alt

উপ-সম্পাদকীয়

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

মাহরুফ চৌধুরী

: বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫

শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। একটি দেশের উন্নতির প্রধান শর্ত হলো সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান উন্নয়ন। তবে বাংলাদেশে প্রচলিত এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে একটি নির্ধারিত পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হয়, সৃজনশীলতার বিকাশে তা অনেকাংশে বাধার সৃষ্টি করে। এর বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি কার্যকর মডেল হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নানা সমস্যা তৈরি করার পেছনে যেমন দায়ী, তেমনি সেগুলোকে জীয়ে রাখার নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত ও নির্দেশিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও জ্ঞান বিকাশের জন্য তেমন সহায়ক নয়। শিক্ষার একমুখী পদ্ধতি, পরীক্ষার চাপ, এবং মুখস্থভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিভার বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই সৃজনশীলতার উন্নয়ন, জ্ঞানের বিকাশ এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটাতে চাই একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। এই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে উদ্ভূত নানা সমস্যার কার্যকর সমাধানের পথ, যেখানে শিক্ষার লক্ষ্য, বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন, আগ্রহ এবং সামর্থ্যরে ওপর ভিত্তি করে সমাজ ও জাতির চাহিদা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা সংস্কারের আয়োজনে কীভাবে নানা পরিকল্পনা ও সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখা জরুরি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমাদের দেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তার একটি রূপরেখা তুলে ধরা দরকার। প্রথমেই প্রশ্ন এসে যায়, বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বলতে আমরা কী বুঝি? বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা হলো এমন একটি শিক্ষা কাঠামো যেখানে শিক্ষাদানের পদ্ধতি, বিষয়বস্তু এবং কার্যক্রম স্থানীয় চাহিদা, শিক্ষকের সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত শিক্ষাক্রমের কঠোর নিয়মনীতির পরিবর্তে পাঠ্যবিষয় ও পাঠ্যসূচিতে নমনীয়তা থাকে। তার মানে আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিক্ষাক্রমের একটা মৌলিক কাঠামো প্রদান করবে, আর সেটাকে স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখান শিক্ষকরা সিদ্ধান্তু গ্রহণের পূর্ণস্বাধীনতা ভোগ করবেন সে শিক্ষাক্রমটা কীভাবে তারা বাস্তবায়ন করবেন। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় ও বিষয়বস্তু বেছে নেয়ার সুযোগ থাকবে, শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে, এবং শিক্ষার্থীরা স্থানীয় সমস্যার সমাধানে নিজস্ব জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করবে। শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীর সক্ষমতা, শেখার গতি ও ধরন অনুযায়ী শিক্ষাদান করবেন।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও সার্বিক কল্যাণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে জাতীয় পর্যায়ে নানা আলাপ-আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দুরাবস্থা ও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কথা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এসব বিদ্যমান দুরাবস্থা ও সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাপদ্ধতি হতে পারে বিশেষভাবে সহায়ক। যেমনÑ মুখস্থনির্ভর পরীক্ষাপদ্ধতি, এককেন্ত্রিক নির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব। এ ধরনের পাঠ্যসূচিভিত্তিক পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার সুযোগ পায় না। শহর এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও আগ্রহকে বিবেচনায় না নিয়েই সবার জন্য একই পাঠ্যক্রম প্রয়োগ করা হয়, যা তাদের ব্যক্তিগত, স্থানীয় ও আঞ্চলিক চাহিদা পূরণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রতুল। ফলে জীবনমুখী শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে শিক্ষার্থীরা বাস্তবজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে সৃজনশীল প্রকল্প, হাতে-কলমে কাজ এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষা। এভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে নতুন চিন্তার উদ্ভাবনে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট উত্তর মুখস্থ করার পরিবর্তে সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন উপায় নিয়ে চিন্তা করতে পারে। এতে তাদের সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটে।

তাছাড়া একুশ শতকের অন্যতম শিখন দক্ষতা হলো দ্রুততার সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সক্ষমতা। সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা সেই স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করবে। শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের শিক্ষা পরিকল্পনা নিজেরা করতে পারে, তখন তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের স্বাধীনতা তাদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। ফলে তাদের মাঝে প্রাকৃতিক প্রতিভার বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রতিভা এবং আগ্রহে কিছু বিষয় থাকে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে সেই সব প্রতিভা চর্চা ও বিকাশের সুযোগ পায়। ফলে এ ব্যবস্থায় বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থাকবে। কেন্দ্রীয় পাঠ্যক্রমের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। এমন ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বহুমুখী দক্ষতা ও বৈচিত্র্যের ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে।

একই সঙ্গে এই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা জ্ঞান বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এটি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য এক উৎকৃষ্ট পরিবেশ সৃষ্টি করবে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করতে এবং তাদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটাতে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা অতি সহজেই প্রায়োগিক ও গবেষণামূলক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারবে, যা তাদের জ্ঞানার্জনের পরিধি বহুগুণে সম্প্রসারিত করবে। বাস্তব জীবনের সঙ্গে শিক্ষার সরাসরি সংযোগ ঘটিয়ে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা জীবনমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বইয়ের তত্ত্বগত জ্ঞানের বাইরে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের জড়িত করার মাধ্যমে তাদের বাস্তবমুখী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পথ সুগম হবে। স্থানীয় ঐতিহাসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক

জ্ঞান অর্জনের সুযোগ প্রদান করে এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের শিকড় ও পরিচিতি সম্পর্কে গভীর সচেতনতা তৈরি করবে। বৈচিত্র্যময় শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে, যা তাদের মধ্যে বৈচিত্র্য অঙ্গীকার ও সহাবস্থানের মনোবৃত্তি গড়ে তুলবে। পাশাপাশি, এই ব্যবস্থায় স্থানীয় জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত

করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু দক্ষ পেশাজীবীই হবে না, বরং তারা দায়িত্বশীল ও উদার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। শিক্ষাকে জীবনমুখী ও যুগোপযোগী করতে শিক্ষাসংস্কারের বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশে অপার সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটি জাতীয় উন্নয়নের জন্য সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জাতীয় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি স্থানীয় চাহিদা পূরণে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামীণ উন্নয়নের পথে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী মানসিকতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের বাস্তবজীবনের সমস্যাগুলো সমাধানে দক্ষ করে তুলতে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এতে বাংলাদেশ দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।

স্থানীয় চাহিদা ও সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় তৈরি হলে তা গ্রামীণ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া এই ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় জ্ঞান ও সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যা পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করবে। গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হলে বেকারত্ব হ্রাস পাবে এবং দেশের

অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দীর্ঘমেয়াদে, এটি জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য একটি মজবুত ভিত গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সৃজনশীল ও দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দেশের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নে গভীর প্রভাব ফেলবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারে, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার নিজস্ব সম্ভাবনা, আগ্রহ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার সুযোগ পাবে। তবে, এই এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তরের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমন্বিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং সমর্থন ছাড়া এই ব্যবস্থার কার্যকারিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। স্থানীয় চাহিদা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং বৈশ্বিক মানদ-ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন ভবিষ্যতের জন্য একটি সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি করবে। যখন প্রতিটি শিক্ষার্থী তার প্রতিভা ও আগ্রহ অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে, তখনই প্রকৃত অর্থে জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে শিক্ষার প্রতিটি ধাপ জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকবে। সৃজনশীল, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল নাগরিক ও শাসক তৈরিতে এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যা আমাদের ভবিষ্যতকে আলোকিত করবে আর ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’কে সুপ্রতিষ্ঠিত করে আমাদের উপহার দেবে ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ সমৃদ্ধ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সেই কাক্সিক্ষত স্বপ্নের বাংলাদেশ।

[লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য]

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

মাহরুফ চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫

শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। একটি দেশের উন্নতির প্রধান শর্ত হলো সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান উন্নয়ন। তবে বাংলাদেশে প্রচলিত এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে একটি নির্ধারিত পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেয়া হয়, সৃজনশীলতার বিকাশে তা অনেকাংশে বাধার সৃষ্টি করে। এর বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি কার্যকর মডেল হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং সৃজনশীলতার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নানা সমস্যা তৈরি করার পেছনে যেমন দায়ী, তেমনি সেগুলোকে জীয়ে রাখার নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। এই কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত ও নির্দেশিত শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও জ্ঞান বিকাশের জন্য তেমন সহায়ক নয়। শিক্ষার একমুখী পদ্ধতি, পরীক্ষার চাপ, এবং মুখস্থভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিভার বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তাই সৃজনশীলতার উন্নয়ন, জ্ঞানের বিকাশ এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটাতে চাই একটি বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা। এই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে উদ্ভূত নানা সমস্যার কার্যকর সমাধানের পথ, যেখানে শিক্ষার লক্ষ্য, বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন, আগ্রহ এবং সামর্থ্যরে ওপর ভিত্তি করে সমাজ ও জাতির চাহিদা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষা সংস্কারের আয়োজনে কীভাবে নানা পরিকল্পনা ও সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখা জরুরি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমাদের দেশে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে তার একটি রূপরেখা তুলে ধরা দরকার। প্রথমেই প্রশ্ন এসে যায়, বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা বলতে আমরা কী বুঝি? বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা হলো এমন একটি শিক্ষা কাঠামো যেখানে শিক্ষাদানের পদ্ধতি, বিষয়বস্তু এবং কার্যক্রম স্থানীয় চাহিদা, শিক্ষকের সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। এতে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত শিক্ষাক্রমের কঠোর নিয়মনীতির পরিবর্তে পাঠ্যবিষয় ও পাঠ্যসূচিতে নমনীয়তা থাকে। তার মানে আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিক্ষাক্রমের একটা মৌলিক কাঠামো প্রদান করবে, আর সেটাকে স্বাধীনভাবে বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেখান শিক্ষকরা সিদ্ধান্তু গ্রহণের পূর্ণস্বাধীনতা ভোগ করবেন সে শিক্ষাক্রমটা কীভাবে তারা বাস্তবায়ন করবেন। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় ও বিষয়বস্তু বেছে নেয়ার সুযোগ থাকবে, শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করবে, এবং শিক্ষার্থীরা স্থানীয় সমস্যার সমাধানে নিজস্ব জ্ঞান ও দক্ষতা ব্যবহার করবে। শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীর সক্ষমতা, শেখার গতি ও ধরন অনুযায়ী শিক্ষাদান করবেন।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় অগ্রগতি, সমৃদ্ধি ও সার্বিক কল্যাণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে জাতীয় পর্যায়ে নানা আলাপ-আলোচনায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় দুরাবস্থা ও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কথা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এসব বিদ্যমান দুরাবস্থা ও সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাপদ্ধতি হতে পারে বিশেষভাবে সহায়ক। যেমনÑ মুখস্থনির্ভর পরীক্ষাপদ্ধতি, এককেন্ত্রিক নির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম এবং জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব। এ ধরনের পাঠ্যসূচিভিত্তিক পরীক্ষাকেন্দ্রিক শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনার সুযোগ পায় না। শহর এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও আগ্রহকে বিবেচনায় না নিয়েই সবার জন্য একই পাঠ্যক্রম প্রয়োগ করা হয়, যা তাদের ব্যক্তিগত, স্থানীয় ও আঞ্চলিক চাহিদা পূরণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপ্রতুল। ফলে জীবনমুখী শিক্ষা ও দক্ষতার অভাবে শিক্ষার্থীরা বাস্তবজীবনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রমে জোর দিতে হবে সৃজনশীল প্রকল্প, হাতে-কলমে কাজ এবং গবেষণাধর্মী শিক্ষা। এভাবে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশে ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে নতুন চিন্তার উদ্ভাবনে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট উত্তর মুখস্থ করার পরিবর্তে সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন উপায় নিয়ে চিন্তা করতে পারে। এতে তাদের সৃজনশীল চিন্তার বিকাশ ঘটে।

তাছাড়া একুশ শতকের অন্যতম শিখন দক্ষতা হলো দ্রুততার সঙ্গে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সক্ষমতা। সৃজনশীল শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা সেই স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন করবে। শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের শিক্ষা পরিকল্পনা নিজেরা করতে পারে, তখন তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের স্বাধীনতা তাদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। ফলে তাদের মাঝে প্রাকৃতিক প্রতিভার বিকাশের সুযোগ তৈরি হবে।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব প্রতিভা এবং আগ্রহে কিছু বিষয় থাকে। বিকেন্দ্রিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহের ভিত্তিতে সেই সব প্রতিভা চর্চা ও বিকাশের সুযোগ পায়। ফলে এ ব্যবস্থায় বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থাকবে। কেন্দ্রীয় পাঠ্যক্রমের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। এমন ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বহুমুখী দক্ষতা ও বৈচিত্র্যের ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠে।

একই সঙ্গে এই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা জ্ঞান বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে এটি গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য এক উৎকৃষ্ট পরিবেশ সৃষ্টি করবে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করতে এবং তাদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটাতে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা অতি সহজেই প্রায়োগিক ও গবেষণামূলক প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে পারবে, যা তাদের জ্ঞানার্জনের পরিধি বহুগুণে সম্প্রসারিত করবে। বাস্তব জীবনের সঙ্গে শিক্ষার সরাসরি সংযোগ ঘটিয়ে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা জীবনমুখী ও যুগোপযোগী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বইয়ের তত্ত্বগত জ্ঞানের বাইরে বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের জড়িত করার মাধ্যমে তাদের বাস্তবমুখী জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পথ সুগম হবে। স্থানীয় ঐতিহাসিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক

জ্ঞান অর্জনের সুযোগ প্রদান করে এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজেদের শিকড় ও পরিচিতি সম্পর্কে গভীর সচেতনতা তৈরি করবে। বৈচিত্র্যময় শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা এবং সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে, যা তাদের মধ্যে বৈচিত্র্য অঙ্গীকার ও সহাবস্থানের মনোবৃত্তি গড়ে তুলবে। পাশাপাশি, এই ব্যবস্থায় স্থানীয় জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত

করার সুযোগ তৈরি হবে। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু দক্ষ পেশাজীবীই হবে না, বরং তারা দায়িত্বশীল ও উদার দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে। শিক্ষাকে জীবনমুখী ও যুগোপযোগী করতে শিক্ষাসংস্কারের বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশে অপার সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এটি জাতীয় উন্নয়নের জন্য সৃজনশীল প্রজন্ম গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। জাতীয় দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটি স্থানীয় চাহিদা পূরণে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামীণ উন্নয়নের পথে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী মানসিকতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব হবে। শিক্ষার্থীদের বাস্তবজীবনের সমস্যাগুলো সমাধানে দক্ষ করে তুলতে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এতে বাংলাদেশ দক্ষ জনশক্তির ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে।

স্থানীয় চাহিদা ও সংস্কৃতির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় তৈরি হলে তা গ্রামীণ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া এই ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় জ্ঞান ও সম্পদের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত হবে, যা পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি তৈরি করবে। গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্যোক্তা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হলে বেকারত্ব হ্রাস পাবে এবং দেশের

অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দীর্ঘমেয়াদে, এটি জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য একটি মজবুত ভিত গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সৃজনশীল ও দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দেশের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নে গভীর প্রভাব ফেলবে। বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা এমন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারে, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থী তার নিজস্ব সম্ভাবনা, আগ্রহ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষার সুযোগ পাবে। তবে, এই এককেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তরের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ, অভিভাবক, এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের সমন্বিত ও আন্তরিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং সমর্থন ছাড়া এই ব্যবস্থার কার্যকারিতাও নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। স্থানীয় চাহিদা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং বৈশ্বিক মানদ-ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সফল বাস্তবায়ন ভবিষ্যতের জন্য একটি সুদৃঢ় ভিত্তি তৈরি করবে। যখন প্রতিটি শিক্ষার্থী তার প্রতিভা ও আগ্রহ অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে, তখনই প্রকৃত অর্থে জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সম্ভব হবে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে শিক্ষার প্রতিটি ধাপ জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকবে। সৃজনশীল, দক্ষ এবং দায়িত্বশীল নাগরিক ও শাসক তৈরিতে এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যা আমাদের ভবিষ্যতকে আলোকিত করবে আর ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’কে সুপ্রতিষ্ঠিত করে আমাদের উপহার দেবে ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ সমৃদ্ধ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-উত্তর সেই কাক্সিক্ষত স্বপ্নের বাংলাদেশ।

[লেখক : ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য]

back to top