বশীর আহমেদ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে তৎকালীন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন
একজন ইউটিউবার, তিনি আবার নেট দুনিয়ায় দারুণ সরব, প্যারিসে বসে তিনি বাংলাদেশে বিপ্লবের তালিম দিয়ে খ্যাতিমান হয়েছেন। এই দেশের সকল ভালো এবং মন্দের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সম্পর্কহীন। তথাপি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে জাতিকে বুদ্ধি বিতরণের সঙ্গে নিজের রুজি অর্জনের ব্যবস্থাটা বেশ জমিয়েছেন। বেশ তো! সমাজের কায়েমি ভাবনাশ্রয়ী বিয়োগ-যোগের এলেমদারগণ তাকে বেশ গিলেছেন। মূলত এটাই তার মজবুত পুঁজি। তবে সত্যের খাতিরে বলতে হবে, তদীয় কর্মপটুতা একেবারে অকাজে বিসর্জিত হয়নি। নিজের সুকৌশলী আত্মকর্মসংস্থান, সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে স্বজাতির এই সেবাদান অবশ্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বটে!
সম্প্রতি একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বাছবিচারহীন গণহত্যায় ১ হাজার বাঙালি নিহত হওয়ার তত্ত্ব তিনি হাজির করেছেন। এটা তার জন্য বেশ বড়সড় খাদ্য; কী বুঝে গিললেন, তা বোঝা মুশকিল। তবে এই খাদ্য গেলার মতো গহ্বর এবং হজমের মেশিন তার থাকার কথা নয়। তবু গিলেছেন। কেন, তা তিনিই ভালো জানেন। বস্তুত, এমন ভাবনায় আচ্ছন্ন গোষ্ঠী; একটা সংখ্যা এদেশে আছে। তারা মওকা পেলেই টিপ্পনি চিল্লানি দেয়; যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতির পালস্ বুঝতে চায়। ঘটনাচক্রে দেশে পানি ঘোলা হওয়ার এই উর্বরা সময়ে তারা বেশ সংঘবদ্ধ, সরব। আর তাই একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং সংঘটিত গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়ে প্রচারমাধ্যমে হাজির হচ্ছে। এভাবে অন্তরে পুষে রাখা বিকৃত বিকারগ্রস্ত জিঘাংসা মেটাতে চাইছে। কোনো সত্য খোঁজা এর উদ্দেশ্য নয়, একাত্তরে স্বজাতিদ্রোহী হওয়ার অপকর্ম হালকা করার এটা পরিকল্পিত অপপ্রয়াস মাত্র। তাতে হঠাৎ মতলবি বাতাসের ঝলক দিলেন সু-স্বখ্যাত বীর বাঙালি প্রবর প্যারিসিয়ান।
একাত্তরে গণহত্যার অসহায় শিকার শহীদের সংখ্যা; যা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্পর্শকাতর এবং ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; মোটেই কোনো হেলাফেলার বস্তু নয়। নয় কারো ইচ্ছা পূরণ অথবা ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিলাসিতা। গণহত্যার শিকার শহীদের সংখ্যার ধারণা পেতে এবং সংখ্যাটা হঠাৎ ১ হাজারে টেনে নামানোর জঘন্য কা-ের পর কিছু উপাত্ত নিয়ে তাই আলোচনা করা যেতে পারে।
পৃথিবীর ইতিহাসে বহু যুদ্ধ সংঘাত এবং তাতে পরিকল্পিত গণহত্যার নজির কম নয়। আলবেনিয়া, ইন্দো-চীন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধ সংঘাতগুলো অসংখ্য অগণিত মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় আকীর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনুমিত প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এই সংখ্যা কিন্তু কেউ কখনো গণনা করেননি। তথ্য-উপাত্ত এবং হত্যার ধরণ বিশ্লেষণ করে সংখ্যা নিরূপিত হয়েছে। একইভাবে, একাত্তরে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত নারকীয় গণহত্যায় নিহতের সংখ্যাও তদ্রুপ এক ধারণা প্রসূত; যার ভিত্তি গড়ে উঠেছে প্রাপ্ত তথ্যের নিরিখে; কোনো স্বকল্পিত কাহিনীর বর্ণনা থেকে নয়।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নির্দেশদাতা পাকিস্তানের কুখ্যাত মদ্যপ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ ‘লাল’ করে দেয়ার হুকুম দিয়েছিল। এটা ছিল একাত্তরে দখলকৃত পূর্ব পাকিস্তানে বাছবিচারহীন গণহত্যার সুস্পষ্ট সবুজ সংকেত; যা পরিপূর্ণ মাত্রায় কার্যকর করেছিল শতাব্দির নৃশংসতম খুনি-ধর্ষক পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এপ্রিল মাসে সেনাবাহিনী পরিচালিত সামরিক অপারেশনগুলো দেখার জন্য পাকিস্তানি সাংবাদিকদের একটি দলকে অবরুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানায় সরকার। দলে করাচিরবাসী সাংবাদিক অ্যান্থনী ম্যাসকার্ণহাস অন্তর্ভুক্ত হয়ে কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া সফর করেন। সেই সফরে তিনি দখলিকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি, চলমান সামরিক অভিযানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সরকারের মনস্তত্ব জানার চেষ্টা করেন। আলোচনার পাশাপাশি তিনি প্রচুর ছবি তোলেন। সামরিক অভিযানে সংঘটিত বেপরোয়া গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, ভয়াবহতার মাত্রা দেখে এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুনে স্তম্ভিত ম্যাসকার্নহাস গোটা বিষয়টি দ্রুত বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে মনস্থির করেন।
সেই ভাবনায় করাচি ফিরেই তিনি চিকিৎসার কথা বলে সপরিবারে লন্ডন চলে যান। অতঃপর তৈরি করেন নিজের চোখে দেখে আসা নির্মমতার আলেখ্য, পিলে চমকানো রিপোর্ট ‘জেনোসাইড’; যা প্রকাশিত হয় ১৩ জুন, ১৯৭১; লন্ডনের সাপ্তাহিক সানডে টাইমস পত্রিকায়। সেনা অধিকৃত পূর্ব পাকিস্তানে যে নারকীয় নির্মমতায় গণহত্যা চলছিল তা পূর্ণ দুই পৃষ্ঠা (১৬ কলাম) জুড়ে প্রকাশ পেলে নড়ে ওঠে বিশ্ব বিবেক। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর থেকে উদ্ঘাটিত রক্ত হিম করা প্রথম সরেজমিন রিপোর্ট কার্ণহাসের জেনোসাইড। রিপোর্টের তথ্য প্রমাণ, স্নায়ু-বিধ্বংসী বিকৃত বীভৎস ছবিগুলো প্রথমবারের মতো দুনিয়া কাঁপায়।
‘জেনোসাইড’ রিপোর্টে ম্যাসকার্ণহাস লিখেন, ‘জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার এক নিজস্ব চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেছেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে এবার পরিশুদ্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এমনকি এর অর্থ যদি হয় ২০ লাখ বা ততধিক মানুষ হত্যা এবং প্রদেশটি টানা ৩০ বছর উপনিবেশ হিসাবে কঠোর হাতে শাসন করা’Ñ ঢাকা এবং কুমিল্লাতে উচ্চপদস্থ বহু সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা আমাকে ক্রমাগত এই ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি লিখেছিলেন, ‘এখন পূর্ব বাংলায় যেন তারই ভয়ংকর ধারাবাহিকতায় পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঠিক সেটাই করে চলেছে; যা ছিল তাদের মনস্তাত্ত্বিক অভিযোগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
সেই রিপোর্টে ম্যাসকার্ণহাস লিখেন, ‘পাকিস্তানিরা ধরেই নিয়েছে, এখানকার সবাই হিন্দু হয়ে গেছে। পাকিস্তানি সেনারা এখন রেজিম চেন্জ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে আবার তাদের মুসলমান বানাবে। এই দেশে দীর্ঘ দখলদারিত্ব বজায় রেখে সেনাবাহিনী পর্যায়ক্রমে একটি মিশ্র এবং সঙ্কর জাতি উৎপাদনে অগ্রসর হবে।’
হ্যাঁ, দখদারিত্বের পূর্ণতা দিতে এবং হিন্দু জনগোষ্ঠী উচ্ছেদের অর্থ শুধু দেশান্তর ছিল না, প্রয়োজনে হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনীর টার্গেটেড ফিগার ছিল ২০ লাখেরও অধিক। এটা শুধু ধারণামাত্র; বাস্তবে হত্যার পরিধি আসলে যে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছিল, সেই তথ্য কারো পক্ষে অনুমান করা একেবারেই সম্ভব ছিল না।
বাহাত্তরে ইয়াহিয়া খানের পতন এবং পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে একাত্তর সালে সামরিক বিপর্যয়ের মূল কারণ অনুসন্ধানে বাঙালি বিচারপতি হামদুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করে। যুদ্ধবন্দীরা দেশে ফেরার পর কমিশন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বিস্তারিত জবানবন্দি রেকর্ড করে। তাতে পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি কমিশনের প্রশ্নে জানায়, তার ধারণামতে পূর্ব পাকিস্তানে ৯ মাসের যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহতের আনুমানিক সংখ্যা ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ হতে পারে। স্মরণযোগ্য, পরাজিত বাহিনীর প্রধান তার অধীনস্ত বাহিনীর নৃশংসতা যে কমিয়ে ছাড়া বাড়িয়ে বলেনি, সেটা খুব সাধারণ অনুমানেই বোঝা যায়।
এই বিষয়টি ভিন্ন আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে। বলাবাহুল্য, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে গণহত্যার শিকার শহীদের সংখ্যা সম্পর্কে একটি বাস্তবসম্মত ধারণা পাওয়ার চাবিকাঠি। সেটা হলো, সরকারি আদমশুমারি রিপোর্ট। একত্রিত পাকিস্তানে সর্বশেষ আদমশুমারি হয় ১৯৬৯ সালের জুন মাসে। সেই শুমারিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৯৮ লাখ। এর পরবর্তী আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আমলে, ১৯৭৪ সালে। ’৬৯ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার ছিল, তার ভিত্তিতে ’৭৪ সালে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা হওয়ার কথা ৮ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু ’৭৪ এর আদমশুমারিতে জনসংখ্যা পাওয়া যায় ৭ কোটি ৭৪ লাখ। অর্থাৎ বাস্তবতার চাইতে ঘাটতি জনসংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। শুমারিতে পাওয়া হিসাবের এই বিপুল বিশাল ঘাটতি জনসংখ্যা তাহলে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? বলা হয়ে থাকে, একাত্তরে ভারতে যাওয়া শরণার্থীরা সবাই দেশে ফেরেনি। সেটা সত্য হলেও সেই সংখ্যা তো আর এত বিশাল নয়। একাত্তরের ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানি নরপশুদের হাতে বাছবিচারহীনভাবে গণহত্যার শিকার না হয়ে থাকলে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ কি তবে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?
সুতরাং একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার শিকার মানুষের সংখ্যা নিয়ে কোনো আবেগ অথবা অতিশয়োক্তি নয়, বরং বাস্তবতার নিরিখে তা যে বিপুল বিশাল এবং সংখ্যাটা অনুমিত প্রায় ৩০ লাখের আশপাশে হতে পারে, এমন দাবি অযৌক্তিক নয়।
দেশে একটি চিরচেনা মহল যেন ধরেই নিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি উসকে দিতে পারলে তাদের পক্ষে পাকিস্তানিদের সহযোগিতার দায় হালকা করা যাবে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বহু কথা বলা হয়েছে। বাঙালির রক্তঝরা মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যার কথা দেশে এবং বিদেশে আলোচিত প্রসঙ্গ। আর সেই গণহত্যায় ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যাটিও এক প্রতিষ্ঠিত সত্য। তথাপি প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এবং অবিশ্বাস্য বিকৃত বিজাতীয় জিঘাংসায়। সত্য যে, গণহত্যার শিকার শহীদের সংখ্যা অনুমাননির্ভর হলেও তা মুক্তিযুদ্ধে জড়িত ওয়াকেবহাল ব্যক্তিগন এবং সংস্থাগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফসল। এই দাবি যদিও তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল, তবে হঠাৎ আবিস্কৃত কোনো কিছু নয়। পরবর্তী সময়ে নানা তথ্যপ্রমাণ এবং গবেষণার উপাত্তের জেরে এনিয়ে কাউকে আর কখনো প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি।
পুনশ্চ : দেশে পাকিস্তানি বাসমতি চাল আসা আরম্ভ হলে সৈয়দপুর শহরের এক খাবার হোটেলের পেছন দিকে উর্দুভাষী বিহারিদের আড্ডায় শোনা স্বগতোক্তিÑ ‘পাকিস্তান আগিঁয়ারে কিঁউ কে বাসমতি চাল আগিঁয়া; পাকিস্তানি মার্বেল চিপস কেয়া মশহুর হ্যায় ভাই; পাকিস্তানি কাপড়া, আহ দিল জ্বলতা হ্যায় ইয়ার; ওহ পাকিস্তানি জেনানা, মারহাবা আন্ধেরে মে কেয়া চমক। ইয়ে গাদ্দার লোক পাকিস্তান তোড়কে কেয়া মাথা থাবড়াতা হ্যায়!’
হ্যাঁ, সত্যই তো কিছুসংখ্যক মানুষ মাথা থাবড়াতাই হ্যায়! ওরা বাংলা মায়ের বেজম্মা, কুসন্তান অবশ্য হতেই পারে। কারণ একাত্তরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বাঙালি। এখন ৫৪ বছর পর সেই শহীদের সংখ্যা ১ হাজার নাকি ৩০ লাখ সেই বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে অন্য কেউ নয়, স্বয়ং বাঙালি। সংখ্যাটা ৩ লাখ হলেই বা কী? তাতে কি হত্যাকারীদের অপরাধের দায় কমে যায়? আর এই বিতর্কের আয়োজনটাই বা কী কারণে; কার প্রয়োজনে?
একাত্তরে যারা জীবন দিল, বুকের রক্ত ঢেলে তৈরি করল বাঙালির প্রথম স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং লাল-সবুজের নতুন জাতীয় পতাকা; তাদেরকে জড়িয়ে এই সমস্ত অর্থহীন বিজাতীয় বিদ্রুপাত্মক বিতর্ক ক্ষমার অযোগ্য হওয়া উচিত।
[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, প্রাবন্ধিক]
বশীর আহমেদ
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা নিয়ে তৎকালীন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
একজন ইউটিউবার, তিনি আবার নেট দুনিয়ায় দারুণ সরব, প্যারিসে বসে তিনি বাংলাদেশে বিপ্লবের তালিম দিয়ে খ্যাতিমান হয়েছেন। এই দেশের সকল ভালো এবং মন্দের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে সম্পর্কহীন। তথাপি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে জাতিকে বুদ্ধি বিতরণের সঙ্গে নিজের রুজি অর্জনের ব্যবস্থাটা বেশ জমিয়েছেন। বেশ তো! সমাজের কায়েমি ভাবনাশ্রয়ী বিয়োগ-যোগের এলেমদারগণ তাকে বেশ গিলেছেন। মূলত এটাই তার মজবুত পুঁজি। তবে সত্যের খাতিরে বলতে হবে, তদীয় কর্মপটুতা একেবারে অকাজে বিসর্জিত হয়নি। নিজের সুকৌশলী আত্মকর্মসংস্থান, সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে স্বজাতির এই সেবাদান অবশ্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বটে!
সম্প্রতি একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের বাছবিচারহীন গণহত্যায় ১ হাজার বাঙালি নিহত হওয়ার তত্ত্ব তিনি হাজির করেছেন। এটা তার জন্য বেশ বড়সড় খাদ্য; কী বুঝে গিললেন, তা বোঝা মুশকিল। তবে এই খাদ্য গেলার মতো গহ্বর এবং হজমের মেশিন তার থাকার কথা নয়। তবু গিলেছেন। কেন, তা তিনিই ভালো জানেন। বস্তুত, এমন ভাবনায় আচ্ছন্ন গোষ্ঠী; একটা সংখ্যা এদেশে আছে। তারা মওকা পেলেই টিপ্পনি চিল্লানি দেয়; যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জাতির পালস্ বুঝতে চায়। ঘটনাচক্রে দেশে পানি ঘোলা হওয়ার এই উর্বরা সময়ে তারা বেশ সংঘবদ্ধ, সরব। আর তাই একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ এবং সংঘটিত গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক উসকে দিয়ে প্রচারমাধ্যমে হাজির হচ্ছে। এভাবে অন্তরে পুষে রাখা বিকৃত বিকারগ্রস্ত জিঘাংসা মেটাতে চাইছে। কোনো সত্য খোঁজা এর উদ্দেশ্য নয়, একাত্তরে স্বজাতিদ্রোহী হওয়ার অপকর্ম হালকা করার এটা পরিকল্পিত অপপ্রয়াস মাত্র। তাতে হঠাৎ মতলবি বাতাসের ঝলক দিলেন সু-স্বখ্যাত বীর বাঙালি প্রবর প্যারিসিয়ান।
একাত্তরে গণহত্যার অসহায় শিকার শহীদের সংখ্যা; যা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্পর্শকাতর এবং ঐতিহাসিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান; মোটেই কোনো হেলাফেলার বস্তু নয়। নয় কারো ইচ্ছা পূরণ অথবা ভালো লাগা, মন্দ লাগার বিলাসিতা। গণহত্যার শিকার শহীদের সংখ্যার ধারণা পেতে এবং সংখ্যাটা হঠাৎ ১ হাজারে টেনে নামানোর জঘন্য কা-ের পর কিছু উপাত্ত নিয়ে তাই আলোচনা করা যেতে পারে।
পৃথিবীর ইতিহাসে বহু যুদ্ধ সংঘাত এবং তাতে পরিকল্পিত গণহত্যার নজির কম নয়। আলবেনিয়া, ইন্দো-চীন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধ সংঘাতগুলো অসংখ্য অগণিত মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় আকীর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অনুমিত প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ নিহত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এই সংখ্যা কিন্তু কেউ কখনো গণনা করেননি। তথ্য-উপাত্ত এবং হত্যার ধরণ বিশ্লেষণ করে সংখ্যা নিরূপিত হয়েছে। একইভাবে, একাত্তরে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত নারকীয় গণহত্যায় নিহতের সংখ্যাও তদ্রুপ এক ধারণা প্রসূত; যার ভিত্তি গড়ে উঠেছে প্রাপ্ত তথ্যের নিরিখে; কোনো স্বকল্পিত কাহিনীর বর্ণনা থেকে নয়।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নির্দেশদাতা পাকিস্তানের কুখ্যাত মদ্যপ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ ‘লাল’ করে দেয়ার হুকুম দিয়েছিল। এটা ছিল একাত্তরে দখলকৃত পূর্ব পাকিস্তানে বাছবিচারহীন গণহত্যার সুস্পষ্ট সবুজ সংকেত; যা পরিপূর্ণ মাত্রায় কার্যকর করেছিল শতাব্দির নৃশংসতম খুনি-ধর্ষক পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এপ্রিল মাসে সেনাবাহিনী পরিচালিত সামরিক অপারেশনগুলো দেখার জন্য পাকিস্তানি সাংবাদিকদের একটি দলকে অবরুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানায় সরকার। দলে করাচিরবাসী সাংবাদিক অ্যান্থনী ম্যাসকার্ণহাস অন্তর্ভুক্ত হয়ে কুমিল্লা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া সফর করেন। সেই সফরে তিনি দখলিকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন সামরিক কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি, চলমান সামরিক অভিযানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং সরকারের মনস্তত্ব জানার চেষ্টা করেন। আলোচনার পাশাপাশি তিনি প্রচুর ছবি তোলেন। সামরিক অভিযানে সংঘটিত বেপরোয়া গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ, ভয়াবহতার মাত্রা দেখে এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা শুনে স্তম্ভিত ম্যাসকার্নহাস গোটা বিষয়টি দ্রুত বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে মনস্থির করেন।
সেই ভাবনায় করাচি ফিরেই তিনি চিকিৎসার কথা বলে সপরিবারে লন্ডন চলে যান। অতঃপর তৈরি করেন নিজের চোখে দেখে আসা নির্মমতার আলেখ্য, পিলে চমকানো রিপোর্ট ‘জেনোসাইড’; যা প্রকাশিত হয় ১৩ জুন, ১৯৭১; লন্ডনের সাপ্তাহিক সানডে টাইমস পত্রিকায়। সেনা অধিকৃত পূর্ব পাকিস্তানে যে নারকীয় নির্মমতায় গণহত্যা চলছিল তা পূর্ণ দুই পৃষ্ঠা (১৬ কলাম) জুড়ে প্রকাশ পেলে নড়ে ওঠে বিশ্ব বিবেক। একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর থেকে উদ্ঘাটিত রক্ত হিম করা প্রথম সরেজমিন রিপোর্ট কার্ণহাসের জেনোসাইড। রিপোর্টের তথ্য প্রমাণ, স্নায়ু-বিধ্বংসী বিকৃত বীভৎস ছবিগুলো প্রথমবারের মতো দুনিয়া কাঁপায়।
‘জেনোসাইড’ রিপোর্টে ম্যাসকার্ণহাস লিখেন, ‘জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার এক নিজস্ব চূড়ান্ত সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ক্রমশ এগিয়ে চলেছেন। আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্নতার হুমকি থেকে এবার পরিশুদ্ধ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এমনকি এর অর্থ যদি হয় ২০ লাখ বা ততধিক মানুষ হত্যা এবং প্রদেশটি টানা ৩০ বছর উপনিবেশ হিসাবে কঠোর হাতে শাসন করা’Ñ ঢাকা এবং কুমিল্লাতে উচ্চপদস্থ বহু সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা আমাকে ক্রমাগত এই ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তিনি লিখেছিলেন, ‘এখন পূর্ব বাংলায় যেন তারই ভয়ংকর ধারাবাহিকতায় পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঠিক সেটাই করে চলেছে; যা ছিল তাদের মনস্তাত্ত্বিক অভিযোগের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
সেই রিপোর্টে ম্যাসকার্ণহাস লিখেন, ‘পাকিস্তানিরা ধরেই নিয়েছে, এখানকার সবাই হিন্দু হয়ে গেছে। পাকিস্তানি সেনারা এখন রেজিম চেন্জ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে আবার তাদের মুসলমান বানাবে। এই দেশে দীর্ঘ দখলদারিত্ব বজায় রেখে সেনাবাহিনী পর্যায়ক্রমে একটি মিশ্র এবং সঙ্কর জাতি উৎপাদনে অগ্রসর হবে।’
হ্যাঁ, দখদারিত্বের পূর্ণতা দিতে এবং হিন্দু জনগোষ্ঠী উচ্ছেদের অর্থ শুধু দেশান্তর ছিল না, প্রয়োজনে হত্যা করার জন্য সেনাবাহিনীর টার্গেটেড ফিগার ছিল ২০ লাখেরও অধিক। এটা শুধু ধারণামাত্র; বাস্তবে হত্যার পরিধি আসলে যে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছিল, সেই তথ্য কারো পক্ষে অনুমান করা একেবারেই সম্ভব ছিল না।
বাহাত্তরে ইয়াহিয়া খানের পতন এবং পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে একাত্তর সালে সামরিক বিপর্যয়ের মূল কারণ অনুসন্ধানে বাঙালি বিচারপতি হামদুর রহমানের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করে। যুদ্ধবন্দীরা দেশে ফেরার পর কমিশন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বিস্তারিত জবানবন্দি রেকর্ড করে। তাতে পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি কমিশনের প্রশ্নে জানায়, তার ধারণামতে পূর্ব পাকিস্তানে ৯ মাসের যুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহতের আনুমানিক সংখ্যা ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ হতে পারে। স্মরণযোগ্য, পরাজিত বাহিনীর প্রধান তার অধীনস্ত বাহিনীর নৃশংসতা যে কমিয়ে ছাড়া বাড়িয়ে বলেনি, সেটা খুব সাধারণ অনুমানেই বোঝা যায়।
এই বিষয়টি ভিন্ন আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে। বলাবাহুল্য, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে গণহত্যার শিকার শহীদের সংখ্যা সম্পর্কে একটি বাস্তবসম্মত ধারণা পাওয়ার চাবিকাঠি। সেটা হলো, সরকারি আদমশুমারি রিপোর্ট। একত্রিত পাকিস্তানে সর্বশেষ আদমশুমারি হয় ১৯৬৯ সালের জুন মাসে। সেই শুমারিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৯৮ লাখ। এর পরবর্তী আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আমলে, ১৯৭৪ সালে। ’৬৯ সালের আদমশুমারিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে হার ছিল, তার ভিত্তিতে ’৭৪ সালে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা হওয়ার কথা ৮ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু ’৭৪ এর আদমশুমারিতে জনসংখ্যা পাওয়া যায় ৭ কোটি ৭৪ লাখ। অর্থাৎ বাস্তবতার চাইতে ঘাটতি জনসংখ্যা প্রায় ৩৭ লাখ। শুমারিতে পাওয়া হিসাবের এই বিপুল বিশাল ঘাটতি জনসংখ্যা তাহলে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? বলা হয়ে থাকে, একাত্তরে ভারতে যাওয়া শরণার্থীরা সবাই দেশে ফেরেনি। সেটা সত্য হলেও সেই সংখ্যা তো আর এত বিশাল নয়। একাত্তরের ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানি নরপশুদের হাতে বাছবিচারহীনভাবে গণহত্যার শিকার না হয়ে থাকলে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ কি তবে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল?
সুতরাং একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার শিকার মানুষের সংখ্যা নিয়ে কোনো আবেগ অথবা অতিশয়োক্তি নয়, বরং বাস্তবতার নিরিখে তা যে বিপুল বিশাল এবং সংখ্যাটা অনুমিত প্রায় ৩০ লাখের আশপাশে হতে পারে, এমন দাবি অযৌক্তিক নয়।
দেশে একটি চিরচেনা মহল যেন ধরেই নিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি উসকে দিতে পারলে তাদের পক্ষে পাকিস্তানিদের সহযোগিতার দায় হালকা করা যাবে। এর আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বহু কথা বলা হয়েছে। বাঙালির রক্তঝরা মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরিকল্পিত গণহত্যার কথা দেশে এবং বিদেশে আলোচিত প্রসঙ্গ। আর সেই গণহত্যায় ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যাটিও এক প্রতিষ্ঠিত সত্য। তথাপি প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, এবং অবিশ্বাস্য বিকৃত বিজাতীয় জিঘাংসায়। সত্য যে, গণহত্যার শিকার শহীদের সংখ্যা অনুমাননির্ভর হলেও তা মুক্তিযুদ্ধে জড়িত ওয়াকেবহাল ব্যক্তিগন এবং সংস্থাগুলোর নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফসল। এই দাবি যদিও তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল, তবে হঠাৎ আবিস্কৃত কোনো কিছু নয়। পরবর্তী সময়ে নানা তথ্যপ্রমাণ এবং গবেষণার উপাত্তের জেরে এনিয়ে কাউকে আর কখনো প্রশ্ন তুলতে দেখা যায়নি।
পুনশ্চ : দেশে পাকিস্তানি বাসমতি চাল আসা আরম্ভ হলে সৈয়দপুর শহরের এক খাবার হোটেলের পেছন দিকে উর্দুভাষী বিহারিদের আড্ডায় শোনা স্বগতোক্তিÑ ‘পাকিস্তান আগিঁয়ারে কিঁউ কে বাসমতি চাল আগিঁয়া; পাকিস্তানি মার্বেল চিপস কেয়া মশহুর হ্যায় ভাই; পাকিস্তানি কাপড়া, আহ দিল জ্বলতা হ্যায় ইয়ার; ওহ পাকিস্তানি জেনানা, মারহাবা আন্ধেরে মে কেয়া চমক। ইয়ে গাদ্দার লোক পাকিস্তান তোড়কে কেয়া মাথা থাবড়াতা হ্যায়!’
হ্যাঁ, সত্যই তো কিছুসংখ্যক মানুষ মাথা থাবড়াতাই হ্যায়! ওরা বাংলা মায়ের বেজম্মা, কুসন্তান অবশ্য হতেই পারে। কারণ একাত্তরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে বাঙালি। এখন ৫৪ বছর পর সেই শহীদের সংখ্যা ১ হাজার নাকি ৩০ লাখ সেই বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে অন্য কেউ নয়, স্বয়ং বাঙালি। সংখ্যাটা ৩ লাখ হলেই বা কী? তাতে কি হত্যাকারীদের অপরাধের দায় কমে যায়? আর এই বিতর্কের আয়োজনটাই বা কী কারণে; কার প্রয়োজনে?
একাত্তরে যারা জীবন দিল, বুকের রক্ত ঢেলে তৈরি করল বাঙালির প্রথম স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং লাল-সবুজের নতুন জাতীয় পতাকা; তাদেরকে জড়িয়ে এই সমস্ত অর্থহীন বিজাতীয় বিদ্রুপাত্মক বিতর্ক ক্ষমার অযোগ্য হওয়া উচিত।
[লেখক : মুক্তিযোদ্ধা, প্রাবন্ধিক]