alt

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

: সোমবার, ৩০ আগস্ট ২০২১

বীজ
গোলাম কিবরিয়া পিনু

নিজ বীজে লুকিয়ে রয়েছি-

এখনো বপন হইনি

সূচীভেদ্য অন্ধকারে আছি!

জল কাদা আলো

কিছুই পেলাম না এখনো

অঙ্কুরোদগম হবে কবে?

শেকড় ছড়িয়ে পড়বে কবে?

বীজকোষ নষ্ট হয়ে যাবে

এভাবে থাকলে!

অভয়অরণ্য গড়ে উঠেছে কতক

তারপরও আমি

চাষকবলিত হয়ে-

মাটি ফুঁড়ে বের হতে পারলাম না!

ক্ষেত্রবসুধা এতটা বিরূপ কেন?

অন্ত্যমিল
মতিন রায়হান

কী এক অদৃশ্য আগুনে পুড়ছি!

দিনগুলো ঠিক জল্লাদের মতো

তাড়া করতে করতে

ঠেলে দিচ্ছে রাতের গভীরে...

আমি অন্ধের মতো সাদা ছড়ি হাতে পথ খুঁজছি!

কে দেখাবে পথ?

তুমি?

তাহলে বৃক্ষের কাছ থেকে শুশ্রূষা নিয়ে এসো!

নদীর কাছ থেকে কাকচক্ষু জল;

আমি ডুব দেবো তোমার গহিনে...

মিশে যাবো তোমার অনাদি অস্তিত্বে!

এই যে বাতাস বয়ে যাচ্ছে ঝিরিঝিরি

আমিও তো বহমান

সহস্র আলোকবর্ষ ধরে

প্রভাতের সূর্য হয়ে আমিও ছড়িয়ে পড়ি

দিগ্-দিগন্তরে...

আমাদের পাতাসবুজ দিনের কথা

তোলা আছে শৈশবের সোনালি তোরঙ্গে

তবে খুচরো পয়সার মতো জমিয়ে রাখা

স্মৃতিমুহূর্তরাশি

যেন রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে আজ

ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে!

চলো, এবার আমরা গণতন্ত্রে ফিরি

তুমি যদি স্বেচ্ছায় ঠোঁট বাড়িয়ে দাও

আমি তবে পোষা কাকাতুয়া

শোধ করি গতজন্মের ঋণ

তুমি-আমি, আমি-তুমি...

দেখো কী গভীর অন্ত্যমিল!

সভ্যতার চারুকলা
আলী সিদ্দিকী

তুমি বলো সমুদ্র গলে গিয়ে তুমুল পাহাড়

জলের সারল্যে মরুভূমি

আলাপের কত যে ধরন সাজে ফাঁকতালে

জনশ্রুতি ঋতুকল্পে গড়ে পলির মনোভূমি।

চৌকাঠ তুলে রাখছে চলমান সময়ের ছবি

বাতাসে যদিও নেই ক্লিক শব্দ

কার্নিশের চড়ুইবাড়িতে দিনরাত হট্টগোল

সংলাপ সুতোয় নাচো তুমি উন্মাদ আবদ্ধ।

বলো বদলে গিয়ে আকাশ মন মহাশূন্যতা

ধুলোকণা লেখে নিগ্রহ ইতিহাস

নৈঃশব্দ্য স্বপ্নভঙ্গের নির্ঝর ধারাপাত লেখে

জলতরঙ্গ সাঁতরে পেরোয় বিমূর্ত অভিলাষ।

তুমি বলো পাল্টে গিয়ে কালধারায় উল্লম্ফন

সুষম হয়ে উঠবে হ্রদয়ের কাব্যকলা

রকেট মিশাইল আর ট্যাংক সভ্যতা দৃঢ়মূল

রক্ত ক্ষুধা আর মৃত্যুই তো সভ্যতার চারুকলা।

দৈত্যকার মাস্ক
রাজীব আর্জুনি

জীবাণু থেকে বাঁচতে

মানুষ মাস্ক পড়ছে এখন;

মানুষ এখন

চোখের উপর চোখ রাখতে পারে না;

ভয় পায়;

ভাইকে রক্তাক্ত দেখে কাঁদছে বোনটি

বোনের লাশ নিয়ে ভাইটি কাঁদছে;

ছোট মেয়ে বয়স সবে দশ

সে রকেট হামলায় আক্রান্ত এবং

তার পরিবার হয়েছে শহীদ;

মেয়েটি কাঁদছে!

অথচ আমরা কেউ

চোখের উপর চোখ রেখে

বলছি না : শিশুর চোখের

জলের দিব্যি দয়া করে হত্যা

বন্ধ করুন; দয়া করে আর

একটি রকেট ছুঁড়বেন না;

অনুগ্রহ করে আমাদের আর একজন

শিশুকে হত্যা করবেন না;

আমদের বৃদ্ধ পিতা মাতাকে আর

রক্তাক্ত করবেন না; আমরা

কেউ চোখের উপর চোখ রাখতে

পারছিনা; কিছু বলছি না!

জীবাণু থেকে বাঁচতে

মানুষ মাস্ক পড়ছে এখন;

অথচ সারা পৃথিবী

পড়ে আছে দৈত্যকার এক মাস্ক

কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে!

আগস্ট
তাছলিমা হোসেন শিখা

তোমার ঘরে যখন রৌদ্রোজ্জ্বল

ভোরের বন্দনা,

আমার ঘরে তখন ইতিহাসের

কালো অধ্যায়ের স্মৃতিচারণা!

তোমার আকাশ যখন ত্রিরঙ্গা উড়িয়ে

মুখরিত জন গণ মন গানে,

আমার আকাশ তখন চেয়ে থাকে

অর্ধনমিত লাল সবুজের পানে।

তোমার উঠোন যখন

তোপধ্বনি গোনে,

আমার উঠোন তখন

বিউগলে করুণ সুর শোনে!

তোমার শিশুরা যখন রঙ-বেরঙয়ের

প্রজাপতি হয়ে ছোটে,

আমার শিশুরা তখন সাদা কালো

গোলাপ হয়ে ফোটে।

তোমার বুকে যখন তিস্তার

ঘূর্ণি নাচন,

আমার বুকে তখন বিস্তীর্ণ

জনপদের দহন।

তোমার মানচিত্র যখন কমলা, হলুদ,

সবুজ আবিরে মাখামাখি,

আমার মানচিত্র তখন

রক্তাক্ত আহত পাখি!

তোমার আমার মাঝে মাত্র

তিনশ’ মিটার শূন্যরেখা,

তবুও চাইলেই

পাই না তোমার দেখা!

মুমূর্ষু মোকামে
এলিজা খাতুন

ভোরের অবাধ্য জানালা ছুঁতে চায়- বৃষ্টির জ্বালাতন

অথবা নিঃশব্দ রোদের ফালি চিত্রিত দুপুর-পথের বাঁক

প্রতিবন্ধি স্বপ্নবৃক্ষের শাখাপ্রশাখায় ঝুলে আছে ক্লান্ত পাখি

কর্পূরের মতো উবে যায় নিশ্চিন্ত ভাতঘুম-অপরাহ্ণ

নিত্যদিনের ব্রিফিং-এ ওঠানামা করছে

অজস্র স্পন্দন থেমে যাওয়ার লেখচিত্র

যাপনের অভ্যেসগুলো আশা-হতাশার দেয়ালে দোলে

সরল দোলকের মতো

হৃদয়ের সমস্ত ভাষা আইসোলেটেড

তোমাকে জানাতে চাওয়া সব অনুভব-

এন নাইন্টি ফাইভ-এর আধিপত্যে গুমরে মরে

চা-এর কাপ থেকে ধোঁয়ার সাথে উড়ে যায় মুখর বিকেল

এভাবে দিন যায়... প্রাণ যায়...

বিজলীপ্রপাত মুহূর্তের অতিপাশে ক্ষণস্থায়ী সন্ধ্যা

অবিচ্ছিন্ন মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয় স্বপ্নময় সময়

বোবা হয়ে থাকে গোরখোদকের মাটি

সাবান-সোডার ক্ষারে ডুবে থেকে থেকে

প্রাচীন মুদ্রাক্ষরের মতো অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমার মুখ

তবু প্রতীক্ষা; পাশ কেটে বেরিয়ে যাওয়া অনবরত-

বাতাসে ‘তুমি আসা’ শব্দ স্পষ্ট মিশে থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনায়

উৎসে আশ্রয়
সালমা খানম

যে জননী জন্ম দিয়ে এইমাত্র মা হলেন

দুঃখ তার আজন্ম সঙ্গী

কিন্তু দুঃখ থেকে বিসর্গকে ইচ্ছে করেই সরাইনি।

যেভাবে চোখ থেকে সরাইনি দুফোঁটা অশ্রু

অশ্রুহীন চক্ষু মূল্যহীন।

কোনও কোনও নারী শুধু নারী নয়

যাঁর শরীরী কোমল ঘ্রাণ ঝংকৃত কস্তুরী-মায়া খোলে।

কখনোকখনো কোনো পুরুষও নেকড়ে-স্বভাব

প্রাণ বিষধর ফণা তোলে!

হিংস্র বা হিংসা কোনটা থেকেই অনুস্বারকে নির্বাসন দিইনি।

যেভাবে অপসারণ করিনি ঝংকার থেকে ওংকার ধ্বনি!

অথবা রংধনু থেকে সাতটি রঙ

রংবিহীন জীবন স্বাদহীন।

চাঁদের আলোয় স্নান করে ছুঁয়ে দিই চন্দ্রিমা।

চন্দ্রবিন্দু অনুনাসিক

পরাশ্রয়ী বর্ণকেও আশ্রয় দিই জননীর স্নেহে

করতলগত পূর্ণিমা।

নেকড়ের হাসি
মহসিন খোন্দকার

আম্মার খই ভাজার মিহি শব্দে আবার ঘুমিয়ে পড়ি, একটি গেঁয়ো ভোর দাঁড়িয়ে থাকে শিয়রের কাছে, কোমল ভোরের শরীরে আম্মা আগুনফুল সাজিয়েছেন, মেটে চুলোর কানিতে বিড়ালটি আম্মার খই ভাজার শব্দ পান করছে,বাজানের তেলাওয়াতের মূর্ছনা আম্মার খই ভাজার শব্দকে চুমু খেয়ে আমার কাছে ফিরে আসছে- হঠাৎ খই ভাজার শব্দ থেকে আছড়ে পড়ে গুলির শব্দ! আয়নার মতো ভেঙ্গে যায় বাজানের তেলাওয়াত, গেঁয়ো ভোর ফিরে যায় মাঝরাতের দিকে- আমার ঘুমকে টেনে নিয়ে যায় নিকৃষ্ট নেকড়ের হাসি।

তোমার দিকে নুয়ে
অজিত দাশ

আমি তো ছিলাম তোমার দিকে নুয়ে

জলের মতো ভেঙ্গে ভেঙ্গে,

ঢেউয়ে বাঁধা হেলেঞ্চার পাতা যেনো।

ফিরে গেলাম, আমারই আসল দুঃখ পরিধান করে

অথচ কী সব অস্ফুট ডালপালা, ছেলেখেলার দিন

স্মৃতিবাদ্য রয়ে গেছে তোমার গভীরে।

সংখ্যাদাহ-২
অভি জাহিদ

লোকটিকে কারখানায় খুঁজে পাওয়া গেলো না!

অথচ বেকুবগুলো জানেই না আসলে লোকটিই কারখানা। লোকটি ব্যাংকনোট, প্র্রেসনোট, উদ্যান, শিউলি, শিরিষ, পার্ক, প্রেস ক্লাব ভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসন, রাষ্ট্রপতির চারচাকা, এমনকি লোকটি একটি আস্ত সংসদ।

পরে ময়না তদন্তে দেখা গেলো, তার দগ্ধ হাতে রুগ্ন রাষ্ট্রের আর্তনাদ।

তদন্তলিপিতে সরলাঙ্ক কষে লোকটিকে পুনরায় কারখানায় খোঁজা হলো

ছায়া
স্বপঞ্জয় চৌধুরী

আমি আমার ছায়া হারিয়েছি

উদ্ভ্রান্ত বিকেলের আলোয়,

যেখানে হাঁসছানা ও শূকরপাল

একই কাঁদায়, একই জলে

গড়াগড়ি করতে করতে ঠোঁটের অগ্রভাগে

শূন্যতাকে এঁকে ফেলে।

ইস্পাত শরীর থেকে বুনো ঘামের ঘ্রাণ

লুটোপুটি খাচ্ছে তিমির বিচ্ছিন্ন পথে,

এসো মিসিসিপি মিশৌরী খড়িমাটি লও

লেখো ছায়াশোকের পদ্য।

কালের পেছনে লেগে আছে মহাকাল

ঘরের পেছনে দাঁড়িয়েছে বিশ্বঘর

রাতের পেছনে দাঁড়ায়ে আখেরাত

এশক ও মহব্বতের হিসাব কিতাব শেষে

আমি কেবল দিগি¦দিক আমার ছায়া খুঁজে ফিরি।

সন্ধ্যাহত পালকে লুকানো ওম
অপার অরণ্য

চোখ ভাঙছে অভিমান

আর যা ভাঙবে বলে দীর্ঘতর যৌথ আয়োজন

তারাও অপ্রসঙ্গত নয়-

বৃষ্টির স্নায়ুচাপে কাচের বুদ্বুদ থেকে ঝরে গেছে পাতাচুম্বনের কলাকৌশলাদি-

এইসব তোয়াক্কা করা মানে বুকের ভেতর চিৎক্কুর দিয়ে ওঠে

নদীবিধৌত বাহু ছেড়ে একা উঠে আসে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন,

যেহেতু স্মরণাতীত সন্ধ্যা!

স্মৃতিগাছ ও মনমাঝির ইলিশ-আয়ু জেনে

করোটি ছিঁড়ে পালাবার কথা পাখিটির।

বন্ধ্যা মাথার ভেতর বিষপিঁপড়ের ডিম আতরগন্ধা অশ্বত্থ,

যদিও ডানা ঝাপটায় ঝাপটায়

ঠোঁট ভাঙছে কম্পিত ব্যথাতুর বিড়া ,

আর যা ভাঙবে বলে ফ্যানাটিক ঘুম

সেইসবও প্রসঙ্গত বাজে।

দ্রাঘিমারেখার ভাঙাভাঙি হালখাতায় টুকে রাখা

শুধু- স্পর্শখন্ড, উড়ালচিঠি, আগুনডুব...

তারল্যের মতো এতো বেশি সুখি হতে ইচ্ছে করে যে-

বুকের শূন্যস্থানে তালের নরম শাষ ঠাস হয়ে থাকে

ন্যূনতম লোভ এ-কিছু নয়,

আর কোন লোভাতুর পুরাকীর্তি আছে

বসুধার ত্রিসীমাজুড়ে!

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

সাময়িকী কবিতা

সোমবার, ৩০ আগস্ট ২০২১

বীজ
গোলাম কিবরিয়া পিনু

নিজ বীজে লুকিয়ে রয়েছি-

এখনো বপন হইনি

সূচীভেদ্য অন্ধকারে আছি!

জল কাদা আলো

কিছুই পেলাম না এখনো

অঙ্কুরোদগম হবে কবে?

শেকড় ছড়িয়ে পড়বে কবে?

বীজকোষ নষ্ট হয়ে যাবে

এভাবে থাকলে!

অভয়অরণ্য গড়ে উঠেছে কতক

তারপরও আমি

চাষকবলিত হয়ে-

মাটি ফুঁড়ে বের হতে পারলাম না!

ক্ষেত্রবসুধা এতটা বিরূপ কেন?

অন্ত্যমিল
মতিন রায়হান

কী এক অদৃশ্য আগুনে পুড়ছি!

দিনগুলো ঠিক জল্লাদের মতো

তাড়া করতে করতে

ঠেলে দিচ্ছে রাতের গভীরে...

আমি অন্ধের মতো সাদা ছড়ি হাতে পথ খুঁজছি!

কে দেখাবে পথ?

তুমি?

তাহলে বৃক্ষের কাছ থেকে শুশ্রূষা নিয়ে এসো!

নদীর কাছ থেকে কাকচক্ষু জল;

আমি ডুব দেবো তোমার গহিনে...

মিশে যাবো তোমার অনাদি অস্তিত্বে!

এই যে বাতাস বয়ে যাচ্ছে ঝিরিঝিরি

আমিও তো বহমান

সহস্র আলোকবর্ষ ধরে

প্রভাতের সূর্য হয়ে আমিও ছড়িয়ে পড়ি

দিগ্-দিগন্তরে...

আমাদের পাতাসবুজ দিনের কথা

তোলা আছে শৈশবের সোনালি তোরঙ্গে

তবে খুচরো পয়সার মতো জমিয়ে রাখা

স্মৃতিমুহূর্তরাশি

যেন রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে আজ

ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে!

চলো, এবার আমরা গণতন্ত্রে ফিরি

তুমি যদি স্বেচ্ছায় ঠোঁট বাড়িয়ে দাও

আমি তবে পোষা কাকাতুয়া

শোধ করি গতজন্মের ঋণ

তুমি-আমি, আমি-তুমি...

দেখো কী গভীর অন্ত্যমিল!

সভ্যতার চারুকলা
আলী সিদ্দিকী

তুমি বলো সমুদ্র গলে গিয়ে তুমুল পাহাড়

জলের সারল্যে মরুভূমি

আলাপের কত যে ধরন সাজে ফাঁকতালে

জনশ্রুতি ঋতুকল্পে গড়ে পলির মনোভূমি।

চৌকাঠ তুলে রাখছে চলমান সময়ের ছবি

বাতাসে যদিও নেই ক্লিক শব্দ

কার্নিশের চড়ুইবাড়িতে দিনরাত হট্টগোল

সংলাপ সুতোয় নাচো তুমি উন্মাদ আবদ্ধ।

বলো বদলে গিয়ে আকাশ মন মহাশূন্যতা

ধুলোকণা লেখে নিগ্রহ ইতিহাস

নৈঃশব্দ্য স্বপ্নভঙ্গের নির্ঝর ধারাপাত লেখে

জলতরঙ্গ সাঁতরে পেরোয় বিমূর্ত অভিলাষ।

তুমি বলো পাল্টে গিয়ে কালধারায় উল্লম্ফন

সুষম হয়ে উঠবে হ্রদয়ের কাব্যকলা

রকেট মিশাইল আর ট্যাংক সভ্যতা দৃঢ়মূল

রক্ত ক্ষুধা আর মৃত্যুই তো সভ্যতার চারুকলা।

দৈত্যকার মাস্ক
রাজীব আর্জুনি

জীবাণু থেকে বাঁচতে

মানুষ মাস্ক পড়ছে এখন;

মানুষ এখন

চোখের উপর চোখ রাখতে পারে না;

ভয় পায়;

ভাইকে রক্তাক্ত দেখে কাঁদছে বোনটি

বোনের লাশ নিয়ে ভাইটি কাঁদছে;

ছোট মেয়ে বয়স সবে দশ

সে রকেট হামলায় আক্রান্ত এবং

তার পরিবার হয়েছে শহীদ;

মেয়েটি কাঁদছে!

অথচ আমরা কেউ

চোখের উপর চোখ রেখে

বলছি না : শিশুর চোখের

জলের দিব্যি দয়া করে হত্যা

বন্ধ করুন; দয়া করে আর

একটি রকেট ছুঁড়বেন না;

অনুগ্রহ করে আমাদের আর একজন

শিশুকে হত্যা করবেন না;

আমদের বৃদ্ধ পিতা মাতাকে আর

রক্তাক্ত করবেন না; আমরা

কেউ চোখের উপর চোখ রাখতে

পারছিনা; কিছু বলছি না!

জীবাণু থেকে বাঁচতে

মানুষ মাস্ক পড়ছে এখন;

অথচ সারা পৃথিবী

পড়ে আছে দৈত্যকার এক মাস্ক

কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে!

আগস্ট
তাছলিমা হোসেন শিখা

তোমার ঘরে যখন রৌদ্রোজ্জ্বল

ভোরের বন্দনা,

আমার ঘরে তখন ইতিহাসের

কালো অধ্যায়ের স্মৃতিচারণা!

তোমার আকাশ যখন ত্রিরঙ্গা উড়িয়ে

মুখরিত জন গণ মন গানে,

আমার আকাশ তখন চেয়ে থাকে

অর্ধনমিত লাল সবুজের পানে।

তোমার উঠোন যখন

তোপধ্বনি গোনে,

আমার উঠোন তখন

বিউগলে করুণ সুর শোনে!

তোমার শিশুরা যখন রঙ-বেরঙয়ের

প্রজাপতি হয়ে ছোটে,

আমার শিশুরা তখন সাদা কালো

গোলাপ হয়ে ফোটে।

তোমার বুকে যখন তিস্তার

ঘূর্ণি নাচন,

আমার বুকে তখন বিস্তীর্ণ

জনপদের দহন।

তোমার মানচিত্র যখন কমলা, হলুদ,

সবুজ আবিরে মাখামাখি,

আমার মানচিত্র তখন

রক্তাক্ত আহত পাখি!

তোমার আমার মাঝে মাত্র

তিনশ’ মিটার শূন্যরেখা,

তবুও চাইলেই

পাই না তোমার দেখা!

মুমূর্ষু মোকামে
এলিজা খাতুন

ভোরের অবাধ্য জানালা ছুঁতে চায়- বৃষ্টির জ্বালাতন

অথবা নিঃশব্দ রোদের ফালি চিত্রিত দুপুর-পথের বাঁক

প্রতিবন্ধি স্বপ্নবৃক্ষের শাখাপ্রশাখায় ঝুলে আছে ক্লান্ত পাখি

কর্পূরের মতো উবে যায় নিশ্চিন্ত ভাতঘুম-অপরাহ্ণ

নিত্যদিনের ব্রিফিং-এ ওঠানামা করছে

অজস্র স্পন্দন থেমে যাওয়ার লেখচিত্র

যাপনের অভ্যেসগুলো আশা-হতাশার দেয়ালে দোলে

সরল দোলকের মতো

হৃদয়ের সমস্ত ভাষা আইসোলেটেড

তোমাকে জানাতে চাওয়া সব অনুভব-

এন নাইন্টি ফাইভ-এর আধিপত্যে গুমরে মরে

চা-এর কাপ থেকে ধোঁয়ার সাথে উড়ে যায় মুখর বিকেল

এভাবে দিন যায়... প্রাণ যায়...

বিজলীপ্রপাত মুহূর্তের অতিপাশে ক্ষণস্থায়ী সন্ধ্যা

অবিচ্ছিন্ন মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয় স্বপ্নময় সময়

বোবা হয়ে থাকে গোরখোদকের মাটি

সাবান-সোডার ক্ষারে ডুবে থেকে থেকে

প্রাচীন মুদ্রাক্ষরের মতো অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমার মুখ

তবু প্রতীক্ষা; পাশ কেটে বেরিয়ে যাওয়া অনবরত-

বাতাসে ‘তুমি আসা’ শব্দ স্পষ্ট মিশে থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনায়

উৎসে আশ্রয়
সালমা খানম

যে জননী জন্ম দিয়ে এইমাত্র মা হলেন

দুঃখ তার আজন্ম সঙ্গী

কিন্তু দুঃখ থেকে বিসর্গকে ইচ্ছে করেই সরাইনি।

যেভাবে চোখ থেকে সরাইনি দুফোঁটা অশ্রু

অশ্রুহীন চক্ষু মূল্যহীন।

কোনও কোনও নারী শুধু নারী নয়

যাঁর শরীরী কোমল ঘ্রাণ ঝংকৃত কস্তুরী-মায়া খোলে।

কখনোকখনো কোনো পুরুষও নেকড়ে-স্বভাব

প্রাণ বিষধর ফণা তোলে!

হিংস্র বা হিংসা কোনটা থেকেই অনুস্বারকে নির্বাসন দিইনি।

যেভাবে অপসারণ করিনি ঝংকার থেকে ওংকার ধ্বনি!

অথবা রংধনু থেকে সাতটি রঙ

রংবিহীন জীবন স্বাদহীন।

চাঁদের আলোয় স্নান করে ছুঁয়ে দিই চন্দ্রিমা।

চন্দ্রবিন্দু অনুনাসিক

পরাশ্রয়ী বর্ণকেও আশ্রয় দিই জননীর স্নেহে

করতলগত পূর্ণিমা।

নেকড়ের হাসি
মহসিন খোন্দকার

আম্মার খই ভাজার মিহি শব্দে আবার ঘুমিয়ে পড়ি, একটি গেঁয়ো ভোর দাঁড়িয়ে থাকে শিয়রের কাছে, কোমল ভোরের শরীরে আম্মা আগুনফুল সাজিয়েছেন, মেটে চুলোর কানিতে বিড়ালটি আম্মার খই ভাজার শব্দ পান করছে,বাজানের তেলাওয়াতের মূর্ছনা আম্মার খই ভাজার শব্দকে চুমু খেয়ে আমার কাছে ফিরে আসছে- হঠাৎ খই ভাজার শব্দ থেকে আছড়ে পড়ে গুলির শব্দ! আয়নার মতো ভেঙ্গে যায় বাজানের তেলাওয়াত, গেঁয়ো ভোর ফিরে যায় মাঝরাতের দিকে- আমার ঘুমকে টেনে নিয়ে যায় নিকৃষ্ট নেকড়ের হাসি।

তোমার দিকে নুয়ে
অজিত দাশ

আমি তো ছিলাম তোমার দিকে নুয়ে

জলের মতো ভেঙ্গে ভেঙ্গে,

ঢেউয়ে বাঁধা হেলেঞ্চার পাতা যেনো।

ফিরে গেলাম, আমারই আসল দুঃখ পরিধান করে

অথচ কী সব অস্ফুট ডালপালা, ছেলেখেলার দিন

স্মৃতিবাদ্য রয়ে গেছে তোমার গভীরে।

সংখ্যাদাহ-২
অভি জাহিদ

লোকটিকে কারখানায় খুঁজে পাওয়া গেলো না!

অথচ বেকুবগুলো জানেই না আসলে লোকটিই কারখানা। লোকটি ব্যাংকনোট, প্র্রেসনোট, উদ্যান, শিউলি, শিরিষ, পার্ক, প্রেস ক্লাব ভবন, গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসন, রাষ্ট্রপতির চারচাকা, এমনকি লোকটি একটি আস্ত সংসদ।

পরে ময়না তদন্তে দেখা গেলো, তার দগ্ধ হাতে রুগ্ন রাষ্ট্রের আর্তনাদ।

তদন্তলিপিতে সরলাঙ্ক কষে লোকটিকে পুনরায় কারখানায় খোঁজা হলো

ছায়া
স্বপঞ্জয় চৌধুরী

আমি আমার ছায়া হারিয়েছি

উদ্ভ্রান্ত বিকেলের আলোয়,

যেখানে হাঁসছানা ও শূকরপাল

একই কাঁদায়, একই জলে

গড়াগড়ি করতে করতে ঠোঁটের অগ্রভাগে

শূন্যতাকে এঁকে ফেলে।

ইস্পাত শরীর থেকে বুনো ঘামের ঘ্রাণ

লুটোপুটি খাচ্ছে তিমির বিচ্ছিন্ন পথে,

এসো মিসিসিপি মিশৌরী খড়িমাটি লও

লেখো ছায়াশোকের পদ্য।

কালের পেছনে লেগে আছে মহাকাল

ঘরের পেছনে দাঁড়িয়েছে বিশ্বঘর

রাতের পেছনে দাঁড়ায়ে আখেরাত

এশক ও মহব্বতের হিসাব কিতাব শেষে

আমি কেবল দিগি¦দিক আমার ছায়া খুঁজে ফিরি।

সন্ধ্যাহত পালকে লুকানো ওম
অপার অরণ্য

চোখ ভাঙছে অভিমান

আর যা ভাঙবে বলে দীর্ঘতর যৌথ আয়োজন

তারাও অপ্রসঙ্গত নয়-

বৃষ্টির স্নায়ুচাপে কাচের বুদ্বুদ থেকে ঝরে গেছে পাতাচুম্বনের কলাকৌশলাদি-

এইসব তোয়াক্কা করা মানে বুকের ভেতর চিৎক্কুর দিয়ে ওঠে

নদীবিধৌত বাহু ছেড়ে একা উঠে আসে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন,

যেহেতু স্মরণাতীত সন্ধ্যা!

স্মৃতিগাছ ও মনমাঝির ইলিশ-আয়ু জেনে

করোটি ছিঁড়ে পালাবার কথা পাখিটির।

বন্ধ্যা মাথার ভেতর বিষপিঁপড়ের ডিম আতরগন্ধা অশ্বত্থ,

যদিও ডানা ঝাপটায় ঝাপটায়

ঠোঁট ভাঙছে কম্পিত ব্যথাতুর বিড়া ,

আর যা ভাঙবে বলে ফ্যানাটিক ঘুম

সেইসবও প্রসঙ্গত বাজে।

দ্রাঘিমারেখার ভাঙাভাঙি হালখাতায় টুকে রাখা

শুধু- স্পর্শখন্ড, উড়ালচিঠি, আগুনডুব...

তারল্যের মতো এতো বেশি সুখি হতে ইচ্ছে করে যে-

বুকের শূন্যস্থানে তালের নরম শাষ ঠাস হয়ে থাকে

ন্যূনতম লোভ এ-কিছু নয়,

আর কোন লোভাতুর পুরাকীর্তি আছে

বসুধার ত্রিসীমাজুড়ে!

back to top