alt

সাময়িকী

একটি পূর্ণাঙ্গ কোষগ্রন্থ

পবিত্র সরকার

: শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাজার বছরের বাঙালি জাতির নানাদিকে বিপুল গরিমা তৈরি হয়েছিল ইতিহাসের প্রবহমানতায়, কিন্তু উনিশ-শো বাহান্নর ভাষা-আন্দোলন তার এক নতুন আত্মপরিচয় নির্মাণ করে। শুধু তাই নয়, এই নব-পরিচয়ের দুর্দমনীয় তেজ, অহংকার ও স্পর্ধা তাকে দিয়ে পৃথিবীর বুকে এক নতুন স্বাধীন দেশ কায়েম করায় এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধে যিনি অবিসংবাদিত নেতৃত্ব দেবেন সেই শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতার যথার্থ নির্মাণও ওই ভাষা আন্দোলন থেকেই আরম্ভ হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক অভাবিত ইতিহাস তৈরি হয় পৃথিবীতে, শুধু ভাষাকে ভালেবেসে, অপরিসীম ত্যাগ ও রক্তপাতের পর এক স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব। সেখানেই শেষ নয়। ভাষা-আন্দোলনের সেই শাহাদাতের দিন, অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ১৯৯৯ সালের শেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে ইউনেস্কো এবং ২০০০ সাল থেকে তাঁর উদযাপন আরম্ভ হয়। তাতে এই হয়েছে যে, সারা পৃথিবীর সব গোষ্ঠীর মাতৃভাষার অস্তিত্বের গৌরব ও উদ্বেগের সঙ্গে বাঙালির ওই ভাষা-আন্দোলন, তথা বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতি যুক্ত হয়ে গেছে। এখন বাংলা ভাষার প্রতি, বাঙালির প্রতি সারা পৃথিবীর সমস্ত ভাষাগোষ্ঠী কৃতজ্ঞ থাকবে। মানুষের ইতিহাসের শেষ দিন পর্যন্ত।

তাই বাঙালির ভাষা-আন্দোলন তার নতুন আত্মপরিচয়ের, সেই সঙ্গে তার অহংকারের, এক প্রধান উৎস। আর এ দেখেও আনন্দিত হয়েছি যে ড. এম আবদুল আলীম পাবনাতে তাঁর নিজের গ্রামে একটি ভাষা-আন্দোলন গবেষণা-কেন্দ্র স্থাপন করে ভাষা-আন্দোলনের উপর একাগ্রচিত্তে গবেষণা করে চলেছেন। এ কথা ঠিক যে ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণার জন্য অনেক গবেষক একেবার প্রথম থেকেই এগিয়ে এসেছেন এবং তাঁরা অনেকেই স্মরণীয় কাজ করেছেন। তাঁদের কাছে শুধু বিদ্বজ্জনসমাজ কৃতজ্ঞ থাকবেন তা নয়, সমগ্র বাঙলাভাষী এবং বাঙালি জাতি অন্তহীনভাবে কৃতজ্ঞ থাকবেন।

ড. আলীমের ওই গবেষণা-কেন্দ্রটি যেমন অভিনব, তেমনই ভাষা-আন্দোলন সম্বন্ধে এই কোষগ্রন্থ প্রণয়নের চিন্তাও অভিনব। এ জন্যও ড. আলীমকে অভিনন্দন জানাই। এই কোষের যতখানি আমি দেখেছি, তাতে একটি পূর্ণাঙ্গ কোষগ্রন্থে যা যা থাকা দরকার তার কিছুই ড. অলীমের মনোযোগ এড়িয়ে যায়নি। ঘটনা, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি (তাঁরা পক্ষে বিপক্ষে যেখানেই থাকুন), ঘটনাস্থল (নগর, গ্রাম, জেলা, অঞ্চল), নানা দেশের ভূমিকা, পত্রপত্রিকা, সংকলন, ছোটদের ও বড়দের দৃষ্টিভঙ্গি-কী নেই এই কোষগ্রন্থে? একবার দৃষ্টিপাতে মনে হয় কিছুই বুঝি সংকলকের মনোযোগের বাইরে থাকেনি।

তবু আমি জানি, এ ধরনের কোষে একবারে সম্পূর্ণতা আসে না, তা ধীরে ধীরে তৈরি হয়। আমার মনে আছে সত্তরের বছরগুলিতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বর্জিত পত্রপত্রিকার মধ্যে বেশ কিছু ‘একুশের সংকলন’ দেখেছিলাম, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ফস্টার লাউঞ্জের বাইরের আলমারিতে কিছু রাখা ছিল। জানি না তার সব ড. আলীমের হাতে এসেছে কি না। আমার কাছেও বোধ হয় কিছু আছে। কিন্তু এই কাজে বাংলাদেশের এবং শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীর নানা দেশের লেখক, পাঠক, সম্পাদক, প্রকাশক ও গবেষকেরা নিশ্চয়ই ড. আলীমকে সর্বাত্মক সাহায্য করবেন এবং তাঁদের সহযোগিতায় এক কোষগ্রন্থটি সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্যের অপরিহার্য আকর হয়ে উঠবে। আমার প্রার্থনা, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যানুরাগী বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বা বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষাবিভাগও ড. আলীমের প্রতি যাবতীয় সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসবেন, যদি এর মধ্যেই না এসে থাকেন।

আর একটি অনুরোধ যে, এর নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ ভুক্তি বা এন্ট্রিগুলি নিয়ে এর একটি ইংরেজি সংস্করণ প্রস্তুত করা হোক।

আমি ড. আলীমকে সমগ্র বাংলাভাষীর পক্ষ থেকে অভিনন্দিত করি।

ভাষা-আন্দোলন-কোষ। প্রকাশক : কথাপ্রকাশ। প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা। প্রকাশকাল : ঢাকা ২০২০। মূল্য ১৫০০ টাকা।

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

মননশস্যের অমৃত মন্থন

ছবি

অনুবাদ ও ভূমিকা : আলী সিদ্দিকী

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

বড়শি

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

এ মুখর বরষায়

ছবি

রক্তে লেখা প্রেম: রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিপ্লব

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

শঙ্খজীবন: যাপিত জীবনের অন্তর্গূঢ় প্রতিকথা

ছবি

ওসামা অ্যালোমার এক ঝুড়ি খুদে গল্প

ছবি

প্রযুক্তির আলোয় বিশ্বব্যাপী বইবাণিজ্য

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ব্রেশায় উড়োজাহাজ

ছবি

কাফকার কাছে আমাদের ঋণ স্বীকার

ছবি

কাফকাকে পড়া, কাফকাকে পড়ানো

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

সূর্যের দেশ

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

লড়াই

সাময়িকী কবিতা

ছবি

প্রচলিত সাহিত্যধারার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন মধুসূদন

ছবি

মেধাসম্পদের ছন্দে মাতুন

ছবি

উত্তর-মানবতাবাদ ও শিল্প-সাহিত্যে তার প্রভাব

ছবি

আমজাদ হোসেনের ‘ভিন্ন ভাষার কবিতা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি: একটি পর্যবেক্ষণ

ছবি

দুই ঋতপার কিসসা এবং এক ন্যাকা চৈতন্য

ছবি

অন্যজীবন অন্যআগুন ছোঁয়া

ছবি

লোরকার দেশে

ছবি

কবিজীবন, দর্শন ও কাব্যসন্ধান

ছবি

অসামান্য গদ্যশৈলীর রূপকার

ছবি

পিয়াস মজিদের ‘রূপকথার রাস্তাঘাট’

ছবি

নজরুলের নিবেদিত কবিতা : অর্ঘ্যরে শিল্পরূপ

ছবি

বাঘাডাঙা গাঁও

ছবি

বুদ্ধদেব বসুর ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’ বিষয়ভাবনা

tab

সাময়িকী

একটি পূর্ণাঙ্গ কোষগ্রন্থ

পবিত্র সরকার

শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাজার বছরের বাঙালি জাতির নানাদিকে বিপুল গরিমা তৈরি হয়েছিল ইতিহাসের প্রবহমানতায়, কিন্তু উনিশ-শো বাহান্নর ভাষা-আন্দোলন তার এক নতুন আত্মপরিচয় নির্মাণ করে। শুধু তাই নয়, এই নব-পরিচয়ের দুর্দমনীয় তেজ, অহংকার ও স্পর্ধা তাকে দিয়ে পৃথিবীর বুকে এক নতুন স্বাধীন দেশ কায়েম করায় এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধে যিনি অবিসংবাদিত নেতৃত্ব দেবেন সেই শেখ মুজিবুর রহমানের মতো নেতার যথার্থ নির্মাণও ওই ভাষা আন্দোলন থেকেই আরম্ভ হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক অভাবিত ইতিহাস তৈরি হয় পৃথিবীতে, শুধু ভাষাকে ভালেবেসে, অপরিসীম ত্যাগ ও রক্তপাতের পর এক স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব। সেখানেই শেষ নয়। ভাষা-আন্দোলনের সেই শাহাদাতের দিন, অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ১৯৯৯ সালের শেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে ইউনেস্কো এবং ২০০০ সাল থেকে তাঁর উদযাপন আরম্ভ হয়। তাতে এই হয়েছে যে, সারা পৃথিবীর সব গোষ্ঠীর মাতৃভাষার অস্তিত্বের গৌরব ও উদ্বেগের সঙ্গে বাঙালির ওই ভাষা-আন্দোলন, তথা বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতি যুক্ত হয়ে গেছে। এখন বাংলা ভাষার প্রতি, বাঙালির প্রতি সারা পৃথিবীর সমস্ত ভাষাগোষ্ঠী কৃতজ্ঞ থাকবে। মানুষের ইতিহাসের শেষ দিন পর্যন্ত।

তাই বাঙালির ভাষা-আন্দোলন তার নতুন আত্মপরিচয়ের, সেই সঙ্গে তার অহংকারের, এক প্রধান উৎস। আর এ দেখেও আনন্দিত হয়েছি যে ড. এম আবদুল আলীম পাবনাতে তাঁর নিজের গ্রামে একটি ভাষা-আন্দোলন গবেষণা-কেন্দ্র স্থাপন করে ভাষা-আন্দোলনের উপর একাগ্রচিত্তে গবেষণা করে চলেছেন। এ কথা ঠিক যে ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণার জন্য অনেক গবেষক একেবার প্রথম থেকেই এগিয়ে এসেছেন এবং তাঁরা অনেকেই স্মরণীয় কাজ করেছেন। তাঁদের কাছে শুধু বিদ্বজ্জনসমাজ কৃতজ্ঞ থাকবেন তা নয়, সমগ্র বাঙলাভাষী এবং বাঙালি জাতি অন্তহীনভাবে কৃতজ্ঞ থাকবেন।

ড. আলীমের ওই গবেষণা-কেন্দ্রটি যেমন অভিনব, তেমনই ভাষা-আন্দোলন সম্বন্ধে এই কোষগ্রন্থ প্রণয়নের চিন্তাও অভিনব। এ জন্যও ড. আলীমকে অভিনন্দন জানাই। এই কোষের যতখানি আমি দেখেছি, তাতে একটি পূর্ণাঙ্গ কোষগ্রন্থে যা যা থাকা দরকার তার কিছুই ড. অলীমের মনোযোগ এড়িয়ে যায়নি। ঘটনা, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি (তাঁরা পক্ষে বিপক্ষে যেখানেই থাকুন), ঘটনাস্থল (নগর, গ্রাম, জেলা, অঞ্চল), নানা দেশের ভূমিকা, পত্রপত্রিকা, সংকলন, ছোটদের ও বড়দের দৃষ্টিভঙ্গি-কী নেই এই কোষগ্রন্থে? একবার দৃষ্টিপাতে মনে হয় কিছুই বুঝি সংকলকের মনোযোগের বাইরে থাকেনি।

তবু আমি জানি, এ ধরনের কোষে একবারে সম্পূর্ণতা আসে না, তা ধীরে ধীরে তৈরি হয়। আমার মনে আছে সত্তরের বছরগুলিতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বর্জিত পত্রপত্রিকার মধ্যে বেশ কিছু ‘একুশের সংকলন’ দেখেছিলাম, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ফস্টার লাউঞ্জের বাইরের আলমারিতে কিছু রাখা ছিল। জানি না তার সব ড. আলীমের হাতে এসেছে কি না। আমার কাছেও বোধ হয় কিছু আছে। কিন্তু এই কাজে বাংলাদেশের এবং শুধু বাংলাদেশের নয়, পৃথিবীর নানা দেশের লেখক, পাঠক, সম্পাদক, প্রকাশক ও গবেষকেরা নিশ্চয়ই ড. আলীমকে সর্বাত্মক সাহায্য করবেন এবং তাঁদের সহযোগিতায় এক কোষগ্রন্থটি সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্যের অপরিহার্য আকর হয়ে উঠবে। আমার প্রার্থনা, কোনও বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যানুরাগী বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বা বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষাবিভাগও ড. আলীমের প্রতি যাবতীয় সমর্থন নিয়ে এগিয়ে আসবেন, যদি এর মধ্যেই না এসে থাকেন।

আর একটি অনুরোধ যে, এর নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ ভুক্তি বা এন্ট্রিগুলি নিয়ে এর একটি ইংরেজি সংস্করণ প্রস্তুত করা হোক।

আমি ড. আলীমকে সমগ্র বাংলাভাষীর পক্ষ থেকে অভিনন্দিত করি।

ভাষা-আন্দোলন-কোষ। প্রকাশক : কথাপ্রকাশ। প্রচ্ছদ : সব্যসাচী হাজরা। প্রকাশকাল : ঢাকা ২০২০। মূল্য ১৫০০ টাকা।

back to top