মিথুশিলাক মুরমু
বিগত ৫ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীরা দিনের আলোয় প্রকাশ্যে ধ্বংস করে দেয় মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সিধু-কানুর ভাস্কর্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সিধু-কানুকে নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ১০ মাইলের তেভাগা চত্বরস্থ ভাস্কর্যটি ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও নান্দনিক। এই ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আদিবাসীরা অনুপ্রাণিত হতেন, সাহস অর্জন করতেন, নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আরও বেশি সচেতন ও অগ্রগামী হতেন।
উপমহাদেশের স্বাধীনতাকামী সংগ্রামের ইতিহাসে সিধু-কানু, চাদ-ভাইরো, ফুলো-জানো প্রমুখ আদিবাসী নেতাদের নাম উজ্জ্বলভাবে লেখা রয়েছে। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আদিবাসী সাঁওতালরা যখন ন্যায়বিচার ও মানবিক জীবনের আশায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনে নামেন, তখন তারা ছিলেন নিরক্ষর, কিন্তু চেতনাগতভাবে ছিলেন দূরদর্শী। মহাজন, জোতদার ও জমিদারদের নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তারা পদযাত্রা করেছিলেন কলকাতার দিকে, ব্রিটিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দুর্দশার কথা পৌঁছে দিতে। এটিকেই উপমহাদেশের প্রথম শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা বা লংমার্চ হিসেবে মনে করা হয়, যদিও পরবর্তী সময়ে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে এবং এর জন্য সাঁওতালদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।
সিধু-কানুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় আদিবাসীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এর প্রতিবাদে ২৮ আগস্ট, ২০২৪ দিনাজপুরের রাজপথে বড় আকারের মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই আন্দোলনে আদিবাসীদের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন।
নেতৃত্ব দেন ঈশ্বর টুডু, রবি হেমব্রম, প্রদীপ খালকো, মিখায়েল সরেন, লাপল কড়া ও কুপুরাম হেমব্রমের মতো নেতারা। তারা ভাস্কর্য ধ্বংসকে একটি সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেছেন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে পুনঃনির্মাণের দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেছেন।
এই ভাস্কর্যটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও আত্মপরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ছিল। ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এটি উদ্বোধন করেন। ভাস্কর্যটির শীর্ষে ছিল সিধু-কানুর তীর-ধনুকসহ মূর্তি এবং নিচের অংশে ছিল তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ইলা মিত্র, গুরুদাস তালুকদার, হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও খোকা বাইশের প্রতিকৃতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী বলেছিলেন, ‘১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ না হলে আমাদের স্বাধীনতা আসত না। এই বিদ্রোহই পাকিস্তানিদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তীর-ধনুকের সাহস কামানের চেয়েও শক্তিশালী।’
সাঁওতাল ও অন্যান্য আদিবাসীরা মহান মুক্তিযুদ্ধেও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি বাহিনীর আগমনের সংবাদে তারা তীর-ধনুক হাতে ঘেরাও করে ক্যাম্পটি। অত্যাধুনিক অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়েও প্রাণ উৎসর্গ করে দেশের জন্য। এই ইতিহাস প্রমাণ করে, আদিবাসীদের দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত।
৫ আগস্ট সিধু-কানুর ভাস্কর্য ও তীর-ধনুক ভেঙে দেয়ার ঘটনা শুধুই একটি মূর্তি ভাঙা নয়Ñ এটি একটি চেতনা, একটি সংগ্রাম, একটি ইতিহাসকে আঘাত করা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় ও জেলা শহরের দেয়ালে দেয়ালে আদিবাসীদের তীর-ধনুকসংবলিত প্রতিকৃতি আমাদের স্মৃতি ও চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। হাজারের বেশি আদিবাসী শিক্ষার্থী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তা স্পষ্ট করেছে যে, তারা নিজেদের ইতিহাস ও নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সচেতন।
এই ঘটনা আমাদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ, শোক ও প্রতিবাদের সঞ্চার করেছে। মনে হয়েছে, একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে আদিবাসীদের আত্মপরিচয় ও সংগ্রামের ইতিহাসকে ধূলিসাৎ করতে চেয়েছে। কিন্তু সিধু-কানু শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং উপমহাদেশের ন্যায়সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রতীক। তাদের আদর্শ ও চেতনার উত্তরসূরিরাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সাহস দেখিয়েছেন।
তীর-ধনুক শুধু অস্ত্র নয়Ñএটি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, জীবনযুদ্ধের অংশ। আজও তারা বাৎসরিক শিকার উৎসব কিংবা স্বাভাবিক সময়ে তীর-ধনুক ব্যবহার করে থাকেন; কিন্তু কোনো সময়ই প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেন না। এমনকি ১৮৫৫ সালের বিদ্রোহেও তারা তীরের বিষ প্রয়োগ থেকে বিরত ছিলেন, কারণ তাদের কাছে মানবিকতা ও নৈতিকতা ছিল সর্বাগ্রে।
গত বছর ও চলতি বছর একাধিকবার দিনাজপুর ভ্রমণে গিয়েছি। সেখানকার মানুষ, বিশেষত আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আজও চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই ভাস্কর্যের স্থানে। যে জায়গাটি একসময় আত্মমর্যাদা ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিল, সেটি এখন ধ্বংসাবশেষ মাত্র।
আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাইÑ দিনাজপুরের তেভাগা চত্বরে সিধু-কানুর ভাস্কর্য পুনঃনির্মাণ করতে হবে। এটি কেবল আদিবাসীদের আবেগ নয়, এটি একটি ন্যায়বিচার ও ইতিহাসের স্বীকৃতির প্রশ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং জাতির ন্যায়পরায়ণ অংশ তাদের পাশে থাকবে।
সিধু-কানুদের তীর-ধনুক শুধু অস্ত্র নয়, আমাদের ন্যায়সংগ্রামের প্রতীক। এই প্রতীককে ধ্বংস করে ইতিহাস চাপা দেয়া যায় নাÑবরং ইতিহাস আরও দৃঢ় হয়ে ফিরে আসে। অতএব, পুনঃনির্মাণই হবে সবচেয়ে যথার্থ জবাব।
[লেখক : কলামিস্ট]
মিথুশিলাক মুরমু
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
বিগত ৫ আগস্ট, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে চিহ্নিত দুষ্কৃতিকারীরা দিনের আলোয় প্রকাশ্যে ধ্বংস করে দেয় মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা সিধু-কানুর ভাস্কর্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সিধু-কানুকে নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ১০ মাইলের তেভাগা চত্বরস্থ ভাস্কর্যটি ছিল সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও নান্দনিক। এই ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আদিবাসীরা অনুপ্রাণিত হতেন, সাহস অর্জন করতেন, নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আরও বেশি সচেতন ও অগ্রগামী হতেন।
উপমহাদেশের স্বাধীনতাকামী সংগ্রামের ইতিহাসে সিধু-কানু, চাদ-ভাইরো, ফুলো-জানো প্রমুখ আদিবাসী নেতাদের নাম উজ্জ্বলভাবে লেখা রয়েছে। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে আদিবাসী সাঁওতালরা যখন ন্যায়বিচার ও মানবিক জীবনের আশায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলনে নামেন, তখন তারা ছিলেন নিরক্ষর, কিন্তু চেতনাগতভাবে ছিলেন দূরদর্শী। মহাজন, জোতদার ও জমিদারদের নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তারা পদযাত্রা করেছিলেন কলকাতার দিকে, ব্রিটিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দুর্দশার কথা পৌঁছে দিতে। এটিকেই উপমহাদেশের প্রথম শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা বা লংমার্চ হিসেবে মনে করা হয়, যদিও পরবর্তী সময়ে তা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে এবং এর জন্য সাঁওতালদের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।
সিধু-কানুর ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় আদিবাসীদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। এর প্রতিবাদে ২৮ আগস্ট, ২০২৪ দিনাজপুরের রাজপথে বড় আকারের মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই আন্দোলনে আদিবাসীদের পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন।
নেতৃত্ব দেন ঈশ্বর টুডু, রবি হেমব্রম, প্রদীপ খালকো, মিখায়েল সরেন, লাপল কড়া ও কুপুরাম হেমব্রমের মতো নেতারা। তারা ভাস্কর্য ধ্বংসকে একটি সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেছেন এবং জেলা প্রশাসকের কাছে পুনঃনির্মাণের দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি পেশ করেছেন।
এই ভাস্কর্যটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার ও আত্মপরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক ছিল। ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এটি উদ্বোধন করেন। ভাস্কর্যটির শীর্ষে ছিল সিধু-কানুর তীর-ধনুকসহ মূর্তি এবং নিচের অংশে ছিল তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ইলা মিত্র, গুরুদাস তালুকদার, হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও খোকা বাইশের প্রতিকৃতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গওহর রিজভী বলেছিলেন, ‘১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ না হলে আমাদের স্বাধীনতা আসত না। এই বিদ্রোহই পাকিস্তানিদের বুঝিয়ে দিয়েছিল যে তীর-ধনুকের সাহস কামানের চেয়েও শক্তিশালী।’
সাঁওতাল ও অন্যান্য আদিবাসীরা মহান মুক্তিযুদ্ধেও সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তানি বাহিনীর আগমনের সংবাদে তারা তীর-ধনুক হাতে ঘেরাও করে ক্যাম্পটি। অত্যাধুনিক অস্ত্রের মুখে দাঁড়িয়েও প্রাণ উৎসর্গ করে দেশের জন্য। এই ইতিহাস প্রমাণ করে, আদিবাসীদের দেশপ্রেম প্রশ্নাতীত।
৫ আগস্ট সিধু-কানুর ভাস্কর্য ও তীর-ধনুক ভেঙে দেয়ার ঘটনা শুধুই একটি মূর্তি ভাঙা নয়Ñ এটি একটি চেতনা, একটি সংগ্রাম, একটি ইতিহাসকে আঘাত করা। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় ও জেলা শহরের দেয়ালে দেয়ালে আদিবাসীদের তীর-ধনুকসংবলিত প্রতিকৃতি আমাদের স্মৃতি ও চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছে। হাজারের বেশি আদিবাসী শিক্ষার্থী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তা স্পষ্ট করেছে যে, তারা নিজেদের ইতিহাস ও নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সচেতন।
এই ঘটনা আমাদের মধ্যে গভীর ক্ষোভ, শোক ও প্রতিবাদের সঞ্চার করেছে। মনে হয়েছে, একদল দুর্বৃত্ত পরিকল্পিতভাবে আদিবাসীদের আত্মপরিচয় ও সংগ্রামের ইতিহাসকে ধূলিসাৎ করতে চেয়েছে। কিন্তু সিধু-কানু শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং উপমহাদেশের ন্যায়সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রতীক। তাদের আদর্শ ও চেতনার উত্তরসূরিরাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সাহস দেখিয়েছেন।
তীর-ধনুক শুধু অস্ত্র নয়Ñএটি আদিবাসীদের সংস্কৃতি, জীবনযুদ্ধের অংশ। আজও তারা বাৎসরিক শিকার উৎসব কিংবা স্বাভাবিক সময়ে তীর-ধনুক ব্যবহার করে থাকেন; কিন্তু কোনো সময়ই প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করেন না। এমনকি ১৮৫৫ সালের বিদ্রোহেও তারা তীরের বিষ প্রয়োগ থেকে বিরত ছিলেন, কারণ তাদের কাছে মানবিকতা ও নৈতিকতা ছিল সর্বাগ্রে।
গত বছর ও চলতি বছর একাধিকবার দিনাজপুর ভ্রমণে গিয়েছি। সেখানকার মানুষ, বিশেষত আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আজও চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই ভাস্কর্যের স্থানে। যে জায়গাটি একসময় আত্মমর্যাদা ও অনুপ্রেরণার উৎস ছিল, সেটি এখন ধ্বংসাবশেষ মাত্র।
আমরা জোরালোভাবে দাবি জানাইÑ দিনাজপুরের তেভাগা চত্বরে সিধু-কানুর ভাস্কর্য পুনঃনির্মাণ করতে হবে। এটি কেবল আদিবাসীদের আবেগ নয়, এটি একটি ন্যায়বিচার ও ইতিহাসের স্বীকৃতির প্রশ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং জাতির ন্যায়পরায়ণ অংশ তাদের পাশে থাকবে।
সিধু-কানুদের তীর-ধনুক শুধু অস্ত্র নয়, আমাদের ন্যায়সংগ্রামের প্রতীক। এই প্রতীককে ধ্বংস করে ইতিহাস চাপা দেয়া যায় নাÑবরং ইতিহাস আরও দৃঢ় হয়ে ফিরে আসে। অতএব, পুনঃনির্মাণই হবে সবচেয়ে যথার্থ জবাব।
[লেখক : কলামিস্ট]