মিথুশিলাক মুরমু
চট্টগ্রামের রাউজানে বেশ কয়েকদিন আগে আদিবাসী মারমা জাতিগোষ্ঠীর যুবককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সহকর্মী সিবলী সাদিককে হত্যার অভিযোগে আটক উমং চিং মারমাকে (২৬) রাউজান থানার পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা ছিনিয়ে নিয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায়ই পিটিয়ে হত্যা করেছে। গণপিটুনিতে নিহত উমং চিং মারমা রাঙামাটি উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে। ইতোমধ্যেই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত সুইংচিং মং মারমা, অংথইমং মারমা, আছুমং মারমা, উক্য থোয়াইং মারমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল-হারুণ বলেছেন, ‘বেলা ১১টার দিকে তারা গহিন পাহাড় থেকে অপহৃত সিবলীর দেহাবশেষ ও আসামি উমং চিং মারমাকে নিয়ে থানার দিকে ফিরছিলেন। এ সময় অপহৃত ছাত্রের বাড়ির কাছে এলে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে হামলা করে শত শত নারী আসামিকে ছিনিয়ে নেন এবং তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে বিলের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যান। উত্তেজিত জনতার হামলায় তিনিসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। অপহৃত সিবলী সাদিকের লাশের দেহাবশেষ ও প্রধান আসামির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’ রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের একটি খামারে কাজ করতেন কলেজছাত্র সিবলী সাদিক, উমং চিং মারমাসহ আরও অনেকে। কোনো এক ঘটনায় বিরোধ দেখা দিলে সিবলী সাদিককে অপহরণ করা হয়; চাওয়া হয় নগদ টাকা। অর্থ পরিশোধ করলেও জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি সিবলী সাদিককে। ১১ সেপ্টেম্বর উমং চিং মারমাকে আটক করে এবং হতাকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে। রাউজান থানা পুলিশ উমং চিং মারমাকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় ফেরার সময় এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের রাউজান মাঝেমধ্যেই পত্রিকার শিরোনাম হয়ে থাকে। বিগত ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে চোর সন্দেহে প্রকাশ্যে গণপিটুনিতে মোক্তার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট রাউজানে ইকবাল হোসেন ও মো. শাখাওয়াত হোসেন নামের দুই ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে প্রতিবেশী রাশেদ। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৭৫ বয়সী এক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ কে এম নুরুল অজম চৌধুরী নামের মুক্তিযোদ্ধা রাউজান হারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি স্টেশনারির দোকানে বই-খাতা-পেন্সিল বিক্রি করতেন। রাউজানে প্রকাশ্যে গণপিটুনিতে হত্যার সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পৃক্ততা তখন দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে। রাউজানবাসীর এই আগ্রাসী মনোভাব, নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার প্রবণতা স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্বতার সঙ্গে নজর দেয়া জরুরি। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিচ্ছৃঙ্খলার পথকে প্রশস্ত করে। আদিবাসী উমং চিং মারমার গণপিটুনির ধরনটি ছিল ভিন্নতর। পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা আইনের শাসনের ধারণার পরিপন্থি। দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে যাওয়া গণপিটুনি এবং বিলের দিকে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ দীর্ঘ সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক, দর্শকের ভূমিকাকে একপ্রকার হত্যাকান্ডের নীরব সম্মতি হিসেবেই গণ্য করা যায়। কেন পুলিশ সদস্যরা একজন পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিকে বিনা বিচারে গণপিটুনিতে হত্যার দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন? উমং চিং মারমা হত্যাকান্ডের বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। গ্রেপ্তারকৃত বাকি চারজন কি তাহলে হত্যাকান্ডের অভিযোগ থেকে ছাড় পাবে! নিশ্চয় নয়, কেন উমং চিং মারমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হলো না। পুলিশের আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলির কোনো সংবাদ চোখে পড়েনি। পুলিশ যদি ফাঁকা গুলি করত তাহলে কিছুটা হলেও বিশ^াসযোগ্য হতো যে, প্রশাসন উমং চিং মারমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট প্রশিক্ষিত। কোন পরিস্থিতিতে কিরূপ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে; সেটি তাদের জানা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অদূরে থাকা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশকে সহযোগিতার জন্য তলব করা যেত। পুলিশও কী সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করেছে। পুলিশের রহস্যজনক আচরণ আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ধর্মবিশারদ প্রকাশ্যে ইসলামী সভায় বক্তব্যে বলেছেন, চাকমা-মারমারা মানুষের মাংস খায়। অর্থাৎ ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাহাড়িরা সিবলী সাদিককে রান্না করে খেয়েছে। মূলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় মারমাদের বসবাস। পাহাড় কিংবা সমতলের যে কোনো আদিবাসীর মূল্যবোধ যথেষ্ট পরিপক্ক। তারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করে না। কালক্রমে তাদের চেতনায় পচন ধরেছে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে চলেছে। তারপরও মানুষের মাংস খাওয়ার মতো পরিস্থিতি, অবস্থা কিংবা অতীতের কোনো ইতিহাসে সাক্ষ্য-প্রমাণ মেলে না। বোধ করি, এরূপ অসত্য কাহিনী সৃষ্টি করে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যকার সম্প্রীতির বন্ধনকে আলগা করার দুরভিসন্ধি আঁটছে কেউ কেউ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যদি পিছিয়ে পড়া ও দুর্বল, নিরক্ষর ও সহজসরল আদিবাসী প্রতিবেশীদের বিপরীতে মিথ্যা, বানোয়াট এবং অসত্য তথ্যাদি প্রচার করে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে; সেটি দুর্ভাগ্যজনক। জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টিতে একটি হুজুগে কাহিনীই যথেষ্ট।
পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা আইনের শাসনের ধারণার পরিপন্থি
পাহাড়ের আদিবাসীদের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পাহাড়ে বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। যারা সংখ্যায় বেশি, শিক্ষিত, উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপনে সচেষ্ট; তাদেরই এগিয়ে আসা দরকার। ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে সংখ্যালঘুদের বিষয়-সম্পত্তি, জানমাল, নিরাপত্তা বিধানের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর। রাষ্ট্রীয় কিংবা ধর্মীয় দৃষ্টিতেও সংখ্যালঘুদের দুর্যোগ দুর্বিপাকে পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
[লেখক: কলামিস্ট]
মিথুশিলাক মুরমু
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩
চট্টগ্রামের রাউজানে বেশ কয়েকদিন আগে আদিবাসী মারমা জাতিগোষ্ঠীর যুবককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। সহকর্মী সিবলী সাদিককে হত্যার অভিযোগে আটক উমং চিং মারমাকে (২৬) রাউজান থানার পুলিশের উপস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা ছিনিয়ে নিয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায়ই পিটিয়ে হত্যা করেছে। গণপিটুনিতে নিহত উমং চিং মারমা রাঙামাটি উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের রঙ্গিপাড়া গ্রামের উথোয়াইমং মারমার ছেলে। ইতোমধ্যেই হত্যাকান্ডের সঙ্গে যুক্ত সুইংচিং মং মারমা, অংথইমং মারমা, আছুমং মারমা, উক্য থোয়াইং মারমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল-হারুণ বলেছেন, ‘বেলা ১১টার দিকে তারা গহিন পাহাড় থেকে অপহৃত সিবলীর দেহাবশেষ ও আসামি উমং চিং মারমাকে নিয়ে থানার দিকে ফিরছিলেন। এ সময় অপহৃত ছাত্রের বাড়ির কাছে এলে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে হামলা করে শত শত নারী আসামিকে ছিনিয়ে নেন এবং তাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে বিলের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যান। উত্তেজিত জনতার হামলায় তিনিসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হন। অপহৃত সিবলী সাদিকের লাশের দেহাবশেষ ও প্রধান আসামির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’ রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের একটি খামারে কাজ করতেন কলেজছাত্র সিবলী সাদিক, উমং চিং মারমাসহ আরও অনেকে। কোনো এক ঘটনায় বিরোধ দেখা দিলে সিবলী সাদিককে অপহরণ করা হয়; চাওয়া হয় নগদ টাকা। অর্থ পরিশোধ করলেও জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি সিবলী সাদিককে। ১১ সেপ্টেম্বর উমং চিং মারমাকে আটক করে এবং হতাকান্ডের ঘটনা স্বীকার করে। রাউজান থানা পুলিশ উমং চিং মারমাকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় ফেরার সময় এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের রাউজান মাঝেমধ্যেই পত্রিকার শিরোনাম হয়ে থাকে। বিগত ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সালে চোর সন্দেহে প্রকাশ্যে গণপিটুনিতে মোক্তার হোসেন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট রাউজানে ইকবাল হোসেন ও মো. শাখাওয়াত হোসেন নামের দুই ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে প্রতিবেশী রাশেদ। ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৭৫ বয়সী এক মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ কে এম নুরুল অজম চৌধুরী নামের মুক্তিযোদ্ধা রাউজান হারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি স্টেশনারির দোকানে বই-খাতা-পেন্সিল বিক্রি করতেন। রাউজানে প্রকাশ্যে গণপিটুনিতে হত্যার সঙ্গে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পৃক্ততা তখন দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে। রাউজানবাসীর এই আগ্রাসী মনোভাব, নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার প্রবণতা স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্বতার সঙ্গে নজর দেয়া জরুরি। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বিচ্ছৃঙ্খলার পথকে প্রশস্ত করে। আদিবাসী উমং চিং মারমার গণপিটুনির ধরনটি ছিল ভিন্নতর। পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা আইনের শাসনের ধারণার পরিপন্থি। দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে যাওয়া গণপিটুনি এবং বিলের দিকে নিয়ে যাওয়া অবশ্যই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ দীর্ঘ সময় পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক, দর্শকের ভূমিকাকে একপ্রকার হত্যাকান্ডের নীরব সম্মতি হিসেবেই গণ্য করা যায়। কেন পুলিশ সদস্যরা একজন পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিকে বিনা বিচারে গণপিটুনিতে হত্যার দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন? উমং চিং মারমা হত্যাকান্ডের বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। গ্রেপ্তারকৃত বাকি চারজন কি তাহলে হত্যাকান্ডের অভিযোগ থেকে ছাড় পাবে! নিশ্চয় নয়, কেন উমং চিং মারমাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হলো না। পুলিশের আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলির কোনো সংবাদ চোখে পড়েনি। পুলিশ যদি ফাঁকা গুলি করত তাহলে কিছুটা হলেও বিশ^াসযোগ্য হতো যে, প্রশাসন উমং চিং মারমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট প্রশিক্ষিত। কোন পরিস্থিতিতে কিরূপ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে; সেটি তাদের জানা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অদূরে থাকা থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশকে সহযোগিতার জন্য তলব করা যেত। পুলিশও কী সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করেছে। পুলিশের রহস্যজনক আচরণ আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন ধর্মবিশারদ প্রকাশ্যে ইসলামী সভায় বক্তব্যে বলেছেন, চাকমা-মারমারা মানুষের মাংস খায়। অর্থাৎ ইঙ্গিত দিয়েছেন, পাহাড়িরা সিবলী সাদিককে রান্না করে খেয়েছে। মূলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় মারমাদের বসবাস। পাহাড় কিংবা সমতলের যে কোনো আদিবাসীর মূল্যবোধ যথেষ্ট পরিপক্ক। তারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করে না। কালক্রমে তাদের চেতনায় পচন ধরেছে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে চলেছে। তারপরও মানুষের মাংস খাওয়ার মতো পরিস্থিতি, অবস্থা কিংবা অতীতের কোনো ইতিহাসে সাক্ষ্য-প্রমাণ মেলে না। বোধ করি, এরূপ অসত্য কাহিনী সৃষ্টি করে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যকার সম্প্রীতির বন্ধনকে আলগা করার দুরভিসন্ধি আঁটছে কেউ কেউ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যদি পিছিয়ে পড়া ও দুর্বল, নিরক্ষর ও সহজসরল আদিবাসী প্রতিবেশীদের বিপরীতে মিথ্যা, বানোয়াট এবং অসত্য তথ্যাদি প্রচার করে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা করে; সেটি দুর্ভাগ্যজনক। জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টিতে একটি হুজুগে কাহিনীই যথেষ্ট।
পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনা আইনের শাসনের ধারণার পরিপন্থি
পাহাড়ের আদিবাসীদের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পাহাড়ে বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। যারা সংখ্যায় বেশি, শিক্ষিত, উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনযাপনে সচেষ্ট; তাদেরই এগিয়ে আসা দরকার। ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে সংখ্যালঘুদের বিষয়-সম্পত্তি, জানমাল, নিরাপত্তা বিধানের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর। রাষ্ট্রীয় কিংবা ধর্মীয় দৃষ্টিতেও সংখ্যালঘুদের দুর্যোগ দুর্বিপাকে পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
[লেখক: কলামিস্ট]