alt

সাময়িকী

একটি ইতিহাস একটি আত্মজীবনী

: বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১

রণেশ মৈত্র বাংলাদেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও লেখক, কলামিস্ট। তাঁর জীবন বর্ণাঢ্য। সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের রাজনীতি নিজেকে সম্পৃক্ত কেখে। দেশের ভেতর অসঙ্গতি ও অরাজকতাকে কখনো সহ্য করতে পারেন নি। কম্যুনিস্ট রাজনীতি দিয়ে শুরু করে আওয়ামিলীগের রাজনীতি পর্যন্ত- সর্বত্র তিনি ছিলেন একটন উদার প্রগতিশীল ও মুক্তমনা রাজনৈতিক যোদ্ধা। ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহসী সৈনিক।

১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করে এখন তার বয়স ৭৮ বছর। এই দীর্ঘ জীবনকে তিনি বর্ণাঢ্য করে তুলেছেন। অপচয় করেনি। এ সময়কালের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবীদের পরম বন্ধু তিনি। আজ সত্যি কথা বলতে গেছে রণেশ দাশগুপ্ত তার কালখণ্ডের একটি উজ্জ্বল ইতিহাস। সম্প্রতি প্রকাশিত তার ‘আত্মজীবনী’ বলতে গেছে আমাদের জন্য একটি মহার্ঘ পাওয়া ও সংযোজন। বইটি প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ এবং মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা। লেখকের ভাষায় এই করোনা মহামারীকালে অবসর সময়ে ২/৩ মাসে বইটি লিখে ফেলেছেন। তাছাড়া হয়তো সমম্ভব হতে না।

দেশের মহীয়সী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন লিখেছেন তার এই বইয়ের ভূমিকা। তার মতো মানুষের এই ভূমিকা থেকে আমাদের জন্য আছে শিক্ষণীয় অনেক কিছু। এবং বই সম্পর্কেও জানা যাবে সারাৎসার:

সন্জীদা খাতুন লিখেছেন-

“২০২০ সালে মহামারির বিভীষিকায় আমরা স্বাভাবিক জীবনাচরণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেমন যেন থমকে রয়েছি। চারদিকে কেবল মহামারির প্রেতনৃত্য চলছে যেন। এরই মধ্যে প্রবীণ এবং প্রাজ্ঞ দেশসেবক রণেশ মৈত্র ব্যতিক্রমী আচরণ করে আমাদের শ্রদ্ধা এবং বিস্ময়ের উদ্রেক করেছেন। চতুর্দিকের স্থবিরতাকে অগ্রাহ্য করে এই সময়ে তিনি অনন্যমনে আত্মজীবনী রচনা করেছেন।

১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করা রণেশ মৈত্রের দেশসেবা শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ১৯৫০-এ ‘শিখা সংঘ’ গঠন করে তাঁরা কাজে নেমেছিলেন। এই সংঘের প্রথম কাজই ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখা। তারপর থেকে দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে এগিয়ে গেছেন দেশ-সচেতন রণেশ মৈত্র।

লেখকের আদ্যন্ত সংগ্রামী জীবনের এই ইতিবৃত্ত ভবিষ্যৎ স্বেচ্ছাসেবী সব দেশপ্রেমীকে পথচলার নির্দেশনা দেবে। নব-পরিনেীতা রূপসী বধূকে ঘরে রেখে আদার্শের টানে দেশের কাজে আত্মনিবেদন করার নির্দেশনাও আমরা এই গ্রন্থ থেকে পাব।

মূল্যবান অভিজ্ঞাসসমৃদ্ধ আত্মকথাটি ঘরে ঘরে পঠিত হলে তার প্রভাব দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। রণেশ মৈত্রের ‘আত্মজীবনী’ গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।”

সন্জীদা খাতুনের এই মন্তব্য আমাদের আরো কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়। সন্তোষ গুপ্ত নবপরিণীতা বধূকে রেখে দেশের জন্য বিনা বিচারে জেল খেটেছেন ১৪ বছর। দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের সঙ্গে তিনি জেল খেটেছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাকে একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে কিন্তু তিনি তাতে আদর্শচ্যুত হননি।

তার এই বইটি পাঠ করলে সত্তর বছরের একটি একটি জীবন্ত ইতিহাস পাওয়া যাবে। দেশের প্রকৃত রাজনৈকিত ঘটনাপ্রকাহের এক প্রামাণ্য দলির এই গ্রন্থ। আত্মজীবনী কালচারাল মানুষদের জীবনাদর্শের মতো। এখান থেকে জীবনকে সাজাবার গড়ে নেবার বহু মাহার্ঘ অভিজ্ঞতা থাকে। রণেশ মৈত্রের গ্রন্থটি তার ব্যতিক্রম নয়। এবার রণেশ মত্রের জীবন থেকে কিছু জানা গেলে এতসব কথা প্রমাণ মিলবে সন্দেহ নেই।

রণেশ মৈত্র ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নহাটায় জন্মগ্রহণ করার মাস খানেক পর চলে আসেন পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। বাবা রমেশ চন্দ্র মৈত্র প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের পাঠশালায় এবং আতাইকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ে তারপর গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫৮ সালে পাবনা এডওেয়ার্ড কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। অতঃপর ১৯৬৮ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সিটি ল কলেজের ছাত্র হিসেবে এলএলবি পাস করেন।

১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে পাবনাতে রাষ্ট্রভাষা আন্দেতালনে অংশ নেন। ১৯৫২ সালেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের পাবনা জেলা শাখা গঠন করে তার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩-তে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ১৯৫৫ ও ১৯৫৭ সালে পর পর দুইবার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

তিনি প্রায় ১৪ বছর রাজনৈতিক কারণে বিনাবিচারে জেল খাটেন। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে রুশ-চীন আদর্শগত দ্বন্দ্বে এবং আইউবের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের স্বার্থে রণেশ মৈত্র ন্যাপ (ওয়ালী-মোজাফফর)-এ যোগ দেন। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ১৯৭০-এর নির্বাচন ও ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী পূরবী মৈত্র উভয়েইর বীর মুক্তিযোদ্ধা। রাজনীতি ও সাংবাদিকতা তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি সমাজতন্ত্রের মাক্সর্সীয় আদর্শে বিশ্বাসী।

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার রণেশ মৈত্রকে ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত করেন।

১৯৫৯ সালে নাটোরের মেয়ে পূরবী মৈত্রের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁরা দুই ছেলে, তিন মেয়ের জনক-জননী।

রণেশ মৈত্র সৌভিয়েত ইউনিয়ন, কিরঘিজিয়া, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।

-সাময়িকী প্রতিবেদক

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

একটি ইতিহাস একটি আত্মজীবনী

বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১

রণেশ মৈত্র বাংলাদেশের প্রবীণ রাজনীতিক ও লেখক, কলামিস্ট। তাঁর জীবন বর্ণাঢ্য। সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের রাজনীতি নিজেকে সম্পৃক্ত কেখে। দেশের ভেতর অসঙ্গতি ও অরাজকতাকে কখনো সহ্য করতে পারেন নি। কম্যুনিস্ট রাজনীতি দিয়ে শুরু করে আওয়ামিলীগের রাজনীতি পর্যন্ত- সর্বত্র তিনি ছিলেন একটন উদার প্রগতিশীল ও মুক্তমনা রাজনৈতিক যোদ্ধা। ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাহসী সৈনিক।

১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করে এখন তার বয়স ৭৮ বছর। এই দীর্ঘ জীবনকে তিনি বর্ণাঢ্য করে তুলেছেন। অপচয় করেনি। এ সময়কালের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবীদের পরম বন্ধু তিনি। আজ সত্যি কথা বলতে গেছে রণেশ দাশগুপ্ত তার কালখণ্ডের একটি উজ্জ্বল ইতিহাস। সম্প্রতি প্রকাশিত তার ‘আত্মজীবনী’ বলতে গেছে আমাদের জন্য একটি মহার্ঘ পাওয়া ও সংযোজন। বইটি প্রকাশ করেছে অনুপম প্রকাশনী। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ এবং মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা। লেখকের ভাষায় এই করোনা মহামারীকালে অবসর সময়ে ২/৩ মাসে বইটি লিখে ফেলেছেন। তাছাড়া হয়তো সমম্ভব হতে না।

দেশের মহীয়সী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন লিখেছেন তার এই বইয়ের ভূমিকা। তার মতো মানুষের এই ভূমিকা থেকে আমাদের জন্য আছে শিক্ষণীয় অনেক কিছু। এবং বই সম্পর্কেও জানা যাবে সারাৎসার:

সন্জীদা খাতুন লিখেছেন-

“২০২০ সালে মহামারির বিভীষিকায় আমরা স্বাভাবিক জীবনাচরণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেমন যেন থমকে রয়েছি। চারদিকে কেবল মহামারির প্রেতনৃত্য চলছে যেন। এরই মধ্যে প্রবীণ এবং প্রাজ্ঞ দেশসেবক রণেশ মৈত্র ব্যতিক্রমী আচরণ করে আমাদের শ্রদ্ধা এবং বিস্ময়ের উদ্রেক করেছেন। চতুর্দিকের স্থবিরতাকে অগ্রাহ্য করে এই সময়ে তিনি অনন্যমনে আত্মজীবনী রচনা করেছেন।

১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহণ করা রণেশ মৈত্রের দেশসেবা শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ১৯৫০-এ ‘শিখা সংঘ’ গঠন করে তাঁরা কাজে নেমেছিলেন। এই সংঘের প্রথম কাজই ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখা। তারপর থেকে দেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে এগিয়ে গেছেন দেশ-সচেতন রণেশ মৈত্র।

লেখকের আদ্যন্ত সংগ্রামী জীবনের এই ইতিবৃত্ত ভবিষ্যৎ স্বেচ্ছাসেবী সব দেশপ্রেমীকে পথচলার নির্দেশনা দেবে। নব-পরিনেীতা রূপসী বধূকে ঘরে রেখে আদার্শের টানে দেশের কাজে আত্মনিবেদন করার নির্দেশনাও আমরা এই গ্রন্থ থেকে পাব।

মূল্যবান অভিজ্ঞাসসমৃদ্ধ আত্মকথাটি ঘরে ঘরে পঠিত হলে তার প্রভাব দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে। রণেশ মৈত্রের ‘আত্মজীবনী’ গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।”

সন্জীদা খাতুনের এই মন্তব্য আমাদের আরো কনফিডেন্স বাড়িয়ে দেয়। সন্তোষ গুপ্ত নবপরিণীতা বধূকে রেখে দেশের জন্য বিনা বিচারে জেল খেটেছেন ১৪ বছর। দেশের শীর্ষ রাজনীতিকদের সঙ্গে তিনি জেল খেটেছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাকে একাধিকবার জেল খাটতে হয়েছে কিন্তু তিনি তাতে আদর্শচ্যুত হননি।

তার এই বইটি পাঠ করলে সত্তর বছরের একটি একটি জীবন্ত ইতিহাস পাওয়া যাবে। দেশের প্রকৃত রাজনৈকিত ঘটনাপ্রকাহের এক প্রামাণ্য দলির এই গ্রন্থ। আত্মজীবনী কালচারাল মানুষদের জীবনাদর্শের মতো। এখান থেকে জীবনকে সাজাবার গড়ে নেবার বহু মাহার্ঘ অভিজ্ঞতা থাকে। রণেশ মৈত্রের গ্রন্থটি তার ব্যতিক্রম নয়। এবার রণেশ মত্রের জীবন থেকে কিছু জানা গেলে এতসব কথা প্রমাণ মিলবে সন্দেহ নেই।

রণেশ মৈত্র ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর বৃহত্তর রাজশাহী জেলার নহাটায় জন্মগ্রহণ করার মাস খানেক পর চলে আসেন পৈত্রিক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া থানার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। বাবা রমেশ চন্দ্র মৈত্র প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের পাঠশালায় এবং আতাইকুলা উচ্চ বিদ্যালয়ে তারপর গোপাল চন্দ্র ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫৮ সালে পাবনা এডওেয়ার্ড কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। অতঃপর ১৯৬৮ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে সিটি ল কলেজের ছাত্র হিসেবে এলএলবি পাস করেন।

১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে পাবনাতে রাষ্ট্রভাষা আন্দেতালনে অংশ নেন। ১৯৫২ সালেই পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের পাবনা জেলা শাখা গঠন করে তার সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩-তে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ১৯৫৫ ও ১৯৫৭ সালে পর পর দুইবার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

তিনি প্রায় ১৪ বছর রাজনৈতিক কারণে বিনাবিচারে জেল খাটেন। ১৯৫৫ সালে জেল থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৫৭ মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে গঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে রুশ-চীন আদর্শগত দ্বন্দ্বে এবং আইউবের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের স্বার্থে রণেশ মৈত্র ন্যাপ (ওয়ালী-মোজাফফর)-এ যোগ দেন। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ১৯৭০-এর নির্বাচন ও ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি এবং তাঁর স্ত্রী পূরবী মৈত্র উভয়েইর বীর মুক্তিযোদ্ধা। রাজনীতি ও সাংবাদিকতা তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি সমাজতন্ত্রের মাক্সর্সীয় আদর্শে বিশ্বাসী।

সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার রণেশ মৈত্রকে ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত করেন।

১৯৫৯ সালে নাটোরের মেয়ে পূরবী মৈত্রের সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁরা দুই ছেলে, তিন মেয়ের জনক-জননী।

রণেশ মৈত্র সৌভিয়েত ইউনিয়ন, কিরঘিজিয়া, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন।

-সাময়িকী প্রতিবেদক

back to top