এনামুল হক খান
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস। ফেব্রুয়ারি এলে আমরা অনেকে ইতিহাস তুলে ধরি। অনেক ওয়াদা করি। এরপর যেন সব ভুলে যাই। ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই দাবিতে রাজপথে প্রাণ দিয়েছিলেন বহু তরুণ, যুবক, ছাত্র সমাজ। জেল খেটেছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা, নেতারা। রাজপথে প্রাণ দেয়া সেই বীর শহীদদের স্মরণেই আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। সেই আন্দোলনের রেশ ধরেই পরবর্তীতে এসেছে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা। আজ আমাদের দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ। বিদেশীরা নয়Ñ এখন আমরা দেশ চালাই। মা-বোনের ত্যাগ ও বহু প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমরা প্রিয় মাতৃভূমি এবং আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কথা বলার সময় আমরা প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার কথা মাঝে মাঝে মধ্যে ভুলে যাই এটা খুবই দুঃখের। বহুকাল পূর্ব থেকে মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে অন্য অনেক ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে আসছি আমরা। এটা অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। রাস্তার দুপাশের সাইনবোর্ডগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়। যেন জগাখিচুড়ি অবস্থা হয়ে আছে। আছে বিদেশি শব্দ মিশ্রিত শত শত নামের সাইনবোর্ড। দেখলে মাথা ঘুরার অবস্থা হয়। সর্ব ক্ষেত্রে বাংলা যাতে মিশ্র ভাষা আর না হয় সে দিকে আমাদেরই নজর রাখতে হবে। তাই আসুন বাংলার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দিই।
সরকারিভাবে এ বিষয়ে থাকা দরকার আরও বেশি উদ্যোগ। কিন্তু কিছু দিন পূর্বেও আমরা ‘মেট্ধেসঢ়;্রারেল’ নাম দিলাম। এমনেই তো দেশে বাংলা ভাষা আজ হ-য-ব-র-ল হয়ে আছে। প্রতিদিন আমরা মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে অন্য ভাষার শব্দ মিলিয়ে অনেক কথা বলি। সে দিকে যেন কারো কোন নজরই নেই। এখন অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি শব্দের ব্যবহার বেড়েছে। যেমনÑ ভোরে ঘুম থেকে উঠে ‘বাথরুমে’ যাই। বাথরুম ইংরেজি শব্দ। ‘সেন্ডেল’ পায়ে দেই। ‘কমোড’ ব্যবহার করার পর ‘ফ্লাশ’ করি। এখানে আছে বিদেশি ইংরেজি শব্দ। ‘হ্যান্ডওয়াস’ দিয়ে হাত ধুয়ে নেই। বেসিনের সামনে গিয়ে ‘টুথব্রাশ’ ‘টুথপেস্ট’ নেই। দাঁত মাজি, ‘ওজু’ করি, বেরিয়ে ‘নামাজ’ পড়তে ‘জায়নামাজ’ নেই। নামাজ শেষে ‘মোনাজাত’ করি। ‘ডাইনিং’ ‘টেবিলে’ গিয়ে ‘গ্লাস’ হাতে নেই। ‘জগ’ থেকে পানি নিয়ে পানি পান করি। খাটের উপরের লেপ, ‘কম্বল’ গোছানোর কাজ করি। ছেলেমেয়েরা ‘টেবিল’ ‘চেয়ারে’ পড়তে বসে। সবখানে একই অবস্থা। তাদের ‘কলম’ ‘পেন্সিল’ ‘রাবার’ ‘রাফ খাতা’ ‘ব্যাগ’ বলুন তো কোথায় নেই বিদেশি শব্দ। এই বিদেশি শব্দের মধ্যে ইংরেজি শব্দ আমরা অনেক বেশি বলি। সন্তানরা পড়া শেষে ‘প্লেটে’ নাশতা খায়। ‘স্কুল ড্রেস’ পড়ে ‘রিকশায়’ বা ‘বাসে’ গিয়ে ‘স্কুলের গেটে’ নামে। ‘ক্লাস রুমে’ গিয়ে ‘বেঞ্চে’ বসে। ‘ক্লাস টিচার’ আসেন। ‘রুল কল’ শেষে ‘ডাস্টার’ ‘চক’ ‘ব্লাকবোর্ডে’ লিখতে শুরু করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা ‘টিফিন পিরিয়ড’ এ ‘টিফিন’ খায়। বিকেল ৪টায় ‘স্কুল’ ছুটি হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ ‘কমনরুমে’ গিয়ে ‘দাবা’, ‘কেরাম’ খেলা শুরু করল।
কেউ মাঠে ‘ফুটবল’ ‘ভলিবল’ ‘টুর্নামেন্ট’ যোগ দেয়। সবখানেই বিদেশি ইংরেজি শব্দই বেশি। আর এদিকে সন্তানের বাবা সকাল ৯টার পর ‘হোন্ডা’ ‘কার’ বা ‘বাসে’ অফিসে অথবা ব্যাংকে রওনা দিলেন। পথে দেখলেন ঢাকা ‘স্টেডিয়ামের’ পাশে হকাররা ‘ফুটপাত’ দখল করে দোকান বসিয়েছে। প্রত্যেক জেলায় আছে ‘স্টেডিয়াম’। তিনি দেখলেন ‘ফ্লাইওভার’ দিয়ে মানুষ হাঁটছে। ‘লেবাররা’ ‘সুয়ারেজ লাইনে’ কাজ করছে। ইংরেজি শব্দ যেন শেষ হয় না। কেক, পাউরুটি, অফিস, অর্ডার, স্কুল, কলেজ, রাবার, পেন্সিল, বার্গার, চপ, পেন্ট, কোর্ট, সাইকেল, টেলিভিশন, গ্লাস, প্লেট, স্কুল ব্যাগ এই ইংরেজি শব্দগুলো আমরা সব সময়ই বলি। তারপর ‘বায়তুল মোকাররম’ মসজিদ। ইমাম, মোয়াজ্জেম, খুতবা হলো আরবি শব্দ। আরবি শব্দ আরও অনেক বলি আমরা। এর মধ্যে মশলা, ওজন, নগদ, আসল, আদালত, উকিল, মোক্তার, হাকিম, মুন্সেফ, হজ, জাকাত, বই, কেতাব, দোয়াত, কলম, কেচ্ছা, খতমসহ বহু আরবি শব্দ বলি আমরা। অন্যভাষার মধ্যে চা-চিনি, লিচু, এলাচি এমন শব্দগুলো চীনা শব্দ। কফি, লেবু, ঠাকুর, বাবা এগুলো তুর্কি শব্দ। বিস্কুট ফরাসি শব্দ, পেয়ালা, রেস্তোরাঁ, মরিচ, দারোয়ান, বকশিশ, বাজার, সবজি, বস্তা, তরমুজ, ইদগাঁহ, আইন, কাগজগুলোও ফারসি শব্দ।
ঢেঁকি, কুলা, ডুলা, মই, ছাই, চাউল, খাতা, খড়, ঝিনুক, ঝুড়ি, কাজ, জামাই, হাট, এগুলো দেশি শব্দ। মধু, জল, সুখ, সিংহ এগুলো সংস্কৃত শব্দ। ভাই, বোন, চাচা, চাচি, চানাচুর, পানি, খানাপিনা, কাহিনি এগুলো হিন্দি শব্দ। দাম গ্রিক শব্দ, চকোলেট মেক্সিকান শব্দ, ম্যানেজার ইতালিয়ান শব্দ। রিকশা, সাম্পান, প্যাগোডা জাপানি শব্দ। তবে ইংরেজি শব্দ বাংলায় মিশে আছে অনেক বেশি পরিমাণে। যেমনÑ করিম সাহেব এখন গেলেন ‘প্রেস ক্লাবের’ সামানে।
তারপর ‘হাইকোর্ট’ আরও আছে ‘নিউ মার্কেট’, মৌচাক ‘মার্কেট’ আরও কত মার্কেট, আছে আরও অনেক ইংরেজি শব্দে। আবার অফিসগুলোর নাম দেখুনÑ ‘পিডব্লিউডি’ ‘এলজিইডি’ ‘পিডিবি’ ‘সিটি কর্পোরেশন’ ‘ডিপিডিসি’ আরও অনেক অফিসের নাম এমন ইংরেজিতে হয়ে আছে। আবার ব্যাংকগুলোর নাম দেখুনÑ ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ‘সোনালী ব্যাংক’ ‘ন্যাশনাল ব্যাংক’ সবখানে এমন ইংরেজি। ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে চেক বই, পাশ বই। আছে লাইনে দাঁড়ানোর কাজ। কলেজগুলোর দিকে দেখুনÑ কুমিল্লায় আছে ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ’ আছে ‘বাঁশকাইট বি আর আই এম ‘ডিগ্রি’ ‘কলেজ’। ঢাকায় আছে ঢাকা ‘সিটি’ ‘কলেজ’সহ দেশে আছে এমন আরও অনেক স্কুল-কলেজের নাম। আরও আছে সায়েদাবাদ বাস ‘টার্মিনাল’। মহাখালী বাস ‘টার্মিনাল’। আছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। আছে বিদেশি শব্দের বিভিন্ন দোকানের শোরুম। মাতৃভাষার বাংলার চাইতে বিদেশি শব্দ কোথায় কম আছে বলুন। আসুন-আসামি বছরের শুরুতে পাঠ্যবইগুলো সেভাবে সাজাতে চেষ্টা করি। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় মাতৃভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেই। অফিস-আদালতে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে আরও গুরুত্ব দিতে নির্দেশনা দেই। সন্তানদের ভালোভাবে মাতৃভাষা রপ্ত করাই। রাস্তায় ধারের বিদেশি শব্দ ও অক্ষরের লেখা সাইনবোর্ডগুলো কমাতে ব্যবস্থা নেই।
[লেখক: প্রকৌশলী]
এনামুল হক খান
রোববার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ফেব্রুয়ারি মাস ভাষা আন্দোলনের মাস। ফেব্রুয়ারি এলে আমরা অনেকে ইতিহাস তুলে ধরি। অনেক ওয়াদা করি। এরপর যেন সব ভুলে যাই। ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এই দাবিতে রাজপথে প্রাণ দিয়েছিলেন বহু তরুণ, যুবক, ছাত্র সমাজ। জেল খেটেছেন অনেক রাজনৈতিক নেতা, নেতারা। রাজপথে প্রাণ দেয়া সেই বীর শহীদদের স্মরণেই আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। সেই আন্দোলনের রেশ ধরেই পরবর্তীতে এসেছে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা। আজ আমাদের দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ। বিদেশীরা নয়Ñ এখন আমরা দেশ চালাই। মা-বোনের ত্যাগ ও বহু প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমরা প্রিয় মাতৃভূমি এবং আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কথা বলার সময় আমরা প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার কথা মাঝে মাঝে মধ্যে ভুলে যাই এটা খুবই দুঃখের। বহুকাল পূর্ব থেকে মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে অন্য অনেক ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে আসছি আমরা। এটা অবশ্যই বন্ধ করা দরকার। রাস্তার দুপাশের সাইনবোর্ডগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়। যেন জগাখিচুড়ি অবস্থা হয়ে আছে। আছে বিদেশি শব্দ মিশ্রিত শত শত নামের সাইনবোর্ড। দেখলে মাথা ঘুরার অবস্থা হয়। সর্ব ক্ষেত্রে বাংলা যাতে মিশ্র ভাষা আর না হয় সে দিকে আমাদেরই নজর রাখতে হবে। তাই আসুন বাংলার প্রতি আরও বেশি গুরুত্ব দিই।
সরকারিভাবে এ বিষয়ে থাকা দরকার আরও বেশি উদ্যোগ। কিন্তু কিছু দিন পূর্বেও আমরা ‘মেট্ধেসঢ়;্রারেল’ নাম দিলাম। এমনেই তো দেশে বাংলা ভাষা আজ হ-য-ব-র-ল হয়ে আছে। প্রতিদিন আমরা মাতৃভাষা বাংলার সঙ্গে অন্য ভাষার শব্দ মিলিয়ে অনেক কথা বলি। সে দিকে যেন কারো কোন নজরই নেই। এখন অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি শব্দের ব্যবহার বেড়েছে। যেমনÑ ভোরে ঘুম থেকে উঠে ‘বাথরুমে’ যাই। বাথরুম ইংরেজি শব্দ। ‘সেন্ডেল’ পায়ে দেই। ‘কমোড’ ব্যবহার করার পর ‘ফ্লাশ’ করি। এখানে আছে বিদেশি ইংরেজি শব্দ। ‘হ্যান্ডওয়াস’ দিয়ে হাত ধুয়ে নেই। বেসিনের সামনে গিয়ে ‘টুথব্রাশ’ ‘টুথপেস্ট’ নেই। দাঁত মাজি, ‘ওজু’ করি, বেরিয়ে ‘নামাজ’ পড়তে ‘জায়নামাজ’ নেই। নামাজ শেষে ‘মোনাজাত’ করি। ‘ডাইনিং’ ‘টেবিলে’ গিয়ে ‘গ্লাস’ হাতে নেই। ‘জগ’ থেকে পানি নিয়ে পানি পান করি। খাটের উপরের লেপ, ‘কম্বল’ গোছানোর কাজ করি। ছেলেমেয়েরা ‘টেবিল’ ‘চেয়ারে’ পড়তে বসে। সবখানে একই অবস্থা। তাদের ‘কলম’ ‘পেন্সিল’ ‘রাবার’ ‘রাফ খাতা’ ‘ব্যাগ’ বলুন তো কোথায় নেই বিদেশি শব্দ। এই বিদেশি শব্দের মধ্যে ইংরেজি শব্দ আমরা অনেক বেশি বলি। সন্তানরা পড়া শেষে ‘প্লেটে’ নাশতা খায়। ‘স্কুল ড্রেস’ পড়ে ‘রিকশায়’ বা ‘বাসে’ গিয়ে ‘স্কুলের গেটে’ নামে। ‘ক্লাস রুমে’ গিয়ে ‘বেঞ্চে’ বসে। ‘ক্লাস টিচার’ আসেন। ‘রুল কল’ শেষে ‘ডাস্টার’ ‘চক’ ‘ব্লাকবোর্ডে’ লিখতে শুরু করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা ‘টিফিন পিরিয়ড’ এ ‘টিফিন’ খায়। বিকেল ৪টায় ‘স্কুল’ ছুটি হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ ‘কমনরুমে’ গিয়ে ‘দাবা’, ‘কেরাম’ খেলা শুরু করল।
কেউ মাঠে ‘ফুটবল’ ‘ভলিবল’ ‘টুর্নামেন্ট’ যোগ দেয়। সবখানেই বিদেশি ইংরেজি শব্দই বেশি। আর এদিকে সন্তানের বাবা সকাল ৯টার পর ‘হোন্ডা’ ‘কার’ বা ‘বাসে’ অফিসে অথবা ব্যাংকে রওনা দিলেন। পথে দেখলেন ঢাকা ‘স্টেডিয়ামের’ পাশে হকাররা ‘ফুটপাত’ দখল করে দোকান বসিয়েছে। প্রত্যেক জেলায় আছে ‘স্টেডিয়াম’। তিনি দেখলেন ‘ফ্লাইওভার’ দিয়ে মানুষ হাঁটছে। ‘লেবাররা’ ‘সুয়ারেজ লাইনে’ কাজ করছে। ইংরেজি শব্দ যেন শেষ হয় না। কেক, পাউরুটি, অফিস, অর্ডার, স্কুল, কলেজ, রাবার, পেন্সিল, বার্গার, চপ, পেন্ট, কোর্ট, সাইকেল, টেলিভিশন, গ্লাস, প্লেট, স্কুল ব্যাগ এই ইংরেজি শব্দগুলো আমরা সব সময়ই বলি। তারপর ‘বায়তুল মোকাররম’ মসজিদ। ইমাম, মোয়াজ্জেম, খুতবা হলো আরবি শব্দ। আরবি শব্দ আরও অনেক বলি আমরা। এর মধ্যে মশলা, ওজন, নগদ, আসল, আদালত, উকিল, মোক্তার, হাকিম, মুন্সেফ, হজ, জাকাত, বই, কেতাব, দোয়াত, কলম, কেচ্ছা, খতমসহ বহু আরবি শব্দ বলি আমরা। অন্যভাষার মধ্যে চা-চিনি, লিচু, এলাচি এমন শব্দগুলো চীনা শব্দ। কফি, লেবু, ঠাকুর, বাবা এগুলো তুর্কি শব্দ। বিস্কুট ফরাসি শব্দ, পেয়ালা, রেস্তোরাঁ, মরিচ, দারোয়ান, বকশিশ, বাজার, সবজি, বস্তা, তরমুজ, ইদগাঁহ, আইন, কাগজগুলোও ফারসি শব্দ।
ঢেঁকি, কুলা, ডুলা, মই, ছাই, চাউল, খাতা, খড়, ঝিনুক, ঝুড়ি, কাজ, জামাই, হাট, এগুলো দেশি শব্দ। মধু, জল, সুখ, সিংহ এগুলো সংস্কৃত শব্দ। ভাই, বোন, চাচা, চাচি, চানাচুর, পানি, খানাপিনা, কাহিনি এগুলো হিন্দি শব্দ। দাম গ্রিক শব্দ, চকোলেট মেক্সিকান শব্দ, ম্যানেজার ইতালিয়ান শব্দ। রিকশা, সাম্পান, প্যাগোডা জাপানি শব্দ। তবে ইংরেজি শব্দ বাংলায় মিশে আছে অনেক বেশি পরিমাণে। যেমনÑ করিম সাহেব এখন গেলেন ‘প্রেস ক্লাবের’ সামানে।
তারপর ‘হাইকোর্ট’ আরও আছে ‘নিউ মার্কেট’, মৌচাক ‘মার্কেট’ আরও কত মার্কেট, আছে আরও অনেক ইংরেজি শব্দে। আবার অফিসগুলোর নাম দেখুনÑ ‘পিডব্লিউডি’ ‘এলজিইডি’ ‘পিডিবি’ ‘সিটি কর্পোরেশন’ ‘ডিপিডিসি’ আরও অনেক অফিসের নাম এমন ইংরেজিতে হয়ে আছে। আবার ব্যাংকগুলোর নাম দেখুনÑ ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ‘সোনালী ব্যাংক’ ‘ন্যাশনাল ব্যাংক’ সবখানে এমন ইংরেজি। ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে চেক বই, পাশ বই। আছে লাইনে দাঁড়ানোর কাজ। কলেজগুলোর দিকে দেখুনÑ কুমিল্লায় আছে ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ’ আছে ‘বাঁশকাইট বি আর আই এম ‘ডিগ্রি’ ‘কলেজ’। ঢাকায় আছে ঢাকা ‘সিটি’ ‘কলেজ’সহ দেশে আছে এমন আরও অনেক স্কুল-কলেজের নাম। আরও আছে সায়েদাবাদ বাস ‘টার্মিনাল’। মহাখালী বাস ‘টার্মিনাল’। আছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। আছে বিদেশি শব্দের বিভিন্ন দোকানের শোরুম। মাতৃভাষার বাংলার চাইতে বিদেশি শব্দ কোথায় কম আছে বলুন। আসুন-আসামি বছরের শুরুতে পাঠ্যবইগুলো সেভাবে সাজাতে চেষ্টা করি। স্কুল-কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় মাতৃভাষাকে বেশি গুরুত্ব দেই। অফিস-আদালতে আমাদের প্রিয় মাতৃভাষাকে আরও গুরুত্ব দিতে নির্দেশনা দেই। সন্তানদের ভালোভাবে মাতৃভাষা রপ্ত করাই। রাস্তায় ধারের বিদেশি শব্দ ও অক্ষরের লেখা সাইনবোর্ডগুলো কমাতে ব্যবস্থা নেই।
[লেখক: প্রকৌশলী]