alt

উপ-সম্পাদকীয়

সড়ক পরিবহন আইন ও ট্রাফিক পুলিশ

মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু

: শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশে গণপরিবহনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে পাবলিক বাস। এই গণপরিবহনের মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ একস্থান হতে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকে; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের গণপরিবহন এবং বাস টার্মিনালগুলোর সার্বিক অবস্থা খুবই নিম্নমানের। সেটা ব্যবস্থাপনা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেটাই হোক না কেন। এর অন্যতম কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক যথাযথ ভূমিকার অভাব এবং গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরদের এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব।

গণপরিবহনগুলোতে মূলত ট্রাফিক সাজেন্টরা গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স, রুট পারমিট ইত্যাদি বিষয়ে তদারকি ও জরিমানা করে থাকে। সেই সঙ্গে পরিবহনের সার্বিক তত্ত্বাবধান যেমন- ময়লা আবর্জনা, প্লাস্টিক ফেলা, ধূমপান ও তামাক সেবন, পানের পিক ও থুতু ফেলাÑ এসব বিষয়ে মোবাইল কোর্ট ও ট্রাফিক সার্জেন্টদের জরিমানা আরোপের ক্ষমতা প্রদান করলেÑ এ বিষয়ক সচেতনতা ও সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আমরা মনে করি।

সড়ক পরিবহন আইনের ধারা ৪৯ এর (১) অনুসারে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের কিছু আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার যে, সব আচরণগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বলে বিবেচিত যেমন- পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক সেবন, ধূমপান করা, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ও পানের পিক ফেলা ও থুতু ফেলা ইত্যাদি। এ আইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ

 ব্যক্তি ও পরিবহনকে জরিমানার সুযোগ রয়েছে;

 পুলিশ কর্মকর্তা জরিমানা আরোপ করতে পারে;

 ডিজিটাল জরিমানা আরোপ করার বিধান রয়েছে এবং

 সড়ক পরিবহন আইনের বর্তমানে মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন নিষিদ্ধ;

 মোটরযান চালনারত অবস্থায় মোবাইল ফোন বা অনুরূপ সরঞ্জাম ব্যবহার নিষিদ্ধ।

এ আইনের মাধ্যমে পুলিশ কর্তৃক আরোপিত জরিমানার অর্থ ব্যক্তি ঘটনাস্থলে পরিশোধ করিলে তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। অন্যথায় ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তার আদালতের দারস্থ হওয়ার পথও খোলা আছে। তবে এ আইনের ধারা ৪৯(২) অনুসারে সরকার বা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সময় সময় মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশাবলি সংশোধন করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। প্রথমত এ বিধান অনুসারে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তামাক সেবন, ধূমপান করা, পান খাওয়া ও থুতু ফেলা নিষিদ্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা ধারা ৯২, ১০৮ এবং ১১৩ অনুসারে জরিমানা আরোপ করতে পারবে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

একটি টেকসই প্রয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আপামর জনসাধারণকে সবাই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমন- যত্রতত্র থুতু ও পানের পিক ফেলা, তামাক সেবন, ধূমপান, প্লাস্টিক ও ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা আরোপ করা।

প্রেক্ষাপট :

বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তাঘাটে ময়লা আবর্জনা। কলার খোসা, কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ অথবা বোতল দেখা যাবে না ঢাকায় এমন রাস্তা বা পাড়া খুব কমই আছে। চলতে পথে খোলা কন্টেইনারের উপচেপড়া আবর্জনাকে নাকে হাত দিয়ে পাশ কাটানো অথবা ময়লা বহনকারী ট্রাক থেকে কিছু উড়ে এসে গায়ে পড়বে কিনা সেই উদ্বেগ নিয়েই রাস্তা চলতে হয় বহু পথচারীকে। যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা, ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলা মানুষের এ ধরনের অভ্যাসের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ততার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ-বিসুখের কারণে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিকটনের বেশি ময়লা তৈরি হচ্ছে। শহরটিতে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে মানুষজনের তৈরি ময়লা আবর্জনাও বাড়ছে; কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এশিয়াার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেÑ পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫।

যৌক্তিকতা ও পদ্ধতি :

আমাদের দেশে যেখানে সেখানে থুতু, প্লাস্টিক, ময়লা ফেলার দৃশ্য অত্যন্ত সাধারণ বিষয়। এ কাজটি মোটামুটি আমরা সবাই হরহামেশা করে থাকি। তবে যথেচ্ছাচারে এসব ফেললে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা আমরা কল্পনাই করতে পারি না। ভেবে দেখেছেন কখনো, ধরেন আপনি সৌদি আরবের রাস্তায় হাঁটছেন, দিগি¦বিদিক না ভেবে থুতু বা অন্য যে কোনো ময়লা ফেললেন। এরপর আবার যথারীতি হাঁটছেন। মিনিট দশেকের মধ্যে দেশটির পুলিশ আপনার সামনে চলে এলো। এসেই ১০০ রিয়াল জরিমানা করে বসল। অপরাধ আপনি প্রকাশ্যে রাস্তায় ময়লা ফেলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কী করবেন আপনি? কেবল সৌদি নয়, অবাক হলেও সত্যি পরিবেশের কথা ভেবে থুতু বা ময়লা ফেলার বিষয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা রকমের শাস্তির বিধান রয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রকাশ্যে থুতু বা ময়লা ফেললে দেশটির প্রচলিত আইনে গুনতে হবে জরিমানা। লন্ডনের রাস্তায় থুতু, টিস্যু কিংবা সিগারেট ফেললে এ অপরাধের মাফ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের রাজ্য অ্যারিজোনাতে প্রকাশ্যে থুথু ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা দেয়া লাগতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও থুথু বা ময়লা ফেললে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। গঙ্গায় বর্জ্য বা থুথু ফেললে তিন বছরের কারাদ- বা ১০ হাজার রুপি জরিমানার বিধান রেখে ২০১১ সালে ভারতে আইন করা হয়। একই বিষয়ে ২০১৫ সালের আরেকটি আইনে বলা হয়েছে, মুম্বাইয়ের রাস্তায় থুথু বা পানের পিক ফেললে ৫ হাজার রুপি জরিমানা এবং পাঁচ দিন পর্যন্ত দেশটির সরকারি দপ্তর ও রাস্তা ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তবে বাংলাদেশেও যে এ বিষয়ে আইন নেই, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশেও রয়েছে আইন, কিন্তু আমরা কতজনইবা এটা জানি! বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৬০(১) ধারায় ‘আবর্জনা বাক্স ও পিকদানি’ শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক আবর্জনা ফেলার বাক্স ও পিকদানি থাকতে হবে।’ পাশাপাশি ৬০(২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কোন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনার মধ্যে কেউ বাক্স বা পিকদানি ছাড়া ময়লা বা থুথু ফেলতে পারবেন না। ৬০(৩) ধারায় আরো বলা হয়েছে, ‘এই বিধান লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ এর পরও কি দেশে যেখানে সেখানে থুথু ফেলা বন্ধ হয়েছে? না দেশের কোথাও শাস্তির বিধান কার্যকর হয়েছে?

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নি¤েœ নহেন এমন পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলে বিবেচিত সেহেতু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর প্রয়োগে পুলিশকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিসহ পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে বিশেষ করে সব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমনÑ তামাক সেবন, যত্রতত্র থুথু ও পানের পিক ফেলা, প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা

 তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান কার্যকর করার উদ্দেশ্যে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে কোন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রবেশ করিয়া পরিদর্শন করিতে পারিবেন এবং এই আইনের বিধান কেহ লঙ্ঘন করিলে তাকে তিনি ওই স্থান হইতে বহিষ্কার করিতে পারিবেন। এছাড়া এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করিয়া কোন ব্যক্তি যদি কোন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করেন বা বিক্রয় করার প্রস্তাব করেন তাহলে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত তামাকজাত দ্রব্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ব্যবহার, হস্তান্তর, ধ্বংস বা বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবেন।

পুলিশকে অন্তর্ভুক্তকরণের যৌক্তিকতা

 পুলিশ মূলত মুখ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাই আইন ভঙ্গে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তাদের (সার্জেন্টদের) ডিজিটালি নোটিশ এবং জরিমানা আরোপ করার ক্ষমতা প্রদান করলে আইন বাস্তবায়ন সহজ হবে;

 ট্রাফিক সার্জেন্টদের দায়িত্ব প্রধানত যানবাহন ও যানবাহনের চলাচল সংশ্লিষ্ট তাই পুলিশকে বাড়তি এই দায়িত্বটুকু প্রদান করলে বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হবে না;

 সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৪৯ ধারার উপ-ধারা ১ এর প্রথম অংশের (ক), (খ) এবং দ্বিতীয় অংশের (গ) ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রেও যেমনÑ তামাক সেবন, ধূমপান, যত্রতত্র থুথু ও পানের পিক ফেলা, প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে;

 ট্রাফিক সার্জেন্টদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিয়ন্ত্রণে অন্তর্ভুক্তি মানুষের মাঝে আইন প্রতিপালনের প্রতি একটা সাড়া জাগাতে পারে;

 আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বা আইনের লোক হিসেবে জনগণ পুলিশকেই বেশি চিনে তাই তাদের দেখে মানুষের ভয়ভীতি কাজ করে। এ আইন বাস্তবায়নের প্রাথমিক দায়িত্ব পুলিশের ওপর অর্পিত হলে আইনটি প্রচার এবং ব্যবহারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাড়া পাবে।

আমাদের প্রস্তাবনা

বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও অন্যান্য আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগকে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে ক্ষমতার এখতিয়ার আরো বৃদ্ধি করলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফলতা আসবে। আইন বাস্তবায়নে সব সময় মোবাইল কোর্ট আয়োজন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে গণপরিবহন ও গণপরিসরে আইন বাস্তবায়নে সহজেই পুলিশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। সেক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় পুলিশ চাইলেই যে কোনো আইন ভঙ্গকারীদের সহজেই জরিমানা আরোপ করতে পারবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ট্রাফিক সার্জেন্ট যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাই সংশ্লিষ্ট আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আপামর জনসাধারণকে সব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমনÑ যত্রতত্র থুথু ও পানের পিক ফেলা, তামাক সেবন, ধূমপান, প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশদূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা আরোপ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।

[লেখক: সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, ডেভেলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিস অব সোসাইটি]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সড়ক পরিবহন আইন ও ট্রাফিক পুলিশ

মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু

শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশে গণপরিবহনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে পাবলিক বাস। এই গণপরিবহনের মাধ্যমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ একস্থান হতে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকে; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের গণপরিবহন এবং বাস টার্মিনালগুলোর সার্বিক অবস্থা খুবই নিম্নমানের। সেটা ব্যবস্থাপনা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা যেটাই হোক না কেন। এর অন্যতম কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক যথাযথ ভূমিকার অভাব এবং গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, হেলপার ও কন্ডাক্টরদের এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব।

গণপরিবহনগুলোতে মূলত ট্রাফিক সাজেন্টরা গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স, রুট পারমিট ইত্যাদি বিষয়ে তদারকি ও জরিমানা করে থাকে। সেই সঙ্গে পরিবহনের সার্বিক তত্ত্বাবধান যেমন- ময়লা আবর্জনা, প্লাস্টিক ফেলা, ধূমপান ও তামাক সেবন, পানের পিক ও থুতু ফেলাÑ এসব বিষয়ে মোবাইল কোর্ট ও ট্রাফিক সার্জেন্টদের জরিমানা আরোপের ক্ষমতা প্রদান করলেÑ এ বিষয়ক সচেতনতা ও সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আমরা মনে করি।

সড়ক পরিবহন আইনের ধারা ৪৯ এর (১) অনুসারে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের কিছু আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা দরকার যে, সব আচরণগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বলে বিবেচিত যেমন- পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক সেবন, ধূমপান করা, যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ও পানের পিক ফেলা ও থুতু ফেলা ইত্যাদি। এ আইনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ

 ব্যক্তি ও পরিবহনকে জরিমানার সুযোগ রয়েছে;

 পুলিশ কর্মকর্তা জরিমানা আরোপ করতে পারে;

 ডিজিটাল জরিমানা আরোপ করার বিধান রয়েছে এবং

 সড়ক পরিবহন আইনের বর্তমানে মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন নিষিদ্ধ;

 মোটরযান চালনারত অবস্থায় মোবাইল ফোন বা অনুরূপ সরঞ্জাম ব্যবহার নিষিদ্ধ।

এ আইনের মাধ্যমে পুলিশ কর্তৃক আরোপিত জরিমানার অর্থ ব্যক্তি ঘটনাস্থলে পরিশোধ করিলে তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। অন্যথায় ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তার আদালতের দারস্থ হওয়ার পথও খোলা আছে। তবে এ আইনের ধারা ৪৯(২) অনুসারে সরকার বা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সময় সময় মোটরযান চলাচলের সাধারণ নির্দেশাবলি সংশোধন করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। প্রথমত এ বিধান অনুসারে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি তামাক সেবন, ধূমপান করা, পান খাওয়া ও থুতু ফেলা নিষিদ্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তারা ধারা ৯২, ১০৮ এবং ১১৩ অনুসারে জরিমানা আরোপ করতে পারবে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :

একটি টেকসই প্রয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আপামর জনসাধারণকে সবাই ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমন- যত্রতত্র থুতু ও পানের পিক ফেলা, তামাক সেবন, ধূমপান, প্লাস্টিক ও ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা আরোপ করা।

প্রেক্ষাপট :

বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি থেকে বের হলেই দেখা যায় রাস্তাঘাটে ময়লা আবর্জনা। কলার খোসা, কাগজ, প্লাস্টিকের ব্যাগ অথবা বোতল দেখা যাবে না ঢাকায় এমন রাস্তা বা পাড়া খুব কমই আছে। চলতে পথে খোলা কন্টেইনারের উপচেপড়া আবর্জনাকে নাকে হাত দিয়ে পাশ কাটানো অথবা ময়লা বহনকারী ট্রাক থেকে কিছু উড়ে এসে গায়ে পড়বে কিনা সেই উদ্বেগ নিয়েই রাস্তা চলতে হয় বহু পথচারীকে। যেখানে সেখানে কফ-থুতু ফেলা, ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলা মানুষের এ ধরনের অভ্যাসের কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ততার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখ-বিসুখের কারণে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে প্রতিদিন পাঁচ হাজার মেট্রিকটনের বেশি ময়লা তৈরি হচ্ছে। শহরটিতে জনসংখ্যা যেমন বাড়ছে মানুষজনের তৈরি ময়লা আবর্জনাও বাড়ছে; কিন্তু সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এশিয়াার দেশগুলোর মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছেÑ পরিবেশ দূষণজনিত কারণে বাংলাদেশে যেখানে ২৮ শতাংশ মৃত্যু হয় সেখানে মালদ্বীপে এই হার ১১ দশমিক ৫ শতাংশ আর ভারতে ২৬ দশমিক ৫।

যৌক্তিকতা ও পদ্ধতি :

আমাদের দেশে যেখানে সেখানে থুতু, প্লাস্টিক, ময়লা ফেলার দৃশ্য অত্যন্ত সাধারণ বিষয়। এ কাজটি মোটামুটি আমরা সবাই হরহামেশা করে থাকি। তবে যথেচ্ছাচারে এসব ফেললে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা আমরা কল্পনাই করতে পারি না। ভেবে দেখেছেন কখনো, ধরেন আপনি সৌদি আরবের রাস্তায় হাঁটছেন, দিগি¦বিদিক না ভেবে থুতু বা অন্য যে কোনো ময়লা ফেললেন। এরপর আবার যথারীতি হাঁটছেন। মিনিট দশেকের মধ্যে দেশটির পুলিশ আপনার সামনে চলে এলো। এসেই ১০০ রিয়াল জরিমানা করে বসল। অপরাধ আপনি প্রকাশ্যে রাস্তায় ময়লা ফেলেছেন। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কী করবেন আপনি? কেবল সৌদি নয়, অবাক হলেও সত্যি পরিবেশের কথা ভেবে থুতু বা ময়লা ফেলার বিষয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা রকমের শাস্তির বিধান রয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রকাশ্যে থুতু বা ময়লা ফেললে দেশটির প্রচলিত আইনে গুনতে হবে জরিমানা। লন্ডনের রাস্তায় থুতু, টিস্যু কিংবা সিগারেট ফেললে এ অপরাধের মাফ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের রাজ্য অ্যারিজোনাতে প্রকাশ্যে থুথু ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ধরা পড়লে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা দেয়া লাগতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও থুথু বা ময়লা ফেললে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। গঙ্গায় বর্জ্য বা থুথু ফেললে তিন বছরের কারাদ- বা ১০ হাজার রুপি জরিমানার বিধান রেখে ২০১১ সালে ভারতে আইন করা হয়। একই বিষয়ে ২০১৫ সালের আরেকটি আইনে বলা হয়েছে, মুম্বাইয়ের রাস্তায় থুথু বা পানের পিক ফেললে ৫ হাজার রুপি জরিমানা এবং পাঁচ দিন পর্যন্ত দেশটির সরকারি দপ্তর ও রাস্তা ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তবে বাংলাদেশেও যে এ বিষয়ে আইন নেই, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশেও রয়েছে আইন, কিন্তু আমরা কতজনইবা এটা জানি! বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৬০(১) ধারায় ‘আবর্জনা বাক্স ও পিকদানি’ শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের সুবিধাজনক স্থানে পর্যাপ্তসংখ্যক আবর্জনা ফেলার বাক্স ও পিকদানি থাকতে হবে।’ পাশাপাশি ৬০(২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কোন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনার মধ্যে কেউ বাক্স বা পিকদানি ছাড়া ময়লা বা থুথু ফেলতে পারবেন না। ৬০(৩) ধারায় আরো বলা হয়েছে, ‘এই বিধান লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ এর পরও কি দেশে যেখানে সেখানে থুথু ফেলা বন্ধ হয়েছে? না দেশের কোথাও শাস্তির বিধান কার্যকর হয়েছে?

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার নি¤েœ নহেন এমন পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলে বিবেচিত সেহেতু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর প্রয়োগে পুলিশকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিসহ পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে বিশেষ করে সব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমনÑ তামাক সেবন, যত্রতত্র থুথু ও পানের পিক ফেলা, প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা

 তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধান কার্যকর করার উদ্দেশ্যে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে কোন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রবেশ করিয়া পরিদর্শন করিতে পারিবেন এবং এই আইনের বিধান কেহ লঙ্ঘন করিলে তাকে তিনি ওই স্থান হইতে বহিষ্কার করিতে পারিবেন। এছাড়া এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করিয়া কোন ব্যক্তি যদি কোন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করেন বা বিক্রয় করার প্রস্তাব করেন তাহলে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত তামাকজাত দ্রব্য বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ব্যবহার, হস্তান্তর, ধ্বংস বা বাজেয়াপ্ত করিতে পারিবেন।

পুলিশকে অন্তর্ভুক্তকরণের যৌক্তিকতা

 পুলিশ মূলত মুখ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাই আইন ভঙ্গে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তাদের (সার্জেন্টদের) ডিজিটালি নোটিশ এবং জরিমানা আরোপ করার ক্ষমতা প্রদান করলে আইন বাস্তবায়ন সহজ হবে;

 ট্রাফিক সার্জেন্টদের দায়িত্ব প্রধানত যানবাহন ও যানবাহনের চলাচল সংশ্লিষ্ট তাই পুলিশকে বাড়তি এই দায়িত্বটুকু প্রদান করলে বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হবে না;

 সড়ক নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৪৯ ধারার উপ-ধারা ১ এর প্রথম অংশের (ক), (খ) এবং দ্বিতীয় অংশের (গ) ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রেও যেমনÑ তামাক সেবন, ধূমপান, যত্রতত্র থুথু ও পানের পিক ফেলা, প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে;

 ট্রাফিক সার্জেন্টদের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ নিয়ন্ত্রণে অন্তর্ভুক্তি মানুষের মাঝে আইন প্রতিপালনের প্রতি একটা সাড়া জাগাতে পারে;

 আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বা আইনের লোক হিসেবে জনগণ পুলিশকেই বেশি চিনে তাই তাদের দেখে মানুষের ভয়ভীতি কাজ করে। এ আইন বাস্তবায়নের প্রাথমিক দায়িত্ব পুলিশের ওপর অর্পিত হলে আইনটি প্রচার এবং ব্যবহারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাড়া পাবে।

আমাদের প্রস্তাবনা

বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ও অন্যান্য আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগকে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে ক্ষমতার এখতিয়ার আরো বৃদ্ধি করলে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফলতা আসবে। আইন বাস্তবায়নে সব সময় মোবাইল কোর্ট আয়োজন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে গণপরিবহন ও গণপরিসরে আইন বাস্তবায়নে সহজেই পুলিশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। সেক্ষেত্রে বর্তমান ব্যবস্থায় পুলিশ চাইলেই যে কোনো আইন ভঙ্গকারীদের সহজেই জরিমানা আরোপ করতে পারবে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

ট্রাফিক সার্জেন্ট যেহেতু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাই সংশ্লিষ্ট আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে বাংলাদেশের মানুষের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আপামর জনসাধারণকে সব ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ যেমনÑ যত্রতত্র থুথু ও পানের পিক ফেলা, তামাক সেবন, ধূমপান, প্লাস্টিক ও ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশদূষণ থেকে বিরত রাখার জন্য ট্রাফিক সার্জেন্টদের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন আইনে জরিমানা আরোপের ক্ষমতা আরোপ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।

[লেখক: সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, ডেভেলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিস অব সোসাইটি]

back to top