আগস্ট এক দানব সরীসৃপ
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
শতবর্ষের ব্যর্থ প্রয়াসে ঘাতক ঘুরছে তাঁর পিছু পিছু
কোন সাধারণ অভিযানে এই অপেক্ষা নয়
ঘাতক লক্ষ্য করেছিল এক হাজারবর্ষী অটল বটের
দীর্ঘ ছায়ার পিছু নিতে নিতে আততায়ী ছুটে এসেছে
এই গাঙ্গেয় বদ্বীপ-ভূমিতে।
হিমালয়সম দীর্ঘ বটের পিছু আততায়ী একবার নয়
দুবারও নয়, বারে বারে তাক করেছে নিশানা
ব্যর্থ হয়েছে প্রতিবার তবু হাল ছাড়েনি সে মহাভারতের শিখ-ী যেন
আততায়ীদের প্রথম প্রয়াস ছিল শৈশবে যখন শিকার বেরিবেরি রোগে
ছিল আক্রান্ত;দ্বিতীয় চেষ্টা ছিল গ্লুকোমায় চোখে,
চিকিৎসকের দৃঢ়তা হারায় আততায়ীদের
নৌকাডুবিতে পরে তাঁকে মেরে ফেলেছিল প্রায়, কিন্তু নিয়তি যাঁকে পাঠিয়েছে
মানচিত্রের নির্মাতা হতে, আততায়ীদের সাধ্য কী তাঁকে ঘায়েল করার!
ছেচল্লিশের দাঙ্গায় তাই গলির আড়ালে তিনি বেঁচে যান।
বায়ান্নতেই জেলে অনশনে ওঁৎ পেতে ছিল ধূর্ত ঘাতক
কিন্তু হোসেন গাঙ্গুলি যাঁর ডাক্তার তাঁর কাছে হার মানে নিয়তি-নিষাদ
লাহোরে আঁধার রাস্তাতে তাড়া করেও সফল হয়নি ঘাতক
কারণ শিকার ছিল শিকারীর চাইতে অধিক বুদ্ধি-ধারক।
কবর খুঁড়েই রেখেছিল ওরা লায়ালপুরের মিয়ানওয়ালি কারাগারে
ধাত্রীমা ইন্দিরার কূটনীতি-চালে ঘাতক ঘায়েল!
যৌবনভর আততায়ীদের ঘোল খাওয়ানো জাতির পিতার
আগস্ট মাসকে সুযোগ দিতেই হলো বাঙালির প্রতি গাঢ় বিশ্বাসে
সেই বিশ্বাস হনন করেই আগস্ট হয়েছে দানব উরগ।
কিউপিড
এইচ বি রিতা
আত্মার গুহায় যেখানে বরফজমা নদী
জলকেলিতে উশৃঙ্খল দেহ সেখানেও পবিত্র স্নানে;
মন ভেজাতে চায়।
তুমি জানো মধ্যরাতের আঁধারের কোলে
একটি নির্ঘুম নক্ষত্র অহর্নিশি জ্বলে
বলো, কার অপেক্ষায়?
জানো তুমিও
সমঝোতায় আমি বড্ড পারদর্শী
কিউপিড!
তোমাকে ছুঁয়ে দেখি প্রতি মধ্যরাতে
অদৃশ্য তুমিতে তীরবিদ্ধ হয় হৃদয়
?অথচ তখনো প্রকৃতির নিয়মে
ব্যাঙাচির খেলায় বিভোর সঙ্গমে মগ্ন;
দু’টি আহত পাখি।
স্বপ্নের ভেতর মুখ
আহমদ জামাল জাফরী
মানুষ একা দাঁড়িয়ে থাকে নিঝুম দ্বীপের মতো
দু’হাতে অলৌকিক শূন্যতা নিয়ে নিজের কুষ্ঠিপত্র লেখে
গোপন ঘুমের ডাকে স্বপ্ন উড়ে দৈব ধূলিঝড়ে
রাত্রির আঙ্গুলে ঝুলে থাকে বিষাদের ভাজপত্র,
দীর্ঘ হয় সময় অচল ঘড়ির মতো
বাতাসে শীস দিয়ে যায় অজানিত সুর
হারানো সবুজের ঘ্রাণে অবসণ্ন
পড়ে থাকে পুরাতন সাঁকো
উদাসীন নদীর একা একা পথচলা;
তবুও অরন্যে ঘাসের মহাদলে বৃষ্টির মায়াবী জলে
নক্ষত্রের খসে পড়া রৌদ্রে বাতাসের শিল্পকলা,
একান্ত স্বপ্নের ভেতর মুখ।
জানালা
রাকিবুল রকি
জানালার দৃশ্য জুড়ে অসুস্থতা
মড়ক লেগেছে রোদে, বাতাসে বাতাসে, মনে
ছায়াতে নেই শুশ্রূষা
নদী ভুলে গেছে নিমায়ক গুণ
জানালার দৃশ্যজুড়ে হেসে যায় অসুস্থ ফাল্গুন।
মাড়িয়ে রক্তিম রেখা
তোফায়েল তফাজ্জল
সাতে-পাঁচে যে নেই তাকেই হাসির খোরাক বানিয়ে বা ঘৃণার পাথর ছুঁড়ে
পাতিল উপচিয়ে পড়া মজা পায় অধিক সতীর্থ।
লুকিয়ে দেখলেই বুঝবে, তাদের উদ্ধত ওষ্ঠে ঝোলে
চুপিচুপি জল খাওয়ার দুষ্টুমি, অকাজের শেওলা পিচ্ছিলতা।
বৃক্ষ, নিজের ছায়ায় যেমন চারাকে মুক্ত মনে বেড়ে উঠতে বাদ সাধে,
কোনো মতো খাড়া থাকা বাড়ি বাগে পেলে নাক গলায় বাতাস,
ঈগল ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃগয়ায় কারণ দর্শানো প্রজ্ঞাপন জারি না করেই!
পদে পদে লেগে থাকা বা উড়ে বেড়ানো কবির নামের গন্ধ
এমন ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে সর্বদাই।
মাড়িয়ে রক্তিম রেখা কতো ধাপ নেমে গেছে এরা-
ঘুম মেরে, রক্ত জল করে সাধনায় সরব থাকালেও হুড়কো আঁটে কানে,
জন্মান্ধের ক্রীড়াকর্ম দেখায় নয়ন; মুখাবয়বের ভঙ্গি
স্পষ্ট করে তারা মূক।
বাঘ, সিংহ, সাপ মনে করে দূরত্ব বজায় রাখে।
অনেকেই চুলকানির বিছুটি পাতা বা ছুঁত খোঁজে ছত্রে ছত্রে ।
প্রত্যাশা, শিগগিরই নাই হবে এইসব উপদ্রব
কীটাণুকীটের মাথা চাড়া
যেম্নি হেঁট হয় ওষুধের উপস্থিতি টের পেয়ে।
গীতা দত্ত
রফিকুজ্জামান রণি
বাঁশি বুঝি সেই সুরে আর ডাকবে না
অজানা বাঁশির সঙ্গে বড় অসময়ে
থেমে গেছে এক সুমধুর কণ্ঠস্বর-
কত গান হারালাম তোমার মাঝে
আজও রাত্রি নামে পৃথিবীর বুকে
বাঁকা চাঁদ দোল খায় আকাশে
চারপাশে ফিসফিস করে বাতাস
তুমি তো জানো, হে গীতা দত্ত-
বাতাসের কথা সে তো কথা নয়
আমাদেরও মুখে কোনো কথা নেই
শুধু দুটি আঁখি ভরে রাখি হাসিতে
বহুকাল পেরিয়ে গেল; কিন্তু-
কোনো তারা জ্বলেনি সুদূরে, কেবল
একে একে নিভে গেছে সমস্ত নক্ষত্র
তোমার কণ্ঠধ্বনি থামিয়ে দিয়েছে সময়
থামাতে পারেনি ধ্রুপদী সংগীতের ঝংকার
ফাগুনের দিনগুলি বেঁধে রাখা যায়নি
তোমাকে মনের ভেতরে যুগযুগ ধরে
সোনার শিকলে বেঁধে রেখেছি-
তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার।
[দ্রষ্টব্য: উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী গীতা দত্ত সম্মানে লেখা কবিতা। এখানে তাঁর বিখ্যাত কিছ গানের উদ্বৃতি টানা হয়েছে।]
সোমবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
আগস্ট এক দানব সরীসৃপ
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
শতবর্ষের ব্যর্থ প্রয়াসে ঘাতক ঘুরছে তাঁর পিছু পিছু
কোন সাধারণ অভিযানে এই অপেক্ষা নয়
ঘাতক লক্ষ্য করেছিল এক হাজারবর্ষী অটল বটের
দীর্ঘ ছায়ার পিছু নিতে নিতে আততায়ী ছুটে এসেছে
এই গাঙ্গেয় বদ্বীপ-ভূমিতে।
হিমালয়সম দীর্ঘ বটের পিছু আততায়ী একবার নয়
দুবারও নয়, বারে বারে তাক করেছে নিশানা
ব্যর্থ হয়েছে প্রতিবার তবু হাল ছাড়েনি সে মহাভারতের শিখ-ী যেন
আততায়ীদের প্রথম প্রয়াস ছিল শৈশবে যখন শিকার বেরিবেরি রোগে
ছিল আক্রান্ত;দ্বিতীয় চেষ্টা ছিল গ্লুকোমায় চোখে,
চিকিৎসকের দৃঢ়তা হারায় আততায়ীদের
নৌকাডুবিতে পরে তাঁকে মেরে ফেলেছিল প্রায়, কিন্তু নিয়তি যাঁকে পাঠিয়েছে
মানচিত্রের নির্মাতা হতে, আততায়ীদের সাধ্য কী তাঁকে ঘায়েল করার!
ছেচল্লিশের দাঙ্গায় তাই গলির আড়ালে তিনি বেঁচে যান।
বায়ান্নতেই জেলে অনশনে ওঁৎ পেতে ছিল ধূর্ত ঘাতক
কিন্তু হোসেন গাঙ্গুলি যাঁর ডাক্তার তাঁর কাছে হার মানে নিয়তি-নিষাদ
লাহোরে আঁধার রাস্তাতে তাড়া করেও সফল হয়নি ঘাতক
কারণ শিকার ছিল শিকারীর চাইতে অধিক বুদ্ধি-ধারক।
কবর খুঁড়েই রেখেছিল ওরা লায়ালপুরের মিয়ানওয়ালি কারাগারে
ধাত্রীমা ইন্দিরার কূটনীতি-চালে ঘাতক ঘায়েল!
যৌবনভর আততায়ীদের ঘোল খাওয়ানো জাতির পিতার
আগস্ট মাসকে সুযোগ দিতেই হলো বাঙালির প্রতি গাঢ় বিশ্বাসে
সেই বিশ্বাস হনন করেই আগস্ট হয়েছে দানব উরগ।
কিউপিড
এইচ বি রিতা
আত্মার গুহায় যেখানে বরফজমা নদী
জলকেলিতে উশৃঙ্খল দেহ সেখানেও পবিত্র স্নানে;
মন ভেজাতে চায়।
তুমি জানো মধ্যরাতের আঁধারের কোলে
একটি নির্ঘুম নক্ষত্র অহর্নিশি জ্বলে
বলো, কার অপেক্ষায়?
জানো তুমিও
সমঝোতায় আমি বড্ড পারদর্শী
কিউপিড!
তোমাকে ছুঁয়ে দেখি প্রতি মধ্যরাতে
অদৃশ্য তুমিতে তীরবিদ্ধ হয় হৃদয়
?অথচ তখনো প্রকৃতির নিয়মে
ব্যাঙাচির খেলায় বিভোর সঙ্গমে মগ্ন;
দু’টি আহত পাখি।
স্বপ্নের ভেতর মুখ
আহমদ জামাল জাফরী
মানুষ একা দাঁড়িয়ে থাকে নিঝুম দ্বীপের মতো
দু’হাতে অলৌকিক শূন্যতা নিয়ে নিজের কুষ্ঠিপত্র লেখে
গোপন ঘুমের ডাকে স্বপ্ন উড়ে দৈব ধূলিঝড়ে
রাত্রির আঙ্গুলে ঝুলে থাকে বিষাদের ভাজপত্র,
দীর্ঘ হয় সময় অচল ঘড়ির মতো
বাতাসে শীস দিয়ে যায় অজানিত সুর
হারানো সবুজের ঘ্রাণে অবসণ্ন
পড়ে থাকে পুরাতন সাঁকো
উদাসীন নদীর একা একা পথচলা;
তবুও অরন্যে ঘাসের মহাদলে বৃষ্টির মায়াবী জলে
নক্ষত্রের খসে পড়া রৌদ্রে বাতাসের শিল্পকলা,
একান্ত স্বপ্নের ভেতর মুখ।
জানালা
রাকিবুল রকি
জানালার দৃশ্য জুড়ে অসুস্থতা
মড়ক লেগেছে রোদে, বাতাসে বাতাসে, মনে
ছায়াতে নেই শুশ্রূষা
নদী ভুলে গেছে নিমায়ক গুণ
জানালার দৃশ্যজুড়ে হেসে যায় অসুস্থ ফাল্গুন।
মাড়িয়ে রক্তিম রেখা
তোফায়েল তফাজ্জল
সাতে-পাঁচে যে নেই তাকেই হাসির খোরাক বানিয়ে বা ঘৃণার পাথর ছুঁড়ে
পাতিল উপচিয়ে পড়া মজা পায় অধিক সতীর্থ।
লুকিয়ে দেখলেই বুঝবে, তাদের উদ্ধত ওষ্ঠে ঝোলে
চুপিচুপি জল খাওয়ার দুষ্টুমি, অকাজের শেওলা পিচ্ছিলতা।
বৃক্ষ, নিজের ছায়ায় যেমন চারাকে মুক্ত মনে বেড়ে উঠতে বাদ সাধে,
কোনো মতো খাড়া থাকা বাড়ি বাগে পেলে নাক গলায় বাতাস,
ঈগল ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃগয়ায় কারণ দর্শানো প্রজ্ঞাপন জারি না করেই!
পদে পদে লেগে থাকা বা উড়ে বেড়ানো কবির নামের গন্ধ
এমন ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে সর্বদাই।
মাড়িয়ে রক্তিম রেখা কতো ধাপ নেমে গেছে এরা-
ঘুম মেরে, রক্ত জল করে সাধনায় সরব থাকালেও হুড়কো আঁটে কানে,
জন্মান্ধের ক্রীড়াকর্ম দেখায় নয়ন; মুখাবয়বের ভঙ্গি
স্পষ্ট করে তারা মূক।
বাঘ, সিংহ, সাপ মনে করে দূরত্ব বজায় রাখে।
অনেকেই চুলকানির বিছুটি পাতা বা ছুঁত খোঁজে ছত্রে ছত্রে ।
প্রত্যাশা, শিগগিরই নাই হবে এইসব উপদ্রব
কীটাণুকীটের মাথা চাড়া
যেম্নি হেঁট হয় ওষুধের উপস্থিতি টের পেয়ে।
গীতা দত্ত
রফিকুজ্জামান রণি
বাঁশি বুঝি সেই সুরে আর ডাকবে না
অজানা বাঁশির সঙ্গে বড় অসময়ে
থেমে গেছে এক সুমধুর কণ্ঠস্বর-
কত গান হারালাম তোমার মাঝে
আজও রাত্রি নামে পৃথিবীর বুকে
বাঁকা চাঁদ দোল খায় আকাশে
চারপাশে ফিসফিস করে বাতাস
তুমি তো জানো, হে গীতা দত্ত-
বাতাসের কথা সে তো কথা নয়
আমাদেরও মুখে কোনো কথা নেই
শুধু দুটি আঁখি ভরে রাখি হাসিতে
বহুকাল পেরিয়ে গেল; কিন্তু-
কোনো তারা জ্বলেনি সুদূরে, কেবল
একে একে নিভে গেছে সমস্ত নক্ষত্র
তোমার কণ্ঠধ্বনি থামিয়ে দিয়েছে সময়
থামাতে পারেনি ধ্রুপদী সংগীতের ঝংকার
ফাগুনের দিনগুলি বেঁধে রাখা যায়নি
তোমাকে মনের ভেতরে যুগযুগ ধরে
সোনার শিকলে বেঁধে রেখেছি-
তুমি যে আমার, ওগো তুমি যে আমার।
[দ্রষ্টব্য: উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী গীতা দত্ত সম্মানে লেখা কবিতা। এখানে তাঁর বিখ্যাত কিছ গানের উদ্বৃতি টানা হয়েছে।]