alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না কেন

এ. এ. জাফর ইকবাল

: শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
image

অনেক স্থানেই সরকারের বেঁধে দেয়া দরে আলু, পেঁয়াজ, ডিম পাওয়া যাচ্ছে না

আলু, ডিম এবং পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা কেউ মানেন না সরকারের নির্ধারিত দর। নির্ধারিত দর মানবে না, এ বিষয়টি সম্পর্কে ঠিক কতটুকু সচেতন ছিল সরকার তা আমাদের নিকট অজ্ঞাত। তবে এটুকু বোঝা গেল, আইনের তোয়াক্কা করে না কেউ। আইন প্রয়োগ করে বেঁধে দেয়া দরে বেচাকেনা করতে বাধ্য করা হবে, তেমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, তর্জন-গর্জন যাই থাক না কেন, প্রত্যাশিত বর্ষণ নেই। হতাশ জণগণ, আর যারা আইন না মানার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ তারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও গোপনে ডুগডুগি বাজাচ্ছে।

এই মুহূর্তে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে কিছু যে করার আছে, তা সরকারকে প্রমাণ করতে হবে। যদি না পারে, তাহলে সরকারের অবস্থান শুধু হাস্যকরই হবে না, তা হবে নির্ঘাৎ লজ্জাকর।

সরকার কেন? নিশ্চয়ই জনগণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য। সকল পর্যায়ের জনগণ সরকারের ওপর যে ভরসা করে, এবং নির্ভরতা বজায় রাখে তা নির্ঘাৎ অবহেলিত হলো আলু, ডিম আর পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণের খেলায়।

আমরা সমাজবদ্ধ জীব যাদের সামগ্রিক শৃঙ্খলা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সরকার যেখানে ব্যর্থ সেখানে সাধারণ মানুষ কী করে কার ওপর নির্ভরশীল হবে?

এ ব্যাপারে সরকারে মন্তব্য এখনো জানা যায়নি। জানাটা জরুরি। কারণ, সরকার যদি কিছু করতে না পারে তাহলে যে নৈরাজ্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা থেকে মুক্তিরই বা পথ কী?

শুধু ঢাকা কিংবা একটি শহরে এ ঘটনা ঘটেনি। সারাদেশেই একই অবস্থা। অনেক জায়গাতে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের লোকজন ঘটা করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল আসেনি। অভিযান শেষ হতেই ব্যবসায়ীরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। তা হলে কি লাভ হলো এ অভিযান চালিয়ে?

আমাদের সদাশয় বাণিজ্যমন্ত্রীও একজন ব্যবসায়ী। তিনি কি নিজেও অনুমান করেননি যে, ব্যবসায়ীরা তার সিদ্ধান্ত মানবে না! প্রথমে সিদ্ধান্ত মানবার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং এই সময় খুঁজে দেখতে হবে, সিদ্ধান্ত মানলে ব্যবসায়ীদের কি কি ক্ষতি হবে বা হতে পারে। এটা সঠিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত জারী করা হলে সে সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সমাদৃত হতো ঠিক অন্যদিকে সরকারের গ্রহণযোাগ্যতা বৃদ্ধি পেত। এখন যা করা হয়েছে বা যা দেখা গেছে তাতে সরকারের অবস্থান হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে সব পর্যায়ের জনগণের কাছে।

এতে দেশের ক্ষতি হয়েছে। মনে হয়েছে সদাশয় মন্ত্রী মহোদয়ের কর্মকান্ডের সঙ্গে সরকারের কোন সমন্বয় নেই। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রী মহোদয়ের নিজের বিচার নিজেই করা উচিত।

জানি, মাত্র একজন মন্ত্রী ছাড়া এ দেশে অদ্যাবধি কোন মন্ত্রীকে তার ভুলের খেসারত দিতে দেখা যায়নি। মন্ত্রীরা নিজদেরকে জনপ্রতিনিধি মনে করেন না। তাদের আচার-আচরণ অনেকাংশে তৃতীয় শ্রেণীর বেসরকারী কর্মচারীদের মতো দেখা যায়। এটা লজ্জাকর এবং জনসাধারণের প্রত্যাশিত নয়।

আলু, পেঁয়াজ এবং ডিমের দাম নিয়ে যে কাহিনী হলো তা যদি সব পণ্যে সংক্রামিত হয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা থাকবে কি? অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে অবধারিতভাবেই রাজনৈতিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়বে। তখন এর দায়িত্ব নেবে কে?

আজ জনগণ বিব্রত। হতবাক বুদ্ধিজীবী সমাজ। ঠিক এই মুহূর্তে বিবেকবান মন্ত্রী মহোদয়ের উচিত, বিষয়টির গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া। তা যদি তিনি না পারেন তাহলে অবধারিতভাবেই তাকে সরে যাওয়া উচিত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে।

অনেক জায়গাতে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের লোকজন ঘটা করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল আসেনি। অভিযান শেষ হতেই ব্যবসায়ীরা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। তাহলে কি লাভ হলো এ অভিযান চালিয়ে?

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, আমি দেখছি। আমি এর বিচার করব। এই বলে কালক্ষেপণের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু তা কোন সুফল বয়ে আনবে না।

নিজের দলের এমপি-মন্ত্রীকে অপকর্মের জন্য শাস্তি দেয়া, নিজের শাস্তি নেয়ার চাইতেও কঠিন কাজ। ইতঃপূর্বে অনেক সময়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিক এভাবেই অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। এবারেও ইচ্ছে করলে তা পারেন। তিনি কী করবেন, তা তার বিচার-বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল। সামনে নির্বাচন। সুতরাং এবারের পরিস্থিতি সময়ের নিরিখে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং হিসেবটাও হবে ভিন্নই। আমরা আশা করব, তেমন কিছু নতুন সিদ্ধান্ত যা দেশের উপকারে আসবে এবং ক্ষমতাসীন দলেরও উপকারে আসবে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় এমন একজন মন্ত্রী বা এমপি কি নেই যিনি নৌকা মার্কার আশীর্বাদপুষ্ট না হয়ে নির্বাচনী বৈতরণী অতিক্রম করতে পারছেন। তারপরেও এদের মাঝে অনেককেই দেখা যায়, সময় ও সুযোগ পেলে এমন কান্ড ঘটান, যা তিনি করেন তার নিজের অবস্থান অপ্রতিদ্বন্দ্বী করার প্রয়োজনে। বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় তা-ই করেছেন। পালের পাগলা ষাঁড় কোরবানি দেয়া ভালো, তাতে বিধাতা খুশি হন। একই সঙ্গে নিরাপদ হয় পুরো গো-পাল। এ বিষয়টি সম্পর্কেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এখন সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বিষয়টি তিনি দেখবেন এই আশ্বাস দিতে আপাত-পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা তো তিনি করতেই পারেন। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার সঠিক সময় এটি নয়।

মন্ত্রীদের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ডে যদি শৃঙ্খলাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাহলে যে দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তা শুধু সরকারকেই ভোগাবে না, একই সঙ্গে জনগণকেও ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হবে।

একজন মুদি দোকানদার যদি এ জাতীয় কথা বলত, তাহলে এত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। এখন তো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা বক্তার পদবির কারণে। সুতরাং তাকে বুঝতে হবে কি বলা উচিত, কি বলা সমচীন নয়। বিষয়টি লজ্জাকর বলে খুব বাড়িয়ে বলার প্রয়োজন নেই, অনুমান করা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবধারিতভাবেই তা অনুমান করেছেন। আমরা শুধু বলতে পারি, পাগলা ঘোড়ার লাগাম দেয়ার দায়িত্ব তার। সময়ে, সঠিকভাবে এই ধরনের পাগলামির নিয়ন্ত্রণ করা জাতীয় স্বার্থেই অপরিহার্য।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না কেন

এ. এ. জাফর ইকবাল

image

অনেক স্থানেই সরকারের বেঁধে দেয়া দরে আলু, পেঁয়াজ, ডিম পাওয়া যাচ্ছে না

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আলু, ডিম এবং পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা কেউ মানেন না সরকারের নির্ধারিত দর। নির্ধারিত দর মানবে না, এ বিষয়টি সম্পর্কে ঠিক কতটুকু সচেতন ছিল সরকার তা আমাদের নিকট অজ্ঞাত। তবে এটুকু বোঝা গেল, আইনের তোয়াক্কা করে না কেউ। আইন প্রয়োগ করে বেঁধে দেয়া দরে বেচাকেনা করতে বাধ্য করা হবে, তেমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, তর্জন-গর্জন যাই থাক না কেন, প্রত্যাশিত বর্ষণ নেই। হতাশ জণগণ, আর যারা আইন না মানার ব্যাপারে সংকল্পবদ্ধ তারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও গোপনে ডুগডুগি বাজাচ্ছে।

এই মুহূর্তে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে কিছু যে করার আছে, তা সরকারকে প্রমাণ করতে হবে। যদি না পারে, তাহলে সরকারের অবস্থান শুধু হাস্যকরই হবে না, তা হবে নির্ঘাৎ লজ্জাকর।

সরকার কেন? নিশ্চয়ই জনগণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য। সকল পর্যায়ের জনগণ সরকারের ওপর যে ভরসা করে, এবং নির্ভরতা বজায় রাখে তা নির্ঘাৎ অবহেলিত হলো আলু, ডিম আর পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণের খেলায়।

আমরা সমাজবদ্ধ জীব যাদের সামগ্রিক শৃঙ্খলা নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সরকার যেখানে ব্যর্থ সেখানে সাধারণ মানুষ কী করে কার ওপর নির্ভরশীল হবে?

এ ব্যাপারে সরকারে মন্তব্য এখনো জানা যায়নি। জানাটা জরুরি। কারণ, সরকার যদি কিছু করতে না পারে তাহলে যে নৈরাজ্য দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তা থেকে মুক্তিরই বা পথ কী?

শুধু ঢাকা কিংবা একটি শহরে এ ঘটনা ঘটেনি। সারাদেশেই একই অবস্থা। অনেক জায়গাতে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের লোকজন ঘটা করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল আসেনি। অভিযান শেষ হতেই ব্যবসায়ীরা পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। তা হলে কি লাভ হলো এ অভিযান চালিয়ে?

আমাদের সদাশয় বাণিজ্যমন্ত্রীও একজন ব্যবসায়ী। তিনি কি নিজেও অনুমান করেননি যে, ব্যবসায়ীরা তার সিদ্ধান্ত মানবে না! প্রথমে সিদ্ধান্ত মানবার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং এই সময় খুঁজে দেখতে হবে, সিদ্ধান্ত মানলে ব্যবসায়ীদের কি কি ক্ষতি হবে বা হতে পারে। এটা সঠিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত জারী করা হলে সে সিদ্ধান্ত একদিকে যেমন সমাদৃত হতো ঠিক অন্যদিকে সরকারের গ্রহণযোাগ্যতা বৃদ্ধি পেত। এখন যা করা হয়েছে বা যা দেখা গেছে তাতে সরকারের অবস্থান হাস্যকর বলে মনে হচ্ছে সব পর্যায়ের জনগণের কাছে।

এতে দেশের ক্ষতি হয়েছে। মনে হয়েছে সদাশয় মন্ত্রী মহোদয়ের কর্মকান্ডের সঙ্গে সরকারের কোন সমন্বয় নেই। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রী মহোদয়ের নিজের বিচার নিজেই করা উচিত।

জানি, মাত্র একজন মন্ত্রী ছাড়া এ দেশে অদ্যাবধি কোন মন্ত্রীকে তার ভুলের খেসারত দিতে দেখা যায়নি। মন্ত্রীরা নিজদেরকে জনপ্রতিনিধি মনে করেন না। তাদের আচার-আচরণ অনেকাংশে তৃতীয় শ্রেণীর বেসরকারী কর্মচারীদের মতো দেখা যায়। এটা লজ্জাকর এবং জনসাধারণের প্রত্যাশিত নয়।

আলু, পেঁয়াজ এবং ডিমের দাম নিয়ে যে কাহিনী হলো তা যদি সব পণ্যে সংক্রামিত হয়, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা থাকবে কি? অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়লে অবধারিতভাবেই রাজনৈতিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়বে। তখন এর দায়িত্ব নেবে কে?

আজ জনগণ বিব্রত। হতবাক বুদ্ধিজীবী সমাজ। ঠিক এই মুহূর্তে বিবেকবান মন্ত্রী মহোদয়ের উচিত, বিষয়টির গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয়া। তা যদি তিনি না পারেন তাহলে অবধারিতভাবেই তাকে সরে যাওয়া উচিত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে।

অনেক জায়গাতে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের লোকজন ঘটা করে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সুফল আসেনি। অভিযান শেষ হতেই ব্যবসায়ীরা আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। তাহলে কি লাভ হলো এ অভিযান চালিয়ে?

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন, আমি দেখছি। আমি এর বিচার করব। এই বলে কালক্ষেপণের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু তা কোন সুফল বয়ে আনবে না।

নিজের দলের এমপি-মন্ত্রীকে অপকর্মের জন্য শাস্তি দেয়া, নিজের শাস্তি নেয়ার চাইতেও কঠিন কাজ। ইতঃপূর্বে অনেক সময়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিক এভাবেই অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। এবারেও ইচ্ছে করলে তা পারেন। তিনি কী করবেন, তা তার বিচার-বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল। সামনে নির্বাচন। সুতরাং এবারের পরিস্থিতি সময়ের নিরিখে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সুতরাং হিসেবটাও হবে ভিন্নই। আমরা আশা করব, তেমন কিছু নতুন সিদ্ধান্ত যা দেশের উপকারে আসবে এবং ক্ষমতাসীন দলেরও উপকারে আসবে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় এমন একজন মন্ত্রী বা এমপি কি নেই যিনি নৌকা মার্কার আশীর্বাদপুষ্ট না হয়ে নির্বাচনী বৈতরণী অতিক্রম করতে পারছেন। তারপরেও এদের মাঝে অনেককেই দেখা যায়, সময় ও সুযোগ পেলে এমন কান্ড ঘটান, যা তিনি করেন তার নিজের অবস্থান অপ্রতিদ্বন্দ্বী করার প্রয়োজনে। বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয় তা-ই করেছেন। পালের পাগলা ষাঁড় কোরবানি দেয়া ভালো, তাতে বিধাতা খুশি হন। একই সঙ্গে নিরাপদ হয় পুরো গো-পাল। এ বিষয়টি সম্পর্কেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এখন সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

বিষয়টি তিনি দেখবেন এই আশ্বাস দিতে আপাত-পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা তো তিনি করতেই পারেন। কিন্তু এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার সঠিক সময় এটি নয়।

মন্ত্রীদের অপরিণামদর্শী কর্মকান্ডে যদি শৃঙ্খলাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয় তাহলে যে দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তা শুধু সরকারকেই ভোগাবে না, একই সঙ্গে জনগণকেও ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হবে।

একজন মুদি দোকানদার যদি এ জাতীয় কথা বলত, তাহলে এত বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতো না। এখন তো বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা বক্তার পদবির কারণে। সুতরাং তাকে বুঝতে হবে কি বলা উচিত, কি বলা সমচীন নয়। বিষয়টি লজ্জাকর বলে খুব বাড়িয়ে বলার প্রয়োজন নেই, অনুমান করা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবধারিতভাবেই তা অনুমান করেছেন। আমরা শুধু বলতে পারি, পাগলা ঘোড়ার লাগাম দেয়ার দায়িত্ব তার। সময়ে, সঠিকভাবে এই ধরনের পাগলামির নিয়ন্ত্রণ করা জাতীয় স্বার্থেই অপরিহার্য।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ]

back to top