কামরুজ্জামান
প্রতি বছর বর্ষাকাল এলেই দেশে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি উদ্যোগে এই বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালন করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে - এতো এতো বৃক্ষ রোপণের পরেও আমাদের দেশে বনভূমি ও গাছপালা কমছে। কেন কমছে আমরা কমবেশি সবাই জানি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে - বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি দখল। শিল্পায়ন ও নগরায়নও দায়ী। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন নতুন বসতি স্থাপন বৃক্ষ কমে আসার অন্যতম কারণ। রোপন কৃত বৃক্ষের পরিচর্যা ও নিরাপত্তা দিতে না পারাও বৃক্ষ কমে আসার কারণ। বৃক্ষ মরে যাওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে - মাটি ও বায়ু দূষণ। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বনে আগুন দিয়ে বনভূমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি বৃক্ষের প্রতি অমানবিক এবং নিষ্ঠুর কাজ। এর ফলে ব্যাহত হয় - নতুন বৃক্ষের প্রজনন প্রক্রিয়া।
মানুষের অপরিনামদর্শী নানা রকম কর্মকা-ের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে তাপমাত্রা। আর এ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে নতুন ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য বনভূমি রক্ষা এবং সবুজায়নের কথা ভাবা হচ্ছে সর্বত্র। আর এ কারণেই আমাদের দেশেও বনভূমি রক্ষা, নতুন বৃক্ষ রোপণ এবং ব্যাপক বৃক্ষায়নের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বর্তমান সময়ে সবুজ অর্থনীতি, সবুজ শিল্প নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, কাজ হচ্ছে। এবং সফলতাও আসছে। বৃক্ষ রোপণের সবুজ বিপ্লব নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষ রোপণের সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলাটা জরুরি।
বেশি করে বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। বর্তমানে বনভূমি কমে গিয়ে মোট ভূমির মাত্র ৯% ঠেকেছে। যদিও বই-পুস্তকে বলা হয় ১৭% বনভূমির কথা। কোনো একটি নির্দিষ্ট ভূখ-ে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য মোট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে - আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ইতোমধ্যে ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও অসংখ্য বৃক্ষ রোপণ করা হয়। কিন্তু দুঃখ জনক হচ্ছে - এই সব বৃক্ষের খুব কম সংখ্যক বেঁচে থাকে, বড় হয়। এটা হয় শুধুমাত্র বৃক্ষের উপর যতেœর অভাবে, বেড়া না দেওয়ার কারণে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক বনায়ন এবং বনজ ও ফলজ বৃক্ষ সবসময়ই মানুষের অতি লোভে, অসচেতনতার কারণে এবং নানামুখী কর্মকা-ের ফলে নিধন হচ্ছে। একদিকে রোপন কৃত বৃক্ষের নিরাপত্তার অভাব অন্যদিকে মানুষের অযাচিত বৃক্ষ নিধনই বনভূমির আকার ছোট হয়ে আসার মূল কারণ। তাই বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষ যা রোপণ করা হয় সেসবের বেড়া দেওয়া অতিব জরুরী। এবং এটা রীতিমতো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে করা প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক বনায়ন সংরক্ষণ : বাংলাদেশের বনভূমি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন : পাহাড়ি বনভূমি, পাতাঝরা বৃক্ষের বনভূমি, ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং সৃজিত বন।
পাহাড়ি বনভূমি বলতে পাহাড় বা পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বনকে বোঝায়। বাংলাদেশে, এই ধরনের বনভূমি সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায় দেখা যায়। এখানে সাধারণত ক্রান্তীয় চিরসবুজ ও অর্ধ-চিরসবুজ গাছপালা দেখা যায়।
পাতাঝরা বনভূমি হল সেই বন যেখানে গাছের পাতা শীতকালে সম্পূর্ণরূপে ঝরে যায়। বাংলাদেশে ক্রান্তীয় পাতাঝরা বন দেখা যায়, যেখানে শাল বা গজারি গাছ প্রধান। এই বনভূমি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় দেখা যায়।
ম্যানগ্রোভ বনভূমি হলো উপকূলীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন। যে বন বাস্তুতন্ত্র, যা লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকা গাছপালা এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
সৃজিত বনভূমি হলো মানুষের দ্বারা রোপণ করা বনভূমি। এগুলো সাধারণত সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের এই সব প্রাকৃতিক বনায়ন ও বনভূমি সংরক্ষণ করা অতিব জরুরী। বনের ক্ষতি করছে এমন অসৎ ও দুর্নীতির সাথে জড়িত লোকদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বনভূমি দখল ও বৃক্ষ যারা নিধন করে তাদেরও খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এটা হওয়া প্রয়োজন ঘোষণা দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে।
বেশি করে দেশীয় জাতের ফলজ ও ঔষধি গাছ রোপণ : বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যায়- গাছ সিলেকশন করা সঠিক হয় না। বিদেশি গাছ কিংবা ইউকিলিপটাস গাছ রোপণ করা হয়। এগুলো আমাদের দেশে পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি মাটির উর্বরতাকে নষ্ট করে দেয়। তাই বৃক্ষ রোপণ করার আগে গাছের চারা সঠিক নির্বাচন প্রয়োজন। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনায় ও মাটির গুণাগুণ বিচার করে দেশীয় জাতের ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানো প্রয়োজন। এতে কাঠ যেমন পাওয়া যাবে তেমনি মানুষের পুষ্টিগুণের চাহিদাও পূরণ হবে।
বৃক্ষ রোপণে আন্দোলন : দেশের বনভূমির বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃক্ষ রোপণকে আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যে সকল বৃক্ষ রোপণ করা হয় সেগুলোর প্রচার প্রচারণা বেশি করে করতে হবে। বৃক্ষ বেড়ে উঠার নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ ইত্যাদি ঘোষণা দিয়ে করতে হবে। বৃক্ষ রোপণে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বৃক্ষ রোপণ অভিযান সফল হবে। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে যদি ১০ কোটি মানুষ একটি করে বৃক্ষ রোপণ করে তাহলে এক বছরেই ১০ কোটি বৃক্ষ বৃদ্ধি পাবে। তবে এই ১০ কোটি বৃক্ষ রোপণ করার পর বেড়া দেওয়া ও বেড়ে উঠার দায়িত্বও নিতে হবে যার যার। তবেই বৃক্ষ রোপণের কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব।
বৃক্ষ রোপণ, সুরক্ষা ও নিধন রোধে প্রচার-প্রচারণা: এই কাজটি ব্যাপকভাবে করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং প্রয়োজন। যে সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গাছে তারকাঁটা অথবা পেরেকঠোকে বিজ্ঞাপন লাগায়, গাছকে কষ্ট দেয় তাদের আর্থিক শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। অথবা প্রাথমিক পর্যায়ে মৌখিক নির্দেশনা জারি করে সতর্ক করা যেতে পারে। বেশি বেশি গাছ রোপণ করার জন্য বেশি বেশি প্রচার প্রচারণা করতে হবে । স্থানীয় পর্যায়ে বৃক্ষ রক্ষা ও বৃক্ষের নিরাপত্তা বিষয়ক নানা রকমের শ্লোগান চালু করা যেতে পারে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা করা যেতে পারে।
বৃক্ষ হচ্ছে আমাদের অক্সিজেনের ভান্ডার। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে বৃক্ষ। প্রকৃতিকে শীতল রাখে বৃক্ষ। সবুজ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য বেশি করে বৃক্ষ রোপণ ও বৃক্ষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, ভাওয়ালগড়, গাজীপুর]
কামরুজ্জামান
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫
প্রতি বছর বর্ষাকাল এলেই দেশে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি উদ্যোগে এই বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী পালন করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে - এতো এতো বৃক্ষ রোপণের পরেও আমাদের দেশে বনভূমি ও গাছপালা কমছে। কেন কমছে আমরা কমবেশি সবাই জানি। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে - বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি দখল। শিল্পায়ন ও নগরায়নও দায়ী। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন নতুন বসতি স্থাপন বৃক্ষ কমে আসার অন্যতম কারণ। রোপন কৃত বৃক্ষের পরিচর্যা ও নিরাপত্তা দিতে না পারাও বৃক্ষ কমে আসার কারণ। বৃক্ষ মরে যাওয়ার আরও একটি কারণ হচ্ছে - মাটি ও বায়ু দূষণ। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে বনে আগুন দিয়ে বনভূমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি বৃক্ষের প্রতি অমানবিক এবং নিষ্ঠুর কাজ। এর ফলে ব্যাহত হয় - নতুন বৃক্ষের প্রজনন প্রক্রিয়া।
মানুষের অপরিনামদর্শী নানা রকম কর্মকা-ের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাড়ছে তাপমাত্রা। আর এ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে নতুন ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য বনভূমি রক্ষা এবং সবুজায়নের কথা ভাবা হচ্ছে সর্বত্র। আর এ কারণেই আমাদের দেশেও বনভূমি রক্ষা, নতুন বৃক্ষ রোপণ এবং ব্যাপক বৃক্ষায়নের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলা প্রয়োজন।
বর্তমান সময়ে সবুজ অর্থনীতি, সবুজ শিল্প নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, কাজ হচ্ছে। এবং সফলতাও আসছে। বৃক্ষ রোপণের সবুজ বিপ্লব নতুন কিছু নয়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষ রোপণের সবুজ বিপ্লব গড়ে তোলাটা জরুরি।
বেশি করে বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। বর্তমানে বনভূমি কমে গিয়ে মোট ভূমির মাত্র ৯% ঠেকেছে। যদিও বই-পুস্তকে বলা হয় ১৭% বনভূমির কথা। কোনো একটি নির্দিষ্ট ভূখ-ে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য মোট ভূমির ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে - আমাদের দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ ইতোমধ্যে ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও অসংখ্য বৃক্ষ রোপণ করা হয়। কিন্তু দুঃখ জনক হচ্ছে - এই সব বৃক্ষের খুব কম সংখ্যক বেঁচে থাকে, বড় হয়। এটা হয় শুধুমাত্র বৃক্ষের উপর যতেœর অভাবে, বেড়া না দেওয়ার কারণে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক বনায়ন এবং বনজ ও ফলজ বৃক্ষ সবসময়ই মানুষের অতি লোভে, অসচেতনতার কারণে এবং নানামুখী কর্মকা-ের ফলে নিধন হচ্ছে। একদিকে রোপন কৃত বৃক্ষের নিরাপত্তার অভাব অন্যদিকে মানুষের অযাচিত বৃক্ষ নিধনই বনভূমির আকার ছোট হয়ে আসার মূল কারণ। তাই বর্ষা মৌসুমে বৃক্ষ যা রোপণ করা হয় সেসবের বেড়া দেওয়া অতিব জরুরী। এবং এটা রীতিমতো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে করা প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক বনায়ন সংরক্ষণ : বাংলাদেশের বনভূমি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন : পাহাড়ি বনভূমি, পাতাঝরা বৃক্ষের বনভূমি, ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং সৃজিত বন।
পাহাড়ি বনভূমি বলতে পাহাড় বা পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত বনকে বোঝায়। বাংলাদেশে, এই ধরনের বনভূমি সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়ী এলাকায় দেখা যায়। এখানে সাধারণত ক্রান্তীয় চিরসবুজ ও অর্ধ-চিরসবুজ গাছপালা দেখা যায়।
পাতাঝরা বনভূমি হল সেই বন যেখানে গাছের পাতা শীতকালে সম্পূর্ণরূপে ঝরে যায়। বাংলাদেশে ক্রান্তীয় পাতাঝরা বন দেখা যায়, যেখানে শাল বা গজারি গাছ প্রধান। এই বনভূমি ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, দিনাজপুর ও রংপুর জেলায় দেখা যায়।
ম্যানগ্রোভ বনভূমি হলো উপকূলীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন। যে বন বাস্তুতন্ত্র, যা লবণাক্ত পরিবেশে টিকে থাকা গাছপালা এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।
সৃজিত বনভূমি হলো মানুষের দ্বারা রোপণ করা বনভূমি। এগুলো সাধারণত সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের এই সব প্রাকৃতিক বনায়ন ও বনভূমি সংরক্ষণ করা অতিব জরুরী। বনের ক্ষতি করছে এমন অসৎ ও দুর্নীতির সাথে জড়িত লোকদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বনভূমি দখল ও বৃক্ষ যারা নিধন করে তাদেরও খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এটা হওয়া প্রয়োজন ঘোষণা দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে।
বেশি করে দেশীয় জাতের ফলজ ও ঔষধি গাছ রোপণ : বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যায়- গাছ সিলেকশন করা সঠিক হয় না। বিদেশি গাছ কিংবা ইউকিলিপটাস গাছ রোপণ করা হয়। এগুলো আমাদের দেশে পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি মাটির উর্বরতাকে নষ্ট করে দেয়। তাই বৃক্ষ রোপণ করার আগে গাছের চারা সঠিক নির্বাচন প্রয়োজন। আমাদের দেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনায় ও মাটির গুণাগুণ বিচার করে দেশীয় জাতের ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানো প্রয়োজন। এতে কাঠ যেমন পাওয়া যাবে তেমনি মানুষের পুষ্টিগুণের চাহিদাও পূরণ হবে।
বৃক্ষ রোপণে আন্দোলন : দেশের বনভূমির বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃক্ষ রোপণকে আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। বেসরকারি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যে সকল বৃক্ষ রোপণ করা হয় সেগুলোর প্রচার প্রচারণা বেশি করে করতে হবে। বৃক্ষ বেড়ে উঠার নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ ইত্যাদি ঘোষণা দিয়ে করতে হবে। বৃক্ষ রোপণে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বৃক্ষ রোপণ অভিযান সফল হবে। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে যদি ১০ কোটি মানুষ একটি করে বৃক্ষ রোপণ করে তাহলে এক বছরেই ১০ কোটি বৃক্ষ বৃদ্ধি পাবে। তবে এই ১০ কোটি বৃক্ষ রোপণ করার পর বেড়া দেওয়া ও বেড়ে উঠার দায়িত্বও নিতে হবে যার যার। তবেই বৃক্ষ রোপণের কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জন সম্ভব।
বৃক্ষ রোপণ, সুরক্ষা ও নিধন রোধে প্রচার-প্রচারণা: এই কাজটি ব্যাপকভাবে করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং প্রয়োজন। যে সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গাছে তারকাঁটা অথবা পেরেকঠোকে বিজ্ঞাপন লাগায়, গাছকে কষ্ট দেয় তাদের আর্থিক শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। অথবা প্রাথমিক পর্যায়ে মৌখিক নির্দেশনা জারি করে সতর্ক করা যেতে পারে। বেশি বেশি গাছ রোপণ করার জন্য বেশি বেশি প্রচার প্রচারণা করতে হবে । স্থানীয় পর্যায়ে বৃক্ষ রক্ষা ও বৃক্ষের নিরাপত্তা বিষয়ক নানা রকমের শ্লোগান চালু করা যেতে পারে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা করা যেতে পারে।
বৃক্ষ হচ্ছে আমাদের অক্সিজেনের ভান্ডার। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে বৃক্ষ। প্রকৃতিকে শীতল রাখে বৃক্ষ। সবুজ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য বেশি করে বৃক্ষ রোপণ ও বৃক্ষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।
[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, ভাওয়ালগড়, গাজীপুর]