alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ মামলার রায় পিছিয়েছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকা: বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম আজ (বৃহস্পতিবার) এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও, রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।

২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার তদন্তের পরে, দুদক শামীমের বিরুদ্ধে তার অবৈধ সম্পদের উৎস এবং বৈধতার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তবে, তার আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লিখিত থাকলেও, এই টাকার বৈধ উৎসের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি দুদক। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শামীমের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা এবং তার ও তার মায়ের নামে থাকা ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারি এবং ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এদিন, শামীমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়, তবে তার মা আয়েশা আক্তার এখনও পলাতক রয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত নতুন দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেন।

২০১9 সালের সেপ্টেম্বরে, র‍্যাব ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। নিকেতনের বাসা থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই এবং ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" তখন বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করছিল, যার মধ্যে অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।

গ্রেপ্তারের পর, শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স"-এর কার্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল র‌্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ এবং বিভিন্ন হাসপাতালের নতুন ভবনসহ বেশ কিছু নির্মাণ কাজ।

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে মাদক, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র আইনের মামলা রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরের বছর অর্থপাচার মামলায় শামীমকে ১০ বছর এবং তার সাত দেহরক্ষীকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিকে, বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে তার অবৈধ কার্যকলাপের কারণে শামীমের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলার মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির চিত্র আরো স্পষ্ট হয়েছে।

জি কে শামীমের উত্থান আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে শুরু হয়। শামীম নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন, তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ তার এই দাবির প্রতি কোনো সমর্থন জানায়নি। এর পর শামীম নিজেকে একটি শক্তিশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অংশ নেন। তার প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়, যা তার প্রভাব এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

তবে, তার কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসার পর, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে তার নামে একাধিক মামলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে শামীমের বিরুদ্ধে একের পর এক আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, অস্ত্র আইনে মামলা এবং আরও অনেক বিষয়।

বর্তমানে, শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে এবং মামলার ফলাফল দেশটির রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই মামলার রায় এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে, কারণ এটি দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে আইন প্রণেতাদের জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে।

জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় এখনও অপেক্ষমাণ। তবে, এই মামলার ফলে দেশের রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এসব মামলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং এগুলোর রায় আগামী দিনগুলিতে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করবে।

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তিনটি হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ, আছেন সাবেক এসপিও

ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

রূপগঞ্জে মদ্যপ অবস্থায় অশোভন আচরণ, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইমাম হত্যা,৫ জনকে আসামী করে মামলা

ছবি

হত্যা মামলায় ইনু, কামাল, পলকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখালো আদালত

ছবি

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু

ছবি

ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান, টিউলিপকে বাংলাদেশি নাগরিক বলেও মন্তব্য

ছবি

১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ, এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

‘ভোটের প্রতারণা’ অভিযোগে রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি নূরুল হুদার

ছবি

নগদের ১ কোটি টাকার ডাকাতি: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, উদ্ধার সাড়ে ৩২ লাখ

ছবি

স্বপ্না হত্যা: থানা থেকে সিআইডি, তবু রহস্য অজানা

ছবি

সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাল অপহরণ ও হত্যার আসামি

ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের সহায়তাকারী নিযুক্ত

ছবি

সবজি ব্যবসায়ী শাওন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে, আনিসুল হক গ্রেপ্তার

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কেরাণীগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রংপুরের কাউনিয়ায় টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

ছবি

মানিলন্ডারিং তদন্ত: তিন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

হাজিরা না দিলে অনুপস্থিতিতেই শেখ হাসিনার বিচার শুরু হবে: ট্রাইব্যুনাল

ছবি

যুক্তরাজ্যে বসুন্ধরা মালিকপক্ষসহ কয়েকজনের সম্পদ জব্দে উদ্যোগ: দুদক

ছবি

টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, তাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখছে দুদক

ছবি

লাশ টুকরো করে বালু চাপা: ব্যবসায়ী জাকির হত্যা মামলায় চার আসামি আদালতে, একজনের স্বীকারোক্তি

ছবি

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যকে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান

অবশেষে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা

পীরগাছায় ইসলামিক রিলিফের গরুর মাংস বিতরণের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আটক-১

ছবি

রিমান্ড শেষে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন কারাগারে

ছবি

ই-মানি জালিয়াতিতে ‘নগদ’-এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা

ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অবমাননার মামলায় দুইজনের অনুপস্থিতি

পাঁচটি মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর

ছবি

ভাড়ার মোটরসাইকেলচালকের ধর্ষণের শিকার বিউটি পার্লারের কর্মী, কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার

ছবি

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র দাখিল

কেরাণীগঞ্জে হত্যা করে মরদেহ ১০ টুকরো, দেবর-ভাবির মৃত্যুদণ্ড

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: যেসব অভিযোগ ছিলো জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

জি কে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ মামলার রায় পিছিয়েছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

ঢাকা: বিতর্কিত ঠিকাদার এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে। ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম আজ (বৃহস্পতিবার) এই রায় ঘোষণার কথা থাকলেও, রায় প্রস্তুত না হওয়ায় নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।

২০১৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ২৯৭ কোটি ৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে শামীম ও তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলার তদন্তের পরে, দুদক শামীমের বিরুদ্ধে তার অবৈধ সম্পদের উৎস এবং বৈধতার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জি কে শামীম ২০১৮-২০১৯ করবর্ষে ৫০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তবে, তার আয়কর নথিতে ৪০ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ টাকার তথ্য উল্লিখিত থাকলেও, এই টাকার বৈধ উৎসের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি দুদক। আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শামীমের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, সাত লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিদেশি মুদ্রা এবং তার ও তার মায়ের নামে থাকা ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকার এফডিআর, ৪৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার ব্যবসার অংশীদারি এবং ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার ৭১৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের বৈধ উৎসের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এদিন, শামীমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়, তবে তার মা আয়েশা আক্তার এখনও পলাতক রয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ৩০ জানুয়ারি নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত নতুন দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি ঠিক করেন।

২০১9 সালের সেপ্টেম্বরে, র‍্যাব ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। নিকেতনের বাসা থেকে নগদ এক কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১০টি এফডিআর, ৩২টি ব্যাংক হিসাবের চেক বই এবং ৮টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" তখন বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ করছিল, যার মধ্যে অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।

গ্রেপ্তারের পর, শামীমের প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স"-এর কার্যাদেশ বাতিল করা হয় এবং তার ১৯৪টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে ছিল র‌্যাব সদরদপ্তর, সচিবালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ এবং বিভিন্ন হাসপাতালের নতুন ভবনসহ বেশ কিছু নির্মাণ কাজ।

জি কে শামীমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে মাদক, অর্থ পাচার এবং অস্ত্র আইনের মামলা রয়েছে। ২০২২ সালে অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরের বছর অর্থপাচার মামলায় শামীমকে ১০ বছর এবং তার সাত দেহরক্ষীকে ৪ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিকে, বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পে তার অবৈধ কার্যকলাপের কারণে শামীমের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলার মাধ্যমে তার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতির চিত্র আরো স্পষ্ট হয়েছে।

জি কে শামীমের উত্থান আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে শুরু হয়। শামীম নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন, তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ তার এই দাবির প্রতি কোনো সমর্থন জানায়নি। এর পর শামীম নিজেকে একটি শক্তিশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অংশ নেন। তার প্রতিষ্ঠান "জিকে বিল্ডার্স" বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ পেয়ে যায়, যা তার প্রভাব এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

তবে, তার কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসার পর, ২০১৯ সালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে তার নামে একাধিক মামলা হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে শামীমের বিরুদ্ধে একের পর এক আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, অস্ত্র আইনে মামলা এবং আরও অনেক বিষয়।

বর্তমানে, শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে এবং মামলার ফলাফল দেশটির রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই মামলার রায় এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় পরীক্ষা হতে চলেছে, কারণ এটি দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে আইন প্রণেতাদের জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে পারে।

জি কে শামীম এবং তার মা আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার রায় এখনও অপেক্ষমাণ। তবে, এই মামলার ফলে দেশের রাজনৈতিক এবং আইনগত পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। দেশে দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এসব মামলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, এবং এগুলোর রায় আগামী দিনগুলিতে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে সহায়তা করবে।

back to top