ওবায়েদ আকাশ
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা মধ্য মার্চে শুরু হলো। শুধুমাত্র একটা আশার কথা দিয়ে বলি যে, এখনো পর্যন্ত কোনো বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়নি বইমেলা। অথচ প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হয়ে যায় ঝড় বৃষ্টি। অন্তত ২/৩ বার বৃষ্টির আশঙ্কা তো থাকেই। আর মার্চ মাসজুড়েই থাকে কালবৈশাখী দমকা হাওয়া ঝড়-বৃষ্টি। এ বছর প্রচণ্ড খরা, ঝড়-বৃষ্টি নেই।
এই আশায় বুক বেঁধে বইমেলার সাফল্য ব্যর্থতা হিসাব করা যাবে তো? এ কয় দিনেই মোটামুটি একটা হিসাব নিকাশ করা হয়ে গেছে। বইমেলার সময়সূচি পরিবর্তিত হয়েছে চার বার। এখনো সবাই প্রতিদিনই আশঙ্কায় আছেন কাল আবার কখন থেকে মেলা শুরু হবে। পাঠকের কী দায় পড়েছে এত সব হিসাব নিকাশ করে বইমেলায় যাবার!
এখন সর্বত্র লকডাউন থাকলেও বইমেলায় নেই। অথচ সময়সূচি দুপুর বারোটা থেকে পাঁচটা। এই ভিতরের হিসাব মেলানো কিন্তু সহজ কাজ নয়। মানুষ পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করে মেলায় যায়। দিনের শরুটা থাকে কর্মব্যস্ত। আর সেই সময়টাতে মেলা খোলা রাখার ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন সকলের। এতে বোঝা যাচ্ছে- দুই কূল রক্ষা করেছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। একদিনে মেলা খোলাও রাখলো প্রকাশকদের দাবি মেনে, অপর দিকে লকডাউনও কার্যকর হলো জনসমাগম কম থাকায়। তবে একটি কথা জোর দিয়েই বলা যায়, যারা ‘মেলা হতেই হবে’ বলে গিট্টু মেরে বসে ছিলেন, তারা এখন কী বলেন? মেলার লাভ লস কতটুকু? কাক্সিক্ষত মুনাফা পেলেন কি তারা? মঙ্গলবার মেলায় একটা ঢুঁ মেরে দেখলাম, প্রকাশকদের হতাশা। হাহুতাশ। অনেকে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। হায় হায় কী হলো? এত টাকা ইনভেস্ট করে তার এক-তৃতীয়াংশও ওঠানো গেলো না। বিশেষ করে লক ডাউনের পর থেকে তো মেলায় কেউ আসছেনই না। তাছাড়া বই মেলার প্রাণ যে তরুণ-তরুণী-ছাত্রছাত্রীরা তারা স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেলামুখো হচ্ছেন না। আর যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, অভিভাবকরাও চায় না তাদের সন্তানরা মেলায় যাক। তারা নিজেরাও আসতে চান না। তার ওপরে আবার গণপরিবহন ছিল বন্ধ।
সব কিছু মিলিয়ে বলি-যেসব প্রকাশক গোঁ ধরে এই বৈরী সময়ে এই সর্বনাশটা করলেন, তারা এখন নিজেরাই নিজেদের কাছে কী জবাব দিবেন? কয়েকজন প্রকাশক ও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি কে পোষাবে? আর কত যে দর্শক শ্রোতা করোনাক্রান্ত হয়েছেন তার হিসাব কে দেবে? বইমেলা যে ফেব্রুয়ারিতে হয়, তা শুধু একুশের চেতনার কারণে নয়, তখনকার চমৎকার নাতিশীত আবহওয়া একটা বড় কারণ। তখন শীত-বসন্তের সন্ধিক্ষণে বাঙালির চিরসুন্দর মন বসন্ত সমীরে মাতাল হয়ে এসে বইমেলায় ঘোরে, বই কেনে, বাচ্চাদের শিশুপ্রহরে নিয়ে আসে। তাদের বই কিনে দেন। আরো কতো অনুষঙ্গ সেই মেলাকে ঘিরে বেষ্টিত! এবার মার্চে মেলা করে তার কতটুকু অর্জন করতে পারলেন আগ্রহীরা। তাই শুধু আবেগের বশে নয়, বইমেলার মতো একটি বৃহত্তর আয়োজন অনেক আগুপিছু ভেবে সাজাবার দরকার ছিল।
এলোমেলো সিদ্ধান্ত আর অদূরদর্শিতাই আজ প্রকাশকদের এই হতাশার কারণ। হতাশ হয়েছেন লেখকরাও। আগামীতে আমরা এমন ভুলের হাত থেকে নিষ্কৃতি চাই।
ওবায়েদ আকাশ
বৃহস্পতিবার, ০৮ এপ্রিল ২০২১
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা মধ্য মার্চে শুরু হলো। শুধুমাত্র একটা আশার কথা দিয়ে বলি যে, এখনো পর্যন্ত কোনো বৈরী আবহাওয়ার মুখোমুখি হয়নি বইমেলা। অথচ প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হয়ে যায় ঝড় বৃষ্টি। অন্তত ২/৩ বার বৃষ্টির আশঙ্কা তো থাকেই। আর মার্চ মাসজুড়েই থাকে কালবৈশাখী দমকা হাওয়া ঝড়-বৃষ্টি। এ বছর প্রচণ্ড খরা, ঝড়-বৃষ্টি নেই।
এই আশায় বুক বেঁধে বইমেলার সাফল্য ব্যর্থতা হিসাব করা যাবে তো? এ কয় দিনেই মোটামুটি একটা হিসাব নিকাশ করা হয়ে গেছে। বইমেলার সময়সূচি পরিবর্তিত হয়েছে চার বার। এখনো সবাই প্রতিদিনই আশঙ্কায় আছেন কাল আবার কখন থেকে মেলা শুরু হবে। পাঠকের কী দায় পড়েছে এত সব হিসাব নিকাশ করে বইমেলায় যাবার!
এখন সর্বত্র লকডাউন থাকলেও বইমেলায় নেই। অথচ সময়সূচি দুপুর বারোটা থেকে পাঁচটা। এই ভিতরের হিসাব মেলানো কিন্তু সহজ কাজ নয়। মানুষ পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করে মেলায় যায়। দিনের শরুটা থাকে কর্মব্যস্ত। আর সেই সময়টাতে মেলা খোলা রাখার ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন সকলের। এতে বোঝা যাচ্ছে- দুই কূল রক্ষা করেছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। একদিনে মেলা খোলাও রাখলো প্রকাশকদের দাবি মেনে, অপর দিকে লকডাউনও কার্যকর হলো জনসমাগম কম থাকায়। তবে একটি কথা জোর দিয়েই বলা যায়, যারা ‘মেলা হতেই হবে’ বলে গিট্টু মেরে বসে ছিলেন, তারা এখন কী বলেন? মেলার লাভ লস কতটুকু? কাক্সিক্ষত মুনাফা পেলেন কি তারা? মঙ্গলবার মেলায় একটা ঢুঁ মেরে দেখলাম, প্রকাশকদের হতাশা। হাহুতাশ। অনেকে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। হায় হায় কী হলো? এত টাকা ইনভেস্ট করে তার এক-তৃতীয়াংশও ওঠানো গেলো না। বিশেষ করে লক ডাউনের পর থেকে তো মেলায় কেউ আসছেনই না। তাছাড়া বই মেলার প্রাণ যে তরুণ-তরুণী-ছাত্রছাত্রীরা তারা স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেলামুখো হচ্ছেন না। আর যেভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, অভিভাবকরাও চায় না তাদের সন্তানরা মেলায় যাক। তারা নিজেরাও আসতে চান না। তার ওপরে আবার গণপরিবহন ছিল বন্ধ।
সব কিছু মিলিয়ে বলি-যেসব প্রকাশক গোঁ ধরে এই বৈরী সময়ে এই সর্বনাশটা করলেন, তারা এখন নিজেরাই নিজেদের কাছে কী জবাব দিবেন? কয়েকজন প্রকাশক ও বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা কয়েকজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি কে পোষাবে? আর কত যে দর্শক শ্রোতা করোনাক্রান্ত হয়েছেন তার হিসাব কে দেবে? বইমেলা যে ফেব্রুয়ারিতে হয়, তা শুধু একুশের চেতনার কারণে নয়, তখনকার চমৎকার নাতিশীত আবহওয়া একটা বড় কারণ। তখন শীত-বসন্তের সন্ধিক্ষণে বাঙালির চিরসুন্দর মন বসন্ত সমীরে মাতাল হয়ে এসে বইমেলায় ঘোরে, বই কেনে, বাচ্চাদের শিশুপ্রহরে নিয়ে আসে। তাদের বই কিনে দেন। আরো কতো অনুষঙ্গ সেই মেলাকে ঘিরে বেষ্টিত! এবার মার্চে মেলা করে তার কতটুকু অর্জন করতে পারলেন আগ্রহীরা। তাই শুধু আবেগের বশে নয়, বইমেলার মতো একটি বৃহত্তর আয়োজন অনেক আগুপিছু ভেবে সাজাবার দরকার ছিল।
এলোমেলো সিদ্ধান্ত আর অদূরদর্শিতাই আজ প্রকাশকদের এই হতাশার কারণ। হতাশ হয়েছেন লেখকরাও। আগামীতে আমরা এমন ভুলের হাত থেকে নিষ্কৃতি চাই।