alt

সাময়িকী

ধারাবাহিক উপন্যাস : দশ

শিকিবু

আবুল কাসেম

: বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১

(পূর্ব প্রকাশের পর)

সতেরো

মুরাসাকির বিয়ের এক বছরের মাথায় তার কন্যা সন্তানের জন্ম হলো। নাম রাখলেন ফুজিওয়ারা নো কেনশি। তামেতোকি নাতনির আগমনে আনন্দে নৃত্যই শুরু করলেন। বাবা নোবুতাকা উৎসব অনুষ্ঠানের মানুষ। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। টেরামাচি লেনে মোটামুটি একটা উৎসব উৎসব ভাব এসে গেল। আত্মীয়স্বজনরা এলো। বন্ধুবান্ধবরা এলেন। ভালো খাওয়া দাওয়া হলো এবং আনন্দফুর্তি করলেন সবাই। হেইয়ান সমাজের উচ্চপর্যায়ের আভিজাত্যের প্রকাশ তাতেও দেখা গেল।

তারপর ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিতে শুরু করল। তা অবশ্য মুরাসাকির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার শেষের দিক থেকেই টুকটাক বোঝা গেছে। হেইয়ান অভিজাত সংস্কৃতির পুরুষেরা এমনিতেই অন্য নারীর প্রতি আসক্ত। সকল স্ত্রীরাই তা সহ্য করেন। মুরাসাকির সঙ্গে নোবুতাকা শপথ করেছিলেন যে, অন্যদিকে পা বাড়াবেন না। মুরাসাকি সন্তানসম্ভবা, তখনই তার কানে নানা কথা আভাসে ইঙ্গিতে আসতে থাকে। তিনি কিছু বিশ্বাস করেন তো, বিশ্বাস আবার করেনও না।

নোবুতাকা সম্পদশালী মানুষ। প্রচুর ধনসম্পদ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যগতভাবে সুপুরুষ। ভোগ বিলাসও করেন প্রচুর। এ ব্যাপারটা সন্দেহে রূপ নিয়ে মনোকষ্টের কারণ হয়। নানা অজুহাতে ইদানীং কমই আসা যাওয়া করেন।

সমস্যাটা করে দিয়েছে সামাজিক রীতি-নীতি। অভিজাত সমাজে নিয়ম মেনে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে থাকেন না। স্ত্রীদের নিজস্ব বা বাবার বাড়িতে স্বামীরা আসেন মাঝে-মধ্যে। একে দ্বি বা বহুচারিতার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন পুরুষেরা। সমাজের নিচের দিকে এ সমস্যাটা নেই। মুরাসাকির কাজের মেয়ে দুটো স্বামীর বাড়িতে থাকে। বেশ সুখে আছে।

এসব চিন্তা করে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন মুরাসাকি। তবে নোবুতাকা যখন আসেন তখন তার আচরণে বুঝবার উপায় থাকে না যে, মুরাসাকি কানে যা শুনেছেন এবং চোখে যা দেখেছেন তার একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল আছে। শুধু স্ত্রী না, মেয়েকে নিয়েও নোবুতাকা আনন্দে মেতে থাকেন। তখন মুরাসাকিও কানে শোনা বিশ্বাসের মু-পাত করে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠেন।

এই সুখে তার কবিতাগুলো বসন্তের হাওয়া দিতে থাকে। ফুল হয়ে ফোটে। আবার বসন্ত বিদায় নেয়। ঝরা পাতার মতোই বিশ্বাস ঝরতে থাকে। সমুদ্রের জোয়ারভাটা যেন ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে।

তারও দেড়-দুবছর পরের কথা। কিয়োটোয় মহামারী আকারে কলেরা দেখা দিয়েছে। তা কোনো অবস্থায়ই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বহুলোক আক্রান্ত। অনেকে মারা যাচ্ছে।

নোবুতাকা আক্রান্ত হয়েছেন। ছুটে গেলেন মুরাসাকি। অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসক চেষ্টা করেও রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। হেইয়ানকিউ নানা দিক থেকে অগ্রসর হলেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে আগের অবস্থানেই আছে।

মুরাসাকি খুবই চিন্তিত এবং হতাশও। চেষ্টার কমতি নেই।

কলেরা সংক্রামক ব্যাধি। নোবুতাকা বললেন, তোমার এখানে আসা বা থাকা নিরাপদ নয়। আমাকে লোকজন দেখছে, তুমি মেয়েটিকে দেখো। আমার সময় মনে হয় শেষ হয়ে এসেছে। তোমাকে কিছু বলার ছিল।

সময় ফুরিয়ে যায়নি। আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন পরে বলা যাবে। মেয়েকে নিয়ে কোনো চিন্তা করার দরকার নেই। সে ভালো আছে।

কিন্তু তোমাকে যে আমার কিছু বলতেই হবে। একটু ধৈর্য ধরে শোনো। আমাকে ভুল বুঝবার বা সন্দেহ করার মতো কাজ আমি করেছি। এর জন্য আমাকে ক্ষমা করো। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আমরা সমাজের উচ্চপর্যায়ের পুরুষেরা সামাজিক রীতির সুযোগ নিয়ে স্ত্রীদের প্রতি যে অন্যায় করি তা ক্ষমাহীন। আমি আরো ক্ষমার অযোগ্য এজন্য যে, আমি তোমাকে অঙ্গীকার করেও ঠকিয়েছি। তবুও ক্ষমা চাইছি।

নোবুতাকার শরীর খুব দুর্বল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। চাইলেও বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। আমার প্রচুর অর্থকড়ি এবং ধনসম্পদ রয়েছে। বেশ কটা বাড়ি আছে। কোথায় কী আছে সবই এই কাগজে লেখা আছে। বলে একটি কাগজ এগিয়ে দিলেন। পরে আবার বললেন, সবগুলোই তোমার এবং আমাদের মেয়ের। একটি বাক্স দেখিয়ে বললেন, এতে বাড়ির কাগজপত্র এবং অর্থকড়ি রয়েছে। এই তার খোলার কৌশল।

মুরাসাকি বললেন, এসবের আমার প্রয়োজন নেই, শুধু আপনাকে প্রয়োজন। আপনি বেঁচে থাকুন, সেরে উঠুন।

না, তাকাকু। আমি আমার চিরপ্রস্থানের সংবাদ পেয়ে গেছি। মন শক্ত করো। এই বাক্সটা এখন তুমি নিয়ে যাবে।

আপনার কাছেই থাকুক।

না, তুমি সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। কাজের অসংখ্য লোক। ওরা শকটে তুলে দেবে এবং কয়েকজন সঙ্গে যাবে। লোকগুলো বিশ্বস্ত।

এ সময় চিকিৎসক এলেন। মুরাসাকিকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, এখানে আপনি কী করছেন। এটা সংক্রামক মহামারী। আপনি এখনই এ স্থান ত্যাগ করুন।

আমি তাকে টেরামাচি লেনে নিয়ে যাব। এখানে তার সেবাযতœ তেমন হচ্ছে না।

তা সম্ভব নয়। মহামারী আক্রান্ত রোগীকে স্থানান্তর করা যাবে না। সম্রাটের শক্ত আদেশ রয়েছে।

তা হলে আমি এখানেই অবস্থান করব।

তা সম্ভব নয়। তাকে দেখার জন্য আমরা আছি। বলে চিকিৎসক নোবুতাকার লোকজনদের ডাকলেন। অদ্ভুত ব্যাপার, আক্রান্ত দু-একজন ছাড়া আর সবাই পালিয়েছে।

চিকিৎসক ভয় পেয়ে গেলেন। তারপরও বললেন, আপনি এখানে থাকতে পারেন না, আপনি যান। না হয় সামুরাইদের ডাকব।

আপনি আমাদেরকে একান্তে থাকার একটু সুযোগ দিন। তারপর না হয়...

বেশ, কিন্তু কিছুক্ষণ।

কেউ কিছু বলছেন না। চুপ করে আছেন। মুরাসাকি নোবুতাকার ডানহাতটা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় পুরলেন। হাতটা বরফের মতো ঠা-া হয়ে গেছে। তবে বোধশক্তি আছে। তাই তিনি আবেগে অস্থির হয়ে উঠলেন। চোখে জল জমা হতে শুরু করল। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো ক্রমে।

মুরাসাকি চিৎকার করে চিকিৎসককে ডাকলেন। চিকিৎসক চলে গেছেন। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে নোবুতাকার মৃত্যু হলো। মুহূর্তের জন্য মুরাসাকি দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেন। কী করবেন ভেবে পেলেন না। নোবুতাকার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তখনও চোখ মেলে যেন তাকিয়ে আছেন নোবুতাকা। মুরাসাকি চোখ দুটি টেনে বন্ধ করে দিলেন। তার চোখ অশ্রুতে ঝাঁপসা হয়ে আসছে।

পরক্ষণেই মন শক্ত করলেন। শকট চালককে ডাকলেন। নোবুনোরিকে সংবাদ পাঠালেন। নোবুনোরি সম্রাটের প্রাসাদে নোবুতাকার মৃত্যু সংবাদ জানতেই সামুরাই সেনাদল মহামারী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় মরদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে গেল।

শোকের কালো কিমোনো পরিধান করে মুরাসাকি হেইয়ানকিউর অভিজাত সমাধিস্থলে উপস্থিত হলেন। সঙ্গে আছে মেয়েটি এবং ভাই নোবুনোরি। কয়েকদিন আগে নোবুনোরিকে রেখে গেছেন বাবা।

বৌদ্ধ ঝেন মতবাদীদের অনুসারী এবং পৃষ্ঠপাষক সামুরাই সেনাবাহিনী। দুর্যোাগকালে মহামারীর মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করেই মরদেহ সমাধিস্থ করা হল। এ জন্য মুরাসাকির মনে অনেক কষ্ট। সেনাবাহিনী চলেন গেলেও মুরাসাকি কন্যা এবং ভাইকে নিয়ে নিরবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। মনে হয় তিনি নোবুতাকাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ফিরে আসার সময় মনে হলো মানুষটি এত সম্পদ অর্জন করেও খালি হাতে চলে গেল। তেরামাচি লেনের বাড়িতে পৌঁছে মেয়ে কেনশিকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলেন। কেনশির বয়স দুই বৎসর। সে বাবার মৃত্যু এবং মায়ের কান্নার কিছুই বুঝে না। মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজেও কাঁদে। কান্না সংক্রমণ, বোধহয় একজন নারী হিসেবে সেজন্যই কাঁদে।

মুরাসাকি স্বামীর মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পান এবং ভেঙে পড়েন। পরে এক সময় ডায়েরিতে লিখলেন, আমি মানসিক চাপের মধ্যে বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেলাম। দ্বন্দ্ব সংঘাত এবং সিদ্ধান্তহীনতা পেয়ে বসল আমাকে। এতটাই উদাসীন হয়ে রইলাম যে, সময় আর পোশাক-পরিচ্ছদের কোনোই ঠিকঠিকানা রইল না। আমার অশেষ নিঃসঙ্গতা অসহ্য হয়ে উঠল।’

বাবা তামেতোকি নোবুতাকার মৃত্যু সংবাদ পেয়েই ইচিঝেন প্রদেশ থেকে ছুটে এলেন। কন্যা এবং নাতনির পাশে দাঁড়ালেন। কলেরা মহামারীর ভয়ে সারা কিয়োটো সন্ত্রস্ত। জীবনের স্বাভাবিক গতি থেমে গেছে। নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেছে, এক লক্ষ মানুষের জনপদ কিয়োটো। তার মধ্যেও বাবা নিজের পরিবারের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য এবং কন্যার মধ্যে বিষাদগ্রস্ততা, সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতা কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেন।

মুরাসাকিকে বললেন, তাকাকু, জীবন বড় এক অদ্ভুত জিনিস। তুমি যেভাবে চালাবে, সেভাবেই চলবে। বিষাদগ্রস্ত জীবন উদাসীনই হয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তোমার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, তার ভবিষ্যৎ আছে। তার দিকে তাকিয়ে তোমাকে সহজ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে। প্রিয়জনের জন্য শোক থাকবে। শোকের মধ্যে বিলীন হয়ে গেলে চলবে কেন? আমার কথা একবার ভাবো। তোমাদের খুব ছোটবেলায় তোমার মা মারা গেলেন। আমি তোমাদের নিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। তোমার মায়ের শোক আমাকে বিষাদগ্রস্ত এবং উদাসীন করে দিল। তখন আমি শুধু বসে বসে ভাবতাম। কী ভাবতাম জানি না। ওই যে জলাশয়টা দেখা যায়, তার প্রতি তাকিয়ে বুনো ক্ষুদে হাঁসেদের জলকেলি দেখতাম। যখন তোমার মা বেঁচেছিলেন মনে হতো এই ক্ষুদ্র হাঁসেরা অযথাই জলের মধ্যে নেচে বেড়ায়। তোমার মায়ের মৃত্যুর পর তা অত্যন্ত অর্থবহ মনে হলো। আর তখনই তোমাদের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ জেগে উঠল। তোমরা সেই মায়েরই সন্তান।

মুরাসাকি বললেন, কী করব আমি?

কেনশির ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগী হও। তুমি তাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে যাও। তার বাবার সম্পত্তি এবং ধনসম্পদ তোমাকেই রক্ষা করতে হবে তার জন্য।

কী করে আমি সেখানে থাকব। আমি সেখানে তাকে মারা যেতে দেখেছি।

তুমি সে বাড়িতে যাবে না। বিওয়া হ্রদের পাশে তার ইশিয়ামা ডেরা রয়েছে। হ্রদপাড়ে বলে হ্রদের দৃশ্য দেখে তোমার ভালো সময় কাটবে। তুমি চাওতো ইশিয়ামা প্যাগোডায় গিয়ে তার জন্য পরকালের শান্তি চেয়ে আরাধনা করতে পার।

বাবাই একদিন পৌঁছে দিলেন তাকে ইশয়ামা ডেরায়।

ধনী লোকের স্ত্রী এবং বাবার কিছু সম্পদেরও মালিক তিনি। চাকর-বাকর প্রচুর। তাদের দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য সুপারভাইজার আছে। মেয়েকে এরাই দেখভাল করে।

কয়েকদিন পর বাবা আবার এলেন। সঙ্গে করে নিয়ে এলেন কবিতা আর মনোগাতারির নানা কপি করা লিপি। বললেন, মন খারাপ হলে এগুলো পড়বে। অবসর সময়ে পড়বে সময় ভালো কাটবে।

প্রথমে মন বসেনি। পরে আস্তে আস্তে কবিতা ও গল্পের মধ্যে ঢুকে গেলেন। বাঁশ কর্তনকারীর উপাখ্যান পাঠ করে মনে হলো এ এক অলিক ও অবাস্তব গল্প। এই উপাখ্যান তাকে সমালোচক করে তুলল। তাতে তিনি বিষাদগ্রস্ত ও উদাসীন মনোভাব থেকে নিজেই যেন বাস্তবে ফিরে এলেন। তিনি বুঝতে পারলেন বাঁশের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা এবং পরিণত বয়সে চাঁদে চলে যাওয়ার মতো অলিক রূপ কথা নিয়ে লেখা ‘তাকে তোরি মনোগাতারি’ ছেলে ভোলানো গল্প হলেও পরিণত বয়সের মানুষের সাহিত্য নয়।

সাহিত্যপাঠ তাকে আরো উদাসীন করে দিতে পারতো। কিন্তু না, তাকে ভালো জীবনবাদী করে তুলল। সবকিছুতেই মনোযোগ স্থাপন করতে পারছেন। মেয়েরও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ইশিয়ামা ডেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এল। এখন ব্যস্ততায় সময় কাটে সবার। কেনশি যেন তার মাকে ফিরে পেয়ে চপল শৈশবের প্রাণময়তায় ফিরে গেছে। আনন্দময় শৈশবের আবার সাক্ষাৎ পেয়েছে।

ক্রমশ...

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

ধারাবাহিক উপন্যাস : দশ

শিকিবু

আবুল কাসেম

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১

(পূর্ব প্রকাশের পর)

সতেরো

মুরাসাকির বিয়ের এক বছরের মাথায় তার কন্যা সন্তানের জন্ম হলো। নাম রাখলেন ফুজিওয়ারা নো কেনশি। তামেতোকি নাতনির আগমনে আনন্দে নৃত্যই শুরু করলেন। বাবা নোবুতাকা উৎসব অনুষ্ঠানের মানুষ। নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। টেরামাচি লেনে মোটামুটি একটা উৎসব উৎসব ভাব এসে গেল। আত্মীয়স্বজনরা এলো। বন্ধুবান্ধবরা এলেন। ভালো খাওয়া দাওয়া হলো এবং আনন্দফুর্তি করলেন সবাই। হেইয়ান সমাজের উচ্চপর্যায়ের আভিজাত্যের প্রকাশ তাতেও দেখা গেল।

তারপর ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিতে শুরু করল। তা অবশ্য মুরাসাকির অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার শেষের দিক থেকেই টুকটাক বোঝা গেছে। হেইয়ান অভিজাত সংস্কৃতির পুরুষেরা এমনিতেই অন্য নারীর প্রতি আসক্ত। সকল স্ত্রীরাই তা সহ্য করেন। মুরাসাকির সঙ্গে নোবুতাকা শপথ করেছিলেন যে, অন্যদিকে পা বাড়াবেন না। মুরাসাকি সন্তানসম্ভবা, তখনই তার কানে নানা কথা আভাসে ইঙ্গিতে আসতে থাকে। তিনি কিছু বিশ্বাস করেন তো, বিশ্বাস আবার করেনও না।

নোবুতাকা সম্পদশালী মানুষ। প্রচুর ধনসম্পদ। পাশাপাশি স্বাস্থ্যগতভাবে সুপুরুষ। ভোগ বিলাসও করেন প্রচুর। এ ব্যাপারটা সন্দেহে রূপ নিয়ে মনোকষ্টের কারণ হয়। নানা অজুহাতে ইদানীং কমই আসা যাওয়া করেন।

সমস্যাটা করে দিয়েছে সামাজিক রীতি-নীতি। অভিজাত সমাজে নিয়ম মেনে স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে থাকেন না। স্ত্রীদের নিজস্ব বা বাবার বাড়িতে স্বামীরা আসেন মাঝে-মধ্যে। একে দ্বি বা বহুচারিতার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন পুরুষেরা। সমাজের নিচের দিকে এ সমস্যাটা নেই। মুরাসাকির কাজের মেয়ে দুটো স্বামীর বাড়িতে থাকে। বেশ সুখে আছে।

এসব চিন্তা করে মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন মুরাসাকি। তবে নোবুতাকা যখন আসেন তখন তার আচরণে বুঝবার উপায় থাকে না যে, মুরাসাকি কানে যা শুনেছেন এবং চোখে যা দেখেছেন তার একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো মিল আছে। শুধু স্ত্রী না, মেয়েকে নিয়েও নোবুতাকা আনন্দে মেতে থাকেন। তখন মুরাসাকিও কানে শোনা বিশ্বাসের মু-পাত করে তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠেন।

এই সুখে তার কবিতাগুলো বসন্তের হাওয়া দিতে থাকে। ফুল হয়ে ফোটে। আবার বসন্ত বিদায় নেয়। ঝরা পাতার মতোই বিশ্বাস ঝরতে থাকে। সমুদ্রের জোয়ারভাটা যেন ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে।

তারও দেড়-দুবছর পরের কথা। কিয়োটোয় মহামারী আকারে কলেরা দেখা দিয়েছে। তা কোনো অবস্থায়ই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বহুলোক আক্রান্ত। অনেকে মারা যাচ্ছে।

নোবুতাকা আক্রান্ত হয়েছেন। ছুটে গেলেন মুরাসাকি। অবস্থা ভালো নয়। চিকিৎসক চেষ্টা করেও রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। হেইয়ানকিউ নানা দিক থেকে অগ্রসর হলেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে আগের অবস্থানেই আছে।

মুরাসাকি খুবই চিন্তিত এবং হতাশও। চেষ্টার কমতি নেই।

কলেরা সংক্রামক ব্যাধি। নোবুতাকা বললেন, তোমার এখানে আসা বা থাকা নিরাপদ নয়। আমাকে লোকজন দেখছে, তুমি মেয়েটিকে দেখো। আমার সময় মনে হয় শেষ হয়ে এসেছে। তোমাকে কিছু বলার ছিল।

সময় ফুরিয়ে যায়নি। আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন পরে বলা যাবে। মেয়েকে নিয়ে কোনো চিন্তা করার দরকার নেই। সে ভালো আছে।

কিন্তু তোমাকে যে আমার কিছু বলতেই হবে। একটু ধৈর্য ধরে শোনো। আমাকে ভুল বুঝবার বা সন্দেহ করার মতো কাজ আমি করেছি। এর জন্য আমাকে ক্ষমা করো। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি। আমরা সমাজের উচ্চপর্যায়ের পুরুষেরা সামাজিক রীতির সুযোগ নিয়ে স্ত্রীদের প্রতি যে অন্যায় করি তা ক্ষমাহীন। আমি আরো ক্ষমার অযোগ্য এজন্য যে, আমি তোমাকে অঙ্গীকার করেও ঠকিয়েছি। তবুও ক্ষমা চাইছি।

নোবুতাকার শরীর খুব দুর্বল। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। চাইলেও বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। আমার প্রচুর অর্থকড়ি এবং ধনসম্পদ রয়েছে। বেশ কটা বাড়ি আছে। কোথায় কী আছে সবই এই কাগজে লেখা আছে। বলে একটি কাগজ এগিয়ে দিলেন। পরে আবার বললেন, সবগুলোই তোমার এবং আমাদের মেয়ের। একটি বাক্স দেখিয়ে বললেন, এতে বাড়ির কাগজপত্র এবং অর্থকড়ি রয়েছে। এই তার খোলার কৌশল।

মুরাসাকি বললেন, এসবের আমার প্রয়োজন নেই, শুধু আপনাকে প্রয়োজন। আপনি বেঁচে থাকুন, সেরে উঠুন।

না, তাকাকু। আমি আমার চিরপ্রস্থানের সংবাদ পেয়ে গেছি। মন শক্ত করো। এই বাক্সটা এখন তুমি নিয়ে যাবে।

আপনার কাছেই থাকুক।

না, তুমি সঙ্গে করে নিয়ে যাবে। কাজের অসংখ্য লোক। ওরা শকটে তুলে দেবে এবং কয়েকজন সঙ্গে যাবে। লোকগুলো বিশ্বস্ত।

এ সময় চিকিৎসক এলেন। মুরাসাকিকে দেখে অবাক হয়ে বললেন, এখানে আপনি কী করছেন। এটা সংক্রামক মহামারী। আপনি এখনই এ স্থান ত্যাগ করুন।

আমি তাকে টেরামাচি লেনে নিয়ে যাব। এখানে তার সেবাযতœ তেমন হচ্ছে না।

তা সম্ভব নয়। মহামারী আক্রান্ত রোগীকে স্থানান্তর করা যাবে না। সম্রাটের শক্ত আদেশ রয়েছে।

তা হলে আমি এখানেই অবস্থান করব।

তা সম্ভব নয়। তাকে দেখার জন্য আমরা আছি। বলে চিকিৎসক নোবুতাকার লোকজনদের ডাকলেন। অদ্ভুত ব্যাপার, আক্রান্ত দু-একজন ছাড়া আর সবাই পালিয়েছে।

চিকিৎসক ভয় পেয়ে গেলেন। তারপরও বললেন, আপনি এখানে থাকতে পারেন না, আপনি যান। না হয় সামুরাইদের ডাকব।

আপনি আমাদেরকে একান্তে থাকার একটু সুযোগ দিন। তারপর না হয়...

বেশ, কিন্তু কিছুক্ষণ।

কেউ কিছু বলছেন না। চুপ করে আছেন। মুরাসাকি নোবুতাকার ডানহাতটা টেনে নিজের হাতের মুঠোয় পুরলেন। হাতটা বরফের মতো ঠা-া হয়ে গেছে। তবে বোধশক্তি আছে। তাই তিনি আবেগে অস্থির হয়ে উঠলেন। চোখে জল জমা হতে শুরু করল। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে এলো ক্রমে।

মুরাসাকি চিৎকার করে চিকিৎসককে ডাকলেন। চিকিৎসক চলে গেছেন। এই অবস্থায় ধীরে ধীরে নোবুতাকার মৃত্যু হলো। মুহূর্তের জন্য মুরাসাকি দিগি¦দিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেন। কী করবেন ভেবে পেলেন না। নোবুতাকার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তখনও চোখ মেলে যেন তাকিয়ে আছেন নোবুতাকা। মুরাসাকি চোখ দুটি টেনে বন্ধ করে দিলেন। তার চোখ অশ্রুতে ঝাঁপসা হয়ে আসছে।

পরক্ষণেই মন শক্ত করলেন। শকট চালককে ডাকলেন। নোবুনোরিকে সংবাদ পাঠালেন। নোবুনোরি সম্রাটের প্রাসাদে নোবুতাকার মৃত্যু সংবাদ জানতেই সামুরাই সেনাদল মহামারী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আওতায় মরদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে গেল।

শোকের কালো কিমোনো পরিধান করে মুরাসাকি হেইয়ানকিউর অভিজাত সমাধিস্থলে উপস্থিত হলেন। সঙ্গে আছে মেয়েটি এবং ভাই নোবুনোরি। কয়েকদিন আগে নোবুনোরিকে রেখে গেছেন বাবা।

বৌদ্ধ ঝেন মতবাদীদের অনুসারী এবং পৃষ্ঠপাষক সামুরাই সেনাবাহিনী। দুর্যোাগকালে মহামারীর মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিকতা না করেই মরদেহ সমাধিস্থ করা হল। এ জন্য মুরাসাকির মনে অনেক কষ্ট। সেনাবাহিনী চলেন গেলেও মুরাসাকি কন্যা এবং ভাইকে নিয়ে নিরবে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। মনে হয় তিনি নোবুতাকাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ফিরে আসার সময় মনে হলো মানুষটি এত সম্পদ অর্জন করেও খালি হাতে চলে গেল। তেরামাচি লেনের বাড়িতে পৌঁছে মেয়ে কেনশিকে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলেন। কেনশির বয়স দুই বৎসর। সে বাবার মৃত্যু এবং মায়ের কান্নার কিছুই বুঝে না। মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজেও কাঁদে। কান্না সংক্রমণ, বোধহয় একজন নারী হিসেবে সেজন্যই কাঁদে।

মুরাসাকি স্বামীর মৃত্যুতে অনেক কষ্ট পান এবং ভেঙে পড়েন। পরে এক সময় ডায়েরিতে লিখলেন, আমি মানসিক চাপের মধ্যে বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেলাম। দ্বন্দ্ব সংঘাত এবং সিদ্ধান্তহীনতা পেয়ে বসল আমাকে। এতটাই উদাসীন হয়ে রইলাম যে, সময় আর পোশাক-পরিচ্ছদের কোনোই ঠিকঠিকানা রইল না। আমার অশেষ নিঃসঙ্গতা অসহ্য হয়ে উঠল।’

বাবা তামেতোকি নোবুতাকার মৃত্যু সংবাদ পেয়েই ইচিঝেন প্রদেশ থেকে ছুটে এলেন। কন্যা এবং নাতনির পাশে দাঁড়ালেন। কলেরা মহামারীর ভয়ে সারা কিয়োটো সন্ত্রস্ত। জীবনের স্বাভাবিক গতি থেমে গেছে। নীরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেছে, এক লক্ষ মানুষের জনপদ কিয়োটো। তার মধ্যেও বাবা নিজের পরিবারের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য এবং কন্যার মধ্যে বিষাদগ্রস্ততা, সিদ্ধান্তহীনতা ও উদাসীনতা কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালালেন।

মুরাসাকিকে বললেন, তাকাকু, জীবন বড় এক অদ্ভুত জিনিস। তুমি যেভাবে চালাবে, সেভাবেই চলবে। বিষাদগ্রস্ত জীবন উদাসীনই হয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তোমার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, তার ভবিষ্যৎ আছে। তার দিকে তাকিয়ে তোমাকে সহজ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে। প্রিয়জনের জন্য শোক থাকবে। শোকের মধ্যে বিলীন হয়ে গেলে চলবে কেন? আমার কথা একবার ভাবো। তোমাদের খুব ছোটবেলায় তোমার মা মারা গেলেন। আমি তোমাদের নিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। তোমার মায়ের শোক আমাকে বিষাদগ্রস্ত এবং উদাসীন করে দিল। তখন আমি শুধু বসে বসে ভাবতাম। কী ভাবতাম জানি না। ওই যে জলাশয়টা দেখা যায়, তার প্রতি তাকিয়ে বুনো ক্ষুদে হাঁসেদের জলকেলি দেখতাম। যখন তোমার মা বেঁচেছিলেন মনে হতো এই ক্ষুদ্র হাঁসেরা অযথাই জলের মধ্যে নেচে বেড়ায়। তোমার মায়ের মৃত্যুর পর তা অত্যন্ত অর্থবহ মনে হলো। আর তখনই তোমাদের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ জেগে উঠল। তোমরা সেই মায়েরই সন্তান।

মুরাসাকি বললেন, কী করব আমি?

কেনশির ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগী হও। তুমি তাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে যাও। তার বাবার সম্পত্তি এবং ধনসম্পদ তোমাকেই রক্ষা করতে হবে তার জন্য।

কী করে আমি সেখানে থাকব। আমি সেখানে তাকে মারা যেতে দেখেছি।

তুমি সে বাড়িতে যাবে না। বিওয়া হ্রদের পাশে তার ইশিয়ামা ডেরা রয়েছে। হ্রদপাড়ে বলে হ্রদের দৃশ্য দেখে তোমার ভালো সময় কাটবে। তুমি চাওতো ইশিয়ামা প্যাগোডায় গিয়ে তার জন্য পরকালের শান্তি চেয়ে আরাধনা করতে পার।

বাবাই একদিন পৌঁছে দিলেন তাকে ইশয়ামা ডেরায়।

ধনী লোকের স্ত্রী এবং বাবার কিছু সম্পদেরও মালিক তিনি। চাকর-বাকর প্রচুর। তাদের দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য সুপারভাইজার আছে। মেয়েকে এরাই দেখভাল করে।

কয়েকদিন পর বাবা আবার এলেন। সঙ্গে করে নিয়ে এলেন কবিতা আর মনোগাতারির নানা কপি করা লিপি। বললেন, মন খারাপ হলে এগুলো পড়বে। অবসর সময়ে পড়বে সময় ভালো কাটবে।

প্রথমে মন বসেনি। পরে আস্তে আস্তে কবিতা ও গল্পের মধ্যে ঢুকে গেলেন। বাঁশ কর্তনকারীর উপাখ্যান পাঠ করে মনে হলো এ এক অলিক ও অবাস্তব গল্প। এই উপাখ্যান তাকে সমালোচক করে তুলল। তাতে তিনি বিষাদগ্রস্ত ও উদাসীন মনোভাব থেকে নিজেই যেন বাস্তবে ফিরে এলেন। তিনি বুঝতে পারলেন বাঁশের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা এবং পরিণত বয়সে চাঁদে চলে যাওয়ার মতো অলিক রূপ কথা নিয়ে লেখা ‘তাকে তোরি মনোগাতারি’ ছেলে ভোলানো গল্প হলেও পরিণত বয়সের মানুষের সাহিত্য নয়।

সাহিত্যপাঠ তাকে আরো উদাসীন করে দিতে পারতো। কিন্তু না, তাকে ভালো জীবনবাদী করে তুলল। সবকিছুতেই মনোযোগ স্থাপন করতে পারছেন। মেয়েরও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ইশিয়ামা ডেলায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এল। এখন ব্যস্ততায় সময় কাটে সবার। কেনশি যেন তার মাকে ফিরে পেয়ে চপল শৈশবের প্রাণময়তায় ফিরে গেছে। আনন্দময় শৈশবের আবার সাক্ষাৎ পেয়েছে।

ক্রমশ...

back to top