alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

জাঁ-নেসার ওসমান

: বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫
image

শওকত ওসমান

‘এ-দেশে মানুষ হওয়ার আগে/ হিন্দু বা মুসলমান হওয়া লাগে।’

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৮তম জন্মদিনে তার লেখা শেখের সম্বরার একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি।

কারণ আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র কথাশিল্পী শওকত ওসমান, উনি জানতেন যে আমাদের দেশে নবজাতকের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিয়া, কাদিয়ানী, সাঁওতাল, ভীল, নৃগোষ্ঠী কোনো না কোনো ধর্মাবলম্বীর বা গোষ্ঠীতে জন্ম হয়। তাই ওই আদম সন্তান প্রথমে হিন্দু-মুসলমান বা কোনো না কোনো ধর্মের সেবক রূপে বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ আমরা সবাই কোনো না কোনো ধর্মের পরিচিতি নিয়ে ছোটোবেলা থেকেই বেড়ে উঠি। স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকেই শুরু হয় আমাদের বিশেষ কোনো ধর্মের অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধি নিয়ে পরিণত বয়সের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যেহতেু খুব ছোটো বয়স থেকেই ধর্মের প্রজ্ঞা আমাদের পেয়ে বসে তাই অনেক সময় আমরা গর্ব ভরে বলি প্রথমে আমি মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, ভীল, বৌদ্ধ, কাদিয়ানী তারপরে আমি মানুষ।

তাহলে দেখা যাচ্ছে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের শেখের সম্বরার মতো ‘এ-দেশে মানুষ হওয়ার আগে/ হিন্দু বা মুসলমান হওয়া লাগে।’ এ কথা বাস্তবে শত-শতভাগ সত্য।

ইসমলাম ধর্মে মানুষকে আশারাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়েছে; কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, ভারতের দুই নাম্বার মিডিয়ার দাসগোত্রের সন্তান ময়ুখ রঞ্জন দাস সত্য-মিথ্যা, নতুন-পুরাতন, বিভিন্ন ঘটনা ও ভিডিও নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরানোয় স্বচেষ্ট। আবার কিছু কিছু দুই নাম্বারিরা ইউরোপ থেকে বাংলাদেশের দায়ের কোপ থেকে বহুদূরে বসবাস করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে রাজনৈতিক রং-তামাশা, ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করছে।

যেহেতু ওই সব নপুংশক, ভীরু, কাপুরুষদের বাংলাদেশের মাটিতে এসে কিছু বলার সাহস নেই তাই ওরা বিদেশ বিভুঁইয়ে বসে বড় বড়, লম্বা লম্বা বুলি আওড়াচ্ছে। এক ব্যাটাতো বিদেশে বসে বাংলাদেশের সরকারের মা-বোন তুলে সত্য-মিথ্যা তথ্যসম্বলিত ইউটিউব কন্টেন্ট আপলোড করেছে, ব্যাস অমনি ঢাকায় বসবাসরত ওর বোনকে সাদাপোশাকে তথাকথিত সরকারি বেতনভুক কর্মচারীরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেলো। অমনি স্যারের দপদপানি কমে এলো। ফলে কী দাঁড়াচ্ছেÑ বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ধর্মের বোধকে জাগ্রত করতে গিয়ে ধর্মের অহিংসা বাণীর কথা ভুলে, ধর্মের শান্তির কথা ভুলে, ধর্মের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা ভুলে, নিজেদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হচ্ছি। তাহলে আশরাফুল-মাখলুকাতের এ কোন রূপ।

আমরা ধর্মের অহিংসাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হিংসাকেই ডেকে আনছি। আরো অবাক কা- একই ধর্মের অনুসারীদের মাঝে, সাদপন্থি-জুবায়েরপন্থি বলে মারামারি করে রাত ৩টায় চারজন মানুষের জান আজরাইল কবজ করলেন। তাহলে আমরা যে গর্বভরে বলি প্রথমে আমি মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, ভীল, বৌদ্ধ, কাদিয়ানী তারপরে আমি মানুষ। এই কী মনুষত্ব!

কিন্তু বর্তমানে ৫ আগস্টের আন্দোলনের পর বর্তমান ইসলাম ধর্মের মহান চিন্তাবিদরা ইসলামের মূল স্তম্ভ ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সেটা তারা পদে পদে মানুষের সামনে প্রমাণ করে চলেছেন। কারণ অতীতে দেখা গেছে, দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন এরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ হয়েছে এবং এদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে; কিন্তু বর্তমানে ড. ইউনূস যখন সত্যিকারের মুসলিম হওয়ার জন্য মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিশ্ব-মঞ্চে, রসাত্মক ব্যাঙ্গোক্তি করেন, তখন কিন্তু আমাদের বর্তমান ইসলামিক চিন্তকরা ড. ইউনূসকে কোনো প্রকার বিড়ম্বনায় ফেলেননি। এখানেই নিহিত রয়েছে বর্তমান প্রকৃত মুসলিম চিন্তাবিদদের ধীশক্তি ও মহানুভবতা প্রকাশের বৈশিষ্ট্য।

এমনিতেই সমাজে প্রচুর বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে এর মাঝে যদি আবার ড. ইউনূস স্যারকে নিয়ে মাতামাতি করেন তাহলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে, তাতে বাংলাদেশের প্রায় আটানব্বই শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসতে পারে। তাই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করা বাংলার কৃতীসন্তান ড. ইউনূসের কারণে দেশে অশান্তি আনা ঠিক হবে না বিবেচনায় আপাতত আমরা বাংলার তাবৎ ধর্মভীরু মুসলমানরা বিষয়টি নিশ্চুপ অবলোকন করছি। আমরা মুসলমানরা কিছুতেই শান্তির ধর্ম ইসলামকে কোনো সুযোগে ভারতের দুই নাম্বার মিডিয়ার দাসগোত্রের সন্তান ময়ুখ রঞ্জন দাসেরা যাতে ঘোট পাকাবার কোনো প্রকার সুযোগ না পায়, তাই আমাদের এই মহান মৌনব্রত।

যুগে যুগে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে ধর্ম সবসময় মানুষের মঙ্গলের জন্যই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে। মানুষের ধ্বংসের জন্য নয়।

পরিশেষে বলবো কথাশিল্পী শওকত ওসমান ঠিকই বলেছেনÑ যদি আমরা বর্তমান বাংলাদেশের ইসলামিক নেতাদের মতো ধর্মের অনুশাসন সঠিকরূপে পালন করি তাহলে এ দেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিয়া, কাদিয়ানী, সাঁওতাল, ভীল, নৃগোষ্ঠী কোনো না কোনো ধর্মাবলম্বীর বা গোষ্ঠীতে জন্ম হলেই চলবে।

সমাজে তাহলে ধর্মে-ধর্মে হানাহানি, মারামারি, গৃহদাহ, খুন-জখম, রাহাজানি কোনো কিছুই বিরাজ করবে না। কারণ যদি আমরা বর্তমান বাংলাদেশের ইসলামিক মনীষীদের মতো ধর্মের অনুশাসন সঠিকরূপে পালন করি তাহলে দেখা যাবে, সুইজারল্যান্ডের মতো একদিন আমাদের দেশেও কোনো চোর বা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি পাওয়া যাবে না, সব জেলখানা ধীরে ধীরে কয়েদির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

আমরা বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৮তম জন্মদিনে (জন্ম : ২ জানুয়ারি ১৯১৭। মৃত্যু : ১৪ মে ১৯৯৮) এই কামনাই করি যেন একদিন ঋণখেলাপি, খুনি, চোর, ডাকাত, ভূমিদস্যু, তিন বছরের শিশু ধর্ষণকারী সব ধর্মের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশের সব থানা, জেলখানা, আয়নাঘর, ফাঁকা-বিরান-শ্মশানে পরিণত করেছেন।

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

জাঁ-নেসার ওসমান

image

শওকত ওসমান

বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫

‘এ-দেশে মানুষ হওয়ার আগে/ হিন্দু বা মুসলমান হওয়া লাগে।’

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৮তম জন্মদিনে তার লেখা শেখের সম্বরার একটি উক্তি দিয়ে শুরু করছি।

কারণ আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র কথাশিল্পী শওকত ওসমান, উনি জানতেন যে আমাদের দেশে নবজাতকের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিয়া, কাদিয়ানী, সাঁওতাল, ভীল, নৃগোষ্ঠী কোনো না কোনো ধর্মাবলম্বীর বা গোষ্ঠীতে জন্ম হয়। তাই ওই আদম সন্তান প্রথমে হিন্দু-মুসলমান বা কোনো না কোনো ধর্মের সেবক রূপে বেড়ে ওঠে। অর্থাৎ আমরা সবাই কোনো না কোনো ধর্মের পরিচিতি নিয়ে ছোটোবেলা থেকেই বেড়ে উঠি। স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকেই শুরু হয় আমাদের বিশেষ কোনো ধর্মের অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধি নিয়ে পরিণত বয়সের দিকে এগিয়ে যাওয়া। যেহতেু খুব ছোটো বয়স থেকেই ধর্মের প্রজ্ঞা আমাদের পেয়ে বসে তাই অনেক সময় আমরা গর্ব ভরে বলি প্রথমে আমি মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, ভীল, বৌদ্ধ, কাদিয়ানী তারপরে আমি মানুষ।

তাহলে দেখা যাচ্ছে কথাশিল্পী শওকত ওসমানের শেখের সম্বরার মতো ‘এ-দেশে মানুষ হওয়ার আগে/ হিন্দু বা মুসলমান হওয়া লাগে।’ এ কথা বাস্তবে শত-শতভাগ সত্য।

ইসমলাম ধর্মে মানুষকে আশারাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয়েছে; কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগিতা এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, ভারতের দুই নাম্বার মিডিয়ার দাসগোত্রের সন্তান ময়ুখ রঞ্জন দাস সত্য-মিথ্যা, নতুন-পুরাতন, বিভিন্ন ঘটনা ও ভিডিও নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল ধরানোয় স্বচেষ্ট। আবার কিছু কিছু দুই নাম্বারিরা ইউরোপ থেকে বাংলাদেশের দায়ের কোপ থেকে বহুদূরে বসবাস করে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে রাজনৈতিক রং-তামাশা, ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করছে।

যেহেতু ওই সব নপুংশক, ভীরু, কাপুরুষদের বাংলাদেশের মাটিতে এসে কিছু বলার সাহস নেই তাই ওরা বিদেশ বিভুঁইয়ে বসে বড় বড়, লম্বা লম্বা বুলি আওড়াচ্ছে। এক ব্যাটাতো বিদেশে বসে বাংলাদেশের সরকারের মা-বোন তুলে সত্য-মিথ্যা তথ্যসম্বলিত ইউটিউব কন্টেন্ট আপলোড করেছে, ব্যাস অমনি ঢাকায় বসবাসরত ওর বোনকে সাদাপোশাকে তথাকথিত সরকারি বেতনভুক কর্মচারীরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেলো। অমনি স্যারের দপদপানি কমে এলো। ফলে কী দাঁড়াচ্ছেÑ বর্তমানে আমরা বিভিন্ন ধর্মের বোধকে জাগ্রত করতে গিয়ে ধর্মের অহিংসা বাণীর কথা ভুলে, ধর্মের শান্তির কথা ভুলে, ধর্মের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা ভুলে, নিজেদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হচ্ছি। তাহলে আশরাফুল-মাখলুকাতের এ কোন রূপ।

আমরা ধর্মের অহিংসাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে হিংসাকেই ডেকে আনছি। আরো অবাক কা- একই ধর্মের অনুসারীদের মাঝে, সাদপন্থি-জুবায়েরপন্থি বলে মারামারি করে রাত ৩টায় চারজন মানুষের জান আজরাইল কবজ করলেন। তাহলে আমরা যে গর্বভরে বলি প্রথমে আমি মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, ভীল, বৌদ্ধ, কাদিয়ানী তারপরে আমি মানুষ। এই কী মনুষত্ব!

কিন্তু বর্তমানে ৫ আগস্টের আন্দোলনের পর বর্তমান ইসলাম ধর্মের মহান চিন্তাবিদরা ইসলামের মূল স্তম্ভ ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সেটা তারা পদে পদে মানুষের সামনে প্রমাণ করে চলেছেন। কারণ অতীতে দেখা গেছে, দাউদ হায়দার, তসলিমা নাসরিন এরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করায় সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ হয়েছে এবং এদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে; কিন্তু বর্তমানে ড. ইউনূস যখন সত্যিকারের মুসলিম হওয়ার জন্য মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিশ্ব-মঞ্চে, রসাত্মক ব্যাঙ্গোক্তি করেন, তখন কিন্তু আমাদের বর্তমান ইসলামিক চিন্তকরা ড. ইউনূসকে কোনো প্রকার বিড়ম্বনায় ফেলেননি। এখানেই নিহিত রয়েছে বর্তমান প্রকৃত মুসলিম চিন্তাবিদদের ধীশক্তি ও মহানুভবতা প্রকাশের বৈশিষ্ট্য।

এমনিতেই সমাজে প্রচুর বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে এর মাঝে যদি আবার ড. ইউনূস স্যারকে নিয়ে মাতামাতি করেন তাহলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে, তাতে বাংলাদেশের প্রায় আটানব্বই শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসতে পারে। তাই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করা বাংলার কৃতীসন্তান ড. ইউনূসের কারণে দেশে অশান্তি আনা ঠিক হবে না বিবেচনায় আপাতত আমরা বাংলার তাবৎ ধর্মভীরু মুসলমানরা বিষয়টি নিশ্চুপ অবলোকন করছি। আমরা মুসলমানরা কিছুতেই শান্তির ধর্ম ইসলামকে কোনো সুযোগে ভারতের দুই নাম্বার মিডিয়ার দাসগোত্রের সন্তান ময়ুখ রঞ্জন দাসেরা যাতে ঘোট পাকাবার কোনো প্রকার সুযোগ না পায়, তাই আমাদের এই মহান মৌনব্রত।

যুগে যুগে শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে ধর্ম সবসময় মানুষের মঙ্গলের জন্যই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছে। মানুষের ধ্বংসের জন্য নয়।

পরিশেষে বলবো কথাশিল্পী শওকত ওসমান ঠিকই বলেছেনÑ যদি আমরা বর্তমান বাংলাদেশের ইসলামিক নেতাদের মতো ধর্মের অনুশাসন সঠিকরূপে পালন করি তাহলে এ দেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিয়া, কাদিয়ানী, সাঁওতাল, ভীল, নৃগোষ্ঠী কোনো না কোনো ধর্মাবলম্বীর বা গোষ্ঠীতে জন্ম হলেই চলবে।

সমাজে তাহলে ধর্মে-ধর্মে হানাহানি, মারামারি, গৃহদাহ, খুন-জখম, রাহাজানি কোনো কিছুই বিরাজ করবে না। কারণ যদি আমরা বর্তমান বাংলাদেশের ইসলামিক মনীষীদের মতো ধর্মের অনুশাসন সঠিকরূপে পালন করি তাহলে দেখা যাবে, সুইজারল্যান্ডের মতো একদিন আমাদের দেশেও কোনো চোর বা সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি পাওয়া যাবে না, সব জেলখানা ধীরে ধীরে কয়েদির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

আমরা বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ১০৮তম জন্মদিনে (জন্ম : ২ জানুয়ারি ১৯১৭। মৃত্যু : ১৪ মে ১৯৯৮) এই কামনাই করি যেন একদিন ঋণখেলাপি, খুনি, চোর, ডাকাত, ভূমিদস্যু, তিন বছরের শিশু ধর্ষণকারী সব ধর্মের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশের সব থানা, জেলখানা, আয়নাঘর, ফাঁকা-বিরান-শ্মশানে পরিণত করেছেন।

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

back to top