alt

উপ-সম্পাদকীয়

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার

: বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

অস্থিরতা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে। সবকিছুর মূলেই যে রাজনীতি, তা কিন্তু নয়। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে প্রায় সময়ই সামনের পথে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে মানুষ। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা প্রতিনিয়তই হাঁটছি অন্ধকারের পথে। আবার মনে হয় হতাশ হলে তো চলবে না। শিক্ষা আমাদের জীবনের শক্ত খুঁটি হলেও শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর বাস্তবায়নে পচন ধরেছে ইতোমধ্যে। আমরা শিক্ষার বাহ্যিক দিকে সংস্কার করার জন্য উদ্যোগী হলেও এর ভেতরের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাটা উপলব্ধি করতে পারছি না। অন্যদিকে ধর্মের মূল বিষয়গুলো আমরা অন্তরে লালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। ধর্মের লেবাসটা ধারণ করার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু ধর্মের রস আস্বাদন করতে পারছি না। সবকিছুই যেন বাহ্যিক দিক দিয়েই বিবেচনা করছি। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিপথের আশ্রয় নিচ্ছি। ব্যক্তিজীবনে বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হলেও বাড়ছে না সামাজিক বন্ধন। বেড়েই চলেছে সামাজিক অস্থিরতা।

আজ এক বিষয় আবার কাল অন্য বিষয়। পাল্লা দিয়ে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে সমাজের সব স্তরে। এ থেকে মুক্তির পথ তৈরির কোন সুস্পষ্ট লক্ষণও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। একটা সময় মানুষের মাঝে সামাজিক বন্ধন ছিল অনেক শক্তিশালী। সামাজিক বন্ধনটাতে আজ বিচ্ছেদের সুর পরিলক্ষিত হচ্ছে। সবকিছুর মাঝে একটি বন্ধনের অভাব আমাদের তাড়া করছে। কিন্তু এ অবস্থান কেন হচ্ছে তা কিন্তু আমরা নির্ণয় করতে পারছি না বা করার চেষ্টাও করছি না। কিন্তু একটি সুষ্ঠু সমাজ বির্ণিমানে কেবল মাত্র রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব নয়। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবটুকু সময়ের জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের ভূমিকা অনস্বীকার্য এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো সমাজের যে ভূমিকার কখা আমরা বলছি তা আমাদের বর্তমান জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারছে। হতাশাগ্রস্তরা হয়তো বলবে কোন কাজেই আসছে না সমাজের এ ধ্যানধারণা। কিন্তু একটু স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলেই সমাজের ভূমিকার কথা চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। তবে এ-ও সত্য যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সমাজের ব্যবস্থাটা মানুষ ব্যবহার করতে চাইছে না বা পারছে না। এর জন্য বিশেষ কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে কোন এককভাবে দায়ী করা যায় না। কাগজে লেখা বা বক্তব্য দেয়া সহজ হতে পারে কিন্তু সমাজের পরিবর্তন বা সুস্থ ধারায় নিয়ে আসা ততটা সহজ কাজ নয় বা একক কোন ব্যক্তির প্রচেষ্টায় তা সম্ভবও নয়। প্রতিটি প্রজন্ম আরেকটি প্রজন্ম থেকে জ্ঞানে বা মেধায় আলাদা হবে এটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু একটা প্রজন্ম থেকে আরেকটি প্রজন্মের পরিবর্তনটা হতে হবে নিরবচ্ছিন্নভাবে। এই যে পরিবর্তনের বাজনা আমরা বাজাচ্ছি আসলে তা কি পরিবর্তন এবং এই পরিবর্তন কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তা কিন্তু আমরা ভেবে দেখছি না। প্রথমেই নজর দেয়া যাক পরিবারের দিকে।

জন্মের পর থেকেই পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে মানুষ বয়সে বড় হতে থাকে। পরিবার থেকে আমরা যা শিক্ষা লাভ করছি তা আমরা প্রতিনিয়ত সমাজ ব্যবস্থায় বেঁচে থার জন্য প্রয়োগ করছি। বর্তমানে পারিবারিকভাবে যে শিক্ষাটা আমরা গ্রহণ করছি সে শিক্ষার মাঝে এখন চরম অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।

প্রত্যেক জায়গায় সামাজিক মূল্যবোধের অভাব লক্ষণীয়। আমার ছাড়া পরিবার আর কোন কিছু চিন্তা করতে পারছে না। প্রত্যেক জায়গায় আমার আমার শব্দের জয় জয়কার। যে কোনভাবে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এতই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছি যে, যেখানে পারিবারিক বন্ধন বিলীন হলেও কোন সমস্যা নাই। সবচেয়ে দেখার বিষয় এই যে, অর্থের প্রভাবের কারনে রক্তের বন্ধনই ছিন্ন করছি সামাজিক বন্ধন তো দূরেই রয়ে যায়। পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হওয়ার কারণে শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্যের ভালোর দিকটা চিন্তা করতে পারছি না। শুধু টাকার একটা মেশিন বানানোর জন্যই আমরা সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলছি। পরিবার থেকে বড় হওয়ার যে একটা চাপ তৈরি করা হচ্ছে সে চাপেই অন্য পথ ভুলে যাচ্ছি আমরা। জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে গিয়ে সমাজের অনেক ভালো কাজের কথাও কাগজে লিখছি কিন্তু করছি না। প্রত্যেকটি বড় হওয়ার পেছনে শুধু টাকার বড় হওয়াটাই দেখছি কিন্তু পরিবার ও সমাজের ভাবনাটা একেবারেই আসছে না আমাদের মাঝে। প্রত্যেকটি সন্তানই যখন নিজেকে কেবল চেনে তখন তার কাছ থেকে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাবনাটা অনেক দূলে চলে যায়। এইযে ভাবনা যার ভিন্নতা আনতে পারে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তাকে সমৃদ্ধ করতে পারে ধর্মীয় চিন্তা। কিন্তু সত্য এটা যে দুই জায়গাতেই পচন ধরেছে। এর জন্য এককভাবে কোন সমস্যাকেই দায়ী করা যায় না। আমরা কেবল আধুনিকতার দোহাই দিচ্ছি। পৃথিবীর পরিবর্তনের রীতিনীতির কথাই শোনাচ্ছি। কিন্তু আসলেই কি সব রীতিনীতি এভাবে ছন্নছাড়া হচ্ছে এটা ভেবে দেখা দরকার। আমরা পরিবর্তনের বেলায় অন্যের বিষয়টার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি বেশি কিন্তু নিজেরটা চোখে পড়ছে না। কারণ যে কোন মূল্যেই আমাকে প্রথম হতে হবে।

এখানে নীতি থাকুক আর নাই থাকুক। বিভিন্ন ভাবে ধর্মীয় প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলেও মূল বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না এটা অবিশ^াস্য হলেও সত্য। মানা না মানা অন্য বিষয়।

মতের পার্থক্য থাকতেই পারে। মতের বিরোধ থাকলে ভালো মত পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা মত নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে কিন্তু এ দ্বন্দ্বের অবসান হতে হবে সঠিক পথে। সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পারিবারিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক কিন্তু সেটা যদি হয় সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ভালো থাকার জন্য বাধা তাহলে এ বিবর্তনের ফলতো ভালো হওয়ার কথা নয়। একটি পরিবর্তন অন্য আরেকটি খারাপ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

প্রত্যেকটি পরিবর্তনের সময় অবশ্যই আমরা এমন পরিবর্তন আশা করি যা থেকে সমাজ ব্যবস্থায় ব্যতিক্রম পরিবেশের সৃষ্টি না হয়। সুন্দর সমাজব্যবস্থা নির্মাণ করতে না পারলে আধুনিকতার যে ছোঁয়ার কথা আমরা বলছি তার ফল লাভ করা যাবে না। আর এ ফল লাভের ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়গুলো সামনে আসছে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। বড় হতে হবে তবে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে নয়। আর এ বড় হতে গিয়ে যেন আমরা আমাদের অস্তিত্ব ভুলে না যাই। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে সঠিক পথে চালানো সম্ভব নয়। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন না ঘটলে সামাজিক অস্থিরতাও বাড়বে। একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই যে জড়িয়ে থাকার ধরন সেটা নিরূপণ করে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আর এই যে প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে সেসব জায়গায় আত্মীক প্রয়োগ ঘটাতে হবে। অন্তরকে জাগ্রত করাতে পারে সেরকম পদক্ষেপ আমাদেরকেই নিতে হবে নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর চিন্তা না করে। আমার পরিবার থেকেই এর যাত্রা শুরু করা একান্ত প্রয়োজন। সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা তৈরি করা এখন সমাজের দাবি, কারণ বিনষ্ট সমাজব্যবস্থার কুফলের ভোগের বাইরে কেউ নয়।

[লেখক: প্রভাষক, আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজ, ময়মনসিংহ]

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

প্রগতিতে অগ্রগতি

পরিবারতন্ত্র ও পরিবারতত্ত্ব : উত্তরণের উপায়

উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা

সরিষার তেল গবেষণায় সাফল্য

সিরিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদল : কার লাভ, কার ক্ষতি?

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার

বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

অস্থিরতা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে। সবকিছুর মূলেই যে রাজনীতি, তা কিন্তু নয়। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে প্রায় সময়ই সামনের পথে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে মানুষ। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা প্রতিনিয়তই হাঁটছি অন্ধকারের পথে। আবার মনে হয় হতাশ হলে তো চলবে না। শিক্ষা আমাদের জীবনের শক্ত খুঁটি হলেও শিক্ষাব্যবস্থা এবং এর বাস্তবায়নে পচন ধরেছে ইতোমধ্যে। আমরা শিক্ষার বাহ্যিক দিকে সংস্কার করার জন্য উদ্যোগী হলেও এর ভেতরের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাটা উপলব্ধি করতে পারছি না। অন্যদিকে ধর্মের মূল বিষয়গুলো আমরা অন্তরে লালন করতে ব্যর্থ হচ্ছি। ধর্মের লেবাসটা ধারণ করার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু ধর্মের রস আস্বাদন করতে পারছি না। সবকিছুই যেন বাহ্যিক দিক দিয়েই বিবেচনা করছি। প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিপথের আশ্রয় নিচ্ছি। ব্যক্তিজীবনে বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত হলেও বাড়ছে না সামাজিক বন্ধন। বেড়েই চলেছে সামাজিক অস্থিরতা।

আজ এক বিষয় আবার কাল অন্য বিষয়। পাল্লা দিয়ে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে সমাজের সব স্তরে। এ থেকে মুক্তির পথ তৈরির কোন সুস্পষ্ট লক্ষণও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। একটা সময় মানুষের মাঝে সামাজিক বন্ধন ছিল অনেক শক্তিশালী। সামাজিক বন্ধনটাতে আজ বিচ্ছেদের সুর পরিলক্ষিত হচ্ছে। সবকিছুর মাঝে একটি বন্ধনের অভাব আমাদের তাড়া করছে। কিন্তু এ অবস্থান কেন হচ্ছে তা কিন্তু আমরা নির্ণয় করতে পারছি না বা করার চেষ্টাও করছি না। কিন্তু একটি সুষ্ঠু সমাজ বির্ণিমানে কেবল মাত্র রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব নয়। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সবটুকু সময়ের জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরের ভূমিকা অনস্বীকার্য এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এখন প্রশ্ন হলো সমাজের যে ভূমিকার কখা আমরা বলছি তা আমাদের বর্তমান জীবনে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করতে পারছে। হতাশাগ্রস্তরা হয়তো বলবে কোন কাজেই আসছে না সমাজের এ ধ্যানধারণা। কিন্তু একটু স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলেই সমাজের ভূমিকার কথা চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। তবে এ-ও সত্য যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সমাজের ব্যবস্থাটা মানুষ ব্যবহার করতে চাইছে না বা পারছে না। এর জন্য বিশেষ কোন গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে কোন এককভাবে দায়ী করা যায় না। কাগজে লেখা বা বক্তব্য দেয়া সহজ হতে পারে কিন্তু সমাজের পরিবর্তন বা সুস্থ ধারায় নিয়ে আসা ততটা সহজ কাজ নয় বা একক কোন ব্যক্তির প্রচেষ্টায় তা সম্ভবও নয়। প্রতিটি প্রজন্ম আরেকটি প্রজন্ম থেকে জ্ঞানে বা মেধায় আলাদা হবে এটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু একটা প্রজন্ম থেকে আরেকটি প্রজন্মের পরিবর্তনটা হতে হবে নিরবচ্ছিন্নভাবে। এই যে পরিবর্তনের বাজনা আমরা বাজাচ্ছি আসলে তা কি পরিবর্তন এবং এই পরিবর্তন কতটা ফলপ্রসূ হচ্ছে তা কিন্তু আমরা ভেবে দেখছি না। প্রথমেই নজর দেয়া যাক পরিবারের দিকে।

জন্মের পর থেকেই পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে মানুষ বয়সে বড় হতে থাকে। পরিবার থেকে আমরা যা শিক্ষা লাভ করছি তা আমরা প্রতিনিয়ত সমাজ ব্যবস্থায় বেঁচে থার জন্য প্রয়োগ করছি। বর্তমানে পারিবারিকভাবে যে শিক্ষাটা আমরা গ্রহণ করছি সে শিক্ষার মাঝে এখন চরম অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।

প্রত্যেক জায়গায় সামাজিক মূল্যবোধের অভাব লক্ষণীয়। আমার ছাড়া পরিবার আর কোন কিছু চিন্তা করতে পারছে না। প্রত্যেক জায়গায় আমার আমার শব্দের জয় জয়কার। যে কোনভাবে আমরা অর্থনৈতিকভাবে এতই স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছি যে, যেখানে পারিবারিক বন্ধন বিলীন হলেও কোন সমস্যা নাই। সবচেয়ে দেখার বিষয় এই যে, অর্থের প্রভাবের কারনে রক্তের বন্ধনই ছিন্ন করছি সামাজিক বন্ধন তো দূরেই রয়ে যায়। পারিবারিক বন্ধন মজবুত না হওয়ার কারণে শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্যের ভালোর দিকটা চিন্তা করতে পারছি না। শুধু টাকার একটা মেশিন বানানোর জন্যই আমরা সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলছি। পরিবার থেকে বড় হওয়ার যে একটা চাপ তৈরি করা হচ্ছে সে চাপেই অন্য পথ ভুলে যাচ্ছি আমরা। জীবনের লক্ষ্য ঠিক করতে গিয়ে সমাজের অনেক ভালো কাজের কথাও কাগজে লিখছি কিন্তু করছি না। প্রত্যেকটি বড় হওয়ার পেছনে শুধু টাকার বড় হওয়াটাই দেখছি কিন্তু পরিবার ও সমাজের ভাবনাটা একেবারেই আসছে না আমাদের মাঝে। প্রত্যেকটি সন্তানই যখন নিজেকে কেবল চেনে তখন তার কাছ থেকে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের ভাবনাটা অনেক দূলে চলে যায়। এইযে ভাবনা যার ভিন্নতা আনতে পারে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তাকে সমৃদ্ধ করতে পারে ধর্মীয় চিন্তা। কিন্তু সত্য এটা যে দুই জায়গাতেই পচন ধরেছে। এর জন্য এককভাবে কোন সমস্যাকেই দায়ী করা যায় না। আমরা কেবল আধুনিকতার দোহাই দিচ্ছি। পৃথিবীর পরিবর্তনের রীতিনীতির কথাই শোনাচ্ছি। কিন্তু আসলেই কি সব রীতিনীতি এভাবে ছন্নছাড়া হচ্ছে এটা ভেবে দেখা দরকার। আমরা পরিবর্তনের বেলায় অন্যের বিষয়টার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি বেশি কিন্তু নিজেরটা চোখে পড়ছে না। কারণ যে কোন মূল্যেই আমাকে প্রথম হতে হবে।

এখানে নীতি থাকুক আর নাই থাকুক। বিভিন্ন ভাবে ধর্মীয় প্রচার প্রচারণা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলেও মূল বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না এটা অবিশ^াস্য হলেও সত্য। মানা না মানা অন্য বিষয়।

মতের পার্থক্য থাকতেই পারে। মতের বিরোধ থাকলে ভালো মত পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা মত নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে কিন্তু এ দ্বন্দ্বের অবসান হতে হবে সঠিক পথে। সভ্যতার বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পারিবারিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আসাটাই স্বাভাবিক কিন্তু সেটা যদি হয় সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ভালো থাকার জন্য বাধা তাহলে এ বিবর্তনের ফলতো ভালো হওয়ার কথা নয়। একটি পরিবর্তন অন্য আরেকটি খারাপ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।

প্রত্যেকটি পরিবর্তনের সময় অবশ্যই আমরা এমন পরিবর্তন আশা করি যা থেকে সমাজ ব্যবস্থায় ব্যতিক্রম পরিবেশের সৃষ্টি না হয়। সুন্দর সমাজব্যবস্থা নির্মাণ করতে না পারলে আধুনিকতার যে ছোঁয়ার কথা আমরা বলছি তার ফল লাভ করা যাবে না। আর এ ফল লাভের ক্ষেত্রে অবশ্যই যে বিষয়গুলো সামনে আসছে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। বড় হতে হবে তবে সবকিছু বিসর্জন দিয়ে নয়। আর এ বড় হতে গিয়ে যেন আমরা আমাদের অস্তিত্ব ভুলে না যাই। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে সঠিক পথে চালানো সম্ভব নয়। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়ন না ঘটলে সামাজিক অস্থিরতাও বাড়বে। একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এই যে জড়িয়ে থাকার ধরন সেটা নিরূপণ করে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আর এই যে প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় শিক্ষার কথা বলা হয়েছে সেসব জায়গায় আত্মীক প্রয়োগ ঘটাতে হবে। অন্তরকে জাগ্রত করাতে পারে সেরকম পদক্ষেপ আমাদেরকেই নিতে হবে নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর চিন্তা না করে। আমার পরিবার থেকেই এর যাত্রা শুরু করা একান্ত প্রয়োজন। সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা তৈরি করা এখন সমাজের দাবি, কারণ বিনষ্ট সমাজব্যবস্থার কুফলের ভোগের বাইরে কেউ নয়।

[লেখক: প্রভাষক, আলীনগর কারিগরি ও বাণিজ্যিক কলেজ, ময়মনসিংহ]

back to top