alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১

করোনাকালে রচিত পঙ্ক্তিমালা

নরেশ ভূঁইয়া

হাতের একটু ছোঁয়া পেতে

উতলা হয়েছে নাক মুখ চোখ

লজ্জার মাথা খেয়ে মন তো বসেছে অনশনে

দাবি তার, সহবাসের সুযোগ দিতে হবে

করোনার যাবতীয় উপসর্গের সাথে।

এসব কিছুর সাথেই আপোস করে

করোনামুক্ত নয় যুক্ত থেকেই

জীবনের সবটুকু রঙ ধরে রাখতে চাই

স্বপ্ন দেখি নতুন এক পৃথিবীর

যেখানে আমরা সবাই মিলে রাজা হবো।

বলবো ভালোবাসায় থেকো মানুষ

ভালোবাসায় রেখো প্রকৃতি

ঈদের দিনের মতই হোক

আমাদের সকলের প্রতিটি দিন

মেঘ বিহীন আকাশের মতো

উদার চিত্তেই বলতে পারি ঈদ মুবারক!

রচিত করোনাকালের পঙ্ক্তিমালাই

হয়ে যাক তোমাকে নিয়ে প্রেমের কবিতা।

ধ্যানী প্রেমিক

মারুফ রায়হান

পণ্ডিত খণ্ডিত বটে, তার উপভোগ নয় যথাযথ

বিশ্লেষণ-মোহে মজে ঘটে তার শুদ্ধ সর্বনাশ

রসিক সাধক চেনে কবিতার সুরেলা বিন্যাস

জানে ব্যঞ্জনার প্রাণ, গূঢ় ভাব, আর মধু যতো।

কবিতা কোথায় থাকে? ছায়াপথে, প্রণয়-মঞ্জিলে

যদি ভালোবাসো পেতে পারো মতিহারা মতিঝিলে

সংহত সুবোধ পায়, এমনকি ভাগাড়ে ও ভস্মে

কল্পনা-প্রতিভাহীনে মিলবে না শারীরিক স্পর্শে।

সরোবরে হাতড়ায় অধ্যাপক, কাব্য সরে যায়

কাঁটাছেঁড়া করে হয়ে শল্যবিদ, অধরা লাবণ্য;

সে নয় সুশীল, কবিতার প্রেমাস্পদ, সে যে বন্য

ভাব ছুঁতে অপারগ, মন্দাক্রান্তা বেতালে বাজায়।

নির্জনে ও লোকালয়ে পাবে ঢের চতুর্দশপদী

নিবিষ্ট প্রেমিক হয়ে ধ্যানগ্রস্ত ভালোবাসো যদি ॥

বৃষ্টির কস্তুরি

দুলাল সরকার

বৃষ্টির কাছে চেয়েছি মুষল ধারা

মাঠফাটা রোদে শস্যের উপসনা

কিষাণীর চোখে জল নেই, কেঁদে কেঁদে

মেঘ তুমি শোনো, কৃশকায় তরুলতা;

বৃক্ষের কাছে চেয়েছি অক্সিজেন

কী করে দেবে বিবর্ণ যে পাতা

মানুষের সেবা কি করে দেয়

নিজেই বাস্তুহারা

মেঘ তুমি শোনোনি যক্ষের হয়ে

যে বারতা বয়ে নাও

দয়িতাকে বলো বাংলার কিষাণীরা

যে বেদনা সয়ে মৃত্তিকার ঠোঁটে

প্রেমহীন অভিধানে;

বৃষ্টির হয়ে কস্তুরি লতা

ঝরুক মাটিতে হোক না কিছুটা ক্ষত

নীরা কি বোঝে না ঠোঁটের ডগায়

প্রেমের চিহ্ন থাকুক কিছু লেখা

চুম্বনে লেখা প্রেমের চিহ্ন আঁকা।

বিশ্বযুদ্ধ

পল্লববরন পাল

শরীরের সব বোধ একে একে সার্জিক্যাল আঘাতে আঘাতে

আগুনের গোলা হয়ে নিমেষে ছড়িয়ে যাচ্ছে বোধের শরীরে

কে কার পরিপূরক- কী সম্পর্ক দুজনের? শরীর ও বোধ?

অথচ এ ওকে ছাড়া অস্তিত্বই নিরর্থক- দুজনেই জানে

চূড়ান্ত মোক্ষ ছাড়া আর কী চাহিদা আছে এ যুদ্ধ গণিতে?

সুখের সংজ্ঞা জেনে অনুভব করেছে কি কেউ কোনোদিন

শ্বাসের সীমান্ত জুড়ে একাধিক ঈশ্বরের ঠোঁটের উল্লাস?

আসঙ্গ রমণপ্রিয় শরীরে বা বোধে নেই কোনো মৌলবাদ

ধর্ম নেই, জাত নেই, নেই শ্রেণিসংগ্রামের আর্থরাজনীতি

বরং প্রতিটা যুদ্ধে প্রত্যেক সীমান্তদেশে জ্বলে ওঠে আলো

শরীরের বোধ থেকে বোধের শরীর তক রক্তঢেউ ফুঁড়ে

একে একে জেগে ওঠে নিরাকার আদরের একএকটি মুখ

প্রত্যেকের নাম এক- অথবা পৃথক-

খোদা গড্ অথবা বিধাতা

কেন যে এ পথে কেউ পৃথিবীর ক্রমমুক্তি স্বপ্ন দেখি না...

মায়াকানন

হাবীব ইমন

একটা মায়াকানন আছে আমার

সে কাননে ফুল নেই, মায়ারা আছে যতেœ।

কাননে আকাক্সক্ষা বাড়ে। বিষাদও।

তুমি ভালো নেই।

একটি গেরুয়া বিকেল কাটে তোমার লালকাঠের পাটাতনে।

মায়া বড় ত্যাঁদোড়, মহাশূন্যতায় জ্বালিয়ে মারে

একদিন এখানে আগুনের ফুল ফুটেছিলো

এখন তারা বিপন্ন-বিচ্ছিন্ন। কেউ কেউ ক্লান্ত-শ্রীহীন।

মায়াকানন ভাই-হারানো প্রতিশব্দ হয়ে যাচ্ছে।

কখন যে মৃত্যু ডাকে, অন্তিম একা অপেক্ষা করছে জীবিতের,

ক্ষমতার কাঁচের ঘর থেকে বেরিয়ে আসো ধরিত্রির কাছে।

মায়াকানন-

কিছু নৈঃশব্দ্যের গায়ে লেগে ঝরে পড়ে,

মুখোশে পিছলে পড়ে জ্যোৎস্না। স্মৃতি-বিস্মৃতির অসম প’রে।

নিষ্প্রভ এলাটিং-বেলটিং।

মায়াকানন-

জামিন পেলো না। জামিন দিয়ে গেলো সবাইকে;

আমরা সকলে দুই হাঁটুর মাঝখানে মাথা গুঁজে জামিনে থাকি।

গণহত্যার কয়েকশ’ মিনিট

শাহ বুলবুল

পরিখায় মুখোমুখি স্কাড রকেট

দূরের গাঁয় হাম্বির পিষে যায় সভ্যতা

থেকে যায় গণহত্যার কয়েকশ মিনিট।

ইউফ্রেটিস তাইগ্রিসের খেয়ায়

পার হয় আরেকটা ব্যাবিলন

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দরজায়।

এখানেই প্রাগৈতিহাসিক মানুষ শান্তি স্থগিত করে

গিলে নেয় ডেজার্টফক্স

মরুবালির মতো ছুটে যায় যুদ্ধের ডাকঘরে।

যোদ্ধার ডানহাতে হত্যার রেন্স

বাম কাঁধে সাইরেন

আবুগারিবের উঠোনে কাঁদে ডাহুক অ্যাম্বুলেন্স।

দুঃশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি সাঁটা হয় নিরক্ষরেখার বিষুব কবরে

জানি, আবার হাহাকারে ডুকরাবে মানুষ

মসজিদে মন্দিরে।

জীবন পাণ্ডুলিপি

সাইয়্যিদ মঞ্জু

কবি হাফিজ রশিদ খান, আপনাকে

পার্বতীয় পা চলতে-চলতে পথিক ফেলে আসে

সাঙ্গুর ঘোলাজল

দোয়াতভরা প্রকৃতির মায়াকালি

ভাঁজে ভাঁজে জুমচাষে পাহাড়ের উপশিরা

মন-মোচড়ের শব্দ তোলে প্রসব বেদনায়।

ধীরলয়ে ওঠে কাব্যের ইমারত

সুখে-দুঃখে মনোহর তিনি আদিবাসী ও বাঙালি।

আদিপাতায় হেফ্জ করেন বিগতকালের যত খতিয়ান

ফিরিঙ্গি-হার্মাদ অধ্যায় শেষে লর্ড ক্লাইভের পথিকদেরও।

চেরাগির ছায়ায় জীবন-পা-ুলিপি হাতে আলোকিত মুখ তাঁর-

যেন স্বদেশ আমার।

এসো মিলেমিশে নতুন কিছু হই

রওশন রুবী

অনামিকা, বাতাসে হিং এর গন্ধ।

মানুষ অকাজে দৌড়াচ্ছে খুব,

কাজের বোঝাটা অথচ পেছনে চুপ।

মানুষের কাছে বৃষ্টি নেই। শরতের নির্মলতা নেই।

গোলাপ গন্ধ নেই। তুমি বসরার গোলাপ বাগান হবে?

কিংবা শরত? আমি বাংলার আকাশ হবো...

তোমার সরস সুগন্ধ মিশে যাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে...

বাতাসে কার্বন... খুব। দম আটকে আসে একটু গরমেই।

প্রজন্ম অক্সিজেন অভাবে বড় হতে থাকে।

তুমি বিশ্বস্ত-অক্সিজেন হবে অনামিকা?

ভয়ংকর শ্বাসকষ্ট এখন পুরোটা পৃথিবীতে।

ছাদ বাগানগুলি কিংবা সবুজ বনানীতে মিশে যাবে।

আবার গজাবে নতুন পাতায়-ঘাসে...

প্রজন্ম “পেট” থেকে পড়ে দূষিত বাতাস পাবে না।

নাকি বৃষ্টি হবে তুমি? আমি চা’বাগান। তীক্ষè-ধারায় ভেজাবে;

দু’জনে মিলেমিশে অক্সিজেন আর পলি জন্মাবো...

অসুস্থ-বিষণœ-বিধ্বস্ত-ক্লান্ত মানুষের প্রশান্তির প্রয়োজন।

নির্ভরতার প্রয়োজন। এসো মিলেমিশে নতুন কিছু হই...

জীবন্মৃতর জবানবন্দি

পূর্ণিয়া সামিয়া

বহুকাল কেটে গেল চশমায় লেগে থাকা জলের ফোঁটা

ধুলো, এমনকি কালির ছিটে মুছে দেয়া হয় না আঁচলে,

বহুকাল কেটে গেল চেনা নিকোটিনের লালে টিপ পড়া হয় না,

তুলে আনা শাপলার মালায় বেণী জড়ানো হয় না।

ক্লান্ত ঘাড়ের পেছনে পেঁচিয়ে রাখো কালো রুমাল!

বকতে বকতে তার গন্ধ শুকায় না।

হ্যাঁ-বিচ্ছেদের অনেকটা সময় কেটে গেল,

বদল ঘটেছে আমাদের,

বদলে গেছে ভাবনার ঘড়ি,

চেনা গিটারে নিজেকে হারাতে চাওয়ার কথা

একটিবারের জন্যও ভাবি না আমি বহুকাল থেকেই,

আগের নামে এখন কেউ চেনে না জানো?

কত কত নামে প্রতিরাত পরিচিত হয় কত কত লোকের মুখে,

বেলি, চামেলির গাঁজরায় সন্ধ্যা হতে মোহনীয় হই,

যে ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দিয়ে মুগ্ধ হতে

গাঢ় লিপস্টিক আজ তার নিয়তি,

কথা রেখেছি- শুনতে পাচ্ছো?

দেয়া কথা রাখতে গিয়ে আজ জীবন্মৃত।

ঘেন্না করি,

জেনে রাখো বহুকাল যাচ্ছে কেটে। আমি আর ডায়েরি লিখি না।

আজকেও লিখিনি- কেবল মনে মনে আওড?ানোর ভণিতা করলাম...

জলমাকড়ের নৌকাবাইচ

নিজাম বিশ্বাস

শামুকের ডিম ফোটে সময়ের উত্তাপে,

বৃদ্ধ কাছিম কতকাল ঘুরে ফিরে

পিঠে চেপে বিরক্তির শ্যাওলা বন,

ব্যাঙাচিরা ব্যাঙ হয় লেজ খুলে;

ময়ূরের পেখমের মতো চোখ তুলে

চেয়ে থাকে পোষা কচুরি,

কোমর দুলিয়ে নাচে পানক সাপ;

খয়রা পাখের এক মাছরাঙা

ঠোঁটের বর্শা গেঁথে ব্যর্থ হয়-

এই নিশ্চুপ পুকুরে

হুট করে বালিকারা ঢেউ তুলে

ছিঁড়ে নেয় শাপলা ফুলের সব ক’টা ডাঁট,

তখন জলের মাঠে বসে জলমাকড়ের নৌকাবাইচ!

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

বৃহস্পতিবার, ০১ জুলাই ২০২১

করোনাকালে রচিত পঙ্ক্তিমালা

নরেশ ভূঁইয়া

হাতের একটু ছোঁয়া পেতে

উতলা হয়েছে নাক মুখ চোখ

লজ্জার মাথা খেয়ে মন তো বসেছে অনশনে

দাবি তার, সহবাসের সুযোগ দিতে হবে

করোনার যাবতীয় উপসর্গের সাথে।

এসব কিছুর সাথেই আপোস করে

করোনামুক্ত নয় যুক্ত থেকেই

জীবনের সবটুকু রঙ ধরে রাখতে চাই

স্বপ্ন দেখি নতুন এক পৃথিবীর

যেখানে আমরা সবাই মিলে রাজা হবো।

বলবো ভালোবাসায় থেকো মানুষ

ভালোবাসায় রেখো প্রকৃতি

ঈদের দিনের মতই হোক

আমাদের সকলের প্রতিটি দিন

মেঘ বিহীন আকাশের মতো

উদার চিত্তেই বলতে পারি ঈদ মুবারক!

রচিত করোনাকালের পঙ্ক্তিমালাই

হয়ে যাক তোমাকে নিয়ে প্রেমের কবিতা।

ধ্যানী প্রেমিক

মারুফ রায়হান

পণ্ডিত খণ্ডিত বটে, তার উপভোগ নয় যথাযথ

বিশ্লেষণ-মোহে মজে ঘটে তার শুদ্ধ সর্বনাশ

রসিক সাধক চেনে কবিতার সুরেলা বিন্যাস

জানে ব্যঞ্জনার প্রাণ, গূঢ় ভাব, আর মধু যতো।

কবিতা কোথায় থাকে? ছায়াপথে, প্রণয়-মঞ্জিলে

যদি ভালোবাসো পেতে পারো মতিহারা মতিঝিলে

সংহত সুবোধ পায়, এমনকি ভাগাড়ে ও ভস্মে

কল্পনা-প্রতিভাহীনে মিলবে না শারীরিক স্পর্শে।

সরোবরে হাতড়ায় অধ্যাপক, কাব্য সরে যায়

কাঁটাছেঁড়া করে হয়ে শল্যবিদ, অধরা লাবণ্য;

সে নয় সুশীল, কবিতার প্রেমাস্পদ, সে যে বন্য

ভাব ছুঁতে অপারগ, মন্দাক্রান্তা বেতালে বাজায়।

নির্জনে ও লোকালয়ে পাবে ঢের চতুর্দশপদী

নিবিষ্ট প্রেমিক হয়ে ধ্যানগ্রস্ত ভালোবাসো যদি ॥

বৃষ্টির কস্তুরি

দুলাল সরকার

বৃষ্টির কাছে চেয়েছি মুষল ধারা

মাঠফাটা রোদে শস্যের উপসনা

কিষাণীর চোখে জল নেই, কেঁদে কেঁদে

মেঘ তুমি শোনো, কৃশকায় তরুলতা;

বৃক্ষের কাছে চেয়েছি অক্সিজেন

কী করে দেবে বিবর্ণ যে পাতা

মানুষের সেবা কি করে দেয়

নিজেই বাস্তুহারা

মেঘ তুমি শোনোনি যক্ষের হয়ে

যে বারতা বয়ে নাও

দয়িতাকে বলো বাংলার কিষাণীরা

যে বেদনা সয়ে মৃত্তিকার ঠোঁটে

প্রেমহীন অভিধানে;

বৃষ্টির হয়ে কস্তুরি লতা

ঝরুক মাটিতে হোক না কিছুটা ক্ষত

নীরা কি বোঝে না ঠোঁটের ডগায়

প্রেমের চিহ্ন থাকুক কিছু লেখা

চুম্বনে লেখা প্রেমের চিহ্ন আঁকা।

বিশ্বযুদ্ধ

পল্লববরন পাল

শরীরের সব বোধ একে একে সার্জিক্যাল আঘাতে আঘাতে

আগুনের গোলা হয়ে নিমেষে ছড়িয়ে যাচ্ছে বোধের শরীরে

কে কার পরিপূরক- কী সম্পর্ক দুজনের? শরীর ও বোধ?

অথচ এ ওকে ছাড়া অস্তিত্বই নিরর্থক- দুজনেই জানে

চূড়ান্ত মোক্ষ ছাড়া আর কী চাহিদা আছে এ যুদ্ধ গণিতে?

সুখের সংজ্ঞা জেনে অনুভব করেছে কি কেউ কোনোদিন

শ্বাসের সীমান্ত জুড়ে একাধিক ঈশ্বরের ঠোঁটের উল্লাস?

আসঙ্গ রমণপ্রিয় শরীরে বা বোধে নেই কোনো মৌলবাদ

ধর্ম নেই, জাত নেই, নেই শ্রেণিসংগ্রামের আর্থরাজনীতি

বরং প্রতিটা যুদ্ধে প্রত্যেক সীমান্তদেশে জ্বলে ওঠে আলো

শরীরের বোধ থেকে বোধের শরীর তক রক্তঢেউ ফুঁড়ে

একে একে জেগে ওঠে নিরাকার আদরের একএকটি মুখ

প্রত্যেকের নাম এক- অথবা পৃথক-

খোদা গড্ অথবা বিধাতা

কেন যে এ পথে কেউ পৃথিবীর ক্রমমুক্তি স্বপ্ন দেখি না...

মায়াকানন

হাবীব ইমন

একটা মায়াকানন আছে আমার

সে কাননে ফুল নেই, মায়ারা আছে যতেœ।

কাননে আকাক্সক্ষা বাড়ে। বিষাদও।

তুমি ভালো নেই।

একটি গেরুয়া বিকেল কাটে তোমার লালকাঠের পাটাতনে।

মায়া বড় ত্যাঁদোড়, মহাশূন্যতায় জ্বালিয়ে মারে

একদিন এখানে আগুনের ফুল ফুটেছিলো

এখন তারা বিপন্ন-বিচ্ছিন্ন। কেউ কেউ ক্লান্ত-শ্রীহীন।

মায়াকানন ভাই-হারানো প্রতিশব্দ হয়ে যাচ্ছে।

কখন যে মৃত্যু ডাকে, অন্তিম একা অপেক্ষা করছে জীবিতের,

ক্ষমতার কাঁচের ঘর থেকে বেরিয়ে আসো ধরিত্রির কাছে।

মায়াকানন-

কিছু নৈঃশব্দ্যের গায়ে লেগে ঝরে পড়ে,

মুখোশে পিছলে পড়ে জ্যোৎস্না। স্মৃতি-বিস্মৃতির অসম প’রে।

নিষ্প্রভ এলাটিং-বেলটিং।

মায়াকানন-

জামিন পেলো না। জামিন দিয়ে গেলো সবাইকে;

আমরা সকলে দুই হাঁটুর মাঝখানে মাথা গুঁজে জামিনে থাকি।

গণহত্যার কয়েকশ’ মিনিট

শাহ বুলবুল

পরিখায় মুখোমুখি স্কাড রকেট

দূরের গাঁয় হাম্বির পিষে যায় সভ্যতা

থেকে যায় গণহত্যার কয়েকশ মিনিট।

ইউফ্রেটিস তাইগ্রিসের খেয়ায়

পার হয় আরেকটা ব্যাবিলন

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দরজায়।

এখানেই প্রাগৈতিহাসিক মানুষ শান্তি স্থগিত করে

গিলে নেয় ডেজার্টফক্স

মরুবালির মতো ছুটে যায় যুদ্ধের ডাকঘরে।

যোদ্ধার ডানহাতে হত্যার রেন্স

বাম কাঁধে সাইরেন

আবুগারিবের উঠোনে কাঁদে ডাহুক অ্যাম্বুলেন্স।

দুঃশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি সাঁটা হয় নিরক্ষরেখার বিষুব কবরে

জানি, আবার হাহাকারে ডুকরাবে মানুষ

মসজিদে মন্দিরে।

জীবন পাণ্ডুলিপি

সাইয়্যিদ মঞ্জু

কবি হাফিজ রশিদ খান, আপনাকে

পার্বতীয় পা চলতে-চলতে পথিক ফেলে আসে

সাঙ্গুর ঘোলাজল

দোয়াতভরা প্রকৃতির মায়াকালি

ভাঁজে ভাঁজে জুমচাষে পাহাড়ের উপশিরা

মন-মোচড়ের শব্দ তোলে প্রসব বেদনায়।

ধীরলয়ে ওঠে কাব্যের ইমারত

সুখে-দুঃখে মনোহর তিনি আদিবাসী ও বাঙালি।

আদিপাতায় হেফ্জ করেন বিগতকালের যত খতিয়ান

ফিরিঙ্গি-হার্মাদ অধ্যায় শেষে লর্ড ক্লাইভের পথিকদেরও।

চেরাগির ছায়ায় জীবন-পা-ুলিপি হাতে আলোকিত মুখ তাঁর-

যেন স্বদেশ আমার।

এসো মিলেমিশে নতুন কিছু হই

রওশন রুবী

অনামিকা, বাতাসে হিং এর গন্ধ।

মানুষ অকাজে দৌড়াচ্ছে খুব,

কাজের বোঝাটা অথচ পেছনে চুপ।

মানুষের কাছে বৃষ্টি নেই। শরতের নির্মলতা নেই।

গোলাপ গন্ধ নেই। তুমি বসরার গোলাপ বাগান হবে?

কিংবা শরত? আমি বাংলার আকাশ হবো...

তোমার সরস সুগন্ধ মিশে যাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে...

বাতাসে কার্বন... খুব। দম আটকে আসে একটু গরমেই।

প্রজন্ম অক্সিজেন অভাবে বড় হতে থাকে।

তুমি বিশ্বস্ত-অক্সিজেন হবে অনামিকা?

ভয়ংকর শ্বাসকষ্ট এখন পুরোটা পৃথিবীতে।

ছাদ বাগানগুলি কিংবা সবুজ বনানীতে মিশে যাবে।

আবার গজাবে নতুন পাতায়-ঘাসে...

প্রজন্ম “পেট” থেকে পড়ে দূষিত বাতাস পাবে না।

নাকি বৃষ্টি হবে তুমি? আমি চা’বাগান। তীক্ষè-ধারায় ভেজাবে;

দু’জনে মিলেমিশে অক্সিজেন আর পলি জন্মাবো...

অসুস্থ-বিষণœ-বিধ্বস্ত-ক্লান্ত মানুষের প্রশান্তির প্রয়োজন।

নির্ভরতার প্রয়োজন। এসো মিলেমিশে নতুন কিছু হই...

জীবন্মৃতর জবানবন্দি

পূর্ণিয়া সামিয়া

বহুকাল কেটে গেল চশমায় লেগে থাকা জলের ফোঁটা

ধুলো, এমনকি কালির ছিটে মুছে দেয়া হয় না আঁচলে,

বহুকাল কেটে গেল চেনা নিকোটিনের লালে টিপ পড়া হয় না,

তুলে আনা শাপলার মালায় বেণী জড়ানো হয় না।

ক্লান্ত ঘাড়ের পেছনে পেঁচিয়ে রাখো কালো রুমাল!

বকতে বকতে তার গন্ধ শুকায় না।

হ্যাঁ-বিচ্ছেদের অনেকটা সময় কেটে গেল,

বদল ঘটেছে আমাদের,

বদলে গেছে ভাবনার ঘড়ি,

চেনা গিটারে নিজেকে হারাতে চাওয়ার কথা

একটিবারের জন্যও ভাবি না আমি বহুকাল থেকেই,

আগের নামে এখন কেউ চেনে না জানো?

কত কত নামে প্রতিরাত পরিচিত হয় কত কত লোকের মুখে,

বেলি, চামেলির গাঁজরায় সন্ধ্যা হতে মোহনীয় হই,

যে ঠোঁটে চুম্বন এঁকে দিয়ে মুগ্ধ হতে

গাঢ় লিপস্টিক আজ তার নিয়তি,

কথা রেখেছি- শুনতে পাচ্ছো?

দেয়া কথা রাখতে গিয়ে আজ জীবন্মৃত।

ঘেন্না করি,

জেনে রাখো বহুকাল যাচ্ছে কেটে। আমি আর ডায়েরি লিখি না।

আজকেও লিখিনি- কেবল মনে মনে আওড?ানোর ভণিতা করলাম...

জলমাকড়ের নৌকাবাইচ

নিজাম বিশ্বাস

শামুকের ডিম ফোটে সময়ের উত্তাপে,

বৃদ্ধ কাছিম কতকাল ঘুরে ফিরে

পিঠে চেপে বিরক্তির শ্যাওলা বন,

ব্যাঙাচিরা ব্যাঙ হয় লেজ খুলে;

ময়ূরের পেখমের মতো চোখ তুলে

চেয়ে থাকে পোষা কচুরি,

কোমর দুলিয়ে নাচে পানক সাপ;

খয়রা পাখের এক মাছরাঙা

ঠোঁটের বর্শা গেঁথে ব্যর্থ হয়-

এই নিশ্চুপ পুকুরে

হুট করে বালিকারা ঢেউ তুলে

ছিঁড়ে নেয় শাপলা ফুলের সব ক’টা ডাঁট,

তখন জলের মাঠে বসে জলমাকড়ের নৌকাবাইচ!

back to top