alt

উপ-সম্পাদকীয়

কেন দ্যাখাও মিথ্যে স্বপ্ন

জাঁ-নেসার ওসমান

: রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

‘কি ভাই এই বুইড়া বয়সে কচি ভাবি খুঁজতে যায়া ছ্যাকা খাইলেননি? ক্যেঠা আবার আপনের স্বপ্ন ভাইঙ্গা দিলো। কোই এই সুন্দরী রমণী মানে এই শর্বরীডা ক্যেঠা। ইকটু আন্দাজ কোইরা কোই? এইটা হোইবো, কাশফীয়া নাহরিন, মেরিন, বাবালী, হাসিন, লিপি, নাকি শিল্পী?’

‘ধুর ব্যাটা এই তিয়াত্তর বছর বয়সে কেউ ভামিনী নিয়ে চিন্তা করে! এখন তো মরার বয়স, আল্লার নাম স্মরণ কর।’

‘তায়লে লিখছেন যে, হে প্রিয়া ক্যেন আমারে মিছামিছি স্বপ্ন দেহাও?’

‘আমি আবার কখন প্রিয়ার কথা বা কোনো উর্বশীর কথা লিখলাম?’

‘তায়লে ক্যেন দেহাও মিথ্যা স্বপ্নের মাজেজা ক্যেয়া হ্যায়?’

‘আরে গর্দভ আমি বলছিলাম বিগত স্বৈরশাসনের আমলে আমরা তো মেনেই নিয়েছিলাম, তারা দু’হাজার একচল্লিশ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। বড় বড় বাঘা বাঘা স্যারেরা আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবেন, দেশে প্রচুর উন্নয়ন হবে। ছাত্র সংগঠন, যুবা সংগঠন, যুবতী, মহিলা, তাঁতী, হাজং, মুচি, চাঁড়াল, ডোম, মুর্দাফরাশ সবাই, সবাই আমাদের থেকে প্রতি নিয়ত নজরানা নিবেন। টেম্পো, বাস, ট্রাক, ক্ষেত্রবিশেষে মোটরসাইকেল, লঞ্চ-স্টিমার, পানির জাহাজ, উড়োজাহাজ, আবার শিপ ব্রেকিং সবাই চাঁদা প্রদান করবে।’

‘এতো যখন কোইলেন, তখন আর কল-কারখানা, রাস্তার হকার, হোটেল, হসপিটাল, ডেভলাপার, কাঁচাবাজারের শবজি ব্যেচইন্না মাতারী, কন্ট্রাক্টার, মাঠের কৃষক, বলদের খামারি এইগুলা আর বাদ যাইবো ক্যেন? ’

‘ঠিক আছে ঠিক আছে, এই সবের সাথে, তোর প্রশাষণের ঘুষ বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্য, মোড়ে মোড়ে বড় বড় বাঙালী দুই নাম্বার মূর্তি নির্মাতার বাণিজ্য, সবই তো আমরা মেনেই চলছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে তোরা ৫ আগস্ট দুই হাজার চব্বিশ সালে সবাই মিলে হৈ হৈ করে বাঙালি সব এক হয়ে নতুন করে আবার বাঁচার আশা জাগালি।’

‘ভাইডি, এইডা ঠিকই কইছেন, আবার বেবাগ বাঙালি এক হয়া সুন্দর সুষ্ঠু দেশ গড়তে আগায়া আসলো। দেখলেন না, যেই খালি বন্যা হইছে, অমনি বেবাগ বাঙালি বর্নাত দুস্থ ভাইদের জন্য এক এক দিনে কুটি কুটি ট্যাকা জমা দিলো। জমা দিলো বস্তা বস্তা চিড়া-গুড়, শত শত প্যাকেট বিস্কুট, হাজার হাজার বোতল ভরা সুপেয় পানি। কারে কি কমু, আমার মনে হইছিল ব্যেবাগ বাঙালী এক হইলে, বাংলাদেশটারেই স্বর্গ বানান যায়। কোন কবি জানি কোইছে; ‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তাহা বহুদূর, পৃথিবীর মাঝেই স্বর্গ নরক পৃথিবীই সুরাসুর।’

‘কিন্তু ভাই তোর ওই বন্যার্তের টাকা এখনো ব্যাংকে রয়েছে। বন্যার সময় যদি তোর দুঃখী ভায়ের কাজে টাকা না লাগে, তাহলে এতো টাকা, ঔষধ, পানি, শুকনা খাবার কি কাজে আসবে। আবার কোনো বন্যা হলে, ভূমিকম্প হলে, আবার জনসাধারন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে তখন ব্যবহার করবি?’

‘হ, বিষয়টা একটু ভাববার বিষয়। পোলাপান তো হ্যাগো, কুনো কাজের অভিজ্ঞতা নাই, শিক্ষাও এখনো শেষ হয় নাই, তাই একটু ভজঘট পাকাইছে। তয় পাবলিক কিন্তু দ্যেখায়া দিছে যদি সত্যিকারের ভালো লোক পায় পাবলিক জান দিয়া দেশের সেবা করবো।’

‘জান তো তোরা দিলি, আবু সাঈদ, ওয়াসিম আকরাম, মো. ফারুক, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, রনি প্রামাণিক, সজীব সরকার, সাব্বির হোসেন, মাহিন দীপ্ত, মিঠু আর কতো নাম কমু, লগে চুয়াল্লিশটা পুলিশও জান দিয়েছে কিন্তু কি লাভ হলো বল।’

‘কিন্তু স্যার কয়েকটা দিন সময় দিবেন না!’

‘আরে আর কতো সময় তোরা চাস! তেপান্ন বছর পার হলো এখনো তোদের এখানে কার্টুন আঁকলে কান চাপাতিতে চড় মেরে মেরে ফেলিস। তোর মনমতো না লিখলে সাংবাদিক পিটিয়ে হত্যা! কিন্তু কেনো! এরা কি তোর দেশের সন্তান না! কিছু না কিছু হলেই পিটিয়ে হত্যা না হলে চাপাতি দিয়ে কোপাও এটা কী! এ কোন বাংলাদেশ গড়ছিস তোরা।’

‘কিন্তু স্যার আপনাগো গোড়ায় গলদ, পঁচাত্তরে দেশপ্রধান সপরিবারে মার্ডার, আশিতে দেশপ্রধান মার্ডার, আমাগো গো বেচারা সাত্তার সাবরে জনগণের সেবা করতে দিবো না বইল্লা আর্মি হ্যেরে ক্যু-দেতা কইরা হোতায়া দিলো। তারপর জনগণ আবার স্বৈরাচার ইরশাদরে খ্যেদাইলো। আবার আর্মি আইলো মাইনাস টু, আইজউদ্দিন-মঈনুদ্দিন, হ্যেরা মাইনাস টু করতে আইস্সা ট্যাকার গন্ধ পায়া নিজেরাই মাইনাস হয়া ভাইগগা গেলো। বেশি অন্যায় করলে জনতা হ্যের বিচার করবোই করবো। এইবারও জনতা স্বৈরাচারের বিচার করছে।’

‘তাতো বুঝলাম জনতা সবাই এক হয়ে স্বৈরাচারের বিচার করছে, কিন্তু তোরা যতবার বিচার করতে গেছিস ততবারই কতগুলা আত্মহুতি দিয়েছিস তুই বল। তাহলে জনগণ কি কেবল কিছু দিন পর পর খালি আত্মহুতিই দিতেই থাকবে! এই বাংলাদেশ চেয়েছিলি বুঝি! বর্বর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে তোরা যে বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মা-বোনের সম্ভ্রম, সাধারণ জনতার আত্মহুতি সবই গরলে ভেল। এসব কিছু অসার হয়ে যাবে?’

‘কারে কি কমু কন। ট্যাকা আর ক্ষমতার লোভে, একটু নিজেরা নিজেরা মারামারি করে আরকি। এই দেখেন না, গ্রামে যেমন জায়গা জমি লয়া ভাইয়ে ভাইয়ে খুনাখুনি করে এইরকম আরকী?’

‘তোরা ভায়ে ভায়ে মারামারি কর, কিন্তু এইযে মাঝে মাঝে তোরা সুন্দর দেশ গড়ায় জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, এই সব পাবার জন্য যে স্বপ্ন দেখাস সে স্বপ্ন তো এবারও কেমন মলিন হয়ে উঠছে। প্রতিদিন তোরা, রাস্তাবন্ধ, সচিবালয় ঘেরাও, অনশন, চাপাতি দিয়ে কোপাও এর কি তোরা শেষ করবি না? নিজেরা নিজেরা বাঙালি হয়ে বাঙালি নিধন চালিয়েই যাবি?’

‘তো কই কী, স্বপ্ন দ্যেখেন, হতাশ হয়েন না। একদিন না একদিন আপনের স্বপ্ন সফল হোবোই।’

‘কিন্তু সমাজের এই অসঙ্গতি দেখলে রাতে ঘুম হয় নারে তোকে কি বলবো?’

‘না না ঠিকই আছে। ঘুম না আসা ভালো লক্ষণ। কারণ এপিজে আবুল কালাম বলছেন, স্বপ্ন সেইটাই যেইটা আপনারে ঘুমাইতে দ্যেয় না। আপনের যে ঘুম আসে না, এইটা মহৎ মানবের লক্ষণ।’

‘মহৎ নয়রে এবার তুই আমাকে খেটে খাওয়া জনসাধারণের মতো একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দে! এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দে!’

[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]

আদিবাসীদের প্রাণের স্পন্দন

ছবি

ট্রাম্পের বিস্ফোরক মন্তব্য ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সম্পর্ক

কৃতিত্ব অস্বীকারের অপসংস্কৃতি

পশ্চিমবঙ্গ : স্যালাইনে ফাঙ্গাস, অসহায় মানুষ

ছবি

আত্মপরিচয় ও জাতিসত্তার অঙ্গীকার : বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য

এইচএমপিভি ভাইরাস : প্রয়োজন জনসচেতনতা

সিভিল সার্ভিস ক্যাডারে কেন সংস্কার জরুরি

অনিয়ন্ত্রিত অটোরিকশা ও সড়ক দুর্ঘটনা

অপরিকল্পিত ভ্যাট ও কর বৃদ্ধি

ছবি

‘বেগমপাড়া’ হইতে খোলা চিঠি

সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানবে কে

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কেন দ্যাখাও মিথ্যে স্বপ্ন

জাঁ-নেসার ওসমান

রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

‘কি ভাই এই বুইড়া বয়সে কচি ভাবি খুঁজতে যায়া ছ্যাকা খাইলেননি? ক্যেঠা আবার আপনের স্বপ্ন ভাইঙ্গা দিলো। কোই এই সুন্দরী রমণী মানে এই শর্বরীডা ক্যেঠা। ইকটু আন্দাজ কোইরা কোই? এইটা হোইবো, কাশফীয়া নাহরিন, মেরিন, বাবালী, হাসিন, লিপি, নাকি শিল্পী?’

‘ধুর ব্যাটা এই তিয়াত্তর বছর বয়সে কেউ ভামিনী নিয়ে চিন্তা করে! এখন তো মরার বয়স, আল্লার নাম স্মরণ কর।’

‘তায়লে লিখছেন যে, হে প্রিয়া ক্যেন আমারে মিছামিছি স্বপ্ন দেহাও?’

‘আমি আবার কখন প্রিয়ার কথা বা কোনো উর্বশীর কথা লিখলাম?’

‘তায়লে ক্যেন দেহাও মিথ্যা স্বপ্নের মাজেজা ক্যেয়া হ্যায়?’

‘আরে গর্দভ আমি বলছিলাম বিগত স্বৈরশাসনের আমলে আমরা তো মেনেই নিয়েছিলাম, তারা দু’হাজার একচল্লিশ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে। বড় বড় বাঘা বাঘা স্যারেরা আমাদের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবেন, দেশে প্রচুর উন্নয়ন হবে। ছাত্র সংগঠন, যুবা সংগঠন, যুবতী, মহিলা, তাঁতী, হাজং, মুচি, চাঁড়াল, ডোম, মুর্দাফরাশ সবাই, সবাই আমাদের থেকে প্রতি নিয়ত নজরানা নিবেন। টেম্পো, বাস, ট্রাক, ক্ষেত্রবিশেষে মোটরসাইকেল, লঞ্চ-স্টিমার, পানির জাহাজ, উড়োজাহাজ, আবার শিপ ব্রেকিং সবাই চাঁদা প্রদান করবে।’

‘এতো যখন কোইলেন, তখন আর কল-কারখানা, রাস্তার হকার, হোটেল, হসপিটাল, ডেভলাপার, কাঁচাবাজারের শবজি ব্যেচইন্না মাতারী, কন্ট্রাক্টার, মাঠের কৃষক, বলদের খামারি এইগুলা আর বাদ যাইবো ক্যেন? ’

‘ঠিক আছে ঠিক আছে, এই সবের সাথে, তোর প্রশাষণের ঘুষ বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্য, মোড়ে মোড়ে বড় বড় বাঙালী দুই নাম্বার মূর্তি নির্মাতার বাণিজ্য, সবই তো আমরা মেনেই চলছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করে তোরা ৫ আগস্ট দুই হাজার চব্বিশ সালে সবাই মিলে হৈ হৈ করে বাঙালি সব এক হয়ে নতুন করে আবার বাঁচার আশা জাগালি।’

‘ভাইডি, এইডা ঠিকই কইছেন, আবার বেবাগ বাঙালি এক হয়া সুন্দর সুষ্ঠু দেশ গড়তে আগায়া আসলো। দেখলেন না, যেই খালি বন্যা হইছে, অমনি বেবাগ বাঙালি বর্নাত দুস্থ ভাইদের জন্য এক এক দিনে কুটি কুটি ট্যাকা জমা দিলো। জমা দিলো বস্তা বস্তা চিড়া-গুড়, শত শত প্যাকেট বিস্কুট, হাজার হাজার বোতল ভরা সুপেয় পানি। কারে কি কমু, আমার মনে হইছিল ব্যেবাগ বাঙালী এক হইলে, বাংলাদেশটারেই স্বর্গ বানান যায়। কোন কবি জানি কোইছে; ‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তাহা বহুদূর, পৃথিবীর মাঝেই স্বর্গ নরক পৃথিবীই সুরাসুর।’

‘কিন্তু ভাই তোর ওই বন্যার্তের টাকা এখনো ব্যাংকে রয়েছে। বন্যার সময় যদি তোর দুঃখী ভায়ের কাজে টাকা না লাগে, তাহলে এতো টাকা, ঔষধ, পানি, শুকনা খাবার কি কাজে আসবে। আবার কোনো বন্যা হলে, ভূমিকম্প হলে, আবার জনসাধারন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে তখন ব্যবহার করবি?’

‘হ, বিষয়টা একটু ভাববার বিষয়। পোলাপান তো হ্যাগো, কুনো কাজের অভিজ্ঞতা নাই, শিক্ষাও এখনো শেষ হয় নাই, তাই একটু ভজঘট পাকাইছে। তয় পাবলিক কিন্তু দ্যেখায়া দিছে যদি সত্যিকারের ভালো লোক পায় পাবলিক জান দিয়া দেশের সেবা করবো।’

‘জান তো তোরা দিলি, আবু সাঈদ, ওয়াসিম আকরাম, মো. ফারুক, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, রনি প্রামাণিক, সজীব সরকার, সাব্বির হোসেন, মাহিন দীপ্ত, মিঠু আর কতো নাম কমু, লগে চুয়াল্লিশটা পুলিশও জান দিয়েছে কিন্তু কি লাভ হলো বল।’

‘কিন্তু স্যার কয়েকটা দিন সময় দিবেন না!’

‘আরে আর কতো সময় তোরা চাস! তেপান্ন বছর পার হলো এখনো তোদের এখানে কার্টুন আঁকলে কান চাপাতিতে চড় মেরে মেরে ফেলিস। তোর মনমতো না লিখলে সাংবাদিক পিটিয়ে হত্যা! কিন্তু কেনো! এরা কি তোর দেশের সন্তান না! কিছু না কিছু হলেই পিটিয়ে হত্যা না হলে চাপাতি দিয়ে কোপাও এটা কী! এ কোন বাংলাদেশ গড়ছিস তোরা।’

‘কিন্তু স্যার আপনাগো গোড়ায় গলদ, পঁচাত্তরে দেশপ্রধান সপরিবারে মার্ডার, আশিতে দেশপ্রধান মার্ডার, আমাগো গো বেচারা সাত্তার সাবরে জনগণের সেবা করতে দিবো না বইল্লা আর্মি হ্যেরে ক্যু-দেতা কইরা হোতায়া দিলো। তারপর জনগণ আবার স্বৈরাচার ইরশাদরে খ্যেদাইলো। আবার আর্মি আইলো মাইনাস টু, আইজউদ্দিন-মঈনুদ্দিন, হ্যেরা মাইনাস টু করতে আইস্সা ট্যাকার গন্ধ পায়া নিজেরাই মাইনাস হয়া ভাইগগা গেলো। বেশি অন্যায় করলে জনতা হ্যের বিচার করবোই করবো। এইবারও জনতা স্বৈরাচারের বিচার করছে।’

‘তাতো বুঝলাম জনতা সবাই এক হয়ে স্বৈরাচারের বিচার করছে, কিন্তু তোরা যতবার বিচার করতে গেছিস ততবারই কতগুলা আত্মহুতি দিয়েছিস তুই বল। তাহলে জনগণ কি কেবল কিছু দিন পর পর খালি আত্মহুতিই দিতেই থাকবে! এই বাংলাদেশ চেয়েছিলি বুঝি! বর্বর পাকিস্তানের স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে তোরা যে বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, স্বাধীনতার জন্য লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা, মা-বোনের সম্ভ্রম, সাধারণ জনতার আত্মহুতি সবই গরলে ভেল। এসব কিছু অসার হয়ে যাবে?’

‘কারে কি কমু কন। ট্যাকা আর ক্ষমতার লোভে, একটু নিজেরা নিজেরা মারামারি করে আরকি। এই দেখেন না, গ্রামে যেমন জায়গা জমি লয়া ভাইয়ে ভাইয়ে খুনাখুনি করে এইরকম আরকী?’

‘তোরা ভায়ে ভায়ে মারামারি কর, কিন্তু এইযে মাঝে মাঝে তোরা সুন্দর দেশ গড়ায় জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, এই সব পাবার জন্য যে স্বপ্ন দেখাস সে স্বপ্ন তো এবারও কেমন মলিন হয়ে উঠছে। প্রতিদিন তোরা, রাস্তাবন্ধ, সচিবালয় ঘেরাও, অনশন, চাপাতি দিয়ে কোপাও এর কি তোরা শেষ করবি না? নিজেরা নিজেরা বাঙালি হয়ে বাঙালি নিধন চালিয়েই যাবি?’

‘তো কই কী, স্বপ্ন দ্যেখেন, হতাশ হয়েন না। একদিন না একদিন আপনের স্বপ্ন সফল হোবোই।’

‘কিন্তু সমাজের এই অসঙ্গতি দেখলে রাতে ঘুম হয় নারে তোকে কি বলবো?’

‘না না ঠিকই আছে। ঘুম না আসা ভালো লক্ষণ। কারণ এপিজে আবুল কালাম বলছেন, স্বপ্ন সেইটাই যেইটা আপনারে ঘুমাইতে দ্যেয় না। আপনের যে ঘুম আসে না, এইটা মহৎ মানবের লক্ষণ।’

‘মহৎ নয়রে এবার তুই আমাকে খেটে খাওয়া জনসাধারণের মতো একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দে! এবার একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দে!’

[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]

back to top