মিথুশিলাক মুরমু
গত শুক্রবার গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আদিবাসী সাঁওতাল পরিবারের জমি দখলের পাঁয়তারা চালিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইদিন পৈতৃক ভিটা রক্ষার জন্য ফিলোমিনা হাঁসদা (৫৫) নামক আদিবাসী সাঁওতাল নারী চেয়ারম্যানের মুখোমুখি হলে তাকে অপদস্থ এবং পরবর্তীকালে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আহত নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রাজাবিরাট গ্রামের পাশে সাঁওতালদের পৈতৃক জমি আছে। জমিটি পতিত অবস্থায় ছিল। শুক্রবার সকালে সেই জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাটি ভরাট করছিলেন। হঠাৎ করে মাটি ভরাট করতে দেখে কয়েকজন সাঁওতাল যুবক বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নিকোলাস মুরমুকে মারধর ও এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে।
খবর পেয়ে ফিলোমিনা হাঁসদার সন্তান ব্রিটিশ সরেন প্রতিবাদ করলে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয় দখলদাররা। এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ধরতে গেলে চেয়ারম্যান ফিলোমিনাকে চড়-থাপ্পড় ও ঘুষি মারেন। সাঁওতাল নারীটি মাটিতে পড়ে যান, আহত হন। পরবর্তীকালে তাকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। বিকেলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অপরদিকে ঘটনার জেরে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের লোকজন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। ব্রিটিশ সরেন বলেছেন, ‘আমাদের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন লাগিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে মাটির ঘরের ভেতরের আসবাব, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে গেছে।’ চেয়ারম্যানের বক্তব্য হচ্ছে, ‘যে ১৬ শতক জমিতে মাটি কাটা হয়, সেটি আমার কেনা জমি। আমার জমির দলিল আছে। জমি আমার নামে রেকর্ডও হয়েছে। সেই জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে ব্রিটিশ সরেনসহ কয়েকজন সাঁওতাল যুবক মদ খেয়ে উল্টো আমাকে মারধর করেন।’
তবে এলাকার লোকজন বলেছেন, আগে রাজাবিরাট গ্রামে অনেক সাঁওতাল পরিবার বসবাস করত। স্বাধীনতার পর থেকে পর্যায়ক্রমে সাঁওতালদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি স্থানীয় বাঙালিরা ভোগদখল করছেন। সঙ্গত কারণেই সেখানকার অনেক সাঁওতাল পরিবার অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়েছেন। এই সুযোগে চেয়ারম্যানও জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। বছরের সূচনাতে আদিবাসী সাঁওতাল উচ্ছেদ ও শারীরিকভাবে অপদস্থের সংবাদ আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিশেষত ৫ আগস্টের পর আদিবাসীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, সম্পত্তি ও ভিটাবাড়ি দখলের যে মহোৎসব দেখেছি; তাতে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন উন্নতির কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। গত বছর বড়দিন উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জ গমন করলে ২৪ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের টংপাড়ার আদিবাসী রাজোয়াড় নারী-পুরুষ আমাদের কাছে উপস্থিত হন। তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত ও চিন্তিত ২৫-৩০টি আদিবাসী রাজোয়াড় পরিবার গ্রামে টিকতে পারবেন কিনা! স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত এক ব্যক্তি দিনে-রাতে তাদের উচ্ছেদ ও ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার চেষ্টায় রত আছেন।
আদিবাসী রাজোয়াড়দের কারও নিজস্ব জায়গা রয়েছে, কারও বসবাস খাস জমিতে। টংপাড়াতে রয়েছে একটি মন্দির, সেটি রক্ষার্থে এখন রাতের পর রাত পাহারা দিতে হচ্ছে। টংপাড়ার রাজোয়াড় আদিবাসীরা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান, দূরে কাজ করতে যেতে পারেন না; হতে পারে এভাবেই একদিন টংপাড়ার রাজোয়াড়রা হারিয়ে যাবেন।
সংখ্যালঘু আদিবাসীরা কোনোদিন কারও জমি জবরদখল করেছে, এমন নজির নেই। এ যাবৎকালে যতগুলো ঘটনা দেখেছি, পর্যালোচনা ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি; সব আদিবাসী নিপীড়নের শিকার। স্থানীয় প্রভাবশালীরা আদিবাসীদের জায়গা-জমি ছলে-বলে কৌশলে, জাল দলিল করে, আবার কখনো পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে ঋণ ইত্যাদি শর্তে পানির দামে জায়গা দখল করেছেন। এক্ষেত্রে আদিবাসীরা পৈতৃক ভিটামাটিকে রক্ষার্থে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুললে সংঘর্ষ বেধেছে; হত্যার শিকার হয়েছেন, উচ্ছেদ হয়েছেন; স্থানান্তরিত ও দেশ ছেড়েছেন এমন উদাহরণ জ¦লজ¦ল করছে। সহজ-সরল কিন্তু বিদ্রোহী আদিবাসীরা এখন পলায়নপর জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসী সাঁওতালদের রক্তের দাগ এখনো শুকোয়নি। ইতোমধ্যেই আবারও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এটি কিন্তু একটি অশনিসংকেত। মাত্র কয়েকদিন আগেই ২১ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর কতকগুলো দাবি ংবলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছে। দাবিগুলোতেই বোঝা যায়, অত্র অঞ্চলের এই অবহেলিত, নিষ্পেষিত, বঞ্চিত ও অধিকারহারা আদিবাসীদের অবস্থা ও অবস্থান, পরিস্থিতি ও পরিবেশ কতটুকু তাদের জন্য উপযোগী! দাবিগুলো হলোÑ১. বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করা; ২. তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিতকরণ; ৩. সাঁওতাল-বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার; ৪. চুক্তি অনুযায়ী বাপ-দাদার জমি ফেরত প্রদান; ৫. সাঁওতালদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা; ৬. সাঁওতাল শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক স্কুল প্রতিষ্ঠাকরণ ৭. উত্তরবঙ্গের সাঁওতালসহ আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।
২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্ম এলাকায় বসবাসরত সাঁওতালসহ আদিবাসীদের উচ্ছেদে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তা আমাদের নির্বাক করেছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের ভোগদখলীয় বাগদা ফার্মের ১৮৪২ একর জমি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে আখ চাষের জন্য নেয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। চুক্তি অনুসারে, চিনিকল চালু না থাকলে জমির মালিক বিবেচনায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে সেই জমি খেসারতসহ ফিরিয়ে দেয়া হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, জনগণের অংশগ্রহণ, জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদনÑ এসব বিষয় বিবেচনাপূর্বক সরকার অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে বিশ^াস করি। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মেরসংলগ্ন জয়পুর-মাদারপুরে আদিবাসী সাঁওতালদের ওপর যে নির্মমতা নেমে এসেছিলো, এরূপ কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা চাই না, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যের পরিস্থিতি তৈরি হোক। এখনই আদিবাসীদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরি। পশ্চিমাকাশের কালো মেঘ আমাদের সতর্ক করছে; যে কোনো মুহূর্তে কালবৈশাখী ঝড় আছড়ে পড়বে।
[লেখক : কলামিস্ট ]
মিথুশিলাক মুরমু
বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫
গত শুক্রবার গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার ইউনিয়নের রাজাবিরাট এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার লোকজন আদিবাসী সাঁওতাল পরিবারের জমি দখলের পাঁয়তারা চালিয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওইদিন পৈতৃক ভিটা রক্ষার জন্য ফিলোমিনা হাঁসদা (৫৫) নামক আদিবাসী সাঁওতাল নারী চেয়ারম্যানের মুখোমুখি হলে তাকে অপদস্থ এবং পরবর্তীকালে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আহত নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রাজাবিরাট গ্রামের পাশে সাঁওতালদের পৈতৃক জমি আছে। জমিটি পতিত অবস্থায় ছিল। শুক্রবার সকালে সেই জমিতে রাজাহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাটি ভরাট করছিলেন। হঠাৎ করে মাটি ভরাট করতে দেখে কয়েকজন সাঁওতাল যুবক বাধা দেন। তখন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন নিকোলাস মুরমুকে মারধর ও এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে।
খবর পেয়ে ফিলোমিনা হাঁসদার সন্তান ব্রিটিশ সরেন প্রতিবাদ করলে তাকে লাঠি দিয়ে মারতে উদ্যত হয় দখলদাররা। এ সময় ব্রিটিশ সরেনের মা ফিলোমিনা হাঁসদা চেয়ারম্যানের লাঠি ধরতে গেলে চেয়ারম্যান ফিলোমিনাকে চড়-থাপ্পড় ও ঘুষি মারেন। সাঁওতাল নারীটি মাটিতে পড়ে যান, আহত হন। পরবর্তীকালে তাকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। বিকেলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অপরদিকে ঘটনার জেরে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে চেয়ারম্যানের লোকজন বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। ব্রিটিশ সরেন বলেছেন, ‘আমাদের বাড়িতে চেয়ারম্যানের লোকজন আগুন লাগিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে মাটির ঘরের ভেতরের আসবাব, কাপড় ও টিনের চাল পুড়ে গেছে।’ চেয়ারম্যানের বক্তব্য হচ্ছে, ‘যে ১৬ শতক জমিতে মাটি কাটা হয়, সেটি আমার কেনা জমি। আমার জমির দলিল আছে। জমি আমার নামে রেকর্ডও হয়েছে। সেই জমিতে মাটি ভরাট করতে গেলে ব্রিটিশ সরেনসহ কয়েকজন সাঁওতাল যুবক মদ খেয়ে উল্টো আমাকে মারধর করেন।’
তবে এলাকার লোকজন বলেছেন, আগে রাজাবিরাট গ্রামে অনেক সাঁওতাল পরিবার বসবাস করত। স্বাধীনতার পর থেকে পর্যায়ক্রমে সাঁওতালদের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি স্থানীয় বাঙালিরা ভোগদখল করছেন। সঙ্গত কারণেই সেখানকার অনেক সাঁওতাল পরিবার অন্য জায়গায় স্থানান্তর হয়েছেন। এই সুযোগে চেয়ারম্যানও জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন। বছরের সূচনাতে আদিবাসী সাঁওতাল উচ্ছেদ ও শারীরিকভাবে অপদস্থের সংবাদ আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিশেষত ৫ আগস্টের পর আদিবাসীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, সম্পত্তি ও ভিটাবাড়ি দখলের যে মহোৎসব দেখেছি; তাতে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসন উন্নতির কোনো লক্ষণ চোখে পড়েনি। গত বছর বড়দিন উপলক্ষে উত্তরবঙ্গের চাঁপাইনবাবগঞ্জ গমন করলে ২৪ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের টংপাড়ার আদিবাসী রাজোয়াড় নারী-পুরুষ আমাদের কাছে উপস্থিত হন। তারা অত্যন্ত আতঙ্কিত ও চিন্তিত ২৫-৩০টি আদিবাসী রাজোয়াড় পরিবার গ্রামে টিকতে পারবেন কিনা! স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত এক ব্যক্তি দিনে-রাতে তাদের উচ্ছেদ ও ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়ার চেষ্টায় রত আছেন।
আদিবাসী রাজোয়াড়দের কারও নিজস্ব জায়গা রয়েছে, কারও বসবাস খাস জমিতে। টংপাড়াতে রয়েছে একটি মন্দির, সেটি রক্ষার্থে এখন রাতের পর রাত পাহারা দিতে হচ্ছে। টংপাড়ার রাজোয়াড় আদিবাসীরা এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটান, দূরে কাজ করতে যেতে পারেন না; হতে পারে এভাবেই একদিন টংপাড়ার রাজোয়াড়রা হারিয়ে যাবেন।
সংখ্যালঘু আদিবাসীরা কোনোদিন কারও জমি জবরদখল করেছে, এমন নজির নেই। এ যাবৎকালে যতগুলো ঘটনা দেখেছি, পর্যালোচনা ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি; সব আদিবাসী নিপীড়নের শিকার। স্থানীয় প্রভাবশালীরা আদিবাসীদের জায়গা-জমি ছলে-বলে কৌশলে, জাল দলিল করে, আবার কখনো পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে ঋণ ইত্যাদি শর্তে পানির দামে জায়গা দখল করেছেন। এক্ষেত্রে আদিবাসীরা পৈতৃক ভিটামাটিকে রক্ষার্থে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুললে সংঘর্ষ বেধেছে; হত্যার শিকার হয়েছেন, উচ্ছেদ হয়েছেন; স্থানান্তরিত ও দেশ ছেড়েছেন এমন উদাহরণ জ¦লজ¦ল করছে। সহজ-সরল কিন্তু বিদ্রোহী আদিবাসীরা এখন পলায়নপর জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জের আদিবাসী সাঁওতালদের রক্তের দাগ এখনো শুকোয়নি। ইতোমধ্যেই আবারও স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, এটি কিন্তু একটি অশনিসংকেত। মাত্র কয়েকদিন আগেই ২১ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর কতকগুলো দাবি ংবলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেছে। দাবিগুলোতেই বোঝা যায়, অত্র অঞ্চলের এই অবহেলিত, নিষ্পেষিত, বঞ্চিত ও অধিকারহারা আদিবাসীদের অবস্থা ও অবস্থান, পরিস্থিতি ও পরিবেশ কতটুকু তাদের জন্য উপযোগী! দাবিগুলো হলোÑ১. বিরোধপূর্ণ জমিতে ইপিজেড নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করা; ২. তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিতকরণ; ৩. সাঁওতাল-বাঙালিদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার; ৪. চুক্তি অনুযায়ী বাপ-দাদার জমি ফেরত প্রদান; ৫. সাঁওতালদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করা; ৬. সাঁওতাল শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক স্কুল প্রতিষ্ঠাকরণ ৭. উত্তরবঙ্গের সাঁওতালসহ আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।
২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্ম এলাকায় বসবাসরত সাঁওতালসহ আদিবাসীদের উচ্ছেদে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তা আমাদের নির্বাক করেছে। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের ভোগদখলীয় বাগদা ফার্মের ১৮৪২ একর জমি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে আখ চাষের জন্য নেয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। চুক্তি অনুসারে, চিনিকল চালু না থাকলে জমির মালিক বিবেচনায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে সেই জমি খেসারতসহ ফিরিয়ে দেয়া হবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, জনগণের অংশগ্রহণ, জমির ওপর নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদনÑ এসব বিষয় বিবেচনাপূর্বক সরকার অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে বিশ^াস করি। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মেরসংলগ্ন জয়পুর-মাদারপুরে আদিবাসী সাঁওতালদের ওপর যে নির্মমতা নেমে এসেছিলো, এরূপ কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা চাই না, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যের পরিস্থিতি তৈরি হোক। এখনই আদিবাসীদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরি। পশ্চিমাকাশের কালো মেঘ আমাদের সতর্ক করছে; যে কোনো মুহূর্তে কালবৈশাখী ঝড় আছড়ে পড়বে।
[লেখক : কলামিস্ট ]