বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা বাড়লেও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে অসহায় অবস্থায় ফিরে আসছেন। সম্প্রতি একটি এজেন্সির প্রলোভনে আলজেরিয়ায় গিয়ে ৩২ জন শ্রমিক বেতন না পেয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন।
কাজের উদ্দেশে গত বছরের ৬ জুন আলজেরিয়া যান ৪৩ জন শ্রমিক। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ভিশন (আরএল-২১০০) নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের সেখানে পাঠায়। প্রতারণার শিকার হয়ে সাড়ে সাত মাসের ভোগান্তি শেষে শূন্য হাতে এসব শ্রমিক গত ২১ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। পরদিন তারা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবাস সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে অভিযোগ করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী কর্মীরা বলেন, তাদের ভিসা হয় নির্মাণ কাজে। এজন্য তিন থেকে চার লাখ টাকার মতো নেয় রিক্রুটিং এজেন্সি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ভিশন (আরএল- ২১০০)। এরপর তারা ৪৩ জন কর্মী আলজেরিয়ার আলমিনহা কোম্পানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যান। তাদের কাজের চুক্তি দুই বছর। কিন্তু সেখানে গিয়ে একমাস পাঁচদিন কাজ করার পর বলা হয়, ‘তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দেব।’ এরপর দেশে যাওয়ার ফিরতি টিকিট করে আলমিনহা কোম্পানি। হঠাৎ এমন খবরে তারা সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। ফোন করে বিষয়টি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ভিশন এজেন্সিকে জানান। এজেন্সি থেকে তাদের বলা হয়, ‘তোমরা কাজ করতে থাক, কোনো সমস্যা হবে না।’
ভুক্তভোগী কর্মীরা বলেন, ‘এরপর নানান কাহিনি করে ওই কোম্পানি থেকে নিয়ে চাইনিজ ওয়ান প্রায়ান্ট নামের একটি কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়। সেখানে কাজ করতে হয় প্রায় ১৪ ঘণ্টা। অসহনীয় কষ্টে কাজ করতাম। কোনো বেতনও পাইনি। বেতন চাইলে চাইনিজ কোম্পানির লোক বলতো তারা নাকি এজেন্সির কাছে আমাদের বেতন দিয়ে দিতো। কিন্তু এজেন্সি আমাদের কোনো টাকা দেয়নি।’
চাইনিজ কোম্পানিতে গিয়েও ভার্চুয়াল এজেন্সি কর্মীদের ভিসার ব্যবস্থা করেনি। এরপর হঠাৎ একদিন চাইনিজ ইনচার্জ বলেন, ‘আপনাদের এজেন্ট ভিসা না করে দিলে এখানে কাজ করতে পারবেন না। দুদিনের মধ্যে বের হয়ে যেতে হবে।’ এজেন্সি ভিসার ব্যবস্থা করতে না পেরে সে দেশে থাকা তার লোকের মাধ্যমে ৪৩ বাংলাদেশি কর্মীকে একটি ঘরে একপ্রকার বন্দি করে রাখেন।
প্রতারণার শিকার কর্মীরা বলেন, দুদিন যাওয়ার পর এজেন্সি আমাদের সবাইকে বলে, তোমাদের জন্য একটি ভালো ভারতীয় কোম্পানি পেয়েছি, ভিসা লাগিয়ে দেবে। এই কথা বলে, আমাদের কাছে ২০০ ইউরো করে চায়। এরপর সেখানে দুই মাস ১৫ দিনের মাথায় এক ভারতীয় এসে কাজে নিয়ে যান। এতে কিছু লোক কাজ করার সুযোগ পান। কিছু লোক কাজ না করতে পেরে বাইরে চলে যান। কাজ করতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যক্তি মারা যান। একপর্যায়ে সেখানে কাজ ছেড়ে দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) শরণাপন্ন হই। তারা কিছুদিন রেখে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখনো ১০ জনের মতো দেশে আসেনি। আইওএমের মাধ্যমে তারাও চলে আসবে।
প্রতারণার শিকার ঠাকুরগাঁওয়ের মো. জুয়েল বলেন, ‘আমাদের ওপর হয়রানির শেষ নেই। সেখানে আট মাসে অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। ভার্চুয়াল এজেন্সির মালিক আমিনুল আমাদের আলজেরিয়ায় নিয়ে একবার একেক জায়গায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোথাও আমাদের বৈধ হওয়ার জন্য ভিসা লাগাতে পারেননি। সেখানে তার ভারতীয় ও বাংলাদেশি এজেন্টও আছে। একবার চাইনিজ কোম্পানি, আরেকবার ভারতীয় কোম্পানি। নানা জায়গায় পাঠিয়ে কোথাও কাজ করে টাকা পাইনি, ভিসাও পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যাওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন সেখানে কাজ করতে গিয়ে মারা যান। তার জন্য এজেন্সি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দেবে জানালেও দেয়নি। বরং এজেন্সি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’
আরেক ভুক্তভোগী নাটোরের সাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এই এজেন্সি থেকে গিয়ে এর আগেও অনেকে ফেরত এসেছে। আমাদের আট মাস প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সেখানে রাখছে। আমরা কিছুই করতে না পেরে আইওএমের কাছে ধরা দিয়ে দেশে আসি। এখন এজেন্সি থেকে টাকা ফেরত নেওয়া ছাড়া আর কিছুই চাই না। আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ভার্চুয়াল ভিশন এজেন্সির মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আট মাস বেতন পায়নি এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কোম্পানি যদি আমার অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে এসে চেক করুক আলজেরিয়া থেকে কোনো টাকা আমার কাছে দেশে আসছে কি না। প্রতি মাসের স্যালারির ডকুমেন্ট ওদের কোম্পানির কাছে আছে।’
তিনি বলেন, ‘ওদের যে কোম্পানিতে পাঠিয়েছি তারা চার মাস কাজ করে পালিয়ে গেছে। ইউরোপ যেতে চাইছে সেখান থেকে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছে। আর আমি সাড়ে চার লাখ করে নিইনি। আমি এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা করে নিয়েছি। আমার কাছে প্রমাণ আছে। আপনি অফিসে আসুন।’
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের বায়রায় এখন কোনো কমিটি নেই। ফলে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। যেহেতু প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ হয়েছে, আশা করি প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। যে এজেন্সি থেকে তারা গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা যেসব দালালকে টাকা দিয়েছেন ওই দালালদের থেকে টাকা উদ্ধারের দায়িত্ব এজেন্সিকে নিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের টাকার বিষয়টি ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমাধানে জোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ তারিখে দুই পক্ষের সঙ্গে বসার কথা রয়েছে।’
শুধু আলজেরিয়াফেরত প্রবাসীরাই নন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতারিত হয়ে প্রতিনিয়ত দেশে ফেরত আসছেন কর্মীরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ মাসে বিভিন্ন দেশে গিয়ে ছয় মাসের মধ্যেই আবার দেশে ফিরেছেন এমন কর্মীর সংখ্যা এক হাজার ৯২৬ জন। এর মধ্যে সৌদি আরব ফেরত ৭৭৬ জন, মালয়েশিয়া ২২১ জন, ওমান ২১৬ জন, দুবাই ১২২ জন, রোমানিয়া ৮৭ জন, কাতার ১২২ জন, আরব আমিরাত ৬৭ জন, কুয়েত ৭৪ জন, কিরগিজস্তান ৫২ জন, উজবেকিস্তান ৪৩ জন, কাজাখস্তান ২৮ জন ও সিঙ্গাপুর ফেরত ৮৭ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ কর্মী প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আউট পাস নিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন ৪০ হাজার ৩০৫ কর্মী। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কাজ না পাওয়া, চিকিৎসাবঞ্চিত ও প্রতারণার শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে কর্মী হিসেবে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ৯২৬ জন।
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলাদেশ থেকে কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা বাড়লেও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে অসহায় অবস্থায় ফিরে আসছেন। সম্প্রতি একটি এজেন্সির প্রলোভনে আলজেরিয়ায় গিয়ে ৩২ জন শ্রমিক বেতন না পেয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন।
কাজের উদ্দেশে গত বছরের ৬ জুন আলজেরিয়া যান ৪৩ জন শ্রমিক। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ভিশন (আরএল-২১০০) নামের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের সেখানে পাঠায়। প্রতারণার শিকার হয়ে সাড়ে সাত মাসের ভোগান্তি শেষে শূন্য হাতে এসব শ্রমিক গত ২১ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। পরদিন তারা প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রবাস সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে অভিযোগ করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী কর্মীরা বলেন, তাদের ভিসা হয় নির্মাণ কাজে। এজন্য তিন থেকে চার লাখ টাকার মতো নেয় রিক্রুটিং এজেন্সি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ভিশন (আরএল- ২১০০)। এরপর তারা ৪৩ জন কর্মী আলজেরিয়ার আলমিনহা কোম্পানিতে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যান। তাদের কাজের চুক্তি দুই বছর। কিন্তু সেখানে গিয়ে একমাস পাঁচদিন কাজ করার পর বলা হয়, ‘তোমাদের দেশে পাঠিয়ে দেব।’ এরপর দেশে যাওয়ার ফিরতি টিকিট করে আলমিনহা কোম্পানি। হঠাৎ এমন খবরে তারা সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন। ফোন করে বিষয়টি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড ভিশন এজেন্সিকে জানান। এজেন্সি থেকে তাদের বলা হয়, ‘তোমরা কাজ করতে থাক, কোনো সমস্যা হবে না।’
ভুক্তভোগী কর্মীরা বলেন, ‘এরপর নানান কাহিনি করে ওই কোম্পানি থেকে নিয়ে চাইনিজ ওয়ান প্রায়ান্ট নামের একটি কোম্পানিতে কাজ দেওয়া হয়। সেখানে কাজ করতে হয় প্রায় ১৪ ঘণ্টা। অসহনীয় কষ্টে কাজ করতাম। কোনো বেতনও পাইনি। বেতন চাইলে চাইনিজ কোম্পানির লোক বলতো তারা নাকি এজেন্সির কাছে আমাদের বেতন দিয়ে দিতো। কিন্তু এজেন্সি আমাদের কোনো টাকা দেয়নি।’
চাইনিজ কোম্পানিতে গিয়েও ভার্চুয়াল এজেন্সি কর্মীদের ভিসার ব্যবস্থা করেনি। এরপর হঠাৎ একদিন চাইনিজ ইনচার্জ বলেন, ‘আপনাদের এজেন্ট ভিসা না করে দিলে এখানে কাজ করতে পারবেন না। দুদিনের মধ্যে বের হয়ে যেতে হবে।’ এজেন্সি ভিসার ব্যবস্থা করতে না পেরে সে দেশে থাকা তার লোকের মাধ্যমে ৪৩ বাংলাদেশি কর্মীকে একটি ঘরে একপ্রকার বন্দি করে রাখেন।
প্রতারণার শিকার কর্মীরা বলেন, দুদিন যাওয়ার পর এজেন্সি আমাদের সবাইকে বলে, তোমাদের জন্য একটি ভালো ভারতীয় কোম্পানি পেয়েছি, ভিসা লাগিয়ে দেবে। এই কথা বলে, আমাদের কাছে ২০০ ইউরো করে চায়। এরপর সেখানে দুই মাস ১৫ দিনের মাথায় এক ভারতীয় এসে কাজে নিয়ে যান। এতে কিছু লোক কাজ করার সুযোগ পান। কিছু লোক কাজ না করতে পেরে বাইরে চলে যান। কাজ করতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যক্তি মারা যান। একপর্যায়ে সেখানে কাজ ছেড়ে দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) শরণাপন্ন হই। তারা কিছুদিন রেখে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এখনো ১০ জনের মতো দেশে আসেনি। আইওএমের মাধ্যমে তারাও চলে আসবে।
প্রতারণার শিকার ঠাকুরগাঁওয়ের মো. জুয়েল বলেন, ‘আমাদের ওপর হয়রানির শেষ নেই। সেখানে আট মাসে অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। ভার্চুয়াল এজেন্সির মালিক আমিনুল আমাদের আলজেরিয়ায় নিয়ে একবার একেক জায়গায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোথাও আমাদের বৈধ হওয়ার জন্য ভিসা লাগাতে পারেননি। সেখানে তার ভারতীয় ও বাংলাদেশি এজেন্টও আছে। একবার চাইনিজ কোম্পানি, আরেকবার ভারতীয় কোম্পানি। নানা জায়গায় পাঠিয়ে কোথাও কাজ করে টাকা পাইনি, ভিসাও পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যাওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন সেখানে কাজ করতে গিয়ে মারা যান। তার জন্য এজেন্সি দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা দেবে জানালেও দেয়নি। বরং এজেন্সি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’
আরেক ভুক্তভোগী নাটোরের সাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এই এজেন্সি থেকে গিয়ে এর আগেও অনেকে ফেরত এসেছে। আমাদের আট মাস প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সেখানে রাখছে। আমরা কিছুই করতে না পেরে আইওএমের কাছে ধরা দিয়ে দেশে আসি। এখন এজেন্সি থেকে টাকা ফেরত নেওয়া ছাড়া আর কিছুই চাই না। আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে গেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ভার্চুয়াল ভিশন এজেন্সির মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আট মাস বেতন পায়নি এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কোম্পানি যদি আমার অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়ে থাকে, তাহলে এসে চেক করুক আলজেরিয়া থেকে কোনো টাকা আমার কাছে দেশে আসছে কি না। প্রতি মাসের স্যালারির ডকুমেন্ট ওদের কোম্পানির কাছে আছে।’
তিনি বলেন, ‘ওদের যে কোম্পানিতে পাঠিয়েছি তারা চার মাস কাজ করে পালিয়ে গেছে। ইউরোপ যেতে চাইছে সেখান থেকে। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছে। আর আমি সাড়ে চার লাখ করে নিইনি। আমি এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা করে নিয়েছি। আমার কাছে প্রমাণ আছে। আপনি অফিসে আসুন।’
জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের বায়রায় এখন কোনো কমিটি নেই। ফলে আমরা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না। যেহেতু প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ হয়েছে, আশা করি প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। যে এজেন্সি থেকে তারা গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। ভুক্তভোগীরা যেসব দালালকে টাকা দিয়েছেন ওই দালালদের থেকে টাকা উদ্ধারের দায়িত্ব এজেন্সিকে নিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের টাকার বিষয়টি ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমাধানে জোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ তারিখে দুই পক্ষের সঙ্গে বসার কথা রয়েছে।’
শুধু আলজেরিয়াফেরত প্রবাসীরাই নন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতারিত হয়ে প্রতিনিয়ত দেশে ফেরত আসছেন কর্মীরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৯ মাসে বিভিন্ন দেশে গিয়ে ছয় মাসের মধ্যেই আবার দেশে ফিরেছেন এমন কর্মীর সংখ্যা এক হাজার ৯২৬ জন। এর মধ্যে সৌদি আরব ফেরত ৭৭৬ জন, মালয়েশিয়া ২২১ জন, ওমান ২১৬ জন, দুবাই ১২২ জন, রোমানিয়া ৮৭ জন, কাতার ১২২ জন, আরব আমিরাত ৬৭ জন, কুয়েত ৭৪ জন, কিরগিজস্তান ৫২ জন, উজবেকিস্তান ৪৩ জন, কাজাখস্তান ২৮ জন ও সিঙ্গাপুর ফেরত ৮৭ জন। এদের মধ্যে অধিকাংশ কর্মী প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আউট পাস নিয়ে দেশে ফেরত এসেছেন ৪০ হাজার ৩০৫ কর্মী। বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কাজ না পাওয়া, চিকিৎসাবঞ্চিত ও প্রতারণার শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে কর্মী হিসেবে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ৯২৬ জন।