শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
সরকার পণ্যের মূল্য সহনশীল রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তার কারণ কী? বাজার কি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে? কৃষি থেকে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের বাজারও কি পড়েছে সিন্ডিকেটের কবলে? নাকি অন্য কোনভাবে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে?
সম্প্রতি ডিমের বাজার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের বিহারসহ কিছু রাজ্যে ডিমের মূল্য প্রতি হালি ২৮ থেকে ৩০ রুপি; যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি হালি ডিম ৪৮ থেকে ৫২ আর হাসের ডিম ৭৮ থেকে আশি টাকায়। ভারতের ডিম উৎপাদন খরচের সঙ্গে কি বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ মিলিয়ে দেখা হয়েছে নাকি সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট বলে দৌড়ানো হচ্ছে ? ডিম আমদানির ফলে কি ডিমের দাম কমবে? কারণ ব্যবসায়ীরা বলছে ডিম পরিবহনের সময় কিছু ডিম ভেঙে যায়, ভেঙে যাওয়া ডিমের মূল্য ধরে গড়ে ডিমের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয় তাই খামারী ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে মুল্যের পার্থক্য হয়ে যায়।
যদি ভারত থেকে ডিম আমদানি করলে কি ডিম ভাঙ্গা কমে যাবে। যদি না কমে তবে তখনও তো ডিম ভাঙ্গার কারণে গড় মূল্য নির্ধারণ করবে খুচরা বিক্রেতারা। আমদানিকারক পর্যায়ে কি সিন্ডিকেট হবে না, এর নিশ্চয়তাাই বা কি। দেশে সিন্ডিকেট যদি বিরাজমান ও সক্রিয় থাকে তাহলে তা কি আমদানি করে এই সিন্ডিকেট কার্যক্রম ভেঙে দেয়া যাবে? দেশে কেন ডিমের দাম বাড়ল? তার কারণ কি শুধু সিন্ডিকেট?
ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে খামারিরা এখন ডিম উৎপাদন করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা সহজেই সিন্ডিকেট করতে পারে না। এদের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াটা সহজ করা দরকার। অপরদিকে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে, তাছাড়া পোল্ট্রির ঔষধেরও দাম বেড়েছে তাই মাঝারি ও ক্ষুদ্র খামারিরা বেশি দামে ডিম বিক্রি করলে তারা খরচ পুষিয়ে নিতে পারে না। কৃষির খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে যৌক্তিক কিছু কারণ আছে। দেশে খাদ্য পণ্যের বাইরে অন্য পণ্যগুলোর দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমে। যেমন ডিজেল, কীটনাশক, বীজ, সারসহ সবাই পণ্যের দাম বেড়েছে।
বর্তমানে ট্রাক্টরবিহীন জমি চাষ হয় না। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের ট্রাক্টর নাই, তিনি ট্রাক্টর ভাড়া নিয়ে জমি চাষ করেন, ট্রাক্টর মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাক্টরের। সারবিহীন কোন শস্যই আবাদ হয় না। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবারের বর্ষাকালীন সবজি চাষে লেগেছে প্রচুর সেচ। ফলে বর্ষাকালীন সব্জীর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই উৎপাদনের সঙ্গে মিলিয়ে যে মূল্য হওয়ার উচিত শস্যটির সেই মূল্য প্রান্তিক কৃষকেরা পায় না। কারণ বাজার ব্যবস্থার জটিলতার কারণে। অথচ প্রায়ই শোনা যায়, রাজধানীতে সহজগম্য কৃষি বাজার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারে। এটা অনেকটা ভুল পরিকল্পনা।
কারণ নওগাঁ জেলার সাপাহারের কোন কৃষক তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য এককভাবে রাজধানীতে নিয়ে বিক্রি করলে যে পরিবহন খরচ পড়বে তা কি তার বিক্রয় মূল্য থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পুষিয়ে যাবে। নাকি পরিবহন খরচ বাদ দিলে স্থানীয়ভাবে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রয় করা দামের সমান হবে। এই বিষয়টি কি ভেবেছে সরকারের কৃষিপণ্য বিপণন বিভাগ। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের উৎপাদিত শস্যর পরিমাণটা খুবই কম। দুরের বাজারে বা অধিকমুল্যের আশায় রাজধানীতে নিলে পরিবহন খরচের সঙ্গে পণ্য মূল্য বিয়োগ করলে প্রাপ্ত মূল্য দিয়ে কোনভাবেই পুষাবে না প্রান্তিক কৃষকদের। তাই বিষয়টির বিকল্প ভাবনা থাকা উচিত।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কৃষকদের সমবায় ভিত্তিক উৎপাদন এবং বিপণনের একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। এই প্রক্রিয়াটি ছিল প্রান্তিক কৃষকের জন্য একটি নায্য মূল্য পাওয়ার উপায়। যদি গ্রামে কৃষকেরা সমবায় ভিত্তিক কৃষি পণ্য উৎপাদন করে , সমিতির মাধ্যমে পণ্য গুলো জড়ো করে পরিবহনের দিয়ে বড় বড় শহরে ও রাজধানীতে বিক্রি করতে পারত, তাহলে এরফলে এককভাবে খরচের বোঝাটা কমত এবং প্রতিটি কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল্য পেয়ে যেত, ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্ব ভোগীরা এখানে ভাগ বসাতে পারত না।
দেশের খাদ্য পণ্যের মূল্যর ঊর্ধ্বগামিতা হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে তার আরেকটি কারণ হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জমি হারাচ্ছে। হারাচ্ছে বলতে এটা নয় প্রান্তিক কৃষকরা জমি বিক্রি করে দিচ্ছে, দেশের প্রায় গ্রামেই এখন দেখা যায় ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে নিচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে। লিজ নেওয়া জমিতে তারা কৃষি খামার গড়ে তুলছেন। প্রান্তিক কৃষকেরা দিন মজুর হিসাবে সেখানে কাজ করছেন। খামারিরা কৃষিকে বাণিজ্যে পরিণত করার কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদনেও গড়ে উঠছে সিন্ডিকেট। এই খামারিরা যৌথভাবে ঠিক করে কৃষি পণ্যের মূল্য, তারা বেশি পরিমাণে উৎপাদন করায় এদের পরিবহন ব্যায় কম হয়, এই খামারিরা কম খরচে কৃষি পণ্য রাজধানীতে পৌঁছে দিতে পারে।
এদিকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের উৎপাদন খরচ ও খামারী পর্যায়ের কৃষকের উৎপাদন খরচ দু-এর মধ্যে ব্যাপক তফাৎ দেখা যায়। তাই প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছে অপরদিকে কৃষি উৎপাদন চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের হাতে তাই দিন দিন কৃষির উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। দেশের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ কৃষি পেশার সঙ্গে কোন না কোন ভাবে জড়িত ছিল বর্তমানে ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করার কারণে এই হারটা দ্রুত কমছে। এর ফলে বেকার হচ্ছে তৃণমূলের প্রান্তিক কৃষকরা।
অপরদিকে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ছে কৃষি খাত। যেমন আদা, রসুন, পেঁয়াজ, শাকসবজি সব কিছুর দামই বেড়ে চলছে। তার একটি কারণ এই ব্যবসায়ীদের খামারি কৃষি চাষ ব্যবস্থা। সরকারিভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ধরে রাখার কোন দৃশ্যমান পদ্ধতিই দেখা যাচ্ছে না। তাই কৃষি বহির্ভূত পণ্যের ন্যায় কৃষির উৎপাদিত পণ্যগুলোর মূল্য নির্ধারণ করছে সিন্ডিকেট। সুতরাং এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে বাচতে হলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে হবে কৃষি উৎপাদনে। এই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের নিয়ে সমবায় গড়ে তুলতে হবে। কৃষকদের সমবায় ভিত্তিক খাদ্য পণ্য উৎপাদনের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে কমবে খাদ্য পণ্যের মূল্য। একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, কৃষির উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশের শ্রম বাজারে শ্রম সস্তা আর সস্তা শ্রম হওয়ায় এখানে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। সুতরাং প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে না পারলে এ দেশের শিল্প উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]
শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সরকার পণ্যের মূল্য সহনশীল রাখার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তার কারণ কী? বাজার কি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে? কৃষি থেকে উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের বাজারও কি পড়েছে সিন্ডিকেটের কবলে? নাকি অন্য কোনভাবে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ছে?
সম্প্রতি ডিমের বাজার মূল্য বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের বিহারসহ কিছু রাজ্যে ডিমের মূল্য প্রতি হালি ২৮ থেকে ৩০ রুপি; যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা। অথচ বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি হালি ডিম ৪৮ থেকে ৫২ আর হাসের ডিম ৭৮ থেকে আশি টাকায়। ভারতের ডিম উৎপাদন খরচের সঙ্গে কি বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ মিলিয়ে দেখা হয়েছে নাকি সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট বলে দৌড়ানো হচ্ছে ? ডিম আমদানির ফলে কি ডিমের দাম কমবে? কারণ ব্যবসায়ীরা বলছে ডিম পরিবহনের সময় কিছু ডিম ভেঙে যায়, ভেঙে যাওয়া ডিমের মূল্য ধরে গড়ে ডিমের বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করা হয় তাই খামারী ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে মুল্যের পার্থক্য হয়ে যায়।
যদি ভারত থেকে ডিম আমদানি করলে কি ডিম ভাঙ্গা কমে যাবে। যদি না কমে তবে তখনও তো ডিম ভাঙ্গার কারণে গড় মূল্য নির্ধারণ করবে খুচরা বিক্রেতারা। আমদানিকারক পর্যায়ে কি সিন্ডিকেট হবে না, এর নিশ্চয়তাাই বা কি। দেশে সিন্ডিকেট যদি বিরাজমান ও সক্রিয় থাকে তাহলে তা কি আমদানি করে এই সিন্ডিকেট কার্যক্রম ভেঙে দেয়া যাবে? দেশে কেন ডিমের দাম বাড়ল? তার কারণ কি শুধু সিন্ডিকেট?
ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ে খামারিরা এখন ডিম উৎপাদন করে। ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা সহজেই সিন্ডিকেট করতে পারে না। এদের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়াটা সহজ করা দরকার। অপরদিকে পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে, তাছাড়া পোল্ট্রির ঔষধেরও দাম বেড়েছে তাই মাঝারি ও ক্ষুদ্র খামারিরা বেশি দামে ডিম বিক্রি করলে তারা খরচ পুষিয়ে নিতে পারে না। কৃষির খাদ্য পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে যৌক্তিক কিছু কারণ আছে। দেশে খাদ্য পণ্যের বাইরে অন্য পণ্যগুলোর দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রমে। যেমন ডিজেল, কীটনাশক, বীজ, সারসহ সবাই পণ্যের দাম বেড়েছে।
বর্তমানে ট্রাক্টরবিহীন জমি চাষ হয় না। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের ট্রাক্টর নাই, তিনি ট্রাক্টর ভাড়া নিয়ে জমি চাষ করেন, ট্রাক্টর মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাক্টরের। সারবিহীন কোন শস্যই আবাদ হয় না। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবারের বর্ষাকালীন সবজি চাষে লেগেছে প্রচুর সেচ। ফলে বর্ষাকালীন সব্জীর উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই উৎপাদনের সঙ্গে মিলিয়ে যে মূল্য হওয়ার উচিত শস্যটির সেই মূল্য প্রান্তিক কৃষকেরা পায় না। কারণ বাজার ব্যবস্থার জটিলতার কারণে। অথচ প্রায়ই শোনা যায়, রাজধানীতে সহজগম্য কৃষি বাজার তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারে। এটা অনেকটা ভুল পরিকল্পনা।
কারণ নওগাঁ জেলার সাপাহারের কোন কৃষক তার উৎপাদিত কৃষিপণ্য এককভাবে রাজধানীতে নিয়ে বিক্রি করলে যে পরিবহন খরচ পড়বে তা কি তার বিক্রয় মূল্য থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পুষিয়ে যাবে। নাকি পরিবহন খরচ বাদ দিলে স্থানীয়ভাবে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রয় করা দামের সমান হবে। এই বিষয়টি কি ভেবেছে সরকারের কৃষিপণ্য বিপণন বিভাগ। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের উৎপাদিত শস্যর পরিমাণটা খুবই কম। দুরের বাজারে বা অধিকমুল্যের আশায় রাজধানীতে নিলে পরিবহন খরচের সঙ্গে পণ্য মূল্য বিয়োগ করলে প্রাপ্ত মূল্য দিয়ে কোনভাবেই পুষাবে না প্রান্তিক কৃষকদের। তাই বিষয়টির বিকল্প ভাবনা থাকা উচিত।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কৃষকদের সমবায় ভিত্তিক উৎপাদন এবং বিপণনের একটি পরিকল্পনা করেছিলেন। এই প্রক্রিয়াটি ছিল প্রান্তিক কৃষকের জন্য একটি নায্য মূল্য পাওয়ার উপায়। যদি গ্রামে কৃষকেরা সমবায় ভিত্তিক কৃষি পণ্য উৎপাদন করে , সমিতির মাধ্যমে পণ্য গুলো জড়ো করে পরিবহনের দিয়ে বড় বড় শহরে ও রাজধানীতে বিক্রি করতে পারত, তাহলে এরফলে এককভাবে খরচের বোঝাটা কমত এবং প্রতিটি কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের নায্য মূল্য পেয়ে যেত, ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্ব ভোগীরা এখানে ভাগ বসাতে পারত না।
দেশের খাদ্য পণ্যের মূল্যর ঊর্ধ্বগামিতা হঠাৎ করে বেড়ে যাচ্ছে তার আরেকটি কারণ হচ্ছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা জমি হারাচ্ছে। হারাচ্ছে বলতে এটা নয় প্রান্তিক কৃষকরা জমি বিক্রি করে দিচ্ছে, দেশের প্রায় গ্রামেই এখন দেখা যায় ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে নিচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে। লিজ নেওয়া জমিতে তারা কৃষি খামার গড়ে তুলছেন। প্রান্তিক কৃষকেরা দিন মজুর হিসাবে সেখানে কাজ করছেন। খামারিরা কৃষিকে বাণিজ্যে পরিণত করার কারণে কৃষিপণ্য উৎপাদনেও গড়ে উঠছে সিন্ডিকেট। এই খামারিরা যৌথভাবে ঠিক করে কৃষি পণ্যের মূল্য, তারা বেশি পরিমাণে উৎপাদন করায় এদের পরিবহন ব্যায় কম হয়, এই খামারিরা কম খরচে কৃষি পণ্য রাজধানীতে পৌঁছে দিতে পারে।
এদিকে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের উৎপাদন খরচ ও খামারী পর্যায়ের কৃষকের উৎপাদন খরচ দু-এর মধ্যে ব্যাপক তফাৎ দেখা যায়। তাই প্রান্তিক কৃষকের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছে অপরদিকে কৃষি উৎপাদন চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের হাতে তাই দিন দিন কৃষির উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। দেশের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ কৃষি পেশার সঙ্গে কোন না কোন ভাবে জড়িত ছিল বর্তমানে ব্যবসায়ীরা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করার কারণে এই হারটা দ্রুত কমছে। এর ফলে বেকার হচ্ছে তৃণমূলের প্রান্তিক কৃষকরা।
অপরদিকে সিন্ডিকেটের কবলে পড়ছে কৃষি খাত। যেমন আদা, রসুন, পেঁয়াজ, শাকসবজি সব কিছুর দামই বেড়ে চলছে। তার একটি কারণ এই ব্যবসায়ীদের খামারি কৃষি চাষ ব্যবস্থা। সরকারিভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ধরে রাখার কোন দৃশ্যমান পদ্ধতিই দেখা যাচ্ছে না। তাই কৃষি বহির্ভূত পণ্যের ন্যায় কৃষির উৎপাদিত পণ্যগুলোর মূল্য নির্ধারণ করছে সিন্ডিকেট। সুতরাং এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে বাচতে হলে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের ফিরিয়ে আনতে হবে কৃষি উৎপাদনে। এই প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের নিয়ে সমবায় গড়ে তুলতে হবে। কৃষকদের সমবায় ভিত্তিক খাদ্য পণ্য উৎপাদনের কাজে লাগাতে হবে। তাহলে কমবে খাদ্য পণ্যের মূল্য। একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, কৃষির উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের দাম কম হওয়ায় বাংলাদেশের শ্রম বাজারে শ্রম সস্তা আর সস্তা শ্রম হওয়ায় এখানে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। সুতরাং প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের টিকিয়ে রাখতে না পারলে এ দেশের শিল্প উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]