alt

উপ-সম্পাদকীয়

জিপিএ-৫ কি মেধার নিয়ামক?

মিহির কুমার রায়

: বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২
image

গত ২৮ নভেম্বর সোমবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে এসএসসিসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৭. ৪৪ শতাংশ; যা গত বছর ছিল ৯৩.৫৮ শতাংশ। আবার সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী যা গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন ।

ফলাফল মূল্যায়নে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে বেশি তবে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে। এখানে উল্লেখ্য ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৩৪ হাজার ১৮ জন, পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নেপথ্যে মোটা দাগে ৫টি দিক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, এছাড়া প্রশ্নপত্রে অধিকসংখ্যক বিকল্প থেকে পছন্দের সুযোগ, ৫০-এর মধ্যে দেয়া পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ১০০ তে রূপান্তর, কঠিন বিষয়ে অবলীলায় ৯০ শতাংশের ওপরে নম্বর প্রাপ্তি এবং সাবজেক্ট ম্যাপিং।

শিক্ষার্থীদের জীবনে মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুত্বপূর্ণ। পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি শিক্ষার মান বাড়ানো। এক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তার যথাযথ নিরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ছে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা কমে গেছে এটা ঠিক, তবে এখনো দেশে নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য, কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি; যা শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

নিকটতম অতীতে দেখা যায় যে, দেশের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার স্কোরে যোগ হচ্ছে। ফলে কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থী মূল ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সময় বেশি নম্বর পেয়েও মেধা স্কোরে টিকতে পারছে না। কিন্তু কেন এ নিয়ম, তার সুনির্দিষ্ট সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কেউ দেয়নি। বরং এসব জিপিএ স্কোর থাকার কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট গ্রুপকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশ বছর আগেও যেখানে জিপিএ-৫ পাঁচ হাজারের ঘরে থাকত, সেটি প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ঘরে ঘরে জিপিএ-৫-এ ঠেকছে; যা দেশের শিক্ষার মানকে সংকুচিতই করছে না, বরং রাষ্ট্রকে ভুল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস জোগাচ্ছে। জিপিএ-৫ যে বা যারা মেধার মানদ- মনে করছেন, তারা হয়তো জানেন না এই জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই মেধাবী নয়, এটি শুধু একটি নির্দেশক হতে পারে, সেটি কিছুতেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের মাধ্যম হতে পারে না। সৃজনশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থী গড়ায় নজর না দিয়ে শুধু নিয়মতান্ত্রিক প্রশ্ন আয়ত্ত করে পরীক্ষার খাতায় উগরে দিয়ে জিপিএ-৫ বাগিয়ে নেওয়া গেলেও আমাদের শিক্ষার্থীরা কতটা কম জানেন, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকছে, তেমনি দেশের বাইরে যখন উচ্চশিক্ষায় আসছেন তখন তারা ঠিকই টের পাচ্ছেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল তাদের উচ্চশিক্ষার ভর্তির বিষয়টি খুব মানসম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, যেখানে মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। বিশ্বের অনেক কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত জিপিএ মূল ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরে বিবেচনায় নেয় না; অথচ বাংলাদেশে এই নিয়ম চালু রেখেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কিংবা কেউ এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। এর মধ্য দিয়ে দেশে এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা; অথচ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা করার অধিকার সব শিক্ষার্থীর হওয়া উচিত। প্রকৃত মেধাবীদের বের করে আনার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিক। তারা যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে, সেই প্রতিযোগিতার আরও একটু আধুনিকায়নের সুযোগ নিক।

করোনা মহামারীর পরিবর্তিত পরিস্থিতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শ্রেণীকক্ষের মূল্যায়ন, অবিরত মূল্যায়ন বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। দেশের শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি পুরো ব্যবস্থা অবিরত মূল্যায়ন পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত করতে হবে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে যাতে বাস্তবধর্মী পরীক্ষা নেওয়া হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা বহুদিন যাবৎ প্রকৃত লেখাপড়ার সঙ্গে সেভাবে সংযুক্ত নেই। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল অর্জন করার মধ্যে যে আনন্দ, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সেটি যাতে বহাল থাকে সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে।

পাসের হারে এক বোর্ড থেকে আরেক বোর্ডের এগিয়ে থাকা কিংবা পিছিয়ে যাওয়ার কারণ কোন বছরেই খতিয়ে দেখা হয় না, যা সঠিক নয়। এ ব্যাপারে প্রতিটি বোর্ডেই এজন্য একটি গবেষণা সেল থাকা উচিত। উচ্চশিক্ষা উন্মুক্ত রাখা উচিত শুধুমাত্র মেধাবীদের জন্য এবং অন্যান্যদের জন্য কারিগরি বা উদ্যোক্তা উন্নয়নে শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া উচিত।

[লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

বাসযোগ্যতা সূচকে ঢাকা কেন এত পিছিয়ে

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জিপিএ-৫ কি মেধার নিয়ামক?

মিহির কুমার রায়

image

বুধবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২২

গত ২৮ নভেম্বর সোমবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে এসএসসিসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৭. ৪৪ শতাংশ; যা গত বছর ছিল ৯৩.৫৮ শতাংশ। আবার সর্বোচ্চ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী যা গত বছর পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ জন ।

ফলাফল মূল্যায়নে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে বেশি তবে গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে। এখানে উল্লেখ্য ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৩৪ হাজার ১৮ জন, পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন।

১১টি শিক্ষা বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নেপথ্যে মোটা দাগে ৫টি দিক ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, এছাড়া প্রশ্নপত্রে অধিকসংখ্যক বিকল্প থেকে পছন্দের সুযোগ, ৫০-এর মধ্যে দেয়া পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ১০০ তে রূপান্তর, কঠিন বিষয়ে অবলীলায় ৯০ শতাংশের ওপরে নম্বর প্রাপ্তি এবং সাবজেক্ট ম্যাপিং।

শিক্ষার্থীদের জীবনে মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুত্বপূর্ণ। পাসের হার বাড়ানোর চেয়েও বেশি জরুরি শিক্ষার মান বাড়ানো। এক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তার যথাযথ নিরীক্ষা হওয়া দরকার। কারণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের একটি বড় অংশ পরবর্তী ধাপে পৌঁছানোর আগেই ঝরে পড়ছে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমানে পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা কমে গেছে এটা ঠিক, তবে এখনো দেশে নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্য, কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংস্কৃতি বন্ধ হয়নি; যা শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

নিকটতম অতীতে দেখা যায় যে, দেশের অধিকাংশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষার স্কোরে যোগ হচ্ছে। ফলে কম জিপিএ পাওয়া শিক্ষার্থী মূল ভর্তি পরীক্ষায় অনেক সময় বেশি নম্বর পেয়েও মেধা স্কোরে টিকতে পারছে না। কিন্তু কেন এ নিয়ম, তার সুনির্দিষ্ট সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কেউ দেয়নি। বরং এসব জিপিএ স্কোর থাকার কারণে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট গ্রুপকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে। বিশ বছর আগেও যেখানে জিপিএ-৫ পাঁচ হাজারের ঘরে থাকত, সেটি প্রায় ২০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ঘরে ঘরে জিপিএ-৫-এ ঠেকছে; যা দেশের শিক্ষার মানকে সংকুচিতই করছে না, বরং রাষ্ট্রকে ভুল পথে পরিচালিত করার প্রয়াস জোগাচ্ছে। জিপিএ-৫ যে বা যারা মেধার মানদ- মনে করছেন, তারা হয়তো জানেন না এই জিপিএ-৫ পাওয়া মানেই মেধাবী নয়, এটি শুধু একটি নির্দেশক হতে পারে, সেটি কিছুতেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের মাধ্যম হতে পারে না। সৃজনশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী শিক্ষার্থী গড়ায় নজর না দিয়ে শুধু নিয়মতান্ত্রিক প্রশ্ন আয়ত্ত করে পরীক্ষার খাতায় উগরে দিয়ে জিপিএ-৫ বাগিয়ে নেওয়া গেলেও আমাদের শিক্ষার্থীরা কতটা কম জানেন, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন থাকছে, তেমনি দেশের বাইরে যখন উচ্চশিক্ষায় আসছেন তখন তারা ঠিকই টের পাচ্ছেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত ও নেপাল তাদের উচ্চশিক্ষার ভর্তির বিষয়টি খুব মানসম্মতভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, যেখানে মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হয়। বিশ্বের অনেক কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাপ্ত জিপিএ মূল ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত স্কোরে বিবেচনায় নেয় না; অথচ বাংলাদেশে এই নিয়ম চালু রেখেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কিংবা কেউ এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেনি। এর মধ্য দিয়ে দেশে এক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বঞ্চিত হচ্ছে কম জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা; অথচ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিযোগিতা করার অধিকার সব শিক্ষার্থীর হওয়া উচিত। প্রকৃত মেধাবীদের বের করে আনার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিক। তারা যে প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে, সেই প্রতিযোগিতার আরও একটু আধুনিকায়নের সুযোগ নিক।

করোনা মহামারীর পরিবর্তিত পরিস্থিতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শ্রেণীকক্ষের মূল্যায়ন, অবিরত মূল্যায়ন বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। দেশের শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সর্বোপরি পুরো ব্যবস্থা অবিরত মূল্যায়ন পদ্ধতির জন্য প্রস্তুত করতে হবে, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে যাতে বাস্তবধর্মী পরীক্ষা নেওয়া হয় সে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ শিক্ষার্থীরা বহুদিন যাবৎ প্রকৃত লেখাপড়ার সঙ্গে সেভাবে সংযুক্ত নেই। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল অর্জন করার মধ্যে যে আনন্দ, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সেটি যাতে বহাল থাকে সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে।

পাসের হারে এক বোর্ড থেকে আরেক বোর্ডের এগিয়ে থাকা কিংবা পিছিয়ে যাওয়ার কারণ কোন বছরেই খতিয়ে দেখা হয় না, যা সঠিক নয়। এ ব্যাপারে প্রতিটি বোর্ডেই এজন্য একটি গবেষণা সেল থাকা উচিত। উচ্চশিক্ষা উন্মুক্ত রাখা উচিত শুধুমাত্র মেধাবীদের জন্য এবং অন্যান্যদের জন্য কারিগরি বা উদ্যোক্তা উন্নয়নে শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া উচিত।

[লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]

back to top