alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টদের অবদান

নাজমুল ইসলাম

: বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উচ্চশিক্ষার পড়াশোনায় বিশেষায়িত এক শাখার নাম ফার্মেসি। সময়ের বিবর্তনে দেশে ফার্মেসি শিক্ষার প্রসার ঘটেছে গত ৬০ বছর ধরে। ১৯৬৪ সালের পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের গোড়াপত্তনের মাধ্যমে দেশে ফার্মেসি শিক্ষার পদচারণা শুরু। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি শিক্ষা চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর প্রায় গড়ে চার হাজার গ্র্যাজুয়েট পাস করে বের হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রয়েছে। তবে প্রতি বছর এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই বিশালসংখ্যক দক্ষ জনশক্তির কর্মক্ষেত্র হিসেবে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে তেমন পদায়ন নেই।

ওষুধ প্রস্তুত ছাড়াও ফার্মাসিস্টদের কাজের একাধিক ক্ষেত্র রয়েছে। যেমনÑ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সরাসরি রোগীর সান্নিধ্যে কমিউনিটি ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ওষুধ গবেষণা ও আবিষ্কার, হাসপাতালে রোগীদের ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার, ওষুধের ডোজ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিতকরণ, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, ওষুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিতরণ, ওষুধের তথ্য প্রদানে মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার, হাসপাতালের ফার্মেসিতে, প্রশিক্ষক হিসেবে , স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজত টিম এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাতে, ওষুধের গুণগত মান তদারকিতে ওষুধ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসনিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের সঠিক ব্যবহার, জনস্বাস্থ্য তদারকি ও সচেতনতা তৈরিতে ইত্যাদি। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের পদায়ন করা হয় না। দেশে নেই কোন সরকারি ওষুধ গবেষণা ইনস্টিটিউট, যেখানে ফার্মাসিস্টরা ওষুধ নিয়ে দেশের জন্য গবেষণা করতে পারতেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ফার্মাসিস্টদের জন্য নেই সুযোগ। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সামরিক ও বেসামরিক স্বাস্থ্য খাত, ওষুধ রপ্তানি খাতসহ সরকারি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্রের দেখা মেলা ভার। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও জনগণকে ওষুধের সেবনবিধি সম্পর্কে অবহিত করতে সরকারি উদ্যোগে কোন মডেল ফার্মেসি নেই দেশে।

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি। এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। এই বিপুলসংখ্যক হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্ট থাকলেও নেই একজনও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। স্বাস্থ্যসেবা খাতে চিকিৎসক, হেলথ টেকনোলজিস্ট ও নার্সদের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য ; তেমনিভাবেই হাসপাতালে সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ সংরক্ষণ, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারণ, ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজরদারি ও প্রতিরোধকরণে বিশেষভাবে দক্ষ একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ৪.৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ (ব) উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, শতকরা ফার্মাসিস্টদের ৫৫ ভাগ কাজ করবে ‘কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট’ হিসেবে, ৩০ ভাগ কাজ করবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায়, ৫ ভাগ কাজ করবে সরকারি সংস্থায়, ৫ ভাগ শিক্ষাকার্যক্রমে এবং ৫ ভাগ কাজ করবে কোম্পানির ওষুধ প্রস্তুতিতে। অথচ বাংলাদেশের ৯০-৯৫ ভাগ ফার্মাসিস্ট কাজ করছে ওষুধ কোম্পানিতে। দেশে নেই কোনো হসপিটাল বা কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট। দেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পদার্পণ করলেও অসহায় রোগীদের জন্য এখনো বন্দোবস্ত হয়নি হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের সেবা। ফলে রোগীর স্বাস্থ্যসেবা আজও ভঙ্গুর ও অবহেলিত। এদিকে বর্তমানে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতি বছর প্রায় ৯৮ শতাংশ দেশীয় ওষুধের চাহিদা মিটিয়েও পৃথিবীর ১৬০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের এই বিশাল সম্ভাবনায় ক্ষেত্রের নেপথ্যের কারিগর হলেন আমাদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ফার্মাসিস্টরা। দেশের এই সম্ভাবনাময় ফার্মাসিস্টদের উন্নত দেশগুলোর মতো সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায়ও যুক্ত করা গেলে চিকিৎসাসেবার মান দ্রুতই উন্নত করা সম্ভব।

তবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে না। এতে সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে। ফলে আমাদের দেশে ওষুধ শিল্প এগিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য খাত বিশ্বায়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না। এই খাতটি পারছে না এই ভঙ্গুর অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে। আগামীর বিশ্বমানের বাংলাদেশ গড়তে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চিকিৎসক, ফার্মাসিস্টসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

মানুষের পর কারা হবে বিশ্বজয়ী

টেকসই রাষ্ট্রীয় সংস্কারে শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যাহত বিনির্মাণের বিকল্প নাই

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সামাজিক অর্থায়নের ভূমিকা

বিশ্ব নরসুন্দর দিবস

মধু পূর্ণিমা ও প্রাসঙ্গিক কথা

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

ছয়টি কমিশন গঠিত হলো কিন্তু শিক্ষা কোথায়?

বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

শিক্ষাব্যবস্থার বিনির্মাণে শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

বন্যা পরবর্তী রোগবালাই

রম্যগদ্য : থামব কবে কাইজ্জা-ফ্যাসাদ

প্রসঙ্গ : জাতীয় সংগীত

পানির ব্যবহার, পানির রাজনীতি

রবীন্দ্র ভাবনায় কৃষি এবং আজকের প্রেক্ষাপট

শিক্ষা ব্যবস্থার বিনির্মাণে শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

‘আবার তোরা মানুষ হ’

ভোজ্যতেল সংকট মেটাতে পাম চাষের গুরুত্ব

গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি দিয়ে প্রতারণা

হুন্ডি কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টদের অবদান

নাজমুল ইসলাম

বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উচ্চশিক্ষার পড়াশোনায় বিশেষায়িত এক শাখার নাম ফার্মেসি। সময়ের বিবর্তনে দেশে ফার্মেসি শিক্ষার প্রসার ঘটেছে গত ৬০ বছর ধরে। ১৯৬৪ সালের পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগের গোড়াপত্তনের মাধ্যমে দেশে ফার্মেসি শিক্ষার পদচারণা শুরু। বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১৩টি সরকারি ও ২৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি শিক্ষা চালু রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর প্রায় গড়ে চার হাজার গ্র্যাজুয়েট পাস করে বের হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট রয়েছে। তবে প্রতি বছর এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই বিশালসংখ্যক দক্ষ জনশক্তির কর্মক্ষেত্র হিসেবে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোন ক্ষেত্রে তেমন পদায়ন নেই।

ওষুধ প্রস্তুত ছাড়াও ফার্মাসিস্টদের কাজের একাধিক ক্ষেত্র রয়েছে। যেমনÑ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সরাসরি রোগীর সান্নিধ্যে কমিউনিটি ও ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ওষুধ গবেষণা ও আবিষ্কার, হাসপাতালে রোগীদের ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার, ওষুধের ডোজ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিতকরণ, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও ওষুধ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, ওষুধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং বিতরণ, ওষুধের তথ্য প্রদানে মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার, হাসপাতালের ফার্মেসিতে, প্রশিক্ষক হিসেবে , স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজত টিম এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাতে, ওষুধের গুণগত মান তদারকিতে ওষুধ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশাসনিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা পর্যায়ে ওষুধের সঠিক ব্যবহার, জনস্বাস্থ্য তদারকি ও সচেতনতা তৈরিতে ইত্যাদি। তবে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের পদায়ন করা হয় না। দেশে নেই কোন সরকারি ওষুধ গবেষণা ইনস্টিটিউট, যেখানে ফার্মাসিস্টরা ওষুধ নিয়ে দেশের জন্য গবেষণা করতে পারতেন। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে ফার্মাসিস্টদের জন্য নেই সুযোগ। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সামরিক ও বেসামরিক স্বাস্থ্য খাত, ওষুধ রপ্তানি খাতসহ সরকারি স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্রের দেখা মেলা ভার। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও জনগণকে ওষুধের সেবনবিধি সম্পর্কে অবহিত করতে সরকারি উদ্যোগে কোন মডেল ফার্মেসি নেই দেশে।

বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি। এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। এই বিপুলসংখ্যক হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্ট থাকলেও নেই একজনও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। স্বাস্থ্যসেবা খাতে চিকিৎসক, হেলথ টেকনোলজিস্ট ও নার্সদের ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য ; তেমনিভাবেই হাসপাতালে সঠিক পদ্ধতিতে ওষুধ সংরক্ষণ, রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারণ, ওষুধ ব্যবহার সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নজরদারি ও প্রতিরোধকরণে বিশেষভাবে দক্ষ একজন গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ৪.৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ (ব) উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, শতকরা ফার্মাসিস্টদের ৫৫ ভাগ কাজ করবে ‘কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট’ হিসেবে, ৩০ ভাগ কাজ করবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায়, ৫ ভাগ কাজ করবে সরকারি সংস্থায়, ৫ ভাগ শিক্ষাকার্যক্রমে এবং ৫ ভাগ কাজ করবে কোম্পানির ওষুধ প্রস্তুতিতে। অথচ বাংলাদেশের ৯০-৯৫ ভাগ ফার্মাসিস্ট কাজ করছে ওষুধ কোম্পানিতে। দেশে নেই কোনো হসপিটাল বা কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট। দেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পদার্পণ করলেও অসহায় রোগীদের জন্য এখনো বন্দোবস্ত হয়নি হসপিটাল ফার্মাসিস্টদের সেবা। ফলে রোগীর স্বাস্থ্যসেবা আজও ভঙ্গুর ও অবহেলিত। এদিকে বর্তমানে দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতি বছর প্রায় ৯৮ শতাংশ দেশীয় ওষুধের চাহিদা মিটিয়েও পৃথিবীর ১৬০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। দেশের এই বিশাল সম্ভাবনায় ক্ষেত্রের নেপথ্যের কারিগর হলেন আমাদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ফার্মাসিস্টরা। দেশের এই সম্ভাবনাময় ফার্মাসিস্টদের উন্নত দেশগুলোর মতো সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায়ও যুক্ত করা গেলে চিকিৎসাসেবার মান দ্রুতই উন্নত করা সম্ভব।

তবে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে না। এতে সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে। ফলে আমাদের দেশে ওষুধ শিল্প এগিয়ে গেলেও স্বাস্থ্য খাত বিশ্বায়নের দিকে এগিয়ে যেতে পারছে না। এই খাতটি পারছে না এই ভঙ্গুর অবস্থান থেকে বের হয়ে আসতে। আগামীর বিশ্বমানের বাংলাদেশ গড়তে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো চিকিৎসক, ফার্মাসিস্টসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্য খাতকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

[লেখক : শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top