alt

সংস্কৃতি

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয়, বাঙ্গালী

অনলাইন বার্তা পরিবেশক, সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১

বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার সমতল অঞ্চলে, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিন দিনাজপুর ও সালদা জেলার কিছু অংশে বাংলা ভাষাভাষির একটি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। এই জাতি গোষ্ঠীই রাজবংশী। আসামের গোয়ালাপাড়া, ধুবড়ি, মেঘালয়, বিহার ও নেপালের ঝাপা জেলাতেও এই ভাষার জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, ভারতের কোচবিহার অঞ্চল থেকে আগত মঙ্গোলীয় নৃ-গোষ্ঠী কোচ জাতির অংশ। এদের মধ্যে প্রোটো-অষ্ট্রালয়েডদের মিশ্রন পরিলক্ষিত হয়। এদের দৈহিক ও জীবন যাপনের ধারা আদি কোচ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে। ষোল শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কোচ রাজা হাজোরের বংশধরদের নেতা বিশুসিংহ তার গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে আদিধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেন। আর কোচ রাজবংশের সন্তান হিসেবে এরাই পরবতীর্তে রাজবংশী হিসেবে পরিচিতি পান।

অন্যদিকে রাজবংশীদের একটি অংশ ইসলাম ধর্মগ্রহন করেন এবং “কেওট রাজবংশী” নামে পরিচিতি পান। তবে রাজবংশীরা প্রধাণত শিবভক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। রাজবংশী জাতি পাহাড়, নদী, বন ও মাটিকেও উপাসনা করেন। এদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলো হলো : পাঁচকন্যা পূজা, বিষহরি পূজা, বেষমা পূজা, খরা-অনাবৃষ্টি কাটাতে হুদুমা পূজা, ব্যাঙ্গের বিয়ে প্রভৃতি। হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজবংশীরা নিজেদেরকে হিন্দু পৌরনিক কাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত করে নিজেদের অভিজাত শ্রেণীর অন্তভূক্ত করার চেষ্টা করেন।

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর এই পরিচয় বহনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে এই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: শিববংশী, পলিয়া, দেশী, জলপাইগুড়ি রাজবংশী, পাহাড়ি রাজবংশী, তোঙ্গিয়া রাজবংশী, খোপ্রিয়া ও গোব্রিয়া। রাজবংশীরা দেখতে খর্বকায, লম্বা, চ্যাপ্টা ও তীক্ষ নাক, উচু চোয়াল বিশিষ্ট এক মিশ্র জনগোষ্ঠী। বাঙ্গালীদের ন্যায় রাজবংশীদের সংকর জাতি বললে অত্যুক্তি হবে না। এদের প্রধান পেশা কৃষি। এদের মধ্যে মৎসজীবিও রয়েছে। ইসলাম ও হিন্দু র্ধম গ্রহনের পূর্বে রাজবংশীদের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক, বর্তমানে তা পিতৃতান্ত্রিক প্রথা অনুসরন করছে।

আদি রাজবংশী (পাহাড়ি) পুরুষরা কোমরে নেংটি এবং মহিলারা কোমরে লম্বা ঝুলের কাপড় ব্যবহার করতো এবং বক্ষ বন্ধনী ব্যবহার করতো। এই জাতিগোষ্ঠী সমতলে নেমে আসার পর থেকে বাঙ্গালীদর প্রভাবে ধুতি ও শাড়ি পড়া শুরু করেন। তবে এক সময় এই রাজবংশী নারীরা হাতে বোনা মোটা ধরনের চার হাত দৈঘ্য ও আড়াই হাত প্রস্থের ’ফতা’ নামের বিশেষ পোশাক পরিধানে করতো। এই ’ফতা’ নামের পোশাক বহু বর্ণ রঞ্জিত থাকতো। এই রাজবংশী মেয়েরা কাঠ ও মাটির গহনা ব্যবহার করতো। বাঙ্গালীদর সানিধ্যে আসার পর রাজবংশী মেয়েরা ধাতব গহনা ব্যবহার শুরু করেন।

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর জীবনাচরনের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে আবার বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন রাজবংশীদের ভাষা প্রায় বিলুপ্ত। ভাষার বিচারে এরা বোড়ো ভাষা গোত্রভূক্ত হলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত। এই জাতিগোষ্ঠীর সাহিত্যের নিদর্শন কোন লিপিতেই রচিত হয়নি। এই বোড়ো ভাষার শব্দসমূহে বোড়ো ভাষার অপভ্রংশ শব্দ পরিলক্ষিত হয়। এদের ভাষায় বাংলা ক্রিয়াপদ ও বিশেষ্য পদের শেষে ও মাঝে ‘ঙ’ ‘ং’ এবং ‘ম’ এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর এই শব্দগুলো রাজবংশীদের কথ্য ভাষায় প্রচলিত।

এই রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী আনন্দ প্রিয় । রাজবংশীরা পূজা পার্বনে বিভিন্ন ধরনের নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন। তাদের এই নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন আদিবাসী সূলভ। সমতলে আসার আগে রাজবংশীরা তাদের গানে ধামামা ও বাঁশী বেশি ব্যবহার করতো। তবে বর্তমানে তাদের নৃত্য ও সংগীতে দোতারা ও সারিন্দা ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

রাজবংশীদের প্রতিষ্ঠা লাভের আন্দোলন বেশ পুরানো । আর এই রাজবংশী সমাজের প্রতিষ্ঠা লাভের ইতিহাসে স¥রনীয় ব্যক্তি হলেন ‘রায় সাহেব’ ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা। তিনি সক্রিয় সভা গঠন করে তৎকালীন সমাজের বর্নবাদী বৈষম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন করেন এবং রাজবংশী জাতিকে হিন্দুসমাজে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার এই অবদানের জন্য তাকে রাজবংশী সম্প্রদায়ের জনক বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে রাজবংশীদের ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তভূক্ত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ রাজবংশী ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যেগে আয়োজিত মানববন্ধনে সমগ্র রাজবংশী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক স্বীকৃতির বিরোধিতা করেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীকে বাঙ্গালী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

মনিজা ইসলাম, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

ছবি

‘রোড টু বালুরঘাট’, মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের চিত্র প্রদর্শন

ছবি

পাবলিশহার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন বাংলাদেশের মিতিয়া ওসমান

ছবি

চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে বর্ষ বরন সম্পন্ন

ছবি

জামালপুরে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

ছবি

বনাঢ্য নানান আয়োজনে বিভাগীয় নগরী রংপুরে পালিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ

ছবি

আজ চৈত্র সংক্রান্তি

ছবি

বর্ষবরণে সময়ের বিধি-নিষেধ মানবে না সাংস্কৃতিক জোট

ছবি

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার গুণীজন সংবর্ধনা

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে : ড. কামাল চৌধুরী

ছবি

এলাকাবাসীর সঙ্গে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নতুন কমিটি, ড. সনজীদা খাতুন সভাপতি, ড. আতিউর রহমান নির্বাহী সভাপতি,লিলি ইসলাম সাধারণ সম্পাদক

ছবি

এবার বইমেলায় ৬০ কোটি টাকার বই বিক্রি

ছবি

আজ শেষ হচ্ছে মহান একুশের বইমেলা, বিক্রি বেড়েছে শেষ মুহুর্তে

ছবি

আগামী বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলার জায়গা বরাদ্দ নাওদিতে পারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

ছবি

বইমেলা, মেয়াদ বাড়ায় খুশি সবাই

ছবি

বইমেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কাজী এনায়েত উল্লাহর দুই বই

ছবি

নারী লেখকদের বই কম, বিক্রিও কম

ছবি

বইমেলায় বিদায়ের সুর

ছবি

শিশুদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে জমজমাট বইমেলার শিশু প্রহর

ছবি

বইমেলায় শিশুদের চোখে মুখে ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস

ছবি

বই মেলায় খুদে লেখকদের গল্প সংকলন ‘কিশোর রূপাবলি’

ছবি

`বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশিত উন্নত শিরের বাঙালি জাতি চাই’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ছবি

বইমেলায় সরোজ মেহেদীর ‘চেনা নগরে অচিন সময়ে’

ছবি

বইমেলায় মাহবুবুর রহমান তুহিনের ‘চেকবই’

বইমেলায় প্রকাশিত হলো সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’

ছবি

সমাজসেবায় একুশে পদকঃ এখনও ফেরি করে দই বিক্রি করেন জিয়াউল হক

ছবি

বইমেলায় পন্নী নিয়োগীর নতুন গ্রল্পগ্রন্থ আতশবাজি

ছবি

ভাষার শক্তি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে সুদৃঢ় করে: উপাচার্য ড. মশিউর রহমান

ছবি

রুবেলের গ্রন্থ শিশির ঝরা কবিতা

ঢাবিতে পাঁচ দিনব্যাপী ‘আমার ভাষার চলচ্চিত্র’ উৎসব শুরু

ছবি

সোনারগাঁয়ে লোকজ উৎসবে খেলাঘরের নাচ-গান পরিবেশন

ছবি

বাংলা একাডেমি পুরস্কার ফেরত দিলেন জাকির তালুকদার

ছবি

রংতুলির মাধ্যমে নিরাপদ সড়কের দাবি শিশুদের

ছবি

জাতীয় প্রেস ক্লাবে পিঠা উৎসব ও লোকগানের আসর

ফরিদপুরে ২ ফেব্রূয়ারি থেকে ঐতিহ্যবাহী জসীম পল্লী মেলা

ছবি

লেনিন উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসব

tab

সংস্কৃতি

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয়, বাঙ্গালী

অনলাইন বার্তা পরিবেশক, সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

মঙ্গলবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২১

বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার সমতল অঞ্চলে, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিন দিনাজপুর ও সালদা জেলার কিছু অংশে বাংলা ভাষাভাষির একটি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। এই জাতি গোষ্ঠীই রাজবংশী। আসামের গোয়ালাপাড়া, ধুবড়ি, মেঘালয়, বিহার ও নেপালের ঝাপা জেলাতেও এই ভাষার জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, ভারতের কোচবিহার অঞ্চল থেকে আগত মঙ্গোলীয় নৃ-গোষ্ঠী কোচ জাতির অংশ। এদের মধ্যে প্রোটো-অষ্ট্রালয়েডদের মিশ্রন পরিলক্ষিত হয়। এদের দৈহিক ও জীবন যাপনের ধারা আদি কোচ থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে। ষোল শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কোচ রাজা হাজোরের বংশধরদের নেতা বিশুসিংহ তার গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে আদিধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেন। আর কোচ রাজবংশের সন্তান হিসেবে এরাই পরবতীর্তে রাজবংশী হিসেবে পরিচিতি পান।

অন্যদিকে রাজবংশীদের একটি অংশ ইসলাম ধর্মগ্রহন করেন এবং “কেওট রাজবংশী” নামে পরিচিতি পান। তবে রাজবংশীরা প্রধাণত শিবভক্ত ও বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। রাজবংশী জাতি পাহাড়, নদী, বন ও মাটিকেও উপাসনা করেন। এদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলো হলো : পাঁচকন্যা পূজা, বিষহরি পূজা, বেষমা পূজা, খরা-অনাবৃষ্টি কাটাতে হুদুমা পূজা, ব্যাঙ্গের বিয়ে প্রভৃতি। হিন্দু ধর্মাবলম্বী রাজবংশীরা নিজেদেরকে হিন্দু পৌরনিক কাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত করে নিজেদের অভিজাত শ্রেণীর অন্তভূক্ত করার চেষ্টা করেন।

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর এই পরিচয় বহনের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে এই জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কয়েকটি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: শিববংশী, পলিয়া, দেশী, জলপাইগুড়ি রাজবংশী, পাহাড়ি রাজবংশী, তোঙ্গিয়া রাজবংশী, খোপ্রিয়া ও গোব্রিয়া। রাজবংশীরা দেখতে খর্বকায, লম্বা, চ্যাপ্টা ও তীক্ষ নাক, উচু চোয়াল বিশিষ্ট এক মিশ্র জনগোষ্ঠী। বাঙ্গালীদের ন্যায় রাজবংশীদের সংকর জাতি বললে অত্যুক্তি হবে না। এদের প্রধান পেশা কৃষি। এদের মধ্যে মৎসজীবিও রয়েছে। ইসলাম ও হিন্দু র্ধম গ্রহনের পূর্বে রাজবংশীদের সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক, বর্তমানে তা পিতৃতান্ত্রিক প্রথা অনুসরন করছে।

আদি রাজবংশী (পাহাড়ি) পুরুষরা কোমরে নেংটি এবং মহিলারা কোমরে লম্বা ঝুলের কাপড় ব্যবহার করতো এবং বক্ষ বন্ধনী ব্যবহার করতো। এই জাতিগোষ্ঠী সমতলে নেমে আসার পর থেকে বাঙ্গালীদর প্রভাবে ধুতি ও শাড়ি পড়া শুরু করেন। তবে এক সময় এই রাজবংশী নারীরা হাতে বোনা মোটা ধরনের চার হাত দৈঘ্য ও আড়াই হাত প্রস্থের ’ফতা’ নামের বিশেষ পোশাক পরিধানে করতো। এই ’ফতা’ নামের পোশাক বহু বর্ণ রঞ্জিত থাকতো। এই রাজবংশী মেয়েরা কাঠ ও মাটির গহনা ব্যবহার করতো। বাঙ্গালীদর সানিধ্যে আসার পর রাজবংশী মেয়েরা ধাতব গহনা ব্যবহার শুরু করেন।

রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীর জীবনাচরনের অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে আবার বিলুপ্ত হয়েছে। যেমন রাজবংশীদের ভাষা প্রায় বিলুপ্ত। ভাষার বিচারে এরা বোড়ো ভাষা গোত্রভূক্ত হলেও বর্তমানে তা বিলুপ্ত। এই জাতিগোষ্ঠীর সাহিত্যের নিদর্শন কোন লিপিতেই রচিত হয়নি। এই বোড়ো ভাষার শব্দসমূহে বোড়ো ভাষার অপভ্রংশ শব্দ পরিলক্ষিত হয়। এদের ভাষায় বাংলা ক্রিয়াপদ ও বিশেষ্য পদের শেষে ও মাঝে ‘ঙ’ ‘ং’ এবং ‘ম’ এর ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। আর এই শব্দগুলো রাজবংশীদের কথ্য ভাষায় প্রচলিত।

এই রাজবংশী জাতিগোষ্ঠী আনন্দ প্রিয় । রাজবংশীরা পূজা পার্বনে বিভিন্ন ধরনের নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করেন। তাদের এই নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন আদিবাসী সূলভ। সমতলে আসার আগে রাজবংশীরা তাদের গানে ধামামা ও বাঁশী বেশি ব্যবহার করতো। তবে বর্তমানে তাদের নৃত্য ও সংগীতে দোতারা ও সারিন্দা ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

রাজবংশীদের প্রতিষ্ঠা লাভের আন্দোলন বেশ পুরানো । আর এই রাজবংশী সমাজের প্রতিষ্ঠা লাভের ইতিহাসে স¥রনীয় ব্যক্তি হলেন ‘রায় সাহেব’ ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা। তিনি সক্রিয় সভা গঠন করে তৎকালীন সমাজের বর্নবাদী বৈষম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন করেন এবং রাজবংশী জাতিকে হিন্দুসমাজে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার এই অবদানের জন্য তাকে রাজবংশী সম্প্রদায়ের জনক বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে রাজবংশীদের ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক গোষ্ঠীর তালিকায় অন্তভূক্ত করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ রাজবংশী ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যেগে আয়োজিত মানববন্ধনে সমগ্র রাজবংশী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র নৃতাত্তিক স্বীকৃতির বিরোধিতা করেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই রাজবংশী জাতিগোষ্ঠীকে বাঙ্গালী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

মনিজা ইসলাম, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক

back to top