alt

উপ-সম্পাদকীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিঠি ও খ্রিস্টান চার্চ

মিথুশিলাক মুরমু

: মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

গত ২২ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বীরগঞ্জ শাখা, দিনাজপুরের প্যাডে একজন ছাত্র প্রতিনিধির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ’-এর মডারেটর রেভারেন্ড মনোজিত রায়। এছাড়া দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিষ্ঠান, খ্রিস্টান জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও নেতৃস্থানীয় খ্রিস্টিয়ান ব্যক্তিবর্গকেও অনুলিপি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ (বিএলসি) ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাসমূহে খ্রিস্টানুসারীদের মাঝে সেবা ও সাক্ষ্যের কাজ পরিচালনা করে আসছে। চার্চ ডিনোমিনেশনটি পরিচালনার জন্য রয়েছে সংবিধান, নির্বাহী পর্ষদ ও সিনোড কমিটি। জাতীয়ভাবে ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টিয়ান ফেলোসিপ অব বাংলাদেশ’ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ‘লুথারেন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন’-এর চার্টার্ড মেম্বার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যাডে প্রাপ্তি পত্রের শিরোনাম হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের (বিএলসির) অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনকল্পে সমন্বিত সভায় আপনার গ্রুপ/দল থেকে প্রতিনিধির নাম (প্রধানসহ) প্রেরণ এবং উপস্থিতি প্রসঙ্গে’। আমরা এটা ভেবে আশ্চার্যন্বিত হয়েছি, কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ’-এর আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে? চার্চের যে সমস্ত খিস্টান ব্যক্তিবর্গ চার্চের নিয়ম- কানুন, বিধি-বিধান ও ধর্মীয় রীতি এবং ধর্মীয় অনুশাসনকে কোনোভাবেই মানতে নারাজ; সেক্ষেত্রে তাদের শৃঙ্খলায় রাখার জন্য চার্চের নিজস্ব কাঠামোগত পদ্ধতি রয়েছে। চার্চগতভাবে অনুশাসনে থাকা ব্যক্তিবর্গদের আমন্ত্রণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই চার্চের অভ্যন্তরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘আপনাদের বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের (বিএলসির) মধ্যে কারণে-অকারণে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে বা ফায়দা হাসিলের জন্য হয়তো কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির কারণে বিভিন্ন দলে বা গ্রুপে বিএলসি বিভক্ত হয়ে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে যা বর্তমানে প্রবল আকারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যে কোন সময়ে আপনাদের বিএলসি চার্চে যে কোন ধরনের তা-বলীলা সংঘটিত হতে পারে মর্মে আশংকায় আপনাদের গ্রুপসমূহের পক্ষ থেকে শান্তি আনয়নে বীরগঞ্জ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিদের দৃষ্টান্তমূলক সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য আবেদন পাওয়া যায়। উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশৃঙ্খল সমাজে শান্তি স্থাপনের সহায়ক হিসেবে সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ায় আমরা ছাত্র সমাজ বধ্যপরিকর।’ ... তারই ধারাবাহিকতায় আপনার গ্রুপের/দলের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একাধিকবার ০৫ (পাঁচ( জন অভিজ্ঞ ও দক্ষতা সম্পন্ন লিডার/প্রতিনিধির নাম তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপনি/আপনারা লিডার বা প্রতিনিধির নাম তালিকা না পাঠিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কুপরামর্শ করে কালক্ষেপণ করছেন। যা কাউকে মূল্যায়ন না করে বরং অবজ্ঞার বশবর্তী হয়ে নিজেদের মধ্যেই চার্চে নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি করতেছেন। দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন সমাজে এরুপ বিশৃঙ্খল পরিবেশ লেগে থাকলে তা নিরসনের জন্য এগিয়ে আসা সবার দায়িত্ব। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের (বিএলসির) মধ্যে অনেক দিনের পুষে রাখা দ্বন্দ্ব-কলহ তথা অস্থিতিশীল পরিস্থতি নিরসনকল্পে আসামি ৩১/১০/২০২৪ খ্রি. সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে একটি সমন্বিত সভা আহবানের লক্ষ্যে শেষ বারের মত আপনার গ্রুপের/দলের পক্ষ থেকে ০৫ (পাঁচ) জন অভিজ্ঞ ও দক্ষতা সম্পন্ন লিডার/প্রতিনিধির নাম (চার্চ প্রধানসহ) তালিকা (নাম, পদবী, ঠিকানা, মোবাইল ও ই-মেইল নম্বরসহ) বিনা ব্যর্থতায় ২৭/১০/২০২৪ খ্রি. তারিখের মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরাবর প্রেরণ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ইহার সামান্যতম ব্যত্যয় হলে বা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে এবং কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে এর দায়ভার আপনাদের, যাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোন প্রকার দায়ী থাকবে না তৎসঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।’ বর্তমানেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকিতে বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের নেতারা আতঙ্কগ্রস্ত, সেবা ও সাক্ষ্যের কাজগুলোকে স্থবির ও বাধাগ্রস্ত করে আপামর জনসাধারণের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমতÑ খ্রিস্ট বিশ^াসীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, গির্জা-প্রার্থনা-উৎসবাদি সবকিছুই খ্রিস্টানুসারী কেন্দ্রিক। চার্চের আভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কার্যাদি চার্চের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সিনোড/সাধারণ সভা ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। সর্বদা নিয়মতান্ত্রিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে খ্রিস্টানুসারীদের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনের লক্ষ্যে আপোস করে না। বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের শৃঙ্খলায় থাকা ব্যক্তিবর্গরা বারং বার চার্চের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ইন্ধনে সিদ্ধহস্ত, একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়েছেন। বোধ করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এজেন্ডায় এটি কখনোই আওতাধীন নয়।

দ্বিতীয়তÑ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিঠির ভাষা ও হুমকিধমকি বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের নেতারা ও চার্চের সাধারণ খ্রিস্টভক্তদের তটস্থ ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ সরাসরি চার্চের কর্মকা- পরিচালনা করে, এটি কোনো শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান নয়। খ্রিস্ট বিশ^াসীদের আধ্যাত্মিক, আত্মিক সেবার পাশাপাশি আত্ম নির্ভরশীল, কুসংস্কার এবং সচেতনতামূলক বিষয়াদিতে প্রচার-প্রচারাভিযানের অংশী হয়ে থাকে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আসামি ভবিষ্যৎ, প্রতিষ্ঠান, সমাজ, দেশ ও বিশ^কেও নেতৃত্ব দিতে এখনই নিজেদের গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়। আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যতম ধর্ম খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করা কখনোই কাম্য নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক চার্চের কর্মকা-কে স্থবিরে নিজেদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করছে, অনুরূপভাবে সরকারের ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদেরকে লজ্জিত হতে হয়েছে।

তৃতীয়তÑ কখনো কখনো চার্চের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সৃষ্টি হলে জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টিয়ান ফেলোসিপ অব বাংলাদেশ’ (এনসিএফবি) দায়িত্ব পালন করে থাকে। গুরুতর বিষয়গুলোতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ চার্চেস বাংলাদেশ’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বার্থান্বেষী চেষ্টা পুরো খ্রিস্টান সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চার্চের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে নিজেদেরকে জড়িয়ে দেশব্যাপী যে সংস্কারের প্রচেষ্টা করে চলেছে, সেটিতে যেন বিরূপ ইমেজ চিত্রিত না হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা গত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি. চট্টগ্রামের পাথরঘাটার সেন্ট প্লাসিড স্কুল ও জপমালা রানী ক্যাথিড্রাল গির্জা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ধর্মীয় কর্তধারদের উৎসাহিত করেছেন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালের পাশাপাশি এতিম, দুস্থ ও বিধবাদের জন্য স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার বিষয়ে খেয়াল রাখতে। এছাড়া ডেঙ্গু, মাদক, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বিষয়ে সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সৌহার্দে ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিনির্মাণ করা। প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ‘একশ্রেণির দুর্বৃত্ত মাঝেমধ্যে উপাসনালয়ে হামলা চালায়, আপনারা মনে রাখবেন রাষ্ট্র পক্ষপাতহীন প্রতিটি ধর্মের পাশে রয়েছে। আমি আপনাদের আশ^স্ত করতে চাই যে, ধর্মচর্চা ধর্ম অনুশীলন এবং ধর্ম প্রচার এসব বিষয়ে সরকার সব সময় আপনাদের সহযোগিতা করে যাবে।’ আমরা বিশ^াস করতে চাই, প্রতিটি ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে, সৌহার্দ, সম্প্রীতিতে একে-অপরের ভালোবাসায় নিজ নিজ ধর্ম অবলম্বন, পালন ও প্রচার করতে সক্ষম হবেন।

[লেখক : কলামিস্ট[

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

প্রগতিতে অগ্রগতি

পরিবারতন্ত্র ও পরিবারতত্ত্ব : উত্তরণের উপায়

উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা

সরিষার তেল গবেষণায় সাফল্য

সিরিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদল : কার লাভ, কার ক্ষতি?

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিঠি ও খ্রিস্টান চার্চ

মিথুশিলাক মুরমু

মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪

গত ২২ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বীরগঞ্জ শাখা, দিনাজপুরের প্যাডে একজন ছাত্র প্রতিনিধির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পেয়েছেন ‘বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ’-এর মডারেটর রেভারেন্ড মনোজিত রায়। এছাড়া দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থা ও বন্ধুপ্রতিম প্রতিষ্ঠান, খ্রিস্টান জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও নেতৃস্থানীয় খ্রিস্টিয়ান ব্যক্তিবর্গকেও অনুলিপি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ (বিএলসি) ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাসমূহে খ্রিস্টানুসারীদের মাঝে সেবা ও সাক্ষ্যের কাজ পরিচালনা করে আসছে। চার্চ ডিনোমিনেশনটি পরিচালনার জন্য রয়েছে সংবিধান, নির্বাহী পর্ষদ ও সিনোড কমিটি। জাতীয়ভাবে ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টিয়ান ফেলোসিপ অব বাংলাদেশ’ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ‘লুথারেন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন’-এর চার্টার্ড মেম্বার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্যাডে প্রাপ্তি পত্রের শিরোনাম হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের (বিএলসির) অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনকল্পে সমন্বিত সভায় আপনার গ্রুপ/দল থেকে প্রতিনিধির নাম (প্রধানসহ) প্রেরণ এবং উপস্থিতি প্রসঙ্গে’। আমরা এটা ভেবে আশ্চার্যন্বিত হয়েছি, কীভাবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ’-এর আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করে? চার্চের যে সমস্ত খিস্টান ব্যক্তিবর্গ চার্চের নিয়ম- কানুন, বিধি-বিধান ও ধর্মীয় রীতি এবং ধর্মীয় অনুশাসনকে কোনোভাবেই মানতে নারাজ; সেক্ষেত্রে তাদের শৃঙ্খলায় রাখার জন্য চার্চের নিজস্ব কাঠামোগত পদ্ধতি রয়েছে। চার্চগতভাবে অনুশাসনে থাকা ব্যক্তিবর্গদের আমন্ত্রণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই চার্চের অভ্যন্তরের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ‘আপনাদের বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের (বিএলসির) মধ্যে কারণে-অকারণে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তে বা ফায়দা হাসিলের জন্য হয়তো কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির কারণে বিভিন্ন দলে বা গ্রুপে বিএলসি বিভক্ত হয়ে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে যা বর্তমানে প্রবল আকারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যে কোন সময়ে আপনাদের বিএলসি চার্চে যে কোন ধরনের তা-বলীলা সংঘটিত হতে পারে মর্মে আশংকায় আপনাদের গ্রুপসমূহের পক্ষ থেকে শান্তি আনয়নে বীরগঞ্জ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিদের দৃষ্টান্তমূলক সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য আবেদন পাওয়া যায়। উক্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশৃঙ্খল সমাজে শান্তি স্থাপনের সহায়ক হিসেবে সহযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ায় আমরা ছাত্র সমাজ বধ্যপরিকর।’ ... তারই ধারাবাহিকতায় আপনার গ্রুপের/দলের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে একাধিকবার ০৫ (পাঁচ( জন অভিজ্ঞ ও দক্ষতা সম্পন্ন লিডার/প্রতিনিধির নাম তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপনি/আপনারা লিডার বা প্রতিনিধির নাম তালিকা না পাঠিয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কুপরামর্শ করে কালক্ষেপণ করছেন। যা কাউকে মূল্যায়ন না করে বরং অবজ্ঞার বশবর্তী হয়ে নিজেদের মধ্যেই চার্চে নাশকতার আশঙ্কা সৃষ্টি করতেছেন। দেশে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন সমাজে এরুপ বিশৃঙ্খল পরিবেশ লেগে থাকলে তা নিরসনের জন্য এগিয়ে আসা সবার দায়িত্ব। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের (বিএলসির) মধ্যে অনেক দিনের পুষে রাখা দ্বন্দ্ব-কলহ তথা অস্থিতিশীল পরিস্থতি নিরসনকল্পে আসামি ৩১/১০/২০২৪ খ্রি. সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে একটি সমন্বিত সভা আহবানের লক্ষ্যে শেষ বারের মত আপনার গ্রুপের/দলের পক্ষ থেকে ০৫ (পাঁচ) জন অভিজ্ঞ ও দক্ষতা সম্পন্ন লিডার/প্রতিনিধির নাম (চার্চ প্রধানসহ) তালিকা (নাম, পদবী, ঠিকানা, মোবাইল ও ই-মেইল নম্বরসহ) বিনা ব্যর্থতায় ২৭/১০/২০২৪ খ্রি. তারিখের মধ্যে বীরগঞ্জ উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরাবর প্রেরণ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ইহার সামান্যতম ব্যত্যয় হলে বা একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে এবং কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি হলে এর দায়ভার আপনাদের, যাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোন প্রকার দায়ী থাকবে না তৎসঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে।’ বর্তমানেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকিতে বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের নেতারা আতঙ্কগ্রস্ত, সেবা ও সাক্ষ্যের কাজগুলোকে স্থবির ও বাধাগ্রস্ত করে আপামর জনসাধারণের মধ্যেও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

প্রথমতÑ খ্রিস্ট বিশ^াসীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, গির্জা-প্রার্থনা-উৎসবাদি সবকিছুই খ্রিস্টানুসারী কেন্দ্রিক। চার্চের আভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কার্যাদি চার্চের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান সিনোড/সাধারণ সভা ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। সর্বদা নিয়মতান্ত্রিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে খ্রিস্টানুসারীদের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনের লক্ষ্যে আপোস করে না। বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের শৃঙ্খলায় থাকা ব্যক্তিবর্গরা বারং বার চার্চের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও ইন্ধনে সিদ্ধহস্ত, একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যবহার করতে আগ্রহী হয়েছেন। বোধ করি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এজেন্ডায় এটি কখনোই আওতাধীন নয়।

দ্বিতীয়তÑ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চিঠির ভাষা ও হুমকিধমকি বাংলাদেশ লুথারেন চার্চের নেতারা ও চার্চের সাধারণ খ্রিস্টভক্তদের তটস্থ ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। বাংলাদেশ লুথারেন চার্চ সরাসরি চার্চের কর্মকা- পরিচালনা করে, এটি কোনো শিক্ষা ও উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান নয়। খ্রিস্ট বিশ^াসীদের আধ্যাত্মিক, আত্মিক সেবার পাশাপাশি আত্ম নির্ভরশীল, কুসংস্কার এবং সচেতনতামূলক বিষয়াদিতে প্রচার-প্রচারাভিযানের অংশী হয়ে থাকে। আজকের শিক্ষার্থীরাই আসামি ভবিষ্যৎ, প্রতিষ্ঠান, সমাজ, দেশ ও বিশ^কেও নেতৃত্ব দিতে এখনই নিজেদের গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়। আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যতম ধর্ম খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করা কখনোই কাম্য নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্তৃক চার্চের কর্মকা-কে স্থবিরে নিজেদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করছে, অনুরূপভাবে সরকারের ধর্মীয় নিরপেক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদেরকে লজ্জিত হতে হয়েছে।

তৃতীয়তÑ কখনো কখনো চার্চের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সৃষ্টি হলে জাতীয় প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল খ্রিস্টিয়ান ফেলোসিপ অব বাংলাদেশ’ (এনসিএফবি) দায়িত্ব পালন করে থাকে। গুরুতর বিষয়গুলোতে জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ চার্চেস বাংলাদেশ’ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বার্থান্বেষী চেষ্টা পুরো খ্রিস্টান সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চার্চের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোতে নিজেদেরকে জড়িয়ে দেশব্যাপী যে সংস্কারের প্রচেষ্টা করে চলেছে, সেটিতে যেন বিরূপ ইমেজ চিত্রিত না হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা গত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রি. চট্টগ্রামের পাথরঘাটার সেন্ট প্লাসিড স্কুল ও জপমালা রানী ক্যাথিড্রাল গির্জা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ধর্মীয় কর্তধারদের উৎসাহিত করেছেন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতালের পাশাপাশি এতিম, দুস্থ ও বিধবাদের জন্য স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার বিষয়ে খেয়াল রাখতে। এছাড়া ডেঙ্গু, মাদক, স্বাস্থ্যবিষয়ক সচেতনতা বিষয়ে সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সৌহার্দে ও ভ্রাতৃত্ববোধ বিনির্মাণ করা। প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, ‘একশ্রেণির দুর্বৃত্ত মাঝেমধ্যে উপাসনালয়ে হামলা চালায়, আপনারা মনে রাখবেন রাষ্ট্র পক্ষপাতহীন প্রতিটি ধর্মের পাশে রয়েছে। আমি আপনাদের আশ^স্ত করতে চাই যে, ধর্মচর্চা ধর্ম অনুশীলন এবং ধর্ম প্রচার এসব বিষয়ে সরকার সব সময় আপনাদের সহযোগিতা করে যাবে।’ আমরা বিশ^াস করতে চাই, প্রতিটি ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে, সৌহার্দ, সম্প্রীতিতে একে-অপরের ভালোবাসায় নিজ নিজ ধর্ম অবলম্বন, পালন ও প্রচার করতে সক্ষম হবেন।

[লেখক : কলামিস্ট[

back to top