alt

সাময়িকী

পৃষ্ঠাজুড়ে কবিতা

: বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

কাঠের সিঁড়িতে
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

কাঠের সিঁড়িতে আমি পড়ে গিয়েছি।

আমার ছেলে দৌড়ে এসে আমাকে তুলে ধরেছে।

আমার বাবা নেই মা নেই স্ত্রী নেই

বার বার আমি পড়ে যাই

আমি পিছন ফিরে তাকাই

কতদূর জীবন পিছনে ফেলে এসেছি।

সামনের দিকে কতদিন আর যেতে পারব

আমি সিঁড়িতে পড়ে যাই রাস্তায় পড়ে যাই

আমার মাথা এখন ঘোরায়

পৃথিবীটা সরল না কোনো রাস্তাই সরল না।

রঙ্গমায়া
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

সুরঙ্গমা তোমার কথা বুঝতে পারে?

ভুবন ডাঙায় তুমি যখন দেখতে পেলে

চতুর্দিকে পরিকীর্ণ প্রেমিক যুগল

বলে উঠলে “আকাশ জুড়ে ওই দ্যাখো ওই

ব্যাপ্ত এখন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ,

তার মধ্যে দুজন আছি এই বিকেলে”

সেই মুহূর্তে সুরঙ্গমা তোমায় ছেড়ে

অরিন্দমের আমন্ত্রণে উধাও হল,

আমিও তাকে তোমার কথা বুঝিয়ে দিতে

দৌড়ে গেলাম... ময়না পাড়ায় পৌঁছে দেখি

অরিন্দমকে খারিজ করে সুরঙ্গমা

আমার দিকেই ছুটে আসছে, তার এলোচুল

অস্তগামী চাঁদের তলায় কাঁপছে ভীষণ...

কোথাও একদিন
প্রবালকুমার বসু

কোথাও একদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে

কোথাও একদিন মুখ থেকে মুখোশ সরিয়ে

নিদারুণ সারল্যে উঠব হেসে

কোথাও একদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কড়া নাড়ব

এক অচেনা বাড়িতে

তোমার মতন কেউ দরোজা খুলে দেবে

আমি ভাবব তুমিই কি? হয়ত সে-ও ভাববে একই কথা

কোথাও একদিন চাঁদ ডুবে গেলে, তোমার চুলের সংশ্লেষ থেকে

ভেঙে পড়বে যত নীরবতা

কোথাও একদিন ভোরবেলা পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে

বুঝতে পারবে না-বলে ওঠা কথার মানে

কোথাও একদিন না জেনে দুজনেই অপেক্ষা করব

দুজনের জন্য কোনো পরিত্যক্ত স্টেশনে

কোথাও একদিন দেখা হলেও চিনতে পারব না

পাশ কাটিয়ে পেরিয়ে যাব একে অপরকে

কোথাও একদিন বেড়াতে গিয়ে ভীষণ মনে পড়বে তোমায়

কোথাও একদিন কোনো অচেনা শহরে এসে সারাদিন খুঁজব তোমাকে

কোনো অপেক্ষামাণ দীর্ঘ লাইনে তোমার পাশে না জেনেই

হয়ত দাঁড়াব

কোথাও একদিন ভুলে যাব তোমাকে দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতি যত

কোথাও একদিন নেহাতই গল্পচ্ছলে বলে ফেলব- ভালোবাসি

কুইন্স
শামস আল মমীন

অনেক বছর আগে, এডি মারফি জানান দিছিল

‘কামিং টু আমেরিকা’।

নিউইয়র্কের কুইন্সেই আইছিলেন তিনি বেড়াইতে।

এইখানে আছে চায়না টাউন। পার্কিং মিটারে হেলান দিয়ে

সারাসন্ধ্যা... আড্ডা মারে আমিগোস।

আছে লিটল ইন্ডিয়া, আরও আছে অনেক ক্যারিবিয়ান কুইন।

কথায় কথায় কথা হয়, নাচে কে ভালো,

সাকিরা না জে লো...?

জং ধরা করভেট গাড়িতে জোরে জোরে বাজে

ওয়াকা ওয়াকা...

পেড্রোর ঠ্যাং কিছুতেই আর চলে না সোজা,

“করোনা না ২০ ২০ ম্যাড ডগ,” কিসে

ধরছে তারে আজ, কে জানে।

এইখানে মনে হয় আমাদের গ্রামেই আছি।

এইখানে পুকুরের মাছ আছে

এইখানে আছে রাইস এন্ড বিন, গরম গরম

সমুসা, কাবাব ও ম্যাঙ্গো জুস্। আছে

মো মো, জায়রো, আরও কতো কিছু।

তুমি কালো কি সাদা

এসিয়ান নাকি হিস্পানি এই নিয়ে কারও মাথাব্যথা নাই।

এইখানে সবাই শুধুই মানুষ- বর্ণহীন, গোত্রহীন।

যদি তুমি আসো

মনে হবে, যেন তুমি আছো তোমার শহরে

চেনা সেই কাঠবিড়ালি আর চড়–ই পাখি

নেচে গেয়ে তোমাকে শোনাবে তোমার ফেলে আসা গান।

ফ্লাশিং, ফার রকওয়ে, কিম্বা জ্যামাইকা যে দিকেই

যেতে চাও, উঠে পড়ো

এ, এফ, নয় তো সেভেন ট্রেনে।

দূরে, কে যেন হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে,

“লেটস গো মেটস;”

কপালে বাঁধা তার ব্যানড্যানা...

কী আনন্দে নেচে উঠি

আমিও।

*** কুইন্স- নিউইয়র্ক শহরের একাংশ, এডি মারফি- হলিউডের অভিনেতা, আমিগোস- বন্ধুরা, জে লো- জেনিফার লোপেজ (গায়িকা), পেড্রো- লাতিনো ছেলেদের নাম, করোনা- জনপ্রিয় মেক্সিকান বিয়ার, ২০২০ ম্যাড ডগ, সস্তা রেড ওয়াইন, মো মো- নেপালী খাবার, ফ্লাশিং, ফার রকওয়ে, জ্যামাইকা- কুইন্সের অংশ, মেটস্- নিউইয়র্কের জনপ্রিয় বেজবল টিম, ব্যানড্যানা- কপালে বাঁধা রুমালের মতো কাপড়।

মীন মেয়ের চোখ
আহমেদ বাসার

মীন মেয়ের চোখ থেকে লাফিয়ে নামা রাতে

ঘুমিয়ে পড়ি অবেলায়, ছলাকলাভনা রাত

বহুদিনের ঘোরলাগা সূর্য কেটে কেটে

ফালি ফালি সাজায় তন্ত্রময় শরীরের গুহায়

ঘুমের ভেতরে আজগুবি শৈশবের সেই মায়াকালি

কলসিকাঁখে দাঁড়ায় মুখোমুখি, ঋজুভঙ্গি

প্রেক্ষাপটে জেগে থাকে নৃত্যনদীর উদোম মুদ্রা

জঘনের কলসি ছুঁয়ে একটি আঙুল তার

মর্মভেদী তিরের মত্ততায় নেমে আসে

রক্ত-শিরায়, আর আমি বিব্রত চাঁদের মতো

অমাবস্যা গায়ে মেখে ঘুমিয়ে পড়ি অন্য কোনো

রাত অথবা রাতকামী দিনের নুনগলা শরীরে...

তুমি চাইলে বলে আমি জল হলাম
শ্রাবণী প্রামানিক

অবারিত ধু ধু আলোর বানে মিললো

প্রবল ঢেউ, তীর ছাড়িয়ে ছুটে গেলো,

ফিরে এলো পুরোনো স্মৃতির জঞ্জালে।

আমি বসে বসে দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, পূর্ণিমা সারা দেহে মেখে নেয়ে

একাকার হলাম, কেউ এক ছিঁটে জোছনাও চাইলো না!

বরষার প্রথম সূর্য ঢেকে গেলো ঝাঁক ঝাঁক কদমের রেণু রঙের যুগল নাচনে,

মেঘের ক্রন্দনে, আঁচলের নীলে, কুন্তলের জলে।

কদমগুচ্ছ আয়ুর শেষে মিশে গেলো

আবেগী জলে। আমি স্থির অপেক্ষার প্রহরে। তবুও কেউ আসেনি!

বরষার জলও শুকালো, তীব্র সবুজ মরে বিদীর্ণ হলদে হলো,

সব সয়ে গেলো বুকের ওপর দিয়ে।

অবশেষে অন্ধকার ফুঁড়ে তুমি এলে

একখানা কবিতার আবদার নিয়ে

আমার আর কিচ্ছু বলার নেই!

বর্ষণ
ফারুখ সিদ্ধার্থ

তখন বর্ষণ হলে ইস্কুলের ঢেউটিনের চারচালা, বাঁশখুঁটির উদোম বারান্দা, আর ভাবনার চারধার সয়লাব হয়ে যেত; অকস্মাৎ ঘণ্টা পড়ে যেত ঢং ঢং; দৌড়ে পার হয়ে দীর্ঘমাঠ আমরাও কাদা-জল ভেঙে ভেঙে গাঁয়ের হালট ধরে ফিরতাম- ঝুমঝুম বৃষ্টিতালে- সমবেত কণ্ঠে তুলে ছুটিগান- ছাতায় হাওয়া ভরে ওড়াতাম ইচ্ছেঘুড়ি...

এখন বর্ষণ হয় ধর্মীয় উত্তেজনার- উন্মাদনার; মেঘের পর্বত গলে ক্ষরণের রক্তের ঢেউ খেলা করে জনসমুদ্রে; বেলাগাম চাহিদার এধার-ওধার প্লাবিত করা বাহারি প্রকল্পের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে খড়কুটো হয়ে যায় মাথার সিঁথির মতো পায়ে-চলা-পথ...; লাগাতার বজ্র আর দমকা হাওয়ার ঠাট্টাই থাপ্পড়ে ভেঙে পড়ে মহামুনি বৃক্ষ- বিহঙ্গের- বিপন্নের পরম আশ্রয়...

রঙিন সে-ঘুড়িগুলো আজ সুতোছেঁড়া হাহাকার- করুণ অশ্রুসিক্ত- অভিমানে সরে-যাওয়া-নদী- অতিদূর ব্যথিত আকাশ! কচুপাতা-শির সেই কিশোরীর স্বপ্নও মাঠের পারের কোনও দূরের দেশ; আর গা-লেপটানো-কামিজের-সহপাঠী চাচাতো বোনেরা?- তাদের চোখেও অবিশ্রান্ত বর্ষণ...

রাজনীতি
কুশল ভৌমিক

এখন মৃত্যু

পুরনো দেয়াল থেকে আলগোছে খসে পড়া পলেস্তারা

শার্টের বুক থেকে টুপ করে খসে পড়া

একটা বোতাম

আলতো বাতাসে দুলে নিতান্ত অবহেলে

ঝরে যাওয়া পাতা

অথচ জীবন

দেয়ালের পলেস্তারা নয়

শার্টের বোতাম নয়

বৃন্তচ্যুত পাতা নয়

একটা শিশুর মৃত্যু হলে একটা সমুদ্র মরে যায়

একজন নারীর মৃত্যুতে মরে যায় আকাশ

একজন পুরুষের প্রয়াণে ধসে যায় পাহাড়

পুরুষগুলো মরছে

নারীগুলো মরছে

শিশুগুলো মরছে

মরে যাচ্ছে পাহাড়

মরে যাচ্ছে আকাশ

মরে যাচ্ছে সমুদ্র

তবুও এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে

কী নির্লজ্জ বেহায়ার মতো

মাথা উঁচু করে ঠিকই দাঁড়িয়ে থাকছে

রাজনীতি!

মাহেন্দ্রক্ষণ
শেখর দেব

দীর্ঘ যাত্রা পথে কত শতো ফুল উড়ে আসে

ফুলের সুবাস নিয়ে

অথবা না নিয়ে

পথগুলো চলে যায় সময়ের রেখা ধরে।

পথ খুঁজে খুঁজে এখনো পথেই পড়ে আছি

কতো মাহেন্দ্রক্ষণের বিভা

আলোকিত করে নিমেষে হারিয়ে যায়

অথবা দারুণ অন্ধকারে আলোরেখা যেন!

জীবনের জন্য যাপনকে বেছে নিতে গেলে

সময় বেরিয়ে যায় ফসকানো হাতে

জমিয়ে রাখতে চেয়ে কিছু তার করি অপচয়

কত ফুল উড়ে উড়ে যায় চারপাশে

সময় বিভ্রান্ত করে দারুণ আবেগে।

ফুল না ধরে চেয়েছি সময়কে ধরে রাখি

সব সময় কি মাহেন্দ্রক্ষণ হয় না?

জোছনা বিলাপ
শারমিন সুলতানা রীনা

প্রদীপ নিভেছে কবে বসতভিটার

নক্ষত্র পড়েছে ঝরে জোছনা বিলাপে

আকাশে বেঁধেছো ঘর তুমুল আনন্দে

অতীত অতীত খেলি নিজের ভেতরে

বিপন্ন জীবন দিয়ে ফিরেছো আলয়ে

শ্যামল সবুজ মাঠে ধূসর ফসল

অজানা অসুখে ভুগি অতল তিয়াসা

স্মৃতিরা বেয়াড়া যেনো জ্বলন্ত শলাকা

এমন মায়ার ঘুমে আটক জীবন

আনন্দ আশ্রম জ্বলে সুখের অসুখে।

অনাশ্রিত বর্ষার ডাক
লুৎফুন নাহার লোপা

বর্ষা এলেই আমি শরতের অপেক্ষা করি

শরৎ এলে পুনরায় বর্ষা।

মূলত এই অপেক্ষা শব্দটির সাথেই

জুড়ে যায় ঋতুর পরিক্রমা।

প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে তাকে

খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত যে চাঞ্চল্য থাকে

তেমনি আবেগে বেড়ে উঠে নদীর ঘোলা জল

একসারি বিষণœ স্মৃতিচিহ্নের মতো।

মেঘেদের মতো স্ফীত ধূসর বিকেলে

একজোড়া বাদামী চোখের উপর ঝরে পড়ে

অনাশ্রিত বর্ষার ডাক।

শূন্যের গুণিতক
বুলু রানী ঘোষ

বুঝতে চাইলেই বোঝা যায় নাকি,

সুত্র মেলে কি সহজে!

কাব্যে গণিত, গণিতে কাব্য,

হৃদয় বাজি মগজে।

লগারিদমের সাজানো ছত্রে

আবেগের রাশ খুঁজি,

ইনফিনিটির নমুনা বলতে

ভালোবাসাটাই বুঝি।

বাম পক্ষ হয় না কখনো

ডান পক্ষের মতো,

হোল স্কয়ারের কোনো সূত্রই

খাটে না জায়গামতো।

ছন্দ, মাত্রা, অক্ষর বৃত্তের

ঘূর্ণিপাকের ভিড়ে,

অনুরণনে ইচ্ছে গুচ্ছ

নিজের কাছেই ফিরে।

আতিপাতি খুঁজেই মরি,

সিঁড়ি ভাঙ্গি শব্দের,

পরশ কিছু মেলে যদি

অংক না হোক, পদ্যের।

জীবন বড় গোলক ধাঁধা

কতটা কে আর বুঝি!

শূন্যের গুণিতকে তাই

বৃথা সে উত্তর খুঁজি।

যক্ষ অভিমান
রাখী সরদার

অভিমান এমনই আশ্চর্য এক দাবি

সচরাচর বোঝাই যায় না।

এর আদি উজ্জ্বলতা

একমাত্র হৃদয়ের ঝাঁপি খুললে

স্পষ্ট ছড়িয়ে পড়ে গোপনে...

এই যেমন নদীটি

মেঘের উপর অভিমানে ফুলে ওঠে

মেঘ কি তা বুঝতে পারে! যতক্ষণ

না দীর্ঘ নিঃশ্বাসে বৃষ্টি নামে...

এই বোধে পাখি পুষি, মুক্তির সময়

এলে খুলে দিই সমস্ত আকাশ।

যদি তুমি পালক সনদে

খোঁজ পাও যক্ষ অভিমান।

প্রতিদান
সঙ্গীতা ইয়াসমিন

বাসলে ভালো, প্রকৃতিও দেয় ফিরিয়ে;

কেবল মানুষ ছাড়া।

মানুষেরই তাড়া থাকে,

সামনে চলার পীড়া থাকে,

ভুলে যাওয়ার গল্প থাকে,

পিছু হটার বিমার থাকে,

ভালোবাসা ছাড়া!

বৃক্ষ-লতা-পাতার মতো জড়িয়েছিলাম ছায়ায়,

দহন শেষে এই বুঝেছি ফিরতে হবে আমায়!

গহন পথের পথিক তুমি, কেইবা রোখে তোমায়!

সবাই যেমন চলছে মেনে,

চলাটাই ধর্ম জেনে, নদী কিংবা সময়!

সবারই থাকে নিজের মানুষ ঘরে ফেরার তাড়া,

আমি কেবল পথের বাঁকে নিজের মানুষ ছাড়া,

ঘরছাড়া এক আউলা বাউল আমি বাঁধন হারা,

পথেই ছুটি পথের টানে পথিক পাগলপারা।

নগরে
মিলন মাহমুদ

শহরের আধুলি পথ ছেড়ে

চলে যাচ্ছে প্রান্তিক চোখের

কোটর; তবুও জীবন ভীষণ

বেখেয়ালি, আমাদের স্বপ্নেরা

আজ হাঁটুগেড়ে ম্লান হয়ে আছে

কখনো নিয়ন আলোর সন্ধ্যায়

কাঁপা গলায় পাশ ফিরে আর

কেউ তাকাবে না, বলবে না হয়তো

নিচুতলার রোডম্যাপ ভুল করে উলটে

গেছে, বুকের মধ্যখানে সেলাই করা

নগরে!

ইন্দুলেখার খাতা
সায়ন ভট্টাচার্য

এ শহর আজ অগভীর হয়ে বাঁচে

তোমার আমার কথাগুলো থাক গোপন

গড়িয়া মোড়ে সাবধানে আজ হেঁটো

ভালোবাসি ওই ইলিশ রঙের আঁচল

বৃষ্টি লিখেছি খাতা ভরে বারোমাস

পাঁচ নম্বর বাসস্ট্যান্ড শুধু জানে

ধুলোয় লেখা অনেক নামের মাঝে

মেঘ নেমে আসে মাঠে আর ময়দানে

কুণ্ডু কাকুর চায়ের দোকান ফেলে

ডালের পকোরা আসলে একটা ছুতো

তখন তোমার রাতের বিরাট খোঁপা

স্পর্শ করে আমার কবিতা যত

কবিতা শুধু তোমার নিজের কাছে

বাকিটা আজ গল্প বলার শেষে

পাহাড় ভেঙে অলি গলি হেঁটে যাই

আমাদের সেই বৃষ্টিমেঘের দেশে!

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

পৃষ্ঠাজুড়ে কবিতা

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১

কাঠের সিঁড়িতে
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

কাঠের সিঁড়িতে আমি পড়ে গিয়েছি।

আমার ছেলে দৌড়ে এসে আমাকে তুলে ধরেছে।

আমার বাবা নেই মা নেই স্ত্রী নেই

বার বার আমি পড়ে যাই

আমি পিছন ফিরে তাকাই

কতদূর জীবন পিছনে ফেলে এসেছি।

সামনের দিকে কতদিন আর যেতে পারব

আমি সিঁড়িতে পড়ে যাই রাস্তায় পড়ে যাই

আমার মাথা এখন ঘোরায়

পৃথিবীটা সরল না কোনো রাস্তাই সরল না।

রঙ্গমায়া
অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

সুরঙ্গমা তোমার কথা বুঝতে পারে?

ভুবন ডাঙায় তুমি যখন দেখতে পেলে

চতুর্দিকে পরিকীর্ণ প্রেমিক যুগল

বলে উঠলে “আকাশ জুড়ে ওই দ্যাখো ওই

ব্যাপ্ত এখন সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ,

তার মধ্যে দুজন আছি এই বিকেলে”

সেই মুহূর্তে সুরঙ্গমা তোমায় ছেড়ে

অরিন্দমের আমন্ত্রণে উধাও হল,

আমিও তাকে তোমার কথা বুঝিয়ে দিতে

দৌড়ে গেলাম... ময়না পাড়ায় পৌঁছে দেখি

অরিন্দমকে খারিজ করে সুরঙ্গমা

আমার দিকেই ছুটে আসছে, তার এলোচুল

অস্তগামী চাঁদের তলায় কাঁপছে ভীষণ...

কোথাও একদিন
প্রবালকুমার বসু

কোথাও একদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে

কোথাও একদিন মুখ থেকে মুখোশ সরিয়ে

নিদারুণ সারল্যে উঠব হেসে

কোথাও একদিন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কড়া নাড়ব

এক অচেনা বাড়িতে

তোমার মতন কেউ দরোজা খুলে দেবে

আমি ভাবব তুমিই কি? হয়ত সে-ও ভাববে একই কথা

কোথাও একদিন চাঁদ ডুবে গেলে, তোমার চুলের সংশ্লেষ থেকে

ভেঙে পড়বে যত নীরবতা

কোথাও একদিন ভোরবেলা পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে

বুঝতে পারবে না-বলে ওঠা কথার মানে

কোথাও একদিন না জেনে দুজনেই অপেক্ষা করব

দুজনের জন্য কোনো পরিত্যক্ত স্টেশনে

কোথাও একদিন দেখা হলেও চিনতে পারব না

পাশ কাটিয়ে পেরিয়ে যাব একে অপরকে

কোথাও একদিন বেড়াতে গিয়ে ভীষণ মনে পড়বে তোমায়

কোথাও একদিন কোনো অচেনা শহরে এসে সারাদিন খুঁজব তোমাকে

কোনো অপেক্ষামাণ দীর্ঘ লাইনে তোমার পাশে না জেনেই

হয়ত দাঁড়াব

কোথাও একদিন ভুলে যাব তোমাকে দেওয়া মিথ্যে প্রতিশ্রুতি যত

কোথাও একদিন নেহাতই গল্পচ্ছলে বলে ফেলব- ভালোবাসি

কুইন্স
শামস আল মমীন

অনেক বছর আগে, এডি মারফি জানান দিছিল

‘কামিং টু আমেরিকা’।

নিউইয়র্কের কুইন্সেই আইছিলেন তিনি বেড়াইতে।

এইখানে আছে চায়না টাউন। পার্কিং মিটারে হেলান দিয়ে

সারাসন্ধ্যা... আড্ডা মারে আমিগোস।

আছে লিটল ইন্ডিয়া, আরও আছে অনেক ক্যারিবিয়ান কুইন।

কথায় কথায় কথা হয়, নাচে কে ভালো,

সাকিরা না জে লো...?

জং ধরা করভেট গাড়িতে জোরে জোরে বাজে

ওয়াকা ওয়াকা...

পেড্রোর ঠ্যাং কিছুতেই আর চলে না সোজা,

“করোনা না ২০ ২০ ম্যাড ডগ,” কিসে

ধরছে তারে আজ, কে জানে।

এইখানে মনে হয় আমাদের গ্রামেই আছি।

এইখানে পুকুরের মাছ আছে

এইখানে আছে রাইস এন্ড বিন, গরম গরম

সমুসা, কাবাব ও ম্যাঙ্গো জুস্। আছে

মো মো, জায়রো, আরও কতো কিছু।

তুমি কালো কি সাদা

এসিয়ান নাকি হিস্পানি এই নিয়ে কারও মাথাব্যথা নাই।

এইখানে সবাই শুধুই মানুষ- বর্ণহীন, গোত্রহীন।

যদি তুমি আসো

মনে হবে, যেন তুমি আছো তোমার শহরে

চেনা সেই কাঠবিড়ালি আর চড়–ই পাখি

নেচে গেয়ে তোমাকে শোনাবে তোমার ফেলে আসা গান।

ফ্লাশিং, ফার রকওয়ে, কিম্বা জ্যামাইকা যে দিকেই

যেতে চাও, উঠে পড়ো

এ, এফ, নয় তো সেভেন ট্রেনে।

দূরে, কে যেন হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে,

“লেটস গো মেটস;”

কপালে বাঁধা তার ব্যানড্যানা...

কী আনন্দে নেচে উঠি

আমিও।

*** কুইন্স- নিউইয়র্ক শহরের একাংশ, এডি মারফি- হলিউডের অভিনেতা, আমিগোস- বন্ধুরা, জে লো- জেনিফার লোপেজ (গায়িকা), পেড্রো- লাতিনো ছেলেদের নাম, করোনা- জনপ্রিয় মেক্সিকান বিয়ার, ২০২০ ম্যাড ডগ, সস্তা রেড ওয়াইন, মো মো- নেপালী খাবার, ফ্লাশিং, ফার রকওয়ে, জ্যামাইকা- কুইন্সের অংশ, মেটস্- নিউইয়র্কের জনপ্রিয় বেজবল টিম, ব্যানড্যানা- কপালে বাঁধা রুমালের মতো কাপড়।

মীন মেয়ের চোখ
আহমেদ বাসার

মীন মেয়ের চোখ থেকে লাফিয়ে নামা রাতে

ঘুমিয়ে পড়ি অবেলায়, ছলাকলাভনা রাত

বহুদিনের ঘোরলাগা সূর্য কেটে কেটে

ফালি ফালি সাজায় তন্ত্রময় শরীরের গুহায়

ঘুমের ভেতরে আজগুবি শৈশবের সেই মায়াকালি

কলসিকাঁখে দাঁড়ায় মুখোমুখি, ঋজুভঙ্গি

প্রেক্ষাপটে জেগে থাকে নৃত্যনদীর উদোম মুদ্রা

জঘনের কলসি ছুঁয়ে একটি আঙুল তার

মর্মভেদী তিরের মত্ততায় নেমে আসে

রক্ত-শিরায়, আর আমি বিব্রত চাঁদের মতো

অমাবস্যা গায়ে মেখে ঘুমিয়ে পড়ি অন্য কোনো

রাত অথবা রাতকামী দিনের নুনগলা শরীরে...

তুমি চাইলে বলে আমি জল হলাম
শ্রাবণী প্রামানিক

অবারিত ধু ধু আলোর বানে মিললো

প্রবল ঢেউ, তীর ছাড়িয়ে ছুটে গেলো,

ফিরে এলো পুরোনো স্মৃতির জঞ্জালে।

আমি বসে বসে দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, পূর্ণিমা সারা দেহে মেখে নেয়ে

একাকার হলাম, কেউ এক ছিঁটে জোছনাও চাইলো না!

বরষার প্রথম সূর্য ঢেকে গেলো ঝাঁক ঝাঁক কদমের রেণু রঙের যুগল নাচনে,

মেঘের ক্রন্দনে, আঁচলের নীলে, কুন্তলের জলে।

কদমগুচ্ছ আয়ুর শেষে মিশে গেলো

আবেগী জলে। আমি স্থির অপেক্ষার প্রহরে। তবুও কেউ আসেনি!

বরষার জলও শুকালো, তীব্র সবুজ মরে বিদীর্ণ হলদে হলো,

সব সয়ে গেলো বুকের ওপর দিয়ে।

অবশেষে অন্ধকার ফুঁড়ে তুমি এলে

একখানা কবিতার আবদার নিয়ে

আমার আর কিচ্ছু বলার নেই!

বর্ষণ
ফারুখ সিদ্ধার্থ

তখন বর্ষণ হলে ইস্কুলের ঢেউটিনের চারচালা, বাঁশখুঁটির উদোম বারান্দা, আর ভাবনার চারধার সয়লাব হয়ে যেত; অকস্মাৎ ঘণ্টা পড়ে যেত ঢং ঢং; দৌড়ে পার হয়ে দীর্ঘমাঠ আমরাও কাদা-জল ভেঙে ভেঙে গাঁয়ের হালট ধরে ফিরতাম- ঝুমঝুম বৃষ্টিতালে- সমবেত কণ্ঠে তুলে ছুটিগান- ছাতায় হাওয়া ভরে ওড়াতাম ইচ্ছেঘুড়ি...

এখন বর্ষণ হয় ধর্মীয় উত্তেজনার- উন্মাদনার; মেঘের পর্বত গলে ক্ষরণের রক্তের ঢেউ খেলা করে জনসমুদ্রে; বেলাগাম চাহিদার এধার-ওধার প্লাবিত করা বাহারি প্রকল্পের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে খড়কুটো হয়ে যায় মাথার সিঁথির মতো পায়ে-চলা-পথ...; লাগাতার বজ্র আর দমকা হাওয়ার ঠাট্টাই থাপ্পড়ে ভেঙে পড়ে মহামুনি বৃক্ষ- বিহঙ্গের- বিপন্নের পরম আশ্রয়...

রঙিন সে-ঘুড়িগুলো আজ সুতোছেঁড়া হাহাকার- করুণ অশ্রুসিক্ত- অভিমানে সরে-যাওয়া-নদী- অতিদূর ব্যথিত আকাশ! কচুপাতা-শির সেই কিশোরীর স্বপ্নও মাঠের পারের কোনও দূরের দেশ; আর গা-লেপটানো-কামিজের-সহপাঠী চাচাতো বোনেরা?- তাদের চোখেও অবিশ্রান্ত বর্ষণ...

রাজনীতি
কুশল ভৌমিক

এখন মৃত্যু

পুরনো দেয়াল থেকে আলগোছে খসে পড়া পলেস্তারা

শার্টের বুক থেকে টুপ করে খসে পড়া

একটা বোতাম

আলতো বাতাসে দুলে নিতান্ত অবহেলে

ঝরে যাওয়া পাতা

অথচ জীবন

দেয়ালের পলেস্তারা নয়

শার্টের বোতাম নয়

বৃন্তচ্যুত পাতা নয়

একটা শিশুর মৃত্যু হলে একটা সমুদ্র মরে যায়

একজন নারীর মৃত্যুতে মরে যায় আকাশ

একজন পুরুষের প্রয়াণে ধসে যায় পাহাড়

পুরুষগুলো মরছে

নারীগুলো মরছে

শিশুগুলো মরছে

মরে যাচ্ছে পাহাড়

মরে যাচ্ছে আকাশ

মরে যাচ্ছে সমুদ্র

তবুও এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে

কী নির্লজ্জ বেহায়ার মতো

মাথা উঁচু করে ঠিকই দাঁড়িয়ে থাকছে

রাজনীতি!

মাহেন্দ্রক্ষণ
শেখর দেব

দীর্ঘ যাত্রা পথে কত শতো ফুল উড়ে আসে

ফুলের সুবাস নিয়ে

অথবা না নিয়ে

পথগুলো চলে যায় সময়ের রেখা ধরে।

পথ খুঁজে খুঁজে এখনো পথেই পড়ে আছি

কতো মাহেন্দ্রক্ষণের বিভা

আলোকিত করে নিমেষে হারিয়ে যায়

অথবা দারুণ অন্ধকারে আলোরেখা যেন!

জীবনের জন্য যাপনকে বেছে নিতে গেলে

সময় বেরিয়ে যায় ফসকানো হাতে

জমিয়ে রাখতে চেয়ে কিছু তার করি অপচয়

কত ফুল উড়ে উড়ে যায় চারপাশে

সময় বিভ্রান্ত করে দারুণ আবেগে।

ফুল না ধরে চেয়েছি সময়কে ধরে রাখি

সব সময় কি মাহেন্দ্রক্ষণ হয় না?

জোছনা বিলাপ
শারমিন সুলতানা রীনা

প্রদীপ নিভেছে কবে বসতভিটার

নক্ষত্র পড়েছে ঝরে জোছনা বিলাপে

আকাশে বেঁধেছো ঘর তুমুল আনন্দে

অতীত অতীত খেলি নিজের ভেতরে

বিপন্ন জীবন দিয়ে ফিরেছো আলয়ে

শ্যামল সবুজ মাঠে ধূসর ফসল

অজানা অসুখে ভুগি অতল তিয়াসা

স্মৃতিরা বেয়াড়া যেনো জ্বলন্ত শলাকা

এমন মায়ার ঘুমে আটক জীবন

আনন্দ আশ্রম জ্বলে সুখের অসুখে।

অনাশ্রিত বর্ষার ডাক
লুৎফুন নাহার লোপা

বর্ষা এলেই আমি শরতের অপেক্ষা করি

শরৎ এলে পুনরায় বর্ষা।

মূলত এই অপেক্ষা শব্দটির সাথেই

জুড়ে যায় ঋতুর পরিক্রমা।

প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে তাকে

খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত যে চাঞ্চল্য থাকে

তেমনি আবেগে বেড়ে উঠে নদীর ঘোলা জল

একসারি বিষণœ স্মৃতিচিহ্নের মতো।

মেঘেদের মতো স্ফীত ধূসর বিকেলে

একজোড়া বাদামী চোখের উপর ঝরে পড়ে

অনাশ্রিত বর্ষার ডাক।

শূন্যের গুণিতক
বুলু রানী ঘোষ

বুঝতে চাইলেই বোঝা যায় নাকি,

সুত্র মেলে কি সহজে!

কাব্যে গণিত, গণিতে কাব্য,

হৃদয় বাজি মগজে।

লগারিদমের সাজানো ছত্রে

আবেগের রাশ খুঁজি,

ইনফিনিটির নমুনা বলতে

ভালোবাসাটাই বুঝি।

বাম পক্ষ হয় না কখনো

ডান পক্ষের মতো,

হোল স্কয়ারের কোনো সূত্রই

খাটে না জায়গামতো।

ছন্দ, মাত্রা, অক্ষর বৃত্তের

ঘূর্ণিপাকের ভিড়ে,

অনুরণনে ইচ্ছে গুচ্ছ

নিজের কাছেই ফিরে।

আতিপাতি খুঁজেই মরি,

সিঁড়ি ভাঙ্গি শব্দের,

পরশ কিছু মেলে যদি

অংক না হোক, পদ্যের।

জীবন বড় গোলক ধাঁধা

কতটা কে আর বুঝি!

শূন্যের গুণিতকে তাই

বৃথা সে উত্তর খুঁজি।

যক্ষ অভিমান
রাখী সরদার

অভিমান এমনই আশ্চর্য এক দাবি

সচরাচর বোঝাই যায় না।

এর আদি উজ্জ্বলতা

একমাত্র হৃদয়ের ঝাঁপি খুললে

স্পষ্ট ছড়িয়ে পড়ে গোপনে...

এই যেমন নদীটি

মেঘের উপর অভিমানে ফুলে ওঠে

মেঘ কি তা বুঝতে পারে! যতক্ষণ

না দীর্ঘ নিঃশ্বাসে বৃষ্টি নামে...

এই বোধে পাখি পুষি, মুক্তির সময়

এলে খুলে দিই সমস্ত আকাশ।

যদি তুমি পালক সনদে

খোঁজ পাও যক্ষ অভিমান।

প্রতিদান
সঙ্গীতা ইয়াসমিন

বাসলে ভালো, প্রকৃতিও দেয় ফিরিয়ে;

কেবল মানুষ ছাড়া।

মানুষেরই তাড়া থাকে,

সামনে চলার পীড়া থাকে,

ভুলে যাওয়ার গল্প থাকে,

পিছু হটার বিমার থাকে,

ভালোবাসা ছাড়া!

বৃক্ষ-লতা-পাতার মতো জড়িয়েছিলাম ছায়ায়,

দহন শেষে এই বুঝেছি ফিরতে হবে আমায়!

গহন পথের পথিক তুমি, কেইবা রোখে তোমায়!

সবাই যেমন চলছে মেনে,

চলাটাই ধর্ম জেনে, নদী কিংবা সময়!

সবারই থাকে নিজের মানুষ ঘরে ফেরার তাড়া,

আমি কেবল পথের বাঁকে নিজের মানুষ ছাড়া,

ঘরছাড়া এক আউলা বাউল আমি বাঁধন হারা,

পথেই ছুটি পথের টানে পথিক পাগলপারা।

নগরে
মিলন মাহমুদ

শহরের আধুলি পথ ছেড়ে

চলে যাচ্ছে প্রান্তিক চোখের

কোটর; তবুও জীবন ভীষণ

বেখেয়ালি, আমাদের স্বপ্নেরা

আজ হাঁটুগেড়ে ম্লান হয়ে আছে

কখনো নিয়ন আলোর সন্ধ্যায়

কাঁপা গলায় পাশ ফিরে আর

কেউ তাকাবে না, বলবে না হয়তো

নিচুতলার রোডম্যাপ ভুল করে উলটে

গেছে, বুকের মধ্যখানে সেলাই করা

নগরে!

ইন্দুলেখার খাতা
সায়ন ভট্টাচার্য

এ শহর আজ অগভীর হয়ে বাঁচে

তোমার আমার কথাগুলো থাক গোপন

গড়িয়া মোড়ে সাবধানে আজ হেঁটো

ভালোবাসি ওই ইলিশ রঙের আঁচল

বৃষ্টি লিখেছি খাতা ভরে বারোমাস

পাঁচ নম্বর বাসস্ট্যান্ড শুধু জানে

ধুলোয় লেখা অনেক নামের মাঝে

মেঘ নেমে আসে মাঠে আর ময়দানে

কুণ্ডু কাকুর চায়ের দোকান ফেলে

ডালের পকোরা আসলে একটা ছুতো

তখন তোমার রাতের বিরাট খোঁপা

স্পর্শ করে আমার কবিতা যত

কবিতা শুধু তোমার নিজের কাছে

বাকিটা আজ গল্প বলার শেষে

পাহাড় ভেঙে অলি গলি হেঁটে যাই

আমাদের সেই বৃষ্টিমেঘের দেশে!

back to top