alt

opinion » post-editorial

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : একজন বিধায়কের জামিন

গৌতম রায়

: শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আবার একটু শরগরম হয়ে উঠবেÑ দুর্নীতির দায়ে জেলে থাকা তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়াকে ঘিরে। পার্থ যখন নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে জেলে যান, তখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন পার্থবাবু দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হন। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট, বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিভিন্ন পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। এতগুলি রাজনৈতিক দল বা দলের সমন্বয়ে পরিচালিত সরকার পশ্চিমবঙ্গে একদা ছিল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরই, দুর্নীতির দায়ে প্রথম কোনও কর্মরত মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। অতীতে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার আগেও মদন মিত্র গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরিশেষে কর্মরত শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ বাবু গ্রেপ্তার হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পার্থবাবু গ্রেপ্তার হন।

পার্থ বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাসক শিবির এবং শাসক অনুগত মিডিয়া এই গ্রেপ্তার, তারই বান্ধবীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার- তাদের বন্ধুত্বের সমীকরণ, এই সমস্ত বিষয় ঘিরে এত বেশি আলোচনায় মেতে থেকেছে, তার একমাত্র কারণ হলো; নিয়োগ দুর্নীতির মূল বিষয়টি থেকে যাতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিটা অন্য দিকে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ, তারা নানা ধরনের রসাত্মক গল্প ভালোবাসে। আর ঠিক সেই কারণেই পার্থবাবুর ব্যক্তি জীবন ঘিরে এমন এমন খবর সংবাদমাধ্যম বের করতে শুরু করে, যাতে পার্থবাবুর ব্যক্তি জীবন, অবৈধ প্রণয় ইত্যাদির মতো অরাজনৈতিক বিষয়গুলি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে আসে। আড়ালে চলে যেতে থাকে নিয়োগ দুর্নীতির কথা। মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হতে থাকে শিক্ষা দুর্নীতির কথা।

দীর্ঘ সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে থাকাকালীনই শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে ক্রমশ রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশ পশ্চিমবঙ্গের জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট ও মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটা বড় অংশের শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। রাজ্য সরকার নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে, দুর্নীতিকে আড়াল করতে, যোগ্য অযোগ্যদের তালিকা কখনো কোনও অবস্থাতেই সামনে আনেনি। চাকরি হারা শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করতে কখনো তারা দায় আইন আদালতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো বা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বামপন্থী রাজনীতির সংযোগ ঘিরে নিজেদের মতো করে গল্প তৈরি করেছে। এভাবেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের ঘুষ নিয়ে অযোগ্য লোকেদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি থেকে গোটা পরিবেশ পরিস্থিতির দৃষ্টিটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুর করার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আলোচনাটাই বেশি করে উঠে আসছে যে ই ডি, সি বি আই ইত্যাদির ব্যর্থতার কারণেই পার্থবাবুর জামিন। ভারতের আইন ব্যবস্থার যে পরিকাঠামো তাতে বিচারাধীন কোন ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন জামিন না দিয়ে, তাকে জেলবন্দি করে রাখার সেভাবে কোন আইনি সংস্থান নেই। সিবিআইয়ের অসহযোগিতা বা অপদার্থতার বিষয়টি সত্য হলেও আইনি ব্যবস্থায় বিচার চলাকালীন কোন ব্যক্তির শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত, দীর্ঘদিন তাকে জেলে আটক করে রাখা বেশ কঠিন ব্যাপার। অপরাধীদের সম্পর্কে পুলিশ -প্রশাসন ইত্যাদির হাতে আইন জনিত যতই সংস্থান থাকুক না কেন, সাজা না হলে খুব গুরুতর অপরাধীকেউ পুলিশ দীর্ঘদিন জেলে আটক করে রাখতে পারে না।

তাই একদিক থেকে বিচার করলে দেখতে হয়, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক দেওয়া পার্থবাবুর এই জামিন স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হল এই যে, ই ডি-সি বি আই পার্থবাবুর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চার্জশিটে সে ধরনের কোনো বিষয়বস্তু রাখতে পারেনি, যার দ্বারা তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। ফলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না করা গেলে একজন বিচারাধীন ব্যক্তি কে কতকাল জেলে আটক করে রাখা সম্ভব?

তাই এখানে বিশেষভাবে প্রশ্ন ওঠে, কেন চার্জশিট ইত্যাদির ক্ষেত্রে ই ডি-সি বি আই নির্দিষ্ট পথে হাঁটলো না? চার্জশিটে আইনগত ফাঁক রাখলে সহজেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন হয়ে যাবেÑ এটা তো ইডি-সিবিআই না জানার কথা নয় ।

আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি জেলের বাইরে বেরিয়ে এলে মামলাকে যে প্রভাবিত করবে নাÑ সে কথা তো কোন অবস্থাতেই হলফ করে বলতে পারা যায় না। জেলের বাইরে থাকলে পার্থ মামলাকে প্রভাবিত করবেÑ এই যুক্তিতে একাধিকবার পার্থের জামিনের আবেদন বাতিল হয়েছে।

তাহলে পার্থবাবুর জামিনের বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করবার ক্ষেত্রে কি ইডি-সিবিআই এমন একটা অবস্থান নিতে চেয়েছে যে, সাধারণ মানুষের কাছে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া, আর সেই কারণে একাধিক লোকের চাকরি যাওয়াÑ এই গোটা বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের বিষয়টাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক। ইডি-সিবিআই কি এমনটা চেয়েছে বলেই এইরকম একটা পরিপ্রেক্ষিত তৈরি তারা করেছে যার জন্যে মহমান্য সুপ্রিম কোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন পাওয়াটা খুব সহজ হয়ে গেল?

মানুষের মন থেকে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া, ভয়াবহ দুর্নীতিÑ এই সমস্ত বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতা মুছে দিয়ে, এখন কেবলমাত্র পাত্রাধার তৈল, না তৈলাধার পাত্রের মতো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের ময়নাতদন্তটাই যাতে মানুষের মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠুকÑ এটাই চাইছে শাসকেরা? রাজ্যের শাসকের মতো কেন্দ্রশাসকও কি এটাই চায়?

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নতুন ট্র্যাজেডি

হোক সবুজ বিপ্লব

নিউটনের আপেল : পতনের ভেতরে জাগরণের গল্প

বায়ুদূষণ গবেষণার প্রসার ও তরুণদের ভূমিকা : প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা আহমদ

চাপে সামষ্টিক অর্থনীতি

ছবি

একাত্তরের গণহত্যা : সংখ্যার বিতর্ক নাকি দায় হালকা করার চেষ্টা?

রম্যগদ্য : ‘দালাল-ধন্বন্তরি-জীবন রক্ষাকারী...’

সাদা পাথর লুটে সর্বদলীয় ঐক্য

গণিতের বহুমুখী ব্যবহার : আধুনিক বিজ্ঞানের চালিকাশক্তি

প্রসঙ্গ : পেঁপের রিং স্পট ভাইরাস

ছবি

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : রাজনৈতিক বিভেদের অমোচনীয় ক্ষত

ছবি

আলফ্রেড সরেন হত্যা : বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

কারাম উৎসব : বাংলার প্রাচীন কৃষি ও সংস্কৃতির ধারক

ছবি

আলাস্কা বৈঠক : শান্তির দেখা কি মিলল?

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ কতদূর?

মবের উন্মাদনা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার

জীবন থেকে নেয়া শিক্ষাগুলোই এগিয়ে দেয় জীবনকে

রাজনৈতিক কর্মসূচি, যানজট ও আচরণগত অর্থনীতি

সম্পদের অভিশাপ : সিলেটের সাদাপাথরে সংঘাতের সমাজতত্ত্ব ও নীতি-সংকট

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে তো

মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার জরুরি

ছবি

সাদাপাথরের নীলাভ দেশ : ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য ও সংকট

একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সমাজতত্ত্ব

বেইজিংয়ের সঙ্গে নয়াদিল্লির নতুন ভূরাজনীতি

মব ও জাস্টিস

ইতিহাসকে নতুন করে লেখা এক জগাখিচুড়ি!

নারীর সমঅধিকার : সমাজ পরিবর্তনের চাবিকাঠি

জ্ঞানের মঞ্চ এখন সার্কাস, গবেষণা সেখানে নীরব দর্শক

ছবি

ভরা শ্রাবণে স্বদেশ-ভাবনা

নারীর প্রতি সহিংসতা : বাস্তবতা, আইন ও প্রতিরোধের জরুরি দিকনির্দেশনা

ছাত্র রাজনীতি : নেতৃত্বের হাতেখড়ি নাকি দাসত্বের লেজুড়বৃত্তি?

ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

ছবি

উন্নয়ন ও প্রকৃতি

ছবি

কৃষকের চেয়ে বড় উদ্যোক্তা আর কে আছে

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষাগত ও সামাজিক সমস্যা

ট্রেড ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

tab

opinion » post-editorial

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : একজন বিধায়কের জামিন

গৌতম রায়

শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আবার একটু শরগরম হয়ে উঠবেÑ দুর্নীতির দায়ে জেলে থাকা তৃণমূল নেতা তথা বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন পাওয়াকে ঘিরে। পার্থ যখন নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে জেলে যান, তখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমন্ত্রী। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন পার্থবাবু দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হন। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট, বামফ্রন্ট এবং তৃণমূল কংগ্রেস বিভিন্ন পশ্চিমবঙ্গের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন। এতগুলি রাজনৈতিক দল বা দলের সমন্বয়ে পরিচালিত সরকার পশ্চিমবঙ্গে একদা ছিল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরই, দুর্নীতির দায়ে প্রথম কোনও কর্মরত মন্ত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। অতীতে খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার আগেও মদন মিত্র গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরিশেষে কর্মরত শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ বাবু গ্রেপ্তার হয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পার্থবাবু গ্রেপ্তার হন।

পার্থ বাবু গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাসক শিবির এবং শাসক অনুগত মিডিয়া এই গ্রেপ্তার, তারই বান্ধবীর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উদ্ধার- তাদের বন্ধুত্বের সমীকরণ, এই সমস্ত বিষয় ঘিরে এত বেশি আলোচনায় মেতে থেকেছে, তার একমাত্র কারণ হলো; নিয়োগ দুর্নীতির মূল বিষয়টি থেকে যাতে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিটা অন্য দিকে পরিচালিত হয়। সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ, তারা নানা ধরনের রসাত্মক গল্প ভালোবাসে। আর ঠিক সেই কারণেই পার্থবাবুর ব্যক্তি জীবন ঘিরে এমন এমন খবর সংবাদমাধ্যম বের করতে শুরু করে, যাতে পার্থবাবুর ব্যক্তি জীবন, অবৈধ প্রণয় ইত্যাদির মতো অরাজনৈতিক বিষয়গুলি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে আসে। আড়ালে চলে যেতে থাকে নিয়োগ দুর্নীতির কথা। মানুষের মন থেকে মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা হতে থাকে শিক্ষা দুর্নীতির কথা।

দীর্ঘ সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে থাকাকালীনই শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে ক্রমশ রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবেশ পশ্চিমবঙ্গের জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট ও মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটা বড় অংশের শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। রাজ্য সরকার নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে, দুর্নীতিকে আড়াল করতে, যোগ্য অযোগ্যদের তালিকা কখনো কোনও অবস্থাতেই সামনে আনেনি। চাকরি হারা শিক্ষকদের বিভ্রান্ত করতে কখনো তারা দায় আইন আদালতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো বা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বামপন্থী রাজনীতির সংযোগ ঘিরে নিজেদের মতো করে গল্প তৈরি করেছে। এভাবেই শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের ঘুষ নিয়ে অযোগ্য লোকেদের চাকরি দেওয়ার বিষয়টি থেকে গোটা পরিবেশ পরিস্থিতির দৃষ্টিটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুর করার পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই আলোচনাটাই বেশি করে উঠে আসছে যে ই ডি, সি বি আই ইত্যাদির ব্যর্থতার কারণেই পার্থবাবুর জামিন। ভারতের আইন ব্যবস্থার যে পরিকাঠামো তাতে বিচারাধীন কোন ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন জামিন না দিয়ে, তাকে জেলবন্দি করে রাখার সেভাবে কোন আইনি সংস্থান নেই। সিবিআইয়ের অসহযোগিতা বা অপদার্থতার বিষয়টি সত্য হলেও আইনি ব্যবস্থায় বিচার চলাকালীন কোন ব্যক্তির শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত, দীর্ঘদিন তাকে জেলে আটক করে রাখা বেশ কঠিন ব্যাপার। অপরাধীদের সম্পর্কে পুলিশ -প্রশাসন ইত্যাদির হাতে আইন জনিত যতই সংস্থান থাকুক না কেন, সাজা না হলে খুব গুরুতর অপরাধীকেউ পুলিশ দীর্ঘদিন জেলে আটক করে রাখতে পারে না।

তাই একদিক থেকে বিচার করলে দেখতে হয়, সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক দেওয়া পার্থবাবুর এই জামিন স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন হল এই যে, ই ডি-সি বি আই পার্থবাবুর বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট চার্জশিটে সে ধরনের কোনো বিষয়বস্তু রাখতে পারেনি, যার দ্বারা তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। ফলে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না করা গেলে একজন বিচারাধীন ব্যক্তি কে কতকাল জেলে আটক করে রাখা সম্ভব?

তাই এখানে বিশেষভাবে প্রশ্ন ওঠে, কেন চার্জশিট ইত্যাদির ক্ষেত্রে ই ডি-সি বি আই নির্দিষ্ট পথে হাঁটলো না? চার্জশিটে আইনগত ফাঁক রাখলে সহজেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন হয়ে যাবেÑ এটা তো ইডি-সিবিআই না জানার কথা নয় ।

আর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি জেলের বাইরে বেরিয়ে এলে মামলাকে যে প্রভাবিত করবে নাÑ সে কথা তো কোন অবস্থাতেই হলফ করে বলতে পারা যায় না। জেলের বাইরে থাকলে পার্থ মামলাকে প্রভাবিত করবেÑ এই যুক্তিতে একাধিকবার পার্থের জামিনের আবেদন বাতিল হয়েছে।

তাহলে পার্থবাবুর জামিনের বিষয়টির পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করবার ক্ষেত্রে কি ইডি-সিবিআই এমন একটা অবস্থান নিতে চেয়েছে যে, সাধারণ মানুষের কাছে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া, আর সেই কারণে একাধিক লোকের চাকরি যাওয়াÑ এই গোটা বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের বিষয়টাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠুক। ইডি-সিবিআই কি এমনটা চেয়েছে বলেই এইরকম একটা পরিপ্রেক্ষিত তৈরি তারা করেছে যার জন্যে মহমান্য সুপ্রিম কোর্টে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন পাওয়াটা খুব সহজ হয়ে গেল?

মানুষের মন থেকে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া, ভয়াবহ দুর্নীতিÑ এই সমস্ত বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতা মুছে দিয়ে, এখন কেবলমাত্র পাত্রাধার তৈল, না তৈলাধার পাত্রের মতো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের ময়নাতদন্তটাই যাতে মানুষের মুখ্য আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠুকÑ এটাই চাইছে শাসকেরা? রাজ্যের শাসকের মতো কেন্দ্রশাসকও কি এটাই চায়?

[লেখক : ভারতীয় ইতিহাসবিদ]

back to top