কাজী তারিক আহম্মদ
শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যেসব যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করার কথা, তা অর্জন করতে পারছে না প্রাথমিকের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণীর প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বাংলায় কাক্সিক্ষত যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। আর তৃতীয় শ্রেণীর প্রায় ৬১ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণীর ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না। করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ২০২২ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। করোনাকালে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক গবেষণায় বলা হয়, করোনা মহামারীর সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি আরও বেড়েছে।
ওই গবেষণার তথ্য বলছে, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারিতে প্রাথমিক শিক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে অবনতি হলেও ঝরে পড়া কমাসহ অন্য কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক তথ্য উঠে এসেছে।
বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সরকারি ও বেসরকারি (কিন্ডার গার্টেনসহ) প্রাথমিক স্কুল ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি। ২০২১ সালে কমে হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি। আর ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি, যার মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে প্রাথমিক বিদ্যালয় কমেছে ১৮ হাজার ৪৬৩টি। মূলত কমেছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই। ২০২২ সালে সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১ জন, যা আগের বছর ছিল ২ কোটি ৯০ হাজার ৫৭ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে।
আর ২০২০ সালে ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজারের বেশি। মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ১ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ১৪০ জন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ নারী শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে। মোট শিক্ষকদের মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬২৫ জন শিক্ষক পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গড়ে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ৩৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এবার এ ধরনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার। যার মধ্যে মেয়ে শিশু ৪৪ শতাংশেরও কিছু বেশি। ২০২১ সালে এ ধরনের শিক্ষার্থী ছিল ৯৯ হাজারেরও কিছু বেশি।
শিক্ষাপদ্ধতি হয়ে পড়েছে প্রাইভেট পড়া এবং কোচিংয়ে দৌড়ঝাঁপের বিষয়। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই ঢেলে সাজানো জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষকরা আনন্দঘন পরিবেশে বাচ্চাদের শেখাবেন। মূল্যায়ন করে দেখবেন বাচ্চারা শিখছে কিনা? যারা শিখছে না তাদের সময় দিয়ে শেখাতে হবে। যারা পারে সেসব শিক্ষার্থী দিয়ে অপারগদের শেখানোর ব্যবস্থা করবেন শিক্ষকরা। এভাবে শ্রেণীকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করতে হবে।
বছর শেষে একটি বার্ষিক পরীক্ষা থাকতে পারে। এটি খুব কঠিন কিছু নয়। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীকে শিখিয়ে নিতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে পারদর্শী করতে হবে। তা হলে দেশের সবখানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের পথ সুগম হবে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]
কাজী তারিক আহম্মদ
শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যেসব যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করার কথা, তা অর্জন করতে পারছে না প্রাথমিকের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণীর প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী শিক্ষাক্রম অনুযায়ী বাংলায় কাক্সিক্ষত যোগ্যতা বা দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। আর তৃতীয় শ্রেণীর প্রায় ৬১ শতাংশ এবং পঞ্চম শ্রেণীর ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে শিক্ষাক্রম অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করতে পারছে না। করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ২০২২ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দীর্ঘ ১৮ মাস পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়। করোনাকালে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের শিখনক্ষতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক গবেষণায় বলা হয়, করোনা মহামারীর সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি আরও বেড়েছে।
ওই গবেষণার তথ্য বলছে, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণীর বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২২ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারিতে প্রাথমিক শিক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে অবনতি হলেও ঝরে পড়া কমাসহ অন্য কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক তথ্য উঠে এসেছে।
বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সরকারি ও বেসরকারি (কিন্ডার গার্টেনসহ) প্রাথমিক স্কুল ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি। ২০২১ সালে কমে হয় ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯১টি। আর ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি, যার মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে প্রাথমিক বিদ্যালয় কমেছে ১৮ হাজার ৪৬৩টি। মূলত কমেছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই। ২০২২ সালে সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১ জন, যা আগের বছর ছিল ২ কোটি ৯০ হাজার ৫৭ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৩৪ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে।
আর ২০২০ সালে ছিল ২ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজারের বেশি। মোট শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ১ কোটি ৫ লাখ ২১ হাজার ১৪০ জন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ নারী শিক্ষক। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে। মোট শিক্ষকদের মধ্যে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬২৫ জন শিক্ষক পিটিআইয়ের প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গড়ে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ৩৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এবার এ ধরনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার। যার মধ্যে মেয়ে শিশু ৪৪ শতাংশেরও কিছু বেশি। ২০২১ সালে এ ধরনের শিক্ষার্থী ছিল ৯৯ হাজারেরও কিছু বেশি।
শিক্ষাপদ্ধতি হয়ে পড়েছে প্রাইভেট পড়া এবং কোচিংয়ে দৌড়ঝাঁপের বিষয়। পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই ঢেলে সাজানো জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষকরা আনন্দঘন পরিবেশে বাচ্চাদের শেখাবেন। মূল্যায়ন করে দেখবেন বাচ্চারা শিখছে কিনা? যারা শিখছে না তাদের সময় দিয়ে শেখাতে হবে। যারা পারে সেসব শিক্ষার্থী দিয়ে অপারগদের শেখানোর ব্যবস্থা করবেন শিক্ষকরা। এভাবে শ্রেণীকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করতে হবে।
বছর শেষে একটি বার্ষিক পরীক্ষা থাকতে পারে। এটি খুব কঠিন কিছু নয়। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে সব শিক্ষার্থীকে শিখিয়ে নিতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে পারদর্শী করতে হবে। তা হলে দেশের সবখানে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের পথ সুগম হবে।
[লেখক: প্রাবন্ধিক]