কামরুজ্জামান
বাংলাদেশের জন্য ঘটনাবহুল ২০২৪ বিদায় নিল। এলো নতুন বছর ২০২৫। স্বাগত ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। নতুন বছরে স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা আমাদের অনেক। কতটুকু পূরণ হবে সময়ই হয়তো বলবে। তারপরও আমরা আশায় বুক বাঁধতেই পারি।
স্বাধীনতার আজ ৫৪তম বছরে বাংলাদেশ। দীর্ঘ এই পদযাত্রায় অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। আমরা দেশ পরিচালনায় সরকার ও শাসকগোষ্ঠী পেলেও কাক্সিক্ষত স্বপ্ন আমাদের পূরণ হয়নি। সাধারণ মানুষ দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রকৃত সুফল এখনো পায়নি। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমরা সবাই এসব জানি। এর মধ্যে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ।
সময় চলে যায় সময়ের হাত ধরে। থেকে যায় মানুষের আদর্শ ও কর্ম। মানুষের কর্ম ও আদর্শ প্রভাব ফেলে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর। একটি রাষ্ট্রের মৌলিক ও আর্থিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন আদর্শিক ও পারিশ্রমিক মানুষ। প্রয়োজন চৌকস ও নীতিবান নেতৃত্ব। আমাদের হয়তো নেতা ভালো ছিল আমরা মানুষ ভালো হতে পারিনি অথবা আমরা মানুষ ভালো কিন্তু চৌকস ও নীতিবান নেতৃত্ব পাইনি। অথবা জাতি হিসাবে আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ। না হলে স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও আমরা কাক্সিক্ষত স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারিনি।
তবেও এটাও সত্যি আমাদের দেশে শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকেই যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছে। এর প্রমাণ হচ্ছে-ব্যাপক দুর্নীতি। তারপরও বাংলাদেশের মানুষের সন্তুষ্টির জায়গা হচ্ছে-অল্পতেই তুষ্ট হওয়া। দুঃখকে দ্রুত ভুলে যাওয়া।
আমাদের দেশের সমস্যা অনেক। তাই সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এবং প্রত্যাশাও অনেক। নতুন বছর ২০২৫ কে ঘিরে মানুষের স্বপ্ন দেখাও নতুন ভাবে শুরু হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে নতুন একটি সরকার এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। জনগণের চাওয়াগুলো খুব বেশি নয়। দেশে মৌলিক পরিবর্তন ও সংস্কার দেখতে চায় জনগণ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা- সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার হলে অনেক সমস্যারই সমাধান সহজে হওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশে বহুবিধ সমস্যার মধ্যে একটি হলো-ঘুষ ও দুর্নীতি। দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে ঘুষ ও দুর্নীতি হয় না। দেশকে ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য সরকারের অগ্রাধিকার সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন। এই সরকারের সময়ে নতুন বছরে দেশে ঘুষ ও দুর্নীতি কমে আসবে এটা জনগণ প্রত্যাশা করে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ও টেকসই শিক্ষা কারিকুলাম প্রয়োজন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা ২০২৫ সালেই নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সরকার কাজ শুরু করবে। এবং একটি সময়োপযোগী ও বাস্তব জ্ঞান সমৃদ্ধ অপরিবর্তনীয় শিক্ষা কারিকুলাম দেশের জন্য উপহার দেবে।
২০২৫ সাল হোক বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র। সব ধরনের ভেদাভেদ দূর হোক। দেশের মানুষের জন্য গড়ে উঠুক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব।
সরকার এমন কিছু কাজ করুক যার ফলে সারা বছর দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবন ও কর্মের ওপর মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন এবং বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ রাখা উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা খরা জলোচ্ছ্বাস এমনকি ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ ঘটে গেলে মোকাবিলায় যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য আলাদা তহবিল সংরক্ষণ প্রয়োজন।
দেশে বেকার লোকের সংখ্যা অগণিত। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাটা অনেক বেশি। তাদের কর্মের সংস্থান করা অতিব জরুরী। বেকারত্ব দূর হলে দেশ স্বনির্ভর হবে দ্রুত। আশা করি সরকার নতুন বছরে কর্মের সংস্থান তৈরি করবে, বেকারত্ব দূর করার জন্য কাজ করবে।
বাংলাদেশ শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো কাক্সিক্ষত জায়গায় যেতে পারেনি। শিল্পের পাশাপাশি কৃষির উপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। কারণ বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আশা করি সরকার নতুন বছরে কৃষি ও কৃষকের জীবন মানের উপর গুরুত্ব আরোপ করবে।
দেশের প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভালো নেই। দখল আর দূষণে নিমজ্জিত। ভালো নেই নদী, খাল-বিল, ঝিল। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নদী-খাল দখল ও দূষণমুক্ত করার শপথ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুন বছরে সরকার এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এটা জনগণ প্রত্যাশা করে। মনে রাখতে হবে- নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ। মাছে ভাতে বাঙালি বাংলাদেশের মানুষ আজ ভুলতে বসেছে। নদী-খাল দখল ও দূষণের প্রভাব পড়ছে দেশীয় মাছের ওপর।
এই বছরটি ২০২৫ সাল। একটি দেশের ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশে প্রকৃত পক্ষে বনভূমি আছে শতকরা ৯ ভাগেরও কম। দেশের বনভূমি ধ্বংস হওয়ার বা কমে আসার কারণ আমরা জানি। এখন কাজ হচ্ছে- ২০২৫ সালকে সামনে রেখে ২৫ ভাগ বনভূমি বৃদ্ধি না হোক অন্তত ২০ ভাগ বনভূমি যেন উন্নতি করা যায় তার জন্য সবার এগিয়ে আসা।
পরিবেশ ও কৃষি জমি দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে- পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। এটি প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দূষণেরও কারণ। ইতোমধ্যে সরকার প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এখন শক্ত হাতে বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। আশা করি সরকার নতুন বছরে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করবে।
মাদক গ্রহণ ও মাদক ব্যবসা এখন অনিয়ন্ত্রিত। পাড়া-মহল্লায় এক শ্রেণীর তরুণ ও যুবক মাদক ব্যবসা ও মাদকদ্রব্য গ্রহণের সঙ্গে মারাত্মকভাবে জড়িত। মাদক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা দিয়ে করা প্রয়োজন। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করা দরকার। আশা করি নতুন বছরে শুরু হবে।
সারা বাংলাদেশের আরও একটি সমস্যা হচ্ছে কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ। যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন মনে হয় বেশি হচ্ছে। স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোর, বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণী কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এরা সমাজে নানা রকমের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এখন খুবই জরুরি কাজ। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে।
সড়ক মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন প্রয়োজন। নতুন বছরে সড়ক মহাসড়ক থেকে অটোরিকশা, ভাসমান দোকান ও কাঁচাবাজার ইত্যাদি তুলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সাধারণ মানুষের আশা সড়ক মহাসড়ক থেকে সব ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর হবে।
নতুন বছর হোক স্বপ্ন বাস্তবায়নের বছর। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে ২০২৫ সাল হতে পারে রোড ম্যাপ। সাধারণ মানুষের স্বপ্ন খুব বেশি নয়। সারা বছর দ্রব্য মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা, সড়ক মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন ও যানজট মুক্ত ঢাকা শহর উপহার দেয়া। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করা। প্রত্যাশা সবার, বাংলাদেশ হবে সত্যিকার অর্থে সুখী ও সমৃদ্ধির দেশ।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]
কামরুজ্জামান
বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলাদেশের জন্য ঘটনাবহুল ২০২৪ বিদায় নিল। এলো নতুন বছর ২০২৫। স্বাগত ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। নতুন বছরে স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা আমাদের অনেক। কতটুকু পূরণ হবে সময়ই হয়তো বলবে। তারপরও আমরা আশায় বুক বাঁধতেই পারি।
স্বাধীনতার আজ ৫৪তম বছরে বাংলাদেশ। দীর্ঘ এই পদযাত্রায় অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। আমরা দেশ পরিচালনায় সরকার ও শাসকগোষ্ঠী পেলেও কাক্সিক্ষত স্বপ্ন আমাদের পূরণ হয়নি। সাধারণ মানুষ দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রকৃত সুফল এখনো পায়নি। এর বহুবিধ কারণ রয়েছে। আমরা সবাই এসব জানি। এর মধ্যে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কারণ।
সময় চলে যায় সময়ের হাত ধরে। থেকে যায় মানুষের আদর্শ ও কর্ম। মানুষের কর্ম ও আদর্শ প্রভাব ফেলে পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর। একটি রাষ্ট্রের মৌলিক ও আর্থিক পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন আদর্শিক ও পারিশ্রমিক মানুষ। প্রয়োজন চৌকস ও নীতিবান নেতৃত্ব। আমাদের হয়তো নেতা ভালো ছিল আমরা মানুষ ভালো হতে পারিনি অথবা আমরা মানুষ ভালো কিন্তু চৌকস ও নীতিবান নেতৃত্ব পাইনি। অথবা জাতি হিসাবে আমাদের ভাগ্যটাই খারাপ। না হলে স্বাধীনতার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েও আমরা কাক্সিক্ষত স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারিনি।
তবেও এটাও সত্যি আমাদের দেশে শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকেই যখনই যারা ক্ষমতায় এসেছে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থেকেছে। এর প্রমাণ হচ্ছে-ব্যাপক দুর্নীতি। তারপরও বাংলাদেশের মানুষের সন্তুষ্টির জায়গা হচ্ছে-অল্পতেই তুষ্ট হওয়া। দুঃখকে দ্রুত ভুলে যাওয়া।
আমাদের দেশের সমস্যা অনেক। তাই সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এবং প্রত্যাশাও অনেক। নতুন বছর ২০২৫ কে ঘিরে মানুষের স্বপ্ন দেখাও নতুন ভাবে শুরু হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে নতুন একটি সরকার এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। জনগণের চাওয়াগুলো খুব বেশি নয়। দেশে মৌলিক পরিবর্তন ও সংস্কার দেখতে চায় জনগণ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা- সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে দেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসবে। জনগণের নির্বাচিত সরকার হলে অনেক সমস্যারই সমাধান সহজে হওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশে বহুবিধ সমস্যার মধ্যে একটি হলো-ঘুষ ও দুর্নীতি। দেশের এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে ঘুষ ও দুর্নীতি হয় না। দেশকে ঘুষ ও দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য সরকারের অগ্রাধিকার সংস্কার কাজ করা প্রয়োজন। এই সরকারের সময়ে নতুন বছরে দেশে ঘুষ ও দুর্নীতি কমে আসবে এটা জনগণ প্রত্যাশা করে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগোপযোগী ও টেকসই শিক্ষা কারিকুলাম প্রয়োজন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা ২০২৫ সালেই নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে সরকার কাজ শুরু করবে। এবং একটি সময়োপযোগী ও বাস্তব জ্ঞান সমৃদ্ধ অপরিবর্তনীয় শিক্ষা কারিকুলাম দেশের জন্য উপহার দেবে।
২০২৫ সাল হোক বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র। সব ধরনের ভেদাভেদ দূর হোক। দেশের মানুষের জন্য গড়ে উঠুক ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব।
সরকার এমন কিছু কাজ করুক যার ফলে সারা বছর দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবন ও কর্মের ওপর মারাত্মক রকমের প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন এবং বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ রাখা উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা খরা জলোচ্ছ্বাস এমনকি ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ ঘটে গেলে মোকাবিলায় যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য আলাদা তহবিল সংরক্ষণ প্রয়োজন।
দেশে বেকার লোকের সংখ্যা অগণিত। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাটা অনেক বেশি। তাদের কর্মের সংস্থান করা অতিব জরুরী। বেকারত্ব দূর হলে দেশ স্বনির্ভর হবে দ্রুত। আশা করি সরকার নতুন বছরে কর্মের সংস্থান তৈরি করবে, বেকারত্ব দূর করার জন্য কাজ করবে।
বাংলাদেশ শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনো কাক্সিক্ষত জায়গায় যেতে পারেনি। শিল্পের পাশাপাশি কৃষির উপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে। কারণ বাংলাদেশ মূলত কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। খাদ্যের নিশ্চয়তার জন্য অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আশা করি সরকার নতুন বছরে কৃষি ও কৃষকের জীবন মানের উপর গুরুত্ব আরোপ করবে।
দেশের প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভালো নেই। দখল আর দূষণে নিমজ্জিত। ভালো নেই নদী, খাল-বিল, ঝিল। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নদী-খাল দখল ও দূষণমুক্ত করার শপথ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুন বছরে সরকার এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবে এটা জনগণ প্রত্যাশা করে। মনে রাখতে হবে- নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ। মাছে ভাতে বাঙালি বাংলাদেশের মানুষ আজ ভুলতে বসেছে। নদী-খাল দখল ও দূষণের প্রভাব পড়ছে দেশীয় মাছের ওপর।
এই বছরটি ২০২৫ সাল। একটি দেশের ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশে প্রকৃত পক্ষে বনভূমি আছে শতকরা ৯ ভাগেরও কম। দেশের বনভূমি ধ্বংস হওয়ার বা কমে আসার কারণ আমরা জানি। এখন কাজ হচ্ছে- ২০২৫ সালকে সামনে রেখে ২৫ ভাগ বনভূমি বৃদ্ধি না হোক অন্তত ২০ ভাগ বনভূমি যেন উন্নতি করা যায় তার জন্য সবার এগিয়ে আসা।
পরিবেশ ও কৃষি জমি দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে- পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য। এটি প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো দূষণেরও কারণ। ইতোমধ্যে সরকার প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এখন শক্ত হাতে বাজার মনিটরিং প্রয়োজন। আশা করি সরকার নতুন বছরে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করবে।
মাদক গ্রহণ ও মাদক ব্যবসা এখন অনিয়ন্ত্রিত। পাড়া-মহল্লায় এক শ্রেণীর তরুণ ও যুবক মাদক ব্যবসা ও মাদকদ্রব্য গ্রহণের সঙ্গে মারাত্মকভাবে জড়িত। মাদক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা দিয়ে করা প্রয়োজন। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করা দরকার। আশা করি নতুন বছরে শুরু হবে।
সারা বাংলাদেশের আরও একটি সমস্যা হচ্ছে কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ। যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন মনে হয় বেশি হচ্ছে। স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোর, বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্ত তরুণ-তরুণী কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত। এরা সমাজে নানা রকমের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ এখন খুবই জরুরি কাজ। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে।
সড়ক মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন প্রয়োজন। নতুন বছরে সড়ক মহাসড়ক থেকে অটোরিকশা, ভাসমান দোকান ও কাঁচাবাজার ইত্যাদি তুলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সাধারণ মানুষের আশা সড়ক মহাসড়ক থেকে সব ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর হবে।
নতুন বছর হোক স্বপ্ন বাস্তবায়নের বছর। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে ২০২৫ সাল হতে পারে রোড ম্যাপ। সাধারণ মানুষের স্বপ্ন খুব বেশি নয়। সারা বছর দ্রব্য মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা, সড়ক মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনয়ন ও যানজট মুক্ত ঢাকা শহর উপহার দেয়া। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দূর করা। প্রত্যাশা সবার, বাংলাদেশ হবে সত্যিকার অর্থে সুখী ও সমৃদ্ধির দেশ।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]