দুটি কবিতা
নাসির আহমেদ
অসমাপ্ত জন্মগাথা
আমি তোমার মাটির ঘরে জন্মেছি মা ছোট্ট চারা
অখ্যাত এক বীজের কণা বৃক্ষ না কি বনসাই হবে
কিচ্ছু জানা ছিল না মা। জন্ম তুমি দিলেই যখন
জন্মঋণে থাকতে দিও ঋণী আমায় একটা জনম।
কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর সূর্য থেকে পান করি মা
জীবন-আলো। পঞ্চভূতে খাঁচার ভেতর সে কোন পাখি
উঠবে ডেকে, তা-ও জানি না। তৃষ্ণা শুধু হচ্ছে জমা :
দূর আকাশের ছোট্ট কণা নক্ষত্রের কাছে যাবার তৃষ্ণা আমার।
এই বাগানের পঞ্চকোণে হাজার রকম গাছপালা মা
সবুজ কচি-পাতার ওপর রৌদ্রে জ্বলে হীরার দ্যুতি!
একটু যদি তুলতে পারি মাথা এবং ছোট্ট পাতা,
একটি ফোঁটা শিশির যদি ধরতে পারি পাতার ওপর!
এই পিপাসার দগ্ধকথায় আঁকছে ছবি শিল্পী, কবি
আমিও যদি পেতাম কারো কাব্য কিংবা ছবিতে ঠাঁই!
বুঝে নাও পরস্পরের ভাষা
কাঁটাতারে বসে আছে নীল প্রজাপতি,
তুমি তার সৌন্দর্যে বিভোর! নীলরঙ প্রিয় খুব?
নীল কেন ভালোবাসো, হলুদ বিবর্ণ বলে?
নীলেও হলুদ কিন্তু আছে!
আমাকে সম্পূর্ণ চাও, অথচ সম্পূর্ণ কেউ নেই।
কিছুই সম্পূর্ণ নয়,সব ভাঙাচোরা,
শুধু জোড়াতালি আর বুনন শিল্পের সূক্ষ্ম ফাঁকি
আকাশের গাঢ় নীল ওই রংধনু জুড়ে যতটুকু রং
কিছুই মৌলিক নয়, মৌলিকের বিবিধ মিশ্রণ।
খণ্ড খণ্ড সত্তা থেকে অখ- সত্তায় চলে যায়
পৃথিবীর সব রঙ, সব ছবি, মানব-জনম।
হাঙ্গরের সাথে চলছে অসম লড়াই জীবনের।
শব্দের ওপর শব্দ সাজিয়ে প্রাসাদ গড়া যুদ্ধ তো কবিরও।
এঁকে দিতে পারে কবি পূর্ণ সূর্য অথবা জ্যোৎস্নার পূর্ণ রূপ
কিছুটা অস্পষ্ট তবু, এই চূর্ণ ছবি দেখে তুমি ভেবে নিও
তোমার মনের সুপ্ত আকাক্সক্ষার বাকি দৃশ্যপট।
কবিও চিত্রীই বটে, শব্দের তুলিতে শিল্প অর্ধেক আঁকেন।
তুমি চারুকলা নিয়ে মজে আছো। আমি আছি এই
শব্দের রঙিন ঘোরে প্রহেলিকাময়। এসো বুঝে নিই পরস্পর।
নমিত গ্রহে মেঘের প্রাকার
আবদুর রাজ্জাক
আজ পয়লা আষাঢ়, মেঘ তাক করে আছে
অসীম সাহসে, দাদুর দু’নলা বন্দুক, আমার হাতে
টুয়েলভ বোর,
আকাশ চৌচির করে ছিটকে বেরিয়ে আসে বজ্র,
মেঘের। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয় না, এবছর
আমি সন্দ্বীপ যাবো না, সাফারি যাবো না।
মেঘের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তুমি যেখানে যাবে যাও, আমি
যাবো দিল্লি। মীরা বাঈ অপেক্ষা করছে।
করোনায় বেহাল দশা দিল্লির মসনদ। মেঘের
ত্বক থেকে চোখ ফেরানো সম্ভব হয় না,
আমার আছে দু’নলা বন্দুক, মেঘের আছে তীব্র
বিদ্যুৎ, তীর। কিসে আর কিসে, ধানে আর তুষে...
আমি এক অন্ধ উন্মাদ, কালিদাসী মেঘে।
আমার সোনার চাবি তোমাকেই দিয়েছি,
মেঘের চিক্করও দিয়েছি। হাত পেতে নাও।
ছুরিগুলো দানা বেঁধে হাসপাতালে
কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়
ছুরিগুলোকে সারাক্ষণ, সারাজীবন
ঘুরে বেড়াতে দেখেছি, উড়ে,
সংসারে, বাজারে, করিডোরে,
সংগঠনে, সভায়, সরাৎ-হিস্-আদ্দম;
ঘাড়, ম-ু দ্রুত সরিয়ে
আঁচল, পকেট, প্লেট থেকে-, ইউনিয়নের, সম্মিলনের আলোচনার, সঙ্গীতের-
বেঁচেছি কোনো রকম।
তারপরেও হাসিমুখ বাক্যালাপের ছুরিগুলোকে
উড়ে, ঘুরে বেড়াতে দেখেছি হুশ্, হুইশ্, সরাৎ-
প্রাণ-বাঁচাতে মুখ-চোখ ডাক করেছি অবিরাম, ধরেছি অসংখ্য বেশ।
প্রাণান্ত হয়েছে দেহ-মন দিনরাত।
যে ছুরিগুলোকে কাটিয়েছি কোনোরকম,
আমার শ্যামল হৃদয়ের কী দোষ আর
এবার ধরা পড়েছে তা অবরুদ্ধ, রুদ্ধপথ।
আর চলতে পারছে না হৃৎপিণ্ডের হৃদয়।
জানি, দীর্ঘদিনে স্তূপীকৃত চক্রান্ত আর আঘাতের চাপ
রক্তে আজ দানা-গুঁড়ো,
এদের দলা, মুক্ত করতে প্রাণস্রোত শল্য চিকিৎসকের ছুরি
এখন কোথায় বসবে আজ পথ খুঁজছে, তবে শেষ পর্যন্ত
রক্তাক্ত ছুরিকে আমার নিতে হবে,
এ্যাতো-দিন এড়াতে-পারা ছুরির চাপ, অন্য ছুরিকে।
তারপর আর দেহে রক্তস্রোত চলবে কি-না অনিশ্চিত
নির্জন জানালা
সোহরাব পাশা
স্বপ্নগুলো অন্ধতীরন্দাজ
দূরের বাতাস দেখে,
ভেতর খোলে না কেউ
রাত্রির বকুল ঝরছে ;
লাশ হাঁটছে
কেউ দাঁড়িয়ে
গোলাপের কাছে
নৈঃশব্দ্যের শব্দ শুনছে;
রাত্রিগুলোর পুরনো গন্ধ
শোক উড়ছে
নির্জনতার ক্রোধ বাড়ছে-
প্রফুল্ল সকালে;
ঈর্ষা প্রিয় চোখ- ছায়া কাটছে
দুঃখপীড়িত সন্ধ্যেগুলো
অন্যদিন ঘরে তুলছে।
বুকে ধরো সাহারা
শেলী সেনগুপ্তা
আমি জল চাইলে
তুমি তৃষ্ণা দিলে
সাহারা হয়ে দাঁড়িয়ে আছ
দু’হাত বাড়িয়ে,
তুমি কালো তিল চেয়েছো
আমি সমরখন্দ-বুখারা দিলাম
কবিতা ও প্রেমের ছায়ায়,
চেয়েছি ওমর খৈয়াম
হয়ে উঠলে তৈমুর লঙ,
কালের দহন সমরখন্দ-বুখারা তোমার নয়
হারালে কালো তিলটিও...
আত্মস্বীকৃত এক গ্রীষ্মে
ডানাওয়ালা নদীগুলো উড়ে যাবে পাখি হয়ে
পুরে দিয়ে
বুকের খাঁচায়
আস্ত একটি সাহারা...
ভেতরে ও বাহিরে তুমি এক দগদগে সাহারা...
বজ্রকণ্ঠ শুনতে পাওনি
শোয়েব চৌধুরী
অনন্য নন্দনশোভিত
সোনার বাংলা কখনো তোমরা দেখোনি-
‘এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম’
নিশ্চয় বজ্রকণ্ঠে শুনতে পাওনি?
কিংবা নিষিদ্ধ করে জানান দিয়েছ
নব্য ফ্যাসিবাদ থেকে লোভার্ত চাহনি
সাগরের সুনামি হয়তো
এখনো ঠাওর করতে পারোনি মৌলবাদের ফাঁদ;
প্রতারণার প্যাঁচে-গ্রাসে
প্রজন্ম হাঁটেনি যথার্থ পথে
প্রেয়সীর মধুরতম কথা থেকে যায় গোপনে-
উপপাদ্য
আদ্যনাথ ঘোষ
ও আমার রৌদ্র ঢেউ কেন ডুবে গেছ
কষ্টের অন্তর নিয়ে; জ্বলে ওঠে চিতা
ভরাচাঁদ ক্ষয়ে যায়; নীল জল ঠোঁটে-
সন্ধ্যার ভিতর কাঁপে- জলে ধোয়া রাত।
আতপ্ত সন্ধ্যারা ডোবে ঘুম হারা রাতে
যৌবনা জরায়ুর ভেতর; মেঘ জমা হয়
ঘুমের শহর কাঁপে নীল জলে ভেসে।
ও হৃদয় কেন কেঁপে ওঠো-
কেন তারা যমুনার জল ভাঙে;
শরীরের তপ্ত উপপাদ্যে-
ঘোর লাগা ঢেউয়ের ভেতর গাঙচিল ডানায়।
ছেঁড়া স্বপ্ন
মধুবন
আমি মৃত্যুর জন্য তোড়জোড় শুরু করেছিলাম। ঢাকঢোল পিটিয়ে জন্মদিন উৎসব এখন মৃত্যুর জন্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। ধুলোপথে হাঁটতে হাঁটতে সারি সারি জন্মদিন দেখেছি কখনো কুয়াশাঘেরা মেঘের মতো। কখনো পাইন গাছের বরফের পাহাড় জমে থাকা... কখনো বৃষ্টিস্নাত শুভ্র সকালের মতো... একাকিত্বের তোষক... বিছানা... বালিশ থেকে পুরনো ন্যাপথলিনের ভ্যাপসা গন্ধ। দড়ি দিয়ে টাঙানো মশারির একদিকটা উঁইপোকায় খেয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মৃত্যুর কাছে এগোতে চেয়েছিলাম। আমার সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র খেয়েছে মৃত্যুপোকায়। আমিও ক্রমশ একটু একটু করে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি। একই বিছানায় শুয়ে ক্লান্ত শরীর এবার দিন গুনছে। হাজার বছরের শুকিয়ে যাওয়া কত নীরবতা। কত বেয়াড়া নির্জন সাদা গোলাপ শুকিয়ে গেছে। আঠার মতো পরাগে পরাগে লেগে আছে মৈথুনের গন্ধ। ঝরাপাতা ঝরে আছে বসন্তের আঁচ লেগে থাকা হিমশীতল বিছানায়। বিদায় নিয়েছে কোকিল। কিছু অংশ পুড়েছে একাকীত্বের উত্তাপে। কিছু অংশ জ্বলেছে যন্ত্রণার দাবদাহে। এখন অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্ছি ঘুমে যাওয়ার আগে। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই মরতে চেয়েছিলাম। লাখ টাকার স্বপ্নগুলো পিছু ছাড়ছে না ছারপোকা খাওয়া তোষক থেকেও। তবে আমি একবার পাখির মতন মৃত্যু দেখবো।
মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১
দুটি কবিতা
নাসির আহমেদ
অসমাপ্ত জন্মগাথা
আমি তোমার মাটির ঘরে জন্মেছি মা ছোট্ট চারা
অখ্যাত এক বীজের কণা বৃক্ষ না কি বনসাই হবে
কিচ্ছু জানা ছিল না মা। জন্ম তুমি দিলেই যখন
জন্মঋণে থাকতে দিও ঋণী আমায় একটা জনম।
কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর সূর্য থেকে পান করি মা
জীবন-আলো। পঞ্চভূতে খাঁচার ভেতর সে কোন পাখি
উঠবে ডেকে, তা-ও জানি না। তৃষ্ণা শুধু হচ্ছে জমা :
দূর আকাশের ছোট্ট কণা নক্ষত্রের কাছে যাবার তৃষ্ণা আমার।
এই বাগানের পঞ্চকোণে হাজার রকম গাছপালা মা
সবুজ কচি-পাতার ওপর রৌদ্রে জ্বলে হীরার দ্যুতি!
একটু যদি তুলতে পারি মাথা এবং ছোট্ট পাতা,
একটি ফোঁটা শিশির যদি ধরতে পারি পাতার ওপর!
এই পিপাসার দগ্ধকথায় আঁকছে ছবি শিল্পী, কবি
আমিও যদি পেতাম কারো কাব্য কিংবা ছবিতে ঠাঁই!
বুঝে নাও পরস্পরের ভাষা
কাঁটাতারে বসে আছে নীল প্রজাপতি,
তুমি তার সৌন্দর্যে বিভোর! নীলরঙ প্রিয় খুব?
নীল কেন ভালোবাসো, হলুদ বিবর্ণ বলে?
নীলেও হলুদ কিন্তু আছে!
আমাকে সম্পূর্ণ চাও, অথচ সম্পূর্ণ কেউ নেই।
কিছুই সম্পূর্ণ নয়,সব ভাঙাচোরা,
শুধু জোড়াতালি আর বুনন শিল্পের সূক্ষ্ম ফাঁকি
আকাশের গাঢ় নীল ওই রংধনু জুড়ে যতটুকু রং
কিছুই মৌলিক নয়, মৌলিকের বিবিধ মিশ্রণ।
খণ্ড খণ্ড সত্তা থেকে অখ- সত্তায় চলে যায়
পৃথিবীর সব রঙ, সব ছবি, মানব-জনম।
হাঙ্গরের সাথে চলছে অসম লড়াই জীবনের।
শব্দের ওপর শব্দ সাজিয়ে প্রাসাদ গড়া যুদ্ধ তো কবিরও।
এঁকে দিতে পারে কবি পূর্ণ সূর্য অথবা জ্যোৎস্নার পূর্ণ রূপ
কিছুটা অস্পষ্ট তবু, এই চূর্ণ ছবি দেখে তুমি ভেবে নিও
তোমার মনের সুপ্ত আকাক্সক্ষার বাকি দৃশ্যপট।
কবিও চিত্রীই বটে, শব্দের তুলিতে শিল্প অর্ধেক আঁকেন।
তুমি চারুকলা নিয়ে মজে আছো। আমি আছি এই
শব্দের রঙিন ঘোরে প্রহেলিকাময়। এসো বুঝে নিই পরস্পর।
নমিত গ্রহে মেঘের প্রাকার
আবদুর রাজ্জাক
আজ পয়লা আষাঢ়, মেঘ তাক করে আছে
অসীম সাহসে, দাদুর দু’নলা বন্দুক, আমার হাতে
টুয়েলভ বোর,
আকাশ চৌচির করে ছিটকে বেরিয়ে আসে বজ্র,
মেঘের। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয় না, এবছর
আমি সন্দ্বীপ যাবো না, সাফারি যাবো না।
মেঘের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তুমি যেখানে যাবে যাও, আমি
যাবো দিল্লি। মীরা বাঈ অপেক্ষা করছে।
করোনায় বেহাল দশা দিল্লির মসনদ। মেঘের
ত্বক থেকে চোখ ফেরানো সম্ভব হয় না,
আমার আছে দু’নলা বন্দুক, মেঘের আছে তীব্র
বিদ্যুৎ, তীর। কিসে আর কিসে, ধানে আর তুষে...
আমি এক অন্ধ উন্মাদ, কালিদাসী মেঘে।
আমার সোনার চাবি তোমাকেই দিয়েছি,
মেঘের চিক্করও দিয়েছি। হাত পেতে নাও।
ছুরিগুলো দানা বেঁধে হাসপাতালে
কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়
ছুরিগুলোকে সারাক্ষণ, সারাজীবন
ঘুরে বেড়াতে দেখেছি, উড়ে,
সংসারে, বাজারে, করিডোরে,
সংগঠনে, সভায়, সরাৎ-হিস্-আদ্দম;
ঘাড়, ম-ু দ্রুত সরিয়ে
আঁচল, পকেট, প্লেট থেকে-, ইউনিয়নের, সম্মিলনের আলোচনার, সঙ্গীতের-
বেঁচেছি কোনো রকম।
তারপরেও হাসিমুখ বাক্যালাপের ছুরিগুলোকে
উড়ে, ঘুরে বেড়াতে দেখেছি হুশ্, হুইশ্, সরাৎ-
প্রাণ-বাঁচাতে মুখ-চোখ ডাক করেছি অবিরাম, ধরেছি অসংখ্য বেশ।
প্রাণান্ত হয়েছে দেহ-মন দিনরাত।
যে ছুরিগুলোকে কাটিয়েছি কোনোরকম,
আমার শ্যামল হৃদয়ের কী দোষ আর
এবার ধরা পড়েছে তা অবরুদ্ধ, রুদ্ধপথ।
আর চলতে পারছে না হৃৎপিণ্ডের হৃদয়।
জানি, দীর্ঘদিনে স্তূপীকৃত চক্রান্ত আর আঘাতের চাপ
রক্তে আজ দানা-গুঁড়ো,
এদের দলা, মুক্ত করতে প্রাণস্রোত শল্য চিকিৎসকের ছুরি
এখন কোথায় বসবে আজ পথ খুঁজছে, তবে শেষ পর্যন্ত
রক্তাক্ত ছুরিকে আমার নিতে হবে,
এ্যাতো-দিন এড়াতে-পারা ছুরির চাপ, অন্য ছুরিকে।
তারপর আর দেহে রক্তস্রোত চলবে কি-না অনিশ্চিত
নির্জন জানালা
সোহরাব পাশা
স্বপ্নগুলো অন্ধতীরন্দাজ
দূরের বাতাস দেখে,
ভেতর খোলে না কেউ
রাত্রির বকুল ঝরছে ;
লাশ হাঁটছে
কেউ দাঁড়িয়ে
গোলাপের কাছে
নৈঃশব্দ্যের শব্দ শুনছে;
রাত্রিগুলোর পুরনো গন্ধ
শোক উড়ছে
নির্জনতার ক্রোধ বাড়ছে-
প্রফুল্ল সকালে;
ঈর্ষা প্রিয় চোখ- ছায়া কাটছে
দুঃখপীড়িত সন্ধ্যেগুলো
অন্যদিন ঘরে তুলছে।
বুকে ধরো সাহারা
শেলী সেনগুপ্তা
আমি জল চাইলে
তুমি তৃষ্ণা দিলে
সাহারা হয়ে দাঁড়িয়ে আছ
দু’হাত বাড়িয়ে,
তুমি কালো তিল চেয়েছো
আমি সমরখন্দ-বুখারা দিলাম
কবিতা ও প্রেমের ছায়ায়,
চেয়েছি ওমর খৈয়াম
হয়ে উঠলে তৈমুর লঙ,
কালের দহন সমরখন্দ-বুখারা তোমার নয়
হারালে কালো তিলটিও...
আত্মস্বীকৃত এক গ্রীষ্মে
ডানাওয়ালা নদীগুলো উড়ে যাবে পাখি হয়ে
পুরে দিয়ে
বুকের খাঁচায়
আস্ত একটি সাহারা...
ভেতরে ও বাহিরে তুমি এক দগদগে সাহারা...
বজ্রকণ্ঠ শুনতে পাওনি
শোয়েব চৌধুরী
অনন্য নন্দনশোভিত
সোনার বাংলা কখনো তোমরা দেখোনি-
‘এবারের সংগ্রাম
স্বাধীনতার সংগ্রাম’
নিশ্চয় বজ্রকণ্ঠে শুনতে পাওনি?
কিংবা নিষিদ্ধ করে জানান দিয়েছ
নব্য ফ্যাসিবাদ থেকে লোভার্ত চাহনি
সাগরের সুনামি হয়তো
এখনো ঠাওর করতে পারোনি মৌলবাদের ফাঁদ;
প্রতারণার প্যাঁচে-গ্রাসে
প্রজন্ম হাঁটেনি যথার্থ পথে
প্রেয়সীর মধুরতম কথা থেকে যায় গোপনে-
উপপাদ্য
আদ্যনাথ ঘোষ
ও আমার রৌদ্র ঢেউ কেন ডুবে গেছ
কষ্টের অন্তর নিয়ে; জ্বলে ওঠে চিতা
ভরাচাঁদ ক্ষয়ে যায়; নীল জল ঠোঁটে-
সন্ধ্যার ভিতর কাঁপে- জলে ধোয়া রাত।
আতপ্ত সন্ধ্যারা ডোবে ঘুম হারা রাতে
যৌবনা জরায়ুর ভেতর; মেঘ জমা হয়
ঘুমের শহর কাঁপে নীল জলে ভেসে।
ও হৃদয় কেন কেঁপে ওঠো-
কেন তারা যমুনার জল ভাঙে;
শরীরের তপ্ত উপপাদ্যে-
ঘোর লাগা ঢেউয়ের ভেতর গাঙচিল ডানায়।
ছেঁড়া স্বপ্ন
মধুবন
আমি মৃত্যুর জন্য তোড়জোড় শুরু করেছিলাম। ঢাকঢোল পিটিয়ে জন্মদিন উৎসব এখন মৃত্যুর জন্মের কথা মনে করিয়ে দেয়। ধুলোপথে হাঁটতে হাঁটতে সারি সারি জন্মদিন দেখেছি কখনো কুয়াশাঘেরা মেঘের মতো। কখনো পাইন গাছের বরফের পাহাড় জমে থাকা... কখনো বৃষ্টিস্নাত শুভ্র সকালের মতো... একাকিত্বের তোষক... বিছানা... বালিশ থেকে পুরনো ন্যাপথলিনের ভ্যাপসা গন্ধ। দড়ি দিয়ে টাঙানো মশারির একদিকটা উঁইপোকায় খেয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মৃত্যুর কাছে এগোতে চেয়েছিলাম। আমার সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র খেয়েছে মৃত্যুপোকায়। আমিও ক্রমশ একটু একটু করে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছি। একই বিছানায় শুয়ে ক্লান্ত শরীর এবার দিন গুনছে। হাজার বছরের শুকিয়ে যাওয়া কত নীরবতা। কত বেয়াড়া নির্জন সাদা গোলাপ শুকিয়ে গেছে। আঠার মতো পরাগে পরাগে লেগে আছে মৈথুনের গন্ধ। ঝরাপাতা ঝরে আছে বসন্তের আঁচ লেগে থাকা হিমশীতল বিছানায়। বিদায় নিয়েছে কোকিল। কিছু অংশ পুড়েছে একাকীত্বের উত্তাপে। কিছু অংশ জ্বলেছে যন্ত্রণার দাবদাহে। এখন অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্ছি ঘুমে যাওয়ার আগে। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়েই মরতে চেয়েছিলাম। লাখ টাকার স্বপ্নগুলো পিছু ছাড়ছে না ছারপোকা খাওয়া তোষক থেকেও। তবে আমি একবার পাখির মতন মৃত্যু দেখবো।