alt

উপ-সম্পাদকীয়

শিক্ষকরা কেন বারবার মার খাবে?

তৌহিদ-উল বারী

: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

একটা জাতিকে আলোর পথ দেখাতে নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করা, দিনরাত পরিশ্রম করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা, আলোর মশাল হাতে অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে জাতিকে আহ্বান করা শিক্ষক সমাজ কেন বারবার মার খাবে? সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিই এই শিক্ষক। সেটা সামাজিকভাবে হোক, রাষ্ট্রীয়ভাবে হোক, শিক্ষকরা জাতির গর্বিত সন্তান। তারা কেন লাঞ্ছিত হবে, পথে পথে মার খাবে? তাদের যে জায়গায় নিরাপত্তা দেয়ার কথা, সে জায়গায় তাদের ওপর পুলিশকে লাঠিচার্জ করার অধিকার কে দিয়েছে?

শিক্ষকরা জাতির সম্মানীয় ব্যক্তি এবং শ্রদ্ধার পাত্র। এটি আাজকের নয় বরং বেশ আগে থেকেই সমাজের একটা বড় অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে আমাদের শিক্ষক সমাজ। এরা একটা জাতির পথপ্রদর্শক। সৎ জাতি গঠনে তাদের বলিষ্ঠ অবদান আছে। এটি নিঃসন্দেহে সত্য। আর একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধা দক্ষতা অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে।

দেশের স্বার্থে নিজেদের এতটুকু অবদানের পরেও শিক্ষকরা আজ নিরাপদ নয়। তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। অদৃশ্য ছায়া বারংবার তাদের তাড়া করে। তাদের লাঞ্ছনার হুমকি দেয়। তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। কারণ প্রতিনিয়ত তারা মার খাচ্ছে, ভালোকে ভালো আর কালোকে কালো বলতে গেলেই তারা হচ্ছে চরম নির্যাতনের শিকার। এটি কখনো কাম্য নয়। আমরা দেখেছি, বিগত দিনেও শিক্ষকরা চরম লাঞ্ছনার শিকার হতো। কিন্তু আজকের বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে কেন তা পুনরায় দেখা যাবে। গতকালে শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলাটি অত্যন্ত নক্ক্যারজনক আর হৃদয়বিদারক।

মূলত, ‘গত ২০ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের অভিযোগ-২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকার ২৬ হাজার রেজিস্টার প্রাইমারি স্কুলকে জাতীয়করণ করে। কিন্তু, একই পরিপত্রে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাও জাতীয়করণ করা হয়নি। তাই জুলাই এর গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে আর বৈষম্য থাকবে না, এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না, জাতীয়করণের এই আশায় তারা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করে। পরে ঘটনাক্রমে তাদের ওপর পুলিশ হামলা করে, লাঠিচার্জ করে অনেককে আহতও করে, যা চরম অন্যায়। এই সময়ে এসেও পুলিশের এহেন কর্মকা- কখনোই কাম্য নয়।

কিছু বিতর্কিত কর্মকা-ে শিক্ষকরা অভিযুক্ত হলেও তা খুব কম পরিসরে। বৃহৎ পরিসরে জাতির জন্য কল্যাণকর আর আশীর্বাদরূপে থাকা এই শিক্ষক সমাজকে কখনো হেয় করা যাবে না। এরা জাতির পথপ্রদর্শক। এদেরও চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। এদের জীবন আছে, পরিবার আছে, সংসার আছে। এদেরকেও গুরুত্বের চোখে দেখতে হবে। এদের সঙ্গে বসে এদের অপূর্ণতার গল্পও শুনতে হবে দেশের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের। তবেই তারা নিরাপদে, শান্তিতে আর আদর্শিকভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারবে। মনে রাখতে একটা শিক্ষককে আহত করা মানে জাতি আহত হওয়া।

বলতে গেলে, আমাদের কপাল মন্দ যে একজন শিক্ষক তার ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকরা রাজপথে এসে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। একজন শিক্ষকের দাবি-দাওয়া অন্যায্য হতে পারে; অথচ আমাদের ভাবা উচিত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের যে অবদান তাতে তাদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় কেন নামতে হবে? নামলেই বা তাদের ওপর নির্যাতন কেন? বৈঠক করে তবেই সমাধান বের করতে হবে। শিক্ষক সর্বত্রই বিরাজমান। প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকের বাইরেও আমাদের অসংখ্য শিক্ষক রয়েছেন। সবার কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে গভীর শ্রদ্ধা ও পরম মমতাবোধের মাধ্যমে। তাই শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা দিতে হবে। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকদের সব সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আলোচনা। পিপার গ্যাস নয়; আলোচনার টেবিলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

[লেখক: শিক্ষার্থী]

আর জি কর ঘিরে শাসক কৌশল প্রসঙ্গে

নিজের পথে ইউরোপ

ছবি

এই দাহ্য আগুন কি বিপ্লবী হতাশার বাহ্য রূপ

ভূমিজ বাঁওড় মৎস্যজীবীদের সমাজভিত্তিক সমবায় মালিকানা

মব থামাবে কে?

ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংস্কার

ফিরে দেখা বসন্ত উৎসব

এক যে ছিল স্বৈরাচারের আশির দশক!

রম্যগদ্য : কানামাছির রাজনীতি

চেকের মামলায় জেল খাটলেও টাকা আদায়ের আইনি প্রক্রিয়া

প্রতিক্রিয়াশীলতার ছায়াতলে কেবলই অন্ধকার

স্মরণ : গুরু রবিদাস জী

মাঘী পূর্ণিমা : সম্প্রীতির মধুময় স্মৃতি

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার বিপজ্জনক বাস্তবতা

পুলিশে কেমন সংস্কার চাই?

সত্যিই কি ইউএসএআইডি বন্ধ হয়ে যাবে

রম্যগদ্য: “গো টু দ্য ডেভিল”

এত ক্রোধ, প্রতিহিংসা আর অস্থিরতাÑ সবই কি স্বৈরাচারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া!

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

কেন এই ধ্বংস?

প্রসঙ্গ: সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ

পশ্চিমবঙ্গ : রাজনৈতিক হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : উত্তরণের উপায়

কুষ্ঠ : স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে ইস্যুটি কেন গুরুত্বপূর্ণ

ঔপনিবেশিকতা নাকি মানবতার অবমূল্যায়ন?

রম্যগদ্য : ‘নারী মানেই ব্যভিচারী...’

প্রসঙ্গ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫

ছবি

নীরদ সি চৌধুরী : পেন্ডুলামের মতো দোলায়মান এক বাঙালি চরিত্র

ভোজবাজি ও ভানুমতির খেলা

সড়কে কিশোর মোটরবাইকার : নিয়ন্ত্রণ জরুরি

মব জাস্টিস আইনের শাসনের পরিপন্থি

ছবি

গভীর সংকট আর বড় সম্ভাবনা পাশাপাশি হাঁটছে

জ্ঞানদায়িনী মা সরস্বতী দেবী

‘সংখ্যাস্বল্প’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

সব ক্ষেত্রে বাংলাকে প্রাধান্য দিন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

শিক্ষকরা কেন বারবার মার খাবে?

তৌহিদ-উল বারী

মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫

একটা জাতিকে আলোর পথ দেখাতে নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করা, দিনরাত পরিশ্রম করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা, আলোর মশাল হাতে অন্ধকার জগত থেকে আলোর পথে জাতিকে আহ্বান করা শিক্ষক সমাজ কেন বারবার মার খাবে? সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিই এই শিক্ষক। সেটা সামাজিকভাবে হোক, রাষ্ট্রীয়ভাবে হোক, শিক্ষকরা জাতির গর্বিত সন্তান। তারা কেন লাঞ্ছিত হবে, পথে পথে মার খাবে? তাদের যে জায়গায় নিরাপত্তা দেয়ার কথা, সে জায়গায় তাদের ওপর পুলিশকে লাঠিচার্জ করার অধিকার কে দিয়েছে?

শিক্ষকরা জাতির সম্মানীয় ব্যক্তি এবং শ্রদ্ধার পাত্র। এটি আাজকের নয় বরং বেশ আগে থেকেই সমাজের একটা বড় অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে আমাদের শিক্ষক সমাজ। এরা একটা জাতির পথপ্রদর্শক। সৎ জাতি গঠনে তাদের বলিষ্ঠ অবদান আছে। এটি নিঃসন্দেহে সত্য। আর একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধা দক্ষতা অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে।

দেশের স্বার্থে নিজেদের এতটুকু অবদানের পরেও শিক্ষকরা আজ নিরাপদ নয়। তাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। অদৃশ্য ছায়া বারংবার তাদের তাড়া করে। তাদের লাঞ্ছনার হুমকি দেয়। তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করছে না। কারণ প্রতিনিয়ত তারা মার খাচ্ছে, ভালোকে ভালো আর কালোকে কালো বলতে গেলেই তারা হচ্ছে চরম নির্যাতনের শিকার। এটি কখনো কাম্য নয়। আমরা দেখেছি, বিগত দিনেও শিক্ষকরা চরম লাঞ্ছনার শিকার হতো। কিন্তু আজকের বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশে কেন তা পুনরায় দেখা যাবে। গতকালে শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলাটি অত্যন্ত নক্ক্যারজনক আর হৃদয়বিদারক।

মূলত, ‘গত ২০ জানুয়ারি থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে। তাদের অভিযোগ-২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকার ২৬ হাজার রেজিস্টার প্রাইমারি স্কুলকে জাতীয়করণ করে। কিন্তু, একই পরিপত্রে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসাও জাতীয়করণ করা হয়নি। তাই জুলাই এর গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশে আর বৈষম্য থাকবে না, এক দেশে দুই নীতি চলতে পারে না, জাতীয়করণের এই আশায় তারা জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান করে। পরে ঘটনাক্রমে তাদের ওপর পুলিশ হামলা করে, লাঠিচার্জ করে অনেককে আহতও করে, যা চরম অন্যায়। এই সময়ে এসেও পুলিশের এহেন কর্মকা- কখনোই কাম্য নয়।

কিছু বিতর্কিত কর্মকা-ে শিক্ষকরা অভিযুক্ত হলেও তা খুব কম পরিসরে। বৃহৎ পরিসরে জাতির জন্য কল্যাণকর আর আশীর্বাদরূপে থাকা এই শিক্ষক সমাজকে কখনো হেয় করা যাবে না। এরা জাতির পথপ্রদর্শক। এদেরও চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। এদের জীবন আছে, পরিবার আছে, সংসার আছে। এদেরকেও গুরুত্বের চোখে দেখতে হবে। এদের সঙ্গে বসে এদের অপূর্ণতার গল্পও শুনতে হবে দেশের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের। তবেই তারা নিরাপদে, শান্তিতে আর আদর্শিকভাবে নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে পারবে। মনে রাখতে একটা শিক্ষককে আহত করা মানে জাতি আহত হওয়া।

বলতে গেলে, আমাদের কপাল মন্দ যে একজন শিক্ষক তার ন্যায্য দাবি আদায় করতে গিয়ে জীবন বিলিয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষকরা রাজপথে এসে লাঞ্ছিত হচ্ছেন। একজন শিক্ষকের দাবি-দাওয়া অন্যায্য হতে পারে; অথচ আমাদের ভাবা উচিত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তাদের যে অবদান তাতে তাদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় কেন নামতে হবে? নামলেই বা তাদের ওপর নির্যাতন কেন? বৈঠক করে তবেই সমাধান বের করতে হবে। শিক্ষক সর্বত্রই বিরাজমান। প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকের বাইরেও আমাদের অসংখ্য শিক্ষক রয়েছেন। সবার কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে গভীর শ্রদ্ধা ও পরম মমতাবোধের মাধ্যমে। তাই শিক্ষক সমাজকে মর্যাদা দিতে হবে। সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকদের সব সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন আলোচনা। পিপার গ্যাস নয়; আলোচনার টেবিলেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব।

[লেখক: শিক্ষার্থী]

back to top