alt

উপ-সম্পাদকীয়

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

সংগীত কুমার

: বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

দেশে অফশোর ব্যাংকিংকে আইনগত ভিত্তি দিয়ে এই বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং সেবার প্রসার ঘটানোর কার্যক্রম বেশ দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলেছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মতো সীমিত পরিসরের ব্যাংকিং সার্ভিস আইনের মাধ্যমে চালু করে একটি দেশের আর্থিক খাত এবং অর্থনীতি যে এত ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে, তা গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত প্রায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান স্থিতিশীল অর্থনীতিকে দেখলে বোঝা যায়।

দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছিল তিন বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশটি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ‘রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট’ নামের একটি ব্যাংক সেবার মাধ্যমে।

অফশোর ব্যাংকিং হলো যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদেশি সূত্র হতে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং দেশীয় আইন-কানুনের বাইরে আলদা আইন-কানুনের মাধ্যমে এই তহবিল পরিচালিত এবং হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। অফশোর ব্যাংকিংয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিকের নিজের দেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার পদ্ধতি। মোটকথা অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থার অভ্যন্তরে পৃথক একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। প্রচলিত ব্যাংক বা শাখার কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্ন অফশোর ব্যাংকিং। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। এতে স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয়। এটি এমন ব্যাংকিং আপারেশনগুলোকে নির্দেশ করে যা শুধু অনিবাসিদের যেমনÑ মাল্টিন্যাশনাল পণ্য এবং সেবা এবং ফাইন্যন্সারদের সম্পৃক্ত করে এবং এটি দেশীয় ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুুক্ত হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৯টি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

অফশোর ব্যাংকিং করার মাধ্যমে দুটি বিশেষ সুবিধা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। এর একটি হচ্ছে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ এবং আরেকটি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের সুযোগ। তবে দুটি ক্ষেত্রেই সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত কিছু ঝুঁকির বিষয় আছে, যা সক্রিয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমাদের দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এক বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিমূল্য দেশে না আসার তথ্য উঠে এসেছে। এই বিপুল পরিমাণ পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে অফশোর ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কেননা অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে অর্থ জমা রাখলে সেই অর্থ কোনো রকম পূর্বানুমতি ব্যাতিরেকেই বিদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ফলে যেসব অনিবাসী বাংলাদেশি অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে নিয়ে রেখেছেন, তাদের অনেকেই সেই অর্থ দেশের অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে রাখতে আগ্রহী হবেন। তবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে অফশোর ব্যাংকিং সুযোগ খুব একটা কাজে লাগানো যাবে না। কারণ এই অর্থ বিদেশের কোনো ব্যাংক হিসাবে থাকার পরিবর্তে দেশের কোনো ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে থাকবে এবং পূর্বানুমতি ব্যাতিরেকে সুযোগমতো বিদেশে ফিরে যাবে।

অফশোর ব্যাংকিং সুবিধা অবারিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ ও অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেননা বিশ্বে যাদের হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিযোগের জন্য আছে, তারা এ রকম সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাদের খুব অল্প সুদে বৈদেশিক তহবিল সংগ্রহের সুযোগ আছে। ফলে সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কিছু অধিক সুদে অর্থায়ন বা ঋণদানের সুযোগ পায়, তাহলে তারা সেই সুযোগ লুফে নেয়। এ কারণেই অফশোর ব্যাংকিং চালু করে খুব সহজেই বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন বা ঋণ পেতে পারে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই ধরনের অর্থায়ন বা ঋণ সাধারণত স্বল্পমেয়াদি বা চাহিবা মাত্র ফেরত দেয়ার শর্তে প্রদান করা হয়। আর এরকম অর্থায়ন বা ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে অথবা এমন খাতে বিনিয়োগ করা হলো, যেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় রেভিনিউ উপার্জনের সুযোগ নেই, তাহলে ঋণখেলাপি বা ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ করা প্রয়োজন।

অফশোর ব্যাংকিং সাময়িক কিছু ডলার সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করলেও দেশে ডলার সংকট যে তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করেছে, তা থেকে উত্তরণের সুযোগ খুবই কম। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। এজন্য ব্যাপক হারে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। প্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক হারে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির আওতায় আনতে হবে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রপ্তানি করার মতো অসংখ্য অপ্রচলিত পণ্য যেমন আমাদের দেশে আছে, তেমনি বিশ্বের অসংখ্য স্থানে নতুন নতুন বাজারও সৃষ্টি হচ্ছে। প্রয়োজন শুধু সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের রপ্তানি পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। বিদেশের আমদানিকারক দেশে এসে রপ্তানির আদেশ দেবে, এই অপেক্ষায় বসে না থেকে বিদেশের রপ্তানিকারকের কাছে স্ব-উদ্যোগে পণ্য পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাকে বলে আধুনিক রপ্তানি পদ্ধতি। এর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পথে এনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মোটকথা, আমাদের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ আমদানির চেয়ে বেশি না হলেও সমান রাখতেই হবে। এটি করতে পারলে ডলারের চাহিদা স্বাভাবিক হবে এবং মূল্যও স্থিতিশীল থাকবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

সংগীত কুমার

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

দেশে অফশোর ব্যাংকিংকে আইনগত ভিত্তি দিয়ে এই বিশেষ ধরনের ব্যাংকিং সেবার প্রসার ঘটানোর কার্যক্রম বেশ দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলেছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ের মতো সীমিত পরিসরের ব্যাংকিং সার্ভিস আইনের মাধ্যমে চালু করে একটি দেশের আর্থিক খাত এবং অর্থনীতি যে এত ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে, তা গত কয়েক বছরে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত প্রায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বর্তমান স্থিতিশীল অর্থনীতিকে দেখলে বোঝা যায়।

দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছিল তিন বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশটি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে ‘রোশান ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট’ নামের একটি ব্যাংক সেবার মাধ্যমে।

অফশোর ব্যাংকিং হলো যে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদেশি সূত্র হতে বৈদেশিক মুদ্রায় তহবিল সৃষ্টি হয় এবং দেশীয় আইন-কানুনের বাইরে আলদা আইন-কানুনের মাধ্যমে এই তহবিল পরিচালিত এবং হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। অফশোর ব্যাংকিংয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মালিকের নিজের দেশ ব্যতীত অন্য কোনো দেশের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা রাখার পদ্ধতি। মোটকথা অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থার অভ্যন্তরে পৃথক একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা। প্রচলিত ব্যাংক বা শাখার কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্ন অফশোর ব্যাংকিং। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে। এতে স্থানীয় মুদ্রার পরিবর্তে বৈদেশিক মুদ্রায় হিসাব হয়। এটি এমন ব্যাংকিং আপারেশনগুলোকে নির্দেশ করে যা শুধু অনিবাসিদের যেমনÑ মাল্টিন্যাশনাল পণ্য এবং সেবা এবং ফাইন্যন্সারদের সম্পৃক্ত করে এবং এটি দেশীয় ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুুক্ত হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৯টি ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

অফশোর ব্যাংকিং করার মাধ্যমে দুটি বিশেষ সুবিধা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। এর একটি হচ্ছে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ এবং আরেকটি হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণের সুযোগ। তবে দুটি ক্ষেত্রেই সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে মাত্রাতিরিক্ত কিছু ঝুঁকির বিষয় আছে, যা সক্রিয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমাদের দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এক বছরে ১২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিমূল্য দেশে না আসার তথ্য উঠে এসেছে। এই বিপুল পরিমাণ পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে অফশোর ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কেননা অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে অর্থ জমা রাখলে সেই অর্থ কোনো রকম পূর্বানুমতি ব্যাতিরেকেই বিদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। ফলে যেসব অনিবাসী বাংলাদেশি অবৈধভাবে অর্থ বিদেশে নিয়ে রেখেছেন, তাদের অনেকেই সেই অর্থ দেশের অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে রাখতে আগ্রহী হবেন। তবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে অফশোর ব্যাংকিং সুযোগ খুব একটা কাজে লাগানো যাবে না। কারণ এই অর্থ বিদেশের কোনো ব্যাংক হিসাবে থাকার পরিবর্তে দেশের কোনো ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং হিসাবে থাকবে এবং পূর্বানুমতি ব্যাতিরেকে সুযোগমতো বিদেশে ফিরে যাবে।

অফশোর ব্যাংকিং সুবিধা অবারিত করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ গ্রহণ ও অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেননা বিশ্বে যাদের হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা বিনিযোগের জন্য আছে, তারা এ রকম সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। তাদের খুব অল্প সুদে বৈদেশিক তহবিল সংগ্রহের সুযোগ আছে। ফলে সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি কিছু অধিক সুদে অর্থায়ন বা ঋণদানের সুযোগ পায়, তাহলে তারা সেই সুযোগ লুফে নেয়। এ কারণেই অফশোর ব্যাংকিং চালু করে খুব সহজেই বৈদেশিক মুদ্রায় অর্থায়ন বা ঋণ পেতে পারে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এই ধরনের অর্থায়ন বা ঋণ সাধারণত স্বল্পমেয়াদি বা চাহিবা মাত্র ফেরত দেয়ার শর্তে প্রদান করা হয়। আর এরকম অর্থায়ন বা ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে অথবা এমন খাতে বিনিয়োগ করা হলো, যেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় রেভিনিউ উপার্জনের সুযোগ নেই, তাহলে ঋণখেলাপি বা ডিফল্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা দেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত আরোপ করা প্রয়োজন।

অফশোর ব্যাংকিং সাময়িক কিছু ডলার সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি করলেও দেশে ডলার সংকট যে তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদি আকার ধারণ করেছে, তা থেকে উত্তরণের সুযোগ খুবই কম। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে হবে। এজন্য ব্যাপক হারে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। প্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যাপক হারে অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির আওতায় আনতে হবে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রপ্তানি করার মতো অসংখ্য অপ্রচলিত পণ্য যেমন আমাদের দেশে আছে, তেমনি বিশ্বের অসংখ্য স্থানে নতুন নতুন বাজারও সৃষ্টি হচ্ছে। প্রয়োজন শুধু সুযোগের সদ্ব্যবহার করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের রপ্তানি পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করতে হবে। বিদেশের আমদানিকারক দেশে এসে রপ্তানির আদেশ দেবে, এই অপেক্ষায় বসে না থেকে বিদেশের রপ্তানিকারকের কাছে স্ব-উদ্যোগে পণ্য পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাকে বলে আধুনিক রপ্তানি পদ্ধতি। এর পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পথে এনে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মোটকথা, আমাদের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ আমদানির চেয়ে বেশি না হলেও সমান রাখতেই হবে। এটি করতে পারলে ডলারের চাহিদা স্বাভাবিক হবে এবং মূল্যও স্থিতিশীল থাকবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top