alt

opinion » post-editorial

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

এস ডি সুব্রত

: মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি হচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। ১২টি রাশি অনুযায়ী ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন পালন করা হয় মকর সংক্রান্তি। একদিকে নতুন ধান উঠার আনন্দ। অন্যদিকে মকর রাশিতে সূর্যের আগমনকে কেন্দ্র করে দিনটি মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। বছরের বারটি সংক্রান্তির মধ্যে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মকর সংক্রান্তি। এ সময় সূর্য দক্ষিনায়ন থেকে উত্তরায়ণে যায়। খাওয়া দাওয়া, ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি পূণ্য স্নানের জন্যও মকর সংক্রান্তি গুরুত্বপূর্ণ।

মকর সংক্রান্তিতে মূলত বসন্তকে আহ্বান জানানো হয়। এটা ফসল কাটার উৎসব হিসেবেও বিবেচিত হয়। ভোরের স্নান, সূর্য প্রণাম, পিঠা পুলি ও চিড়া মুড়ির নাড়–, তিলের নাড়– খাওয়া, ঘুড়ি উৎসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে বাঙালিরা। পৌষের শেষ আর মাঘ মাসের শুরুতে যে সংক্রান্তি আসে তাই পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। পৌষ মাস মল মাস বা অশুভ মাস হিসেবে চিহ্নিত হলেও শাস্ত্র মতে মকর সংক্রান্তি থেকেই শুরু হয় শুভক্ষণ। এ সময় সূর্য ধনু রাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে গমন করে। শুরু হয় সূর্যের উত্তরায়ন তাই একে মকর সংক্রান্তি বলে।

কেউ আবার এটাকে উত্তরায়ু সংক্রান্তিও বলে। ছয়মাস থাকে উত্তরায়ণ আর ছয় মাস থাকে দক্ষিনায়ণ। পৌষের শেষ মুহূর্তের এই উৎসব সনাতন সংস্কৃতির এক প্রাসঙ্গিক বিষয়। পৌরাণিক মতে দেবতাদের দিন শুরু হয় উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে। দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দেবতাদের রাত্রি। দীর্ঘ রাত্রি থেকে দেবতাদের দিনে প্রবেশ করার ক্ষণটিকে উৎসব আকারে পালন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে এ উৎসব পালন নিয়ে রয়েছে নানা মত।

সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস মতে মকর সংক্রান্তি যে উত্তরায়ণের সূচনা এবং এ উৎসব পালন করার মাধ্যমে অশুভ শক্তি নাশ হয়। পূরাণ অনুসারে মকর ক্রান্তির এই দিনে অসুরদের সঙ্গে দেবতাদের যুদ্ধের অবসান ঘটে। ঐ দিন ভগবান বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাদের ছিন্ন মুন্ড (মাথা) মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দেন এবং শুভ শক্তির সূচনা করেন।

মহাভারত ও কালিকাপুরাণ অনুসারে এই মকর সংক্রান্তিতে দেবতাদের আরাধনা করা হয়। আর্থিক সমৃদ্ধি র জন্য এ সময় লক্ষ্মী দেবীর আরাধনাও করা হয়। মল মাসের অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষে এই উৎসব পালনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির ত্যাগ আর শুভ শক্তির সূচনা করা হয়। আবার কোন কোন মতে এই দিনে সূর্যদেব তার পুত্র মকর রাশির অধিপতি শনির উপর রাগ প্রশমিত করে তার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এই জন্য সূর্যদেবের কাছ থেকে আশীর্বাদ পেতে সকালে সূর্য কে প্রাণের মধ্য দিয়ে মকর সংক্রান্তির উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

চিড়া মুড়ি পিঠা পুলি খাওয়ার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ছোট ছেলে মেয়েরা পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে খড় দিয়ে ছোট ঘর বানায় যাকে বলে তিল্লার ঘর। ঐদিন ছেলে মেয়েরা বাড়ির পাশে ঘর বানিয়ে সেমাই সুজি মাংস রান্না করে চড়–ই ভাতির মতো খাওয়া দাওয়া করে এবং রাত্রিযাপন করে। খুব ভোরে উঠেই স্নান করে তিল্লা ঘর পুড়িয়ে আগুন পোহায়। এ দৃশ্য অনেক টা কমে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

পৌষ সংক্রান্তির দিন ঘুড়ি উড়ানো বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। মুঘল আমল থেকে এই উৎসব পালন হয়ে আসছে। পুরোনো ঢাকার একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে, উৎসব পার্বণের এই দেশে আমরা সবাই মিলে মিশে চলব এই কামনা আজ পৌষ সংক্রান্তির দিনে। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য এভাবেই এগিয়ে চলুক সুন্দর আগামীর পানে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

নরসুন্দর পেশার গুরুত্ব ও সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন

বিভাগভিত্তিক এমপিআর নির্বাচন পদ্ধতি

প্ল্যাটফর্ম সমাজে বাংলাদেশ: জ্ঞানের ভবিষ্যৎ কার হাতে?

আনন্দবেদনার হাসপাতাল: সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বাস্তবতা

ছবি

ভিন্ন ধরনের নির্বাচন, ভিন্ন ধরনের ফল

বেসরকারি খাতে সিআইবি’র যাত্রা: ঋণ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত

স্বাস্থ্যসেবায় মানবিকতা প্রতিষ্ঠা হোক

ছবি

নেপালে সরকার পতন ও বামপন্থীদের ভবিষ্যৎ

ডাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত

নির্বাচন কি সব সমস্যার সমাধান

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

tab

opinion » post-editorial

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

এস ডি সুব্রত

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫

বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের একটি হচ্ছে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। ১২টি রাশি অনুযায়ী ১২টি সংক্রান্তি রয়েছে। বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন পালন করা হয় মকর সংক্রান্তি। একদিকে নতুন ধান উঠার আনন্দ। অন্যদিকে মকর রাশিতে সূর্যের আগমনকে কেন্দ্র করে দিনটি মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত। বছরের বারটি সংক্রান্তির মধ্যে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ মকর সংক্রান্তি। এ সময় সূর্য দক্ষিনায়ন থেকে উত্তরায়ণে যায়। খাওয়া দাওয়া, ঘুড়ি উৎসবের পাশাপাশি পূণ্য স্নানের জন্যও মকর সংক্রান্তি গুরুত্বপূর্ণ।

মকর সংক্রান্তিতে মূলত বসন্তকে আহ্বান জানানো হয়। এটা ফসল কাটার উৎসব হিসেবেও বিবেচিত হয়। ভোরের স্নান, সূর্য প্রণাম, পিঠা পুলি ও চিড়া মুড়ির নাড়–, তিলের নাড়– খাওয়া, ঘুড়ি উৎসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে বাঙালিরা। পৌষের শেষ আর মাঘ মাসের শুরুতে যে সংক্রান্তি আসে তাই পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। পৌষ মাস মল মাস বা অশুভ মাস হিসেবে চিহ্নিত হলেও শাস্ত্র মতে মকর সংক্রান্তি থেকেই শুরু হয় শুভক্ষণ। এ সময় সূর্য ধনু রাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে গমন করে। শুরু হয় সূর্যের উত্তরায়ন তাই একে মকর সংক্রান্তি বলে।

কেউ আবার এটাকে উত্তরায়ু সংক্রান্তিও বলে। ছয়মাস থাকে উত্তরায়ণ আর ছয় মাস থাকে দক্ষিনায়ণ। পৌষের শেষ মুহূর্তের এই উৎসব সনাতন সংস্কৃতির এক প্রাসঙ্গিক বিষয়। পৌরাণিক মতে দেবতাদের দিন শুরু হয় উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে। দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় দেবতাদের রাত্রি। দীর্ঘ রাত্রি থেকে দেবতাদের দিনে প্রবেশ করার ক্ষণটিকে উৎসব আকারে পালন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে এ উৎসব পালন নিয়ে রয়েছে নানা মত।

সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস মতে মকর সংক্রান্তি যে উত্তরায়ণের সূচনা এবং এ উৎসব পালন করার মাধ্যমে অশুভ শক্তি নাশ হয়। পূরাণ অনুসারে মকর ক্রান্তির এই দিনে অসুরদের সঙ্গে দেবতাদের যুদ্ধের অবসান ঘটে। ঐ দিন ভগবান বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাদের ছিন্ন মুন্ড (মাথা) মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দেন এবং শুভ শক্তির সূচনা করেন।

মহাভারত ও কালিকাপুরাণ অনুসারে এই মকর সংক্রান্তিতে দেবতাদের আরাধনা করা হয়। আর্থিক সমৃদ্ধি র জন্য এ সময় লক্ষ্মী দেবীর আরাধনাও করা হয়। মল মাসের অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষে এই উৎসব পালনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির ত্যাগ আর শুভ শক্তির সূচনা করা হয়। আবার কোন কোন মতে এই দিনে সূর্যদেব তার পুত্র মকর রাশির অধিপতি শনির উপর রাগ প্রশমিত করে তার বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এই জন্য সূর্যদেবের কাছ থেকে আশীর্বাদ পেতে সকালে সূর্য কে প্রাণের মধ্য দিয়ে মকর সংক্রান্তির উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

চিড়া মুড়ি পিঠা পুলি খাওয়ার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে ছোট ছেলে মেয়েরা পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে খড় দিয়ে ছোট ঘর বানায় যাকে বলে তিল্লার ঘর। ঐদিন ছেলে মেয়েরা বাড়ির পাশে ঘর বানিয়ে সেমাই সুজি মাংস রান্না করে চড়–ই ভাতির মতো খাওয়া দাওয়া করে এবং রাত্রিযাপন করে। খুব ভোরে উঠেই স্নান করে তিল্লা ঘর পুড়িয়ে আগুন পোহায়। এ দৃশ্য অনেক টা কমে গেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

পৌষ সংক্রান্তির দিন ঘুড়ি উড়ানো বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। মুঘল আমল থেকে এই উৎসব পালন হয়ে আসছে। পুরোনো ঢাকার একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে, উৎসব পার্বণের এই দেশে আমরা সবাই মিলে মিশে চলব এই কামনা আজ পৌষ সংক্রান্তির দিনে। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য এভাবেই এগিয়ে চলুক সুন্দর আগামীর পানে।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top