জাতীয় নারী ফুটবল
জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে গোলাম রব্বানী অধ্যায় শেষ হওয়ার পথে। গতকালই এমন আভাস দিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছিলেন নারী ফুটবলে বাংলাদেশকে অনেক সাফল্য এনে দেওয়া এই কোচ। আজ তিনি মেয়েদের অনুশীলনেও যাননি। এমনকি বাফুফের মহিলা কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব না ছাড়ার অনুরোধ পেয়ে তাতেও সাড়া দেননি। বাফুফের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি অনড়।
আজ সারা দিনই এ বিষয়ে চর্চা চলছে দেশের ফুটবলে। বাফুফের সঙ্গে ১৭ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে গোলাম রব্বানী কেন সরে যাচ্ছেন, এ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। গোলাম রব্বানী বলছেন ক্লান্তি আর জবাবদিহি, এসব কারণে তিনি আর মেয়েদের কোচ থাকতে চান না। যদিও নারী ফুটবলেই থাকবেন। কোচ হিসেবে কোনো ক্লাবে কাজ করবেন।
শোনা যাচ্ছে, নারী ফুটবলের একটি বড় ক্লাব থেকে ভালো প্রস্তাব পেয়েছেন। আর সেটাকেই তিনি গ্রহণ করবেন বলে ঠিক করেছেন। সেটির আভাসও পাওয়া গেছে তাঁর কথায়, ‘ছোটবেলা থেকে কখনোই বসে ছিলাম না। কাজ করেছি। আশা করি, এবারও বসে থাকব না।’
গোলাম রব্বানী দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরছি না।’ বাফুফে থেকে কেউ যোগাযোগ করেছে কি না, জানতে চাইলে জানান, বাফুফের নারী কমিটির প্রধান তাঁকে ফোন করে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আপা আমাকে থাকার জন্য বলেছেন। কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করে বাফুফেতে যেতে বলেন। কিন্তু আমি যাইনি। ওনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাব না বলেছি।’
সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিয়ে বাফুফের তরফে কিছু বলা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, না, আমার তো কোনো দাবিদাওয়া নেই। আমার একটাই চাওয়া, আমি এখানে আর থাকব না। দাবিদাওয়া থাকলে আমি বলতাম। ওইভাবে আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই যে দাবিদাওয়া তুলে থেকে যাওয়া। আমি ১৭-১৮ বছরে কখনো দাবিদাওয়ার আওয়াজ তুলিনি। ওনারাই যা করার করেছেন। আমি মেনে নিয়েছি।’
নারী দলের সঙ্গে সর্বশেষ তিনি ছিলেন গত পরশু। সেদিনও খেলোয়াড়দের অনুশীলন করিয়েছেন। গতকাল ছুটির দিনে রিকভারি সেশন ছিল, কিন্তু কোচ যাননি। যাননি আজও। অনুশীলন করিয়েছেন সহকারী কোচেরা।
বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরশু ফোন করে সিদ্ধান্ত বদলাতে বলেন কোচকে। তখনো ‘না’ করেছেন গোলাম রব্বানী। ২৯-৩০ মে চিঠি দেবেন বলে আজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। বাফুফেতে এপ্রিল ও মে মাসের বেতন পাবেন। গত তিনটি ঈদে বোনাস পাননি বলেও তাঁর অভিযোগ, ‘বোনাস আগে পেতাম। কিন্তু গত তিনটি ঈদে বোনাস পাইনি।’
ওদিকে বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার দুপুরে বাফুফে ভবনে গণমাধ্যমকে জানান, গোলাম রব্বানীর ফিরে আসার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী, ‘আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি তিনি কোচ হিসেবে থাকবেন। এমন অভিমান তিনি আগেও করেছেন। এটা নতুন নয়। দুই-তিন দিন অপেক্ষা করুন, দেখবেন তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন।’
গোলাম রব্বানী যে ক্লান্তির কথা বলেছেন তা নিয়ে মাহফুজার কথা, ‘কোচ ক্লান্ত হলে বাফুফেকে বলতে পারতেন। প্রয়োজনে তাঁকে মাসে ৫-৬ দিন ছুটি দেওয়া যেত। কিন্তু তিনি তো সেটা বাফুফেকে বলেননি।’ বিভিন্ন সময় বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি গোলাম রব্বানীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও শোনা যায়। গোলাম রব্বানী নারী দলের কোচ হলেও পল অনুশীলন করাতেন দলকে। এ নিয়ে আকার-ইঙ্গিতে বিভিন্ন সময় ক্ষোভও প্রকাশ করেন কোচ।
কিন্তু বাফুফেকে নাকি কখনো সে রকম কোনো অভিযোগ করেননি রব্বানী। মাহফুজা আক্তার বলেছেন, ‘তাঁর কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাতে পারতেন।’ স্মলির সঙ্গে রব্বানীর বেতনের ব্যবধানও অনেক। স্মলি ১৭-১৮ লাখ টাকা বেতন পান, রব্বানী পান দেড় লাখ টাকা। এ বিষয়ে মাহফুজার কথা, ‘দুটি দুই রকম ব্যাপার। পল বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। সুতরাং তাঁর সঙ্গে তুলনা করলে তো হবে না। তবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর কোচের বেতন বাড়ানো হয়েছে।’
গোলাম রব্বানীর সরে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সরাসরি কিছু বলতে রাজি নন, ‘কোচ যেহেতু কোনো চিঠি দেননি, এ ব্যাপারে কিছু বলব না। চিঠি দিলে প্রতিক্রিয়া দেব।’
তবে বাফুফে সভাপতির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দায়িত্ব ছাড়ার আগে গোলাম রব্বানী তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি কেন, এই নিয়ে ক্ষুব্ধ সভাপতি। সালাউদ্দিনের প্রশ্ন, কোনো সমস্যা হলে কেন সেটা বাফুফেকে বলেননি?
সব মিলিয়ে একটা সংসারই যেন এখন ভাঙনের মুখে! সাফজয়ী নারী দলের আনুচিং মগিনি, সাজেদা খাতুন ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে ফুটবলকে বিদায় বলেছেন। গতকাল বিদায় বলেছেন আরেক সাফজয়ী খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না। বাফুফে সভাপতি অবশ্য এসবেও বিচলিত নন, ‘ফুটবলের নিয়মই এমন। কেউ বিদায় নেবে কেউ আসবে। পাইপলাইন মজবুত থাকলে কোনো সমস্যা নেই।’
জাতীয় নারী ফুটবল
শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ হিসেবে গোলাম রব্বানী অধ্যায় শেষ হওয়ার পথে। গতকালই এমন আভাস দিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছিলেন নারী ফুটবলে বাংলাদেশকে অনেক সাফল্য এনে দেওয়া এই কোচ। আজ তিনি মেয়েদের অনুশীলনেও যাননি। এমনকি বাফুফের মহিলা কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তারের কাছ থেকে দায়িত্ব না ছাড়ার অনুরোধ পেয়ে তাতেও সাড়া দেননি। বাফুফের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি অনড়।
আজ সারা দিনই এ বিষয়ে চর্চা চলছে দেশের ফুটবলে। বাফুফের সঙ্গে ১৭ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে গোলাম রব্বানী কেন সরে যাচ্ছেন, এ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। গোলাম রব্বানী বলছেন ক্লান্তি আর জবাবদিহি, এসব কারণে তিনি আর মেয়েদের কোচ থাকতে চান না। যদিও নারী ফুটবলেই থাকবেন। কোচ হিসেবে কোনো ক্লাবে কাজ করবেন।
শোনা যাচ্ছে, নারী ফুটবলের একটি বড় ক্লাব থেকে ভালো প্রস্তাব পেয়েছেন। আর সেটাকেই তিনি গ্রহণ করবেন বলে ঠিক করেছেন। সেটির আভাসও পাওয়া গেছে তাঁর কথায়, ‘ছোটবেলা থেকে কখনোই বসে ছিলাম না। কাজ করেছি। আশা করি, এবারও বসে থাকব না।’
গোলাম রব্বানী দুপুরে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরছি না।’ বাফুফে থেকে কেউ যোগাযোগ করেছে কি না, জানতে চাইলে জানান, বাফুফের নারী কমিটির প্রধান তাঁকে ফোন করে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আপা আমাকে থাকার জন্য বলেছেন। কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করে বাফুফেতে যেতে বলেন। কিন্তু আমি যাইনি। ওনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাব না বলেছি।’
সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো নিয়ে বাফুফের তরফে কিছু বলা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, না, আমার তো কোনো দাবিদাওয়া নেই। আমার একটাই চাওয়া, আমি এখানে আর থাকব না। দাবিদাওয়া থাকলে আমি বলতাম। ওইভাবে আমার কোনো উদ্দেশ্য নেই যে দাবিদাওয়া তুলে থেকে যাওয়া। আমি ১৭-১৮ বছরে কখনো দাবিদাওয়ার আওয়াজ তুলিনি। ওনারাই যা করার করেছেন। আমি মেনে নিয়েছি।’
নারী দলের সঙ্গে সর্বশেষ তিনি ছিলেন গত পরশু। সেদিনও খেলোয়াড়দের অনুশীলন করিয়েছেন। গতকাল ছুটির দিনে রিকভারি সেশন ছিল, কিন্তু কোচ যাননি। যাননি আজও। অনুশীলন করিয়েছেন সহকারী কোচেরা।
বাফুফের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পরশু ফোন করে সিদ্ধান্ত বদলাতে বলেন কোচকে। তখনো ‘না’ করেছেন গোলাম রব্বানী। ২৯-৩০ মে চিঠি দেবেন বলে আজ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি। বাফুফেতে এপ্রিল ও মে মাসের বেতন পাবেন। গত তিনটি ঈদে বোনাস পাননি বলেও তাঁর অভিযোগ, ‘বোনাস আগে পেতাম। কিন্তু গত তিনটি ঈদে বোনাস পাইনি।’
ওদিকে বাফুফের নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার দুপুরে বাফুফে ভবনে গণমাধ্যমকে জানান, গোলাম রব্বানীর ফিরে আসার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী, ‘আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি তিনি কোচ হিসেবে থাকবেন। এমন অভিমান তিনি আগেও করেছেন। এটা নতুন নয়। দুই-তিন দিন অপেক্ষা করুন, দেখবেন তিনি সিদ্ধান্ত বদল করেছেন।’
গোলাম রব্বানী যে ক্লান্তির কথা বলেছেন তা নিয়ে মাহফুজার কথা, ‘কোচ ক্লান্ত হলে বাফুফেকে বলতে পারতেন। প্রয়োজনে তাঁকে মাসে ৫-৬ দিন ছুটি দেওয়া যেত। কিন্তু তিনি তো সেটা বাফুফেকে বলেননি।’ বিভিন্ন সময় বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি গোলাম রব্বানীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও শোনা যায়। গোলাম রব্বানী নারী দলের কোচ হলেও পল অনুশীলন করাতেন দলকে। এ নিয়ে আকার-ইঙ্গিতে বিভিন্ন সময় ক্ষোভও প্রকাশ করেন কোচ।
কিন্তু বাফুফেকে নাকি কখনো সে রকম কোনো অভিযোগ করেননি রব্বানী। মাহফুজা আক্তার বলেছেন, ‘তাঁর কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের জানাতে পারতেন।’ স্মলির সঙ্গে রব্বানীর বেতনের ব্যবধানও অনেক। স্মলি ১৭-১৮ লাখ টাকা বেতন পান, রব্বানী পান দেড় লাখ টাকা। এ বিষয়ে মাহফুজার কথা, ‘দুটি দুই রকম ব্যাপার। পল বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। সুতরাং তাঁর সঙ্গে তুলনা করলে তো হবে না। তবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর কোচের বেতন বাড়ানো হয়েছে।’
গোলাম রব্বানীর সরে যাওয়ার বিষয়টা নিয়ে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সরাসরি কিছু বলতে রাজি নন, ‘কোচ যেহেতু কোনো চিঠি দেননি, এ ব্যাপারে কিছু বলব না। চিঠি দিলে প্রতিক্রিয়া দেব।’
তবে বাফুফে সভাপতির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, দায়িত্ব ছাড়ার আগে গোলাম রব্বানী তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি কেন, এই নিয়ে ক্ষুব্ধ সভাপতি। সালাউদ্দিনের প্রশ্ন, কোনো সমস্যা হলে কেন সেটা বাফুফেকে বলেননি?
সব মিলিয়ে একটা সংসারই যেন এখন ভাঙনের মুখে! সাফজয়ী নারী দলের আনুচিং মগিনি, সাজেদা খাতুন ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ে ফুটবলকে বিদায় বলেছেন। গতকাল বিদায় বলেছেন আরেক সাফজয়ী খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না। বাফুফে সভাপতি অবশ্য এসবেও বিচলিত নন, ‘ফুটবলের নিয়মই এমন। কেউ বিদায় নেবে কেউ আসবে। পাইপলাইন মজবুত থাকলে কোনো সমস্যা নেই।’