেনবুটজয়ী সাবিনা ও অন্যতম খেলোয়াড় মাসুরাকে স্বাগত জানাতে জমকালো সংবর্ধনার আয়োজন করতে যাচ্ছে জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন।

সাবিনার মা মমতাজ বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। মেয়েটার ধ্যান-জ্ঞান ফুটবলকে নিয়ে। ৮ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় অপরিসীম আনন্দ উপভোগ করছেন তিনি। তিনি শুধু সাবিনা নয়, ফুটবল বাংলাদেশের সব মেয়েদের শুভ কামনা জানিয়েছেন।

সাবিনার বাবা সৈয়দ আলী গাজী মারা গেছেন ২০২০ সালে। পিতাহীন সাবিনার বড় বোন সালমা খাতুন। পরিবারের তিনিই এখন কত্রী।

খেলা শেষ হওয়ার পরে সালমা খাতুন বলেন, সারাদিন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন জয়ের খবরটা কখন আসবে। অবশেষে সন্ধ্যার পরপরই টিভির পর্দায় যখন ভেসে আসল, বাংলাদেশ ৩-১ গোলে জয়ী, তখন মনে হয়েছিল, স্বপ্ন সার্থক হয়েছে আমার বোনটার। আর রাতে যখন শুনলাম, সাবিনা সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট পেয়েছে, তখন চোখ দিয়ে অনবরত আনন্দাশ্রু বের হচ্ছিল। বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। কারণ বাংলাদেশের মধ্যে যেখানেই সাবিনা খেলা করতে যেত, বাবা ছুটে যেত। সালমা খাতুন সাবিনার আজকের এই অবস্থানের পেছনে যার সবচেয়ে বড় অবদান, সেই আকবার স্যারকেও তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় মৌলবাদিদের হুমকি উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার স্থানীয় কোচ আকবার আলী মেয়েদের বিভিন্ন ইভেন্টে কোচিং করাতেন। বছর খানেক আগে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, আমাদের ছোটবেলাটা কেটেছে অভাব আর দারিদ্রতার সঙ্গে। সেই সময়টা ছিল খুবই সংগ্রামের। সাবিনা এখন বড় তারকা। অন্য বোনেরাও স্বাবলম্বী। সব মিলিয়ে মাকে নিয়ে ভালোই আছি।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অন্য খেলোয়াড় মাসুরাদের বাড়িতেও চলছে জয়ের উৎসব। বাংলাদেশ দলের জয়ে বাবা রজব আলী শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও স্থানীয় মেলায় রাতভর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।

রজব আলী বলেন, আমি কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরায় এসেছি ছোটবেলায়। সংসার চালাতে কখনও চা বেচতাম, কখনও বা সবজি বিক্রি করতাম। শহরের পিটিআই মাঠে স্থানীয় কোচ আকবার ভাই মেয়েদের ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ দিতেন। আমার বড় মেয়ে মাসুরা ওরফে মুক্তা পিটিআই এলাকার একটি স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ত। স্কুল শেষে সে বাসায় না ফিরে মাঠে থাকত। সে সময় সাবিনারা পিটিআই মাঠে খেলত। প্রথম প্রথম সাবিনাদের বল সীমানার বাইরে গেলে সে কুড়িয়ে আনত। এভাবে তার মধ্যে ফুটবলপ্রীতি তৈরি হয়। আমি এসবের কিছুই জানতাম না। যখন জানলাম, তখন বাধা দিয়েছিলাম। তবে আকবার ভাইয়ের অনুরোধে আমি আর না করতে পারিনি। শেষমেষ ফুটবলেই মেয়েটা সুনাম কুড়ালো।

মাসুরার মা ফাতেমা খাতুন জানান, আমরা খুবই গরীব মানুষ। এমনও দিন গেছে, অনাহারে থাকতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকে মাসুরার খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমি তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। কোচ আকবার আলীই আমার মেয়েকে এ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। দুর্ভাগ্য হলো, এত বড় জয় আকবার আলী দেখে যেতে পারলেন না।

ফাতেমা খাতুন আরও জানান, মেঝ মেয়ে সুরাইয়াকে বিয়ে দিয়েছি। বড় মেয়ে মাসুরাকে বিয়ের কথা বললেই সে বকা দেয়। ফুটবলই ওর ধ্যান-জ্ঞান। ফুটবলের প্রতি ওর আগ্রহ দেখে ওর বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি তাকে খেলতে উৎসাহিত করি।

সাতক্ষীরা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন প্রিন্স জানান, নারী ফুটবল দল সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গর্ব অনুভব করছি। বিশেষ করে সাবিনা ও মাসুরার জন্য সাতক্ষীরাবাসী গর্বিত। তারা দু’জন সাতক্ষীরায় ফিরলে স্টেডিয়ামে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদের জমাকালো সংবর্ধনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

back to top