ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
২০২৪ সাল শেষ হয়ে গেল। দেশের আঠারো কোটি মানুষ আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে নতুন ২০২৫ সালকে অভ্যর্থনা জানাতে। ২০২৪ সাল ছিল গণঅভ্যুত্থানের বছর। প্রতিবাদ ও দ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে সারা বাংলায়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান বিগত সরকারের গদিতে প্রচ- শক্তিতে আঘাত হানতে থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আমরা যে তিমিরে
সেই তিমিরেই আবদ্ধ হয়ে আছি। জুলাই মাস ছিল বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের মাস। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে দীর্ঘদিনের নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশের যেন অভ্যুদয় ঘটল। একে অনেকটা দ্বিতীয় স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আখ্যান হিসেবে আখ্যায়িত করলেও ভুল হবে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল এক এতিহাসিক আন্দোলন। এই আন্দোলনে শাসকের শোষণ, পীড়ন অবসান ঘটেছে বটেÑ কিন্তু দেশ-জাতি কি এখনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তমুক্ত হয়েছে। সাধারণ জনগণের স্বস্তি, শান্তি আসবে কি? মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারকে সুষ্ঠু পরিকল্পনায় সংস্কার ও বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে জাতি গঠনমূলক কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া, বিশেষ করে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া। এটি প্রমাণ করতে হবে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠা নয়, বরং নির্বাচনী সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতি, প্রশাসনিক অদক্ষতা এবং দুর্বল আইনের শাসনের শিকার। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়, যা জনগণের মধ্যে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার অভাব রয়েছে, এবং
এই পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, পুরো প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে
দুর্নীতির প্রতিফলন ঘটে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবেÑ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। দুর্নীতি রোধে
কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকারের ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে পায়।
অর্থনৈতিক সংকটও বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি যদি অস্থিতিশীল হয়, তবে বিদেশি বিনিয়োগও হ্রাস পেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতি আরও সংকটময় করে তুলবে। তবে, নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যুবসম্পদকে কাজে লাগানো, রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি, এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে সরকারকে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কৃষি খাতে আধুনিকীকরণের কাজও হতে হবে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সমন্বয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট এবং চীনসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে এবং দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর প্রতি আরো কার্যকরী এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা সুশিক্ষিত মানুষ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার মজবুত ভিত যদি এবারও বিনির্মাণ করতে না পারি, নিঃসন্দেহে আবারও জনদুর্ভোগ ও দেশ লুট অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে। কারণ সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য অনেক জীবনের বিনিময়ে আবার আশায় বুক বেঁধেছে।
বিগত আমলের অসৎ মানুষের অসৎ আয়ের প্রবৃদ্ধি আমাদের গরিব মানুষকে আরও গরিব করছে, বড়লোককে আরও বড়লোক করছে। এ থেকে সমাধানের পথও আমাদের জানা। ব্যাংক লুট বন্ধ করতে হবে, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ধনীদের ওপরে কর বাড়াতে হবে, কর ফাঁকি, শুল্ক ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। কী করতে হবে, তা মানুষ জানে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষকরাও পথ বাতলে দিতে পারবেন। কিন্তু আসল কথা, এই বেদনা আমরা বুঝতে পারি কিনা।
ঘটনাবহুল ২০২৪ এর তালিকায় ভালোমন্দ অনেক কিছুই আছে। জুলাই-২৪ হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিদুর্ঘটনা, মৃত্যুর ঘটনা ছিল মর্মস্পর্শী। ক্যাসিনো ব্যবসা, জঙ্গি তা-ব, জমি দখল, নদী দখল, খাদ্য গুদামজাতকরণ, ভেজাল খাদ্য ও ভেজাল ঔষধ বাজারজাত ও সরবরাহকরণ, মৌলিক অধিকারহরণ এ জাতীয় কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি না হলে আমরা বুঝতে পারব গণতন্ত্র, কল্যাণ রাষ্ট্রের রোল মডেল ২০৫০ আর হয়তো অসম্ভব কিছু নয়। নয়তো আমরা শুধু ‘কাজীর গরু কাগজে আছেÑ বাস্তবে নেই’ এই ধাঁধাঁর মধ্যে থেকে নিঃশেষ হওয়া ছাড়া আর অন্য কোন উপায়
থাকবে না। অধিকন্তু শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকব। পাশাপাশি কলুষিত পরিবেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে
পতিত হয়ে আমাদের উদীয়মান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্রমাবনতির দিকে নিয়ে যাবে।
কাজই এ বাস্তবতায় ২০২৫ সালকে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দারিদ্র বিমোচন,
কর্মসংস্থান, সুষ্ঠু অভিবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন, পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য সরবরাহ ও বসবাসের নিশ্চয়তাসহ সামাজিক সুরক্ষার প্রতি আমাদের যতœবান হতে হবে।
[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]
ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫
২০২৪ সাল শেষ হয়ে গেল। দেশের আঠারো কোটি মানুষ আগ্রহ ও উৎসাহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে নতুন ২০২৫ সালকে অভ্যর্থনা জানাতে। ২০২৪ সাল ছিল গণঅভ্যুত্থানের বছর। প্রতিবাদ ও দ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে সারা বাংলায়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থান বিগত সরকারের গদিতে প্রচ- শক্তিতে আঘাত হানতে থাকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আমরা ভৌগোলিক স্বাধীনতা পেলেও আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। আমরা যে তিমিরে
সেই তিমিরেই আবদ্ধ হয়ে আছি। জুলাই মাস ছিল বাঙালি জাতির এক ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের মাস। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফসল হিসেবে দীর্ঘদিনের নিপীড়ন ও দুর্নীতিমুক্ত এক নতুন বাংলাদেশের যেন অভ্যুদয় ঘটল। একে অনেকটা দ্বিতীয় স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আখ্যান হিসেবে আখ্যায়িত করলেও ভুল হবে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ছিল এক এতিহাসিক আন্দোলন। এই আন্দোলনে শাসকের শোষণ, পীড়ন অবসান ঘটেছে বটেÑ কিন্তু দেশ-জাতি কি এখনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তমুক্ত হয়েছে। সাধারণ জনগণের স্বস্তি, শান্তি আসবে কি? মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সরকারকে সুষ্ঠু পরিকল্পনায় সংস্কার ও বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে জাতি গঠনমূলক কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া, বিশেষ করে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেয়া। এটি প্রমাণ করতে হবে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুধু একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠা নয়, বরং নির্বাচনী সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই দুর্নীতি, প্রশাসনিক অদক্ষতা এবং দুর্বল আইনের শাসনের শিকার। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়, যা জনগণের মধ্যে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করে। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার অভাব রয়েছে, এবং
এই পরিস্থিতি শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নয়, পুরো প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে
দুর্নীতির প্রতিফলন ঘটে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য এটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবেÑ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। দুর্নীতি রোধে
কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, সরকারের ব্যয়ের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা ফিরে পায়।
অর্থনৈতিক সংকটও বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতির কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে।
নির্বাচনী পরিস্থিতি যদি অস্থিতিশীল হয়, তবে বিদেশি বিনিয়োগও হ্রাস পেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতি আরও সংকটময় করে তুলবে। তবে, নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যুবসম্পদকে কাজে লাগানো, রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি, এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার মাধ্যমে সরকারকে দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কৃষি খাতে আধুনিকীকরণের কাজও হতে হবে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সমন্বয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট এবং চীনসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই আন্তর্জাতিক সম্পর্কগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে এবং দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে, বাংলাদেশকে বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর প্রতি আরো কার্যকরী এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা সুশিক্ষিত মানুষ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার মজবুত ভিত যদি এবারও বিনির্মাণ করতে না পারি, নিঃসন্দেহে আবারও জনদুর্ভোগ ও দেশ লুট অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে। কারণ সাধারণ মানুষ দুর্বিষহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য অনেক জীবনের বিনিময়ে আবার আশায় বুক বেঁধেছে।
বিগত আমলের অসৎ মানুষের অসৎ আয়ের প্রবৃদ্ধি আমাদের গরিব মানুষকে আরও গরিব করছে, বড়লোককে আরও বড়লোক করছে। এ থেকে সমাধানের পথও আমাদের জানা। ব্যাংক লুট বন্ধ করতে হবে, বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ধনীদের ওপরে কর বাড়াতে হবে, কর ফাঁকি, শুল্ক ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। কী করতে হবে, তা মানুষ জানে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষকরাও পথ বাতলে দিতে পারবেন। কিন্তু আসল কথা, এই বেদনা আমরা বুঝতে পারি কিনা।
ঘটনাবহুল ২০২৪ এর তালিকায় ভালোমন্দ অনেক কিছুই আছে। জুলাই-২৪ হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিদুর্ঘটনা, মৃত্যুর ঘটনা ছিল মর্মস্পর্শী। ক্যাসিনো ব্যবসা, জঙ্গি তা-ব, জমি দখল, নদী দখল, খাদ্য গুদামজাতকরণ, ভেজাল খাদ্য ও ভেজাল ঔষধ বাজারজাত ও সরবরাহকরণ, মৌলিক অধিকারহরণ এ জাতীয় কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি না হলে আমরা বুঝতে পারব গণতন্ত্র, কল্যাণ রাষ্ট্রের রোল মডেল ২০৫০ আর হয়তো অসম্ভব কিছু নয়। নয়তো আমরা শুধু ‘কাজীর গরু কাগজে আছেÑ বাস্তবে নেই’ এই ধাঁধাঁর মধ্যে থেকে নিঃশেষ হওয়া ছাড়া আর অন্য কোন উপায়
থাকবে না। অধিকন্তু শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতেও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকব। পাশাপাশি কলুষিত পরিবেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে
পতিত হয়ে আমাদের উদীয়মান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্রমাবনতির দিকে নিয়ে যাবে।
কাজই এ বাস্তবতায় ২০২৫ সালকে উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দারিদ্র বিমোচন,
কর্মসংস্থান, সুষ্ঠু অভিবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের উন্নয়ন, পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য সরবরাহ ও বসবাসের নিশ্চয়তাসহ সামাজিক সুরক্ষার প্রতি আমাদের যতœবান হতে হবে।
[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]