alt

উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : প্লিজ স্যার... প্লিজ, ইকটু রেহাই দ্যান...

জাঁ-নেসার ওসমান

: শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

‘ভাই না, বালা, এইডা আবার কি শুরু করলেন- অবৈধ বাপের বৈধ পোলা...!’ যার বাপেরই ঠিক নাই হ্যেয় আবার কেমনে বৈধ হোইবো, মানে আইনসিদ্ধ রূপে সমাজে বিচরণ করবো?’

‘সোনামণি, রহস্যটা ওখানেই, সারা সমাজে এখন অবৈধ বাপের বৈধ সন্তানরা রাজত্ব করছে। এখানে কোনো ব্যাক্তিকে বৈধ বা অবৈধ বলা হচ্ছে না।’

‘কোইতাছেন অবৈধ বাপ, আবার কন, কুনো ব্যক্তিরে কোই নাই! ফাইজলামি পাইছেন? তয় কারে অবৈধ কোইতাছেন?’

‘আরে মনু চ্যেত কা, আমি বলছিলাম, তোদের দেশ পরিচালনার যে সব ইনস্টিটিউশন বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের পিতা ‘অবৈধ’ কিন্তু সন্তানেরা ‘বৈধ’। তাই লিখেছি ‘অবৈধ বাপের বৈধ সন্তান!’ ‘অবৈধ বাপের বৈধ পোলা, পিতাই যদি অবৈধ বা জারজ হয় তয় হ্যের পোলা ক্যেমনে বৈধ হোইবো?’

‘ভাইরে শুভঙ্করের ফাঁকিটা তো ওইখানেই। তোরা বলে দিলি বিগত পনেরো বছর স্বৈরশাষকের সময় যত নির্বাচন হয়েছে সবই অবৈধ, তাহলে যে সব প্রতিষ্ঠান দেশ চালাচ্ছে তারাতো আইনকানুন মেনেই দেশ পরিচালনা করছে। অথচ তোদের মতে ওদের নিয়োগকর্তারা অবৈধ নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে ওরা যদি অবৈধ হয় তাহলে তোদের নিয়োগও অবৈধ।’

‘ওকে ফাইন, কথায় যুক্তি আছে, ঠিক ঠিক, নিয়োগকর্তারা অবৈধ নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে নিয়োগকর্তা যদি অবৈধ হয় তাহলে তাদের নিয়োগ প্রাপ্তরাও অবৈধ।’

‘কিন্তু বাস্তবেতো ওই অবৈধ স্বৈরাচারের নিয়োগ প্রাপ্তরাই বৈধরুপে দেশ পরিচালনা করছে! আর তোরা জনগণ দেশের মালিক তা পুরোপুরি মেনে নিয়েছিস। তাহলে হোলো কিনা ‘অবৈধ বাপের বৈধ সন্তান!’

‘স্যার, আন্নে, ঢাকার মেয়রের নিয়োগ লোই মাতেননি কোনো?’ ‘জ্বি-হ্যাঁ, যেখানে কোর্ট আদেশ দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার স্যারকে নিয়োগ দিতে, ইলেকশন কমিশনের গেজেটে স্যারের নাম রয়েছে, তাহলে ক্যেনো ইঞ্জিনিয়ার স্যারের নিয়োগ হবে না! আবার বারো আউলিয়ার দেশ চট্টগ্রামে তুমি কোর্টের আদেশ মেনে মেয়র দিয়েছো তাহলে ঢাকার দোষ কী?’

‘উম্মারে আন্নে না ইকটু আগে কোইলেন বিগত স্বৈরাচারের আমলের সকল নির্বাচন অবৈধ তায়লে এই মেয়র স্যারের নিয়োগ হোইবো ক্যেম্বায়?’

‘ক্যেম্বায় অ্যাম্বায় যাই বল, তোদের এই বিগত স্বৈরাচারের নির্বাচন বৈধ না অবৈধ এই লড়াই চালাতে যেয়ে মরিচের তো জান শেষ।’

‘মরিচ! মাঝে মাঝে যার কেজি চারশ টাকা! বিগত স্বৈরাচারের নির্বাচন বৈধ না অবৈধ এই লড়াই’Ñএ মরিচ আবার পাইলেন কোই?’

‘আরে বাংলা বাগধারায় আছে না, পাটা-পুতায় ঘষাঘষি করে মাঝখানে মরিচ গলে ভর্তা হয়ে যায়!’

‘কথা ঠিক পাটা-পুতায় ঘষাঘষি মরিচের ফাটলো বিচি, কারণ পাটা-পুতার ঘষার চোটে মরিচের দানা-বিচি সব বায়রায়া মরিচবাটা বইন্না যায়, মা-ঝিয়েরা এই মরিচ বাটা দিয়া সালন রাঁইনিধা পাতে বাইড়া দ্যেয়।’

‘জ্বি, তাই বলছিলাম তোমরা দিনের পর দিন সপ্তম দিন ধরে ইঞ্জিনিয়ার মেয়র সাহেবের যোগদানের জন্য মিছিল ঘেরাও জুলুশ বের করছো আর আমাদের আম জনতার মরিচের মতো খাল, চামড়া, দানা সব বেরিয়ে কদাকার! বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! সেদিন কেবল তোদের এই বৈধ না অবৈধ এই ঘষাঘষির ফলে সদরঘাট থেকে গুলিস্তানে আসতে আমার লেগেছে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। বুঝতে পারিস গাড়ির গ্যাসোলিন, আমার কর্মঘণ্টার বারোটা, তাছাড়া সেদিন টোকাই কালির এজেন্টের পাইওনিয়ারদের সাথে দ্যেখাই করতে

পারিনি। জানিস কতবড় একটা লস হলো! আমার সাথে চুক্তি হলে ঢাকার অন্তত দেড়শ দক্ষ কর্মীর র্কমসংস্থান হতো।’

‘আপনে আছেন মিয়া আপনের ব্যক্তিগত ধান্ধা নিয়া, বাংলার এত্তোবড় একটা সিদ্ধান্ত হেইডা থুয়া আপনে বৌয়ের ছোট ভায়ের মতুন কান্তাছেন।’

‘ওই বুড়বক আমি কি এমনি কান্দি, তুমি স্ত্রীর ছোট ভাই, তুমি কি বুঝবে, আমাদের এই পাটা-পুতায় ঘষাঘষি দেখে সব বড় বড় কট্রাক্টগুলো ভারতে চলে যাচ্ছে, আমাদের পাওনা কাজ তোদের বিগত স্বৈরাচার না, বর্তমান বোতল ও মুলা এই করতে করতে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে আর ভারতের ব্যসায়ীরা মহানন্দে মরণচাঁদের মিষ্টি খাবে আর তোদের অর্থনীতি ধুঁকে ধুঁকে মরবে! এই বাংলাদেশ চেয়েছিলি বুঝি!’

‘কিতা করমু কন? হুনছি ইঞ্জিনিয়ার স্যারের পক্ষে ব্যেবাগ কর্মচারী যুগ দিয়া কোইছে, সামনে ঈদ আইতাছে, আমরা চাইলে পুরা ঢাকা অচল কোইরা দিমু তখন ব্যেবাগ বড় বড় কন্ট্রাক্ট সচল হয়া ভারত পাড়ি দিবো আর বাংলামায়ের অর্থনীতি মানে বাংলাদেশের মালিক সাধারণ জনগণ খুব চল্লিশের দুর্ভিক্ষের মতো না খায়া তাড়াতাড়ি পরপারে পাড়ি জমাইবো।’

‘তাই বলছিলাম খামাখা অসময়ে পরপারে পাড়ি না জমিয়ে আর একবার সব জনতা জেগে ওঠ, সরকারকে বল এইভাবে কার বাপ বৈধ কার বাপ অবৈধ, কোন নির্বাচন সঠিক কোনটা বেঠিক এইসব বাদ দিয়ে নতুন একটা নির্বাচন দিন, জনগণের রায় মেনে নিয়ে সরকারটা নির্বাচিতদের হাতে ছেড়ে দিন। আপনারা সারা জীবন নন-গর্ভমেন্ট অর্গানাইজেশনে বরফ দেয়া বাতাসে, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ অফিসে কাজ করেছেন, দামি-দামি পাজেরো, হাউন্দাই, ঘোনো, ল্যান্ডরোভার গাড়ি দাবড়িয়েছেন, এখন আবার উপদেষ্টা হয়ে আরো বেশি ঠান্ডা বাতাস, আরো বড় গাড়ি চড়ছেন; আর জীবনের সন্ধিকালে বাংলাদেশ আপনাদের অনেক দিয়েছে এবার আম-জনতাকে একটু রেহাই দিন। আমাদের একটু নিরাপদে শান্তিতে ঘুমাতে দিন!’

‘হ’ মিয়া ভাই আপনে ঠিকই কোইছেন, এই বাঙালি বাঙালি মাইরপিট আর সহ্য হয় না। আমাগো পোলাপান বড় হয়া কি যে হোইবো কিছুই বুঝবার পারি না। বিশ্বাস করেন স্যার, আপনাদের প্রতিদিনের এই দাবি-দাওয়ার ঠ্যেলায় ওই মরিচের মতুন আমাগো দানা, মানে জান বাইর হয়া যাইতাছে। এইবার এই ঈদের আগে আমাগো ইকটু রেহাই দ্যান। প্লিজ স্যার... প্লিজ, ইকটু রেহাই দ্যান...।’

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

পিতৃতন্ত্রের মনস্তত্ত্ব ও নারীর গ-িবদ্ধতা

চিরতন ও কালীচরণ : শতবর্ষ আগে যারা আইনের মঞ্চে উঠেছিলেন

জমি, সম্মান ও প্রতিহিংসার নির্মম রাজনীতি

জানি তিনি মোড়ল বটে, আমাদের কেন তা হতে হবে

ভূমি মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় যুগোপযোগী আমূল সংস্কার জরুরি

বরেন্দ্রর মাটিতে আমের বিপ্লব : সম্ভাবনা ও সতর্কবার্তা

অবশেষে ‘হাসিনা’ গ্রেফতার

স্ক্যাবিস সংক্রমণের কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়

বাস্তবমুখী বাজেটের প্রত্যাশা : বৈষম্যহীন অর্থনীতির পথে কতটা অগ্রগতি?

কৌশল নয়, এবার প্রযুক্তিতে সৌদি-মার্কিন জোট

সিউল : স্বর্গ নেমেছে ধরায়

নাচোল বিদ্রোহ ও ইলা মিত্র সংগ্রহশালা : সাঁওতাল স্মৃতি কেন উপেক্ষিত?

ছবি

অন্ধকার সত্য, শেষ সত্য নয়!

বিয়েতে মিতব্যয়িতা

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বঞ্চনার কথা

রোহিঙ্গা সমস্যা : বাহবা, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যতের ভয়

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদে শৈশব : স্ক্রিন টাইম গিলে খাচ্ছে খেলার মাঠ

রমগদ্য : সিরাজগঞ্জে ‘ব্রিটিশ প্রেতাত্মা’

বামপন্থা : নীতির সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : জনশিক্ষা ও সুশাসনের পথ

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রম্যগদ্য : প্লিজ স্যার... প্লিজ, ইকটু রেহাই দ্যান...

জাঁ-নেসার ওসমান

শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

‘ভাই না, বালা, এইডা আবার কি শুরু করলেন- অবৈধ বাপের বৈধ পোলা...!’ যার বাপেরই ঠিক নাই হ্যেয় আবার কেমনে বৈধ হোইবো, মানে আইনসিদ্ধ রূপে সমাজে বিচরণ করবো?’

‘সোনামণি, রহস্যটা ওখানেই, সারা সমাজে এখন অবৈধ বাপের বৈধ সন্তানরা রাজত্ব করছে। এখানে কোনো ব্যাক্তিকে বৈধ বা অবৈধ বলা হচ্ছে না।’

‘কোইতাছেন অবৈধ বাপ, আবার কন, কুনো ব্যক্তিরে কোই নাই! ফাইজলামি পাইছেন? তয় কারে অবৈধ কোইতাছেন?’

‘আরে মনু চ্যেত কা, আমি বলছিলাম, তোদের দেশ পরিচালনার যে সব ইনস্টিটিউশন বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের পিতা ‘অবৈধ’ কিন্তু সন্তানেরা ‘বৈধ’। তাই লিখেছি ‘অবৈধ বাপের বৈধ সন্তান!’ ‘অবৈধ বাপের বৈধ পোলা, পিতাই যদি অবৈধ বা জারজ হয় তয় হ্যের পোলা ক্যেমনে বৈধ হোইবো?’

‘ভাইরে শুভঙ্করের ফাঁকিটা তো ওইখানেই। তোরা বলে দিলি বিগত পনেরো বছর স্বৈরশাষকের সময় যত নির্বাচন হয়েছে সবই অবৈধ, তাহলে যে সব প্রতিষ্ঠান দেশ চালাচ্ছে তারাতো আইনকানুন মেনেই দেশ পরিচালনা করছে। অথচ তোদের মতে ওদের নিয়োগকর্তারা অবৈধ নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে ওরা যদি অবৈধ হয় তাহলে তোদের নিয়োগও অবৈধ।’

‘ওকে ফাইন, কথায় যুক্তি আছে, ঠিক ঠিক, নিয়োগকর্তারা অবৈধ নির্বাচনে প্রতিষ্ঠিত, তাহলে নিয়োগকর্তা যদি অবৈধ হয় তাহলে তাদের নিয়োগ প্রাপ্তরাও অবৈধ।’

‘কিন্তু বাস্তবেতো ওই অবৈধ স্বৈরাচারের নিয়োগ প্রাপ্তরাই বৈধরুপে দেশ পরিচালনা করছে! আর তোরা জনগণ দেশের মালিক তা পুরোপুরি মেনে নিয়েছিস। তাহলে হোলো কিনা ‘অবৈধ বাপের বৈধ সন্তান!’

‘স্যার, আন্নে, ঢাকার মেয়রের নিয়োগ লোই মাতেননি কোনো?’ ‘জ্বি-হ্যাঁ, যেখানে কোর্ট আদেশ দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার স্যারকে নিয়োগ দিতে, ইলেকশন কমিশনের গেজেটে স্যারের নাম রয়েছে, তাহলে ক্যেনো ইঞ্জিনিয়ার স্যারের নিয়োগ হবে না! আবার বারো আউলিয়ার দেশ চট্টগ্রামে তুমি কোর্টের আদেশ মেনে মেয়র দিয়েছো তাহলে ঢাকার দোষ কী?’

‘উম্মারে আন্নে না ইকটু আগে কোইলেন বিগত স্বৈরাচারের আমলের সকল নির্বাচন অবৈধ তায়লে এই মেয়র স্যারের নিয়োগ হোইবো ক্যেম্বায়?’

‘ক্যেম্বায় অ্যাম্বায় যাই বল, তোদের এই বিগত স্বৈরাচারের নির্বাচন বৈধ না অবৈধ এই লড়াই চালাতে যেয়ে মরিচের তো জান শেষ।’

‘মরিচ! মাঝে মাঝে যার কেজি চারশ টাকা! বিগত স্বৈরাচারের নির্বাচন বৈধ না অবৈধ এই লড়াই’Ñএ মরিচ আবার পাইলেন কোই?’

‘আরে বাংলা বাগধারায় আছে না, পাটা-পুতায় ঘষাঘষি করে মাঝখানে মরিচ গলে ভর্তা হয়ে যায়!’

‘কথা ঠিক পাটা-পুতায় ঘষাঘষি মরিচের ফাটলো বিচি, কারণ পাটা-পুতার ঘষার চোটে মরিচের দানা-বিচি সব বায়রায়া মরিচবাটা বইন্না যায়, মা-ঝিয়েরা এই মরিচ বাটা দিয়া সালন রাঁইনিধা পাতে বাইড়া দ্যেয়।’

‘জ্বি, তাই বলছিলাম তোমরা দিনের পর দিন সপ্তম দিন ধরে ইঞ্জিনিয়ার মেয়র সাহেবের যোগদানের জন্য মিছিল ঘেরাও জুলুশ বের করছো আর আমাদের আম জনতার মরিচের মতো খাল, চামড়া, দানা সব বেরিয়ে কদাকার! বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! সেদিন কেবল তোদের এই বৈধ না অবৈধ এই ঘষাঘষির ফলে সদরঘাট থেকে গুলিস্তানে আসতে আমার লেগেছে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টা। বুঝতে পারিস গাড়ির গ্যাসোলিন, আমার কর্মঘণ্টার বারোটা, তাছাড়া সেদিন টোকাই কালির এজেন্টের পাইওনিয়ারদের সাথে দ্যেখাই করতে

পারিনি। জানিস কতবড় একটা লস হলো! আমার সাথে চুক্তি হলে ঢাকার অন্তত দেড়শ দক্ষ কর্মীর র্কমসংস্থান হতো।’

‘আপনে আছেন মিয়া আপনের ব্যক্তিগত ধান্ধা নিয়া, বাংলার এত্তোবড় একটা সিদ্ধান্ত হেইডা থুয়া আপনে বৌয়ের ছোট ভায়ের মতুন কান্তাছেন।’

‘ওই বুড়বক আমি কি এমনি কান্দি, তুমি স্ত্রীর ছোট ভাই, তুমি কি বুঝবে, আমাদের এই পাটা-পুতায় ঘষাঘষি দেখে সব বড় বড় কট্রাক্টগুলো ভারতে চলে যাচ্ছে, আমাদের পাওনা কাজ তোদের বিগত স্বৈরাচার না, বর্তমান বোতল ও মুলা এই করতে করতে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে আর ভারতের ব্যসায়ীরা মহানন্দে মরণচাঁদের মিষ্টি খাবে আর তোদের অর্থনীতি ধুঁকে ধুঁকে মরবে! এই বাংলাদেশ চেয়েছিলি বুঝি!’

‘কিতা করমু কন? হুনছি ইঞ্জিনিয়ার স্যারের পক্ষে ব্যেবাগ কর্মচারী যুগ দিয়া কোইছে, সামনে ঈদ আইতাছে, আমরা চাইলে পুরা ঢাকা অচল কোইরা দিমু তখন ব্যেবাগ বড় বড় কন্ট্রাক্ট সচল হয়া ভারত পাড়ি দিবো আর বাংলামায়ের অর্থনীতি মানে বাংলাদেশের মালিক সাধারণ জনগণ খুব চল্লিশের দুর্ভিক্ষের মতো না খায়া তাড়াতাড়ি পরপারে পাড়ি জমাইবো।’

‘তাই বলছিলাম খামাখা অসময়ে পরপারে পাড়ি না জমিয়ে আর একবার সব জনতা জেগে ওঠ, সরকারকে বল এইভাবে কার বাপ বৈধ কার বাপ অবৈধ, কোন নির্বাচন সঠিক কোনটা বেঠিক এইসব বাদ দিয়ে নতুন একটা নির্বাচন দিন, জনগণের রায় মেনে নিয়ে সরকারটা নির্বাচিতদের হাতে ছেড়ে দিন। আপনারা সারা জীবন নন-গর্ভমেন্ট অর্গানাইজেশনে বরফ দেয়া বাতাসে, শীততাপ নিয়ন্ত্রণ অফিসে কাজ করেছেন, দামি-দামি পাজেরো, হাউন্দাই, ঘোনো, ল্যান্ডরোভার গাড়ি দাবড়িয়েছেন, এখন আবার উপদেষ্টা হয়ে আরো বেশি ঠান্ডা বাতাস, আরো বড় গাড়ি চড়ছেন; আর জীবনের সন্ধিকালে বাংলাদেশ আপনাদের অনেক দিয়েছে এবার আম-জনতাকে একটু রেহাই দিন। আমাদের একটু নিরাপদে শান্তিতে ঘুমাতে দিন!’

‘হ’ মিয়া ভাই আপনে ঠিকই কোইছেন, এই বাঙালি বাঙালি মাইরপিট আর সহ্য হয় না। আমাগো পোলাপান বড় হয়া কি যে হোইবো কিছুই বুঝবার পারি না। বিশ্বাস করেন স্যার, আপনাদের প্রতিদিনের এই দাবি-দাওয়ার ঠ্যেলায় ওই মরিচের মতুন আমাগো দানা, মানে জান বাইর হয়া যাইতাছে। এইবার এই ঈদের আগে আমাগো ইকটু রেহাই দ্যান। প্লিজ স্যার... প্লিজ, ইকটু রেহাই দ্যান...।’

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

back to top